প্রাচীন অনুবর্তনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট আলোচনা করো।

by - March 29, 2022

প্রাচীন অনুবর্তনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট আলোচনা করো। 

প্যাভলভীয় অনুবর্তনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 

Definition and features of Classical Conditioning . ( In Bengali )  




প্রাচীন অনুবর্তনের সংজ্ঞা / ধারণা :- 


প্রাচীন অনুবর্তনের প্রবক্তা হলেন রুশ শারীরতত্ববিদ আইভান প্যাভলভ। প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়াটি জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। এই ধরণের অনুবর্তনে দুই ধরণের উদ্দীপক কাজ করে - স্বাভাবিক উদ্দীপক ও কৃত্রিম উদ্দীপক। এই ধরণের অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক উদ্দীপকটিকে কৃত্রিম উদ্দীপকের সাথে যুক্ত করা হয়। অনুবর্তনের পর দেখা যায় , স্বাভাবিক উদ্দীপক যে ধরণের প্রতিক্রিয়া ঘটায় কৃত্রিম উদ্দীপকও ঠিক একই ধরণের প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। একেই , প্যাভলভীয় অনুবর্তন বা প্রাচীন অনুবর্তন বা সাপেক্ষীকরণ বলা হয়। এই ধরণের অনুবর্তন রেসপনডেন্ট জাতীয় অর্থাৎ যার নির্দিষ্ট উদ্দীপক আছে। প্রাচীন অনুবর্তনের সাংগঠনিক রূপটি হল - S1 > R1 > S2 > R2 


প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট :- 


১. স্বাভাবিক অনুবর্তনের উপস্থাপনের পূর্বে কৃত্রিম উদ্দীপকের উপস্থাপন :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম উদ্দীপকটিকে স্বাভাবিক উদ্দীপকের পূর্বে উপস্থাপন করা হয়। যেমন , প্যাভলভ তাঁর পরীক্ষায় স্বাভাবিক উদ্দীপক বা খাদ্যের পূর্বে কৃত্রিম উদ্দীপক বা ঘন্টাধ্বনি উপস্থাপন করেছিলেন। 

২. উদ্দীপক - প্রধান প্রক্রিয়া :- প্রাচীন অনুবর্তন একটি উদ্দীপক প্রধান প্রক্রিয়া। এই ধরণের অনুবর্তনে উদ্দীপকের উপস্থিতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই প্রাচীন অনুবর্তন হল S - type অনুবর্তন। 


৩. শক্তিশালী স্বাভাবিক উদ্দীপক :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক উদ্দীপকটি কৃত্রিম উদ্দীপকের চেয়ে বা অনুবর্তিত উদ্দীপকের চেয়ে অধিক শক্তিশালী হয়। যেমন প্যাভলভের পরীক্ষায় স্বাভাবিক উদ্দীপক বা খাদ্যের সাথে কৃত্রিম উদ্দীপক বা ঘন্টাধ্বনির অনুবর্তন ঘটানোর ফলেই কৃত্রিম উদ্দীপকটি স্বাভাবিক উদ্দীপকের মত প্রতিক্রিয়া সংঘঠিত করতে পেরেছে। 

৪. উদ্দীপকের পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপন :- প্রাচীন অনুবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্দীপক দুটিকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কৃত্রিম উদ্দীপকের রেশ থাকতে থাকতেই স্বাভাবিক উদ্দীপকটিকে উপস্থাপন করতে হয় - তা না হলে অনুবর্তন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। 

৫. উদ্দীপকের বারবার উপস্থিতি :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় উদ্দীপক দুটিকে বারবার উপস্থাপন করতে হয়। শুধুমাত্র একবার উপস্থাপন করলে অনুবর্তন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়না। কৃত্রিম উদ্দীপকের সাথে আচরণের অনুবর্তন না ঘটা পর্যন্ত উদ্দীপক দুটিকে বারবার উপস্থাপন করতে হয়। 

৬. অপানুবর্তন :- অনুবর্তন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সংগঠিত হওয়ার পর যদি স্বাভাবিক উদ্দীপকটিকে দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত রাখা হয় , তাহলে অনুবর্তন প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হবে। এই ঘটনা অপানুবর্তন নামে পরিচিত। 


৭. অপানুবর্তনের পর পুনরায় অনুৱৰ্তনের প্রত্যাবর্তন :- অপানুবর্তনের ফল হল অনুবর্তিত প্রক্রিয়ার অবলুপ্তি। কিন্তু তার পরও যদি কৃত্রিম ও স্বাভাবিক উদ্দীপকগুলিকে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করা যায় , তাহলে অনুবর্তীত আচরণের পুনরাবির্ভাব ঘটে। যেমন , প্যাভলভের পরীক্ষায় , অপানুবর্তনের পর যদি কৃত্রিম উদ্দীপক ঘন্টাধ্বনি ও স্বাভাবিক উদ্দীপক খাদ্যকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয় , তাহলে পুনরায় S - R বন্ধন ঘটবে। 

৮. গৌণ উদ্দীপক নির্দিষ্টকরণ :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় গৌণ উদ্দীপকটিকে নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। একাধিক বা অনির্দিষ্ট গৌণ উদ্দীপকের উপস্থিতিতে প্রাণী নির্দিষ্ট উদ্দীপকের সাথে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারবে না বা , অনেকগুলি গৌণ উদ্দীপকের মধ্যে থেকে যেকোনো একটির সাথে অনুবর্তন সম্পর্ক স্থাপন করবে। 

৯. সামান্যীকরণ ও পৃথকীকরণ :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন আচরণের সামান্যীকরণ ও পৃথকীকরণ করা যায়। অপ্রাসঙ্গিক বৈশিষ্টগুলিকে বাদ দিয়ে প্রাসঙ্গিক ও সাধারণ বৈশিষ্টগুলিকে পৃথক করাকে পৃথকীকরণ বলে এবং এই প্রাসঙ্গিক বৈশিষ্টগুলির ওপর ভিত্তি করে সাধারণ তত্ত্ব গঠন করাকে সামান্যীকরণ বলে। 

১০. বয়স ও প্রাণীভেদে পৃথক :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়া ইতর প্রাণী ও শিশুদের ওপর অধিক ফলদায়ী হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া তাই প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়া ইতর প্রাণী ও শিশুদের শিখনের ক্ষেত্রে অধিক উপযুক্ত।  

১১. প্রতিবর্ত প্রকৃতি :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক উদ্দীপক যে অনুবর্তন ঘটায় তা প্রতিবর্ত প্রকৃতির। অর্থাৎ , এই ধরণের অনুবর্তন প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। প্রাণী স্বাভাবিক উদ্দীপক দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে তার স্বাভাবিক চাহিদার বশবর্তী হয় ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

১২. S - R বন্ধন :- প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হল উদ্দীপক ( S ) ও প্রতিক্রিয়ার ( R ) মধ্যে সংযোগ ঘটানো। এই অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় উদ্দীপকের দ্বারা প্রাণীর নিকট নির্দিষ্ট আচরণ সংগঠিত করা হয় এবং এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

  

You May Also Like

0 comments