সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের শিক্ষাগত তাৎপর্য :-

by - March 31, 2022

সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের শিক্ষাগত তাৎপর্য :- 

Importance of Operant Conditioning . ( In Bengali ) 



সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের শিক্ষাগত তাৎপর্য :- 

সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা মনোবিজ্ঞানী স্কিনার। এই ধরণের অনুবর্তন মূলত অপারেন্ট জাতীয় ; অর্থাৎ যার নির্দিষ্ট উদ্দীপক নেই। এই ধরণের অনুবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হল - প্রাণীকে পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক আচরণের মাধ্যমে উপযুক্ত আচরণের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং আচরণ সংশোধন করা। সক্রিয় অনুবর্তন প্রাণীর ইচ্ছাধীন এবং এক্ষেত্রে প্রাণীর সক্রিয়তা অপরিহার্য। সক্রিয় অনুবর্তনে প্রেষণা ও পুরস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের শিক্ষাগত তাৎপর্যগুলি হল - 


১. প্রেষণার সৃষ্টি :- সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে বাঞ্ছিত আচরণ সৃষ্টি করে তাকে উদ্দেশ্যমূলক পথে প্রেরিত করা সম্ভব। সক্রিয় অনুবর্তন শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্দিষ্ট আচরণের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রেষণা সৃষ্টি করে। 

২. শিক্ষার্থীর মধ্যে সক্রিয়তা গঠনে :- সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন মূলত ফললাভের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই সক্রিয় অনুবর্তন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে সক্রিয়তা গঠনে সক্রিয় অনুবর্তন বিশেষভাবে কার্যকরি। 

৩. উদ্দেশ্যমুখী আচরণ সৃষ্টিতে :- সক্রিয় অনুবর্তন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্দেশ্যমুখী আচরণ তৈরী করে। শিক্ষার্থী প্রেষণার দ্বারা পরিচালিত হয়ে উদ্দেশ্যমুখী আচরণের দিকে ধাবিত হয়। এই উদ্দেশ্যমুখী আচরণের প্রধান কারণ ফললাভের প্রতি আকর্ষণ। 

৪. আচরণ নির্দিষ্টকরণের ক্ষেত্রে :- সক্রিয় অনুবর্তনের নীতি অনুসারে , শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট ফললাভের জন্য অনেকগুলি আচরণের মধ্যে থেকে একটি বা এক ধরণের আচরণকে নির্দিষ্ট করে এগিয়ে যায়। এইভাবে সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আচরণ নির্দিষ্টকরণ করা যায়। 

৫. অবাঞ্ছিত আচরণ দূর করতে :- সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে আচরণ নির্দিষ্টকরণ করে তার অবাঞ্ছিত আচরণগুলিকে দূর করা যায়। এই অবাঞ্ছিত আচরণগুলিকে পৃথকীকরণ না করলে শিক্ষার্থীর পক্ষে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব নয়। ফলে সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অবাঞ্ছিত আচরণগুলিকে দূর করে তাকে লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করা হয়। 


৬. শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশে :- শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যমুখী আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে। সক্রিয় অনুবর্তন শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্দেশ্যমুখী আচরণের প্রেষণা যুগিয়ে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। সক্রিয় অনুবর্তনের নীতি অনুসারে শিক্ষার্থী শিখনে অংশগ্রহণ করে এবং তার মধ্যে বহুমুখী ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। 

৭. শিখনে সহায়ক :- শিখনের একটি অন্যতম শর্ত হল সক্রিয়তামূলক আচরণ। শিক্ষার্থী সক্রিয়তামূলক আচরণের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ধরণের শিখনে অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থী এই সকল সক্রিয়তামূলক আচরণের ক্ষেত্রে ফললাভের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এইভাবে সক্রিয় অনুবর্তন প্রক্রিয়া শিখনে সহায়তা করে। 

৮. পরিকল্পিত শিখন বা প্রোগ্রাম শিখনে সহায়ক :- প্রোগ্রাম শিখন পদ্ধতির আবিষ্কর্তা হলেন স্কিনার। এই পদ্ধতি অনুসারে পাঠ্য বিষয়গুলিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থিত করা হয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলিকে ফ্রেম বলে। প্রতিটি ফ্রেমের শেষে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে। শিক্ষার্থী ঐসকল প্রশ্নগুলির উত্তর নিজেই প্রদান করে পরবর্তী ফ্রেমে যায়। এইভাবে সক্রিয় অনুবর্তন পদ্ধতিকে আধার করে শিশু প্রোগ্রাম শিখনের মাধ্যমে নিজেই শিখতে পারে।   


You May Also Like

0 comments