সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পার্থক্য।

by - March 26, 2022

সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পার্থক্য। 

সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between flexible and rigid constitution. ( In Bengali ) 



সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পার্থক্য :- 


১. প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত উভয়ই হতে পারে। যেমন ব্রিটেন ও নিউজিল্যান্ড - উভয় রাষ্ট্রের সংবিধানই সুপরিবর্তনীয় হলেও ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত এবং নিউজিল্যান্ডের সংবিধান লিখিত। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সর্বদা লিখিত হয় - এই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট। 

২. সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধন খুব সহজেই করা যায়। আইনসভাতে সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতিতে বা সাধারণ সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা যায়। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ ও জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। 


৩. উৎসগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে সাধারণ আইন ও সংবিধানগত আইনের উৎস এক। সাধারণত প্রচলিত প্রথা , রীতিনীতি , জনগণের দাবী , সরকারের ইচ্ছা - ইত্যাদির ভিত্তিতে সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের আইনগুলি প্রণীত হয়। 
কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সাধারণ আইন ও সাংবিধানিক আইনের উৎসগত ভিত্তি পৃথক। সাংবিধানিক আইনের উৎস হল গণপরিষদ এবং সাধারণ আইনের উৎস হল আইনসভা। 

৪. মর্যাদাগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় ও আইনগুলি সহজেই পরিবর্তন করা যায়। ফলে , সাধারণ আইন বা সাংবিধানিক আইন - কোনোটিই বিশেষ কোনো মর্যাদার অধিকারী হয়না। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সহজেই পরিবর্তন করা যায়না ; ফলে সরকার বা আইনসভা নিজের ইচ্ছামত সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেনা। তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেক বেশি মর্যাদাযুক্ত। 

৫. আইনসভার প্রাধান্যের প্রশ্নে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের ক্ষেত্রে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। কিন্তু , দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আইনসভা সংবিধানের অধীন। এখানে সংবিধান সকল ক্ষমতার উর্দ্ধে। 

৬. সংবিধানের প্রাধান্যের প্রশ্নে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সরকার ও আইনসভা নিজেদের প্রয়োজনমত , ইচ্ছামত ও নিজেদের স্বার্থে যেকোনো সময়ে সংবিধান সংশোধন করে। এক্ষেত্রে সংবিধান সরকার ও আইনসভার হাতের পুতুলে পরিণত হয়। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সরকার ও আইনসভাকে সংবিধান কর্তৃক নির্দিষ্ট ক্ষমতা ও এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। এই ব্যবস্থায় সংবিধান হল দেশের সর্বোচ্চ আইন। 


৭. বিচার বিভাগের প্রাধান্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়। সংবিধানের ব্যখ্যা বা বৈধতা বিচারের ক্ষমতা বিচার বিভাগের থাকেনা। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকে। সংবিধানকে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা ও যেকোনো আইনকে অবৈধ ঘোষণা করার অধিকার বিচার বিভাগের থাকে। 

৮. গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। কেননা এই ধরণের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সরকার নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে নাগরিকদের অধিকার সংকুচিত করে। 
কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান যেহেতু জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশোধিত হয় এবং সরকার ইচ্ছা করলেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেনা , তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার পক্ষে উপযুক্ত। 

৯. সংবেদনশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সুপরিবর্তনীয় সংবিধান জনগণের আশা - আকাঙ্খা ও বিভিন্ন দাবী - ইত্যাদিকে খুব সহজেই সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদান করতে পারে। তাই সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সংবেদনশীল। 
কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হঠাৎ করে তৈরী হওয়া জনগণের উচ্ছাস বা আশা আকাঙ্খার প্রতি সংবেদনশীল নয়। নির্দিষ্ট সাংবিধানিক পদ্ধতিতে , জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এইভাবে জনগণের আশা - আকাঙ্খা অপূর্ণ থেকে গেলে তা বিক্ষোভের সম্ভাবনা তৈরী করে। 

১০. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় উপযোগিতার প্রশ্নে পার্থক্য :- সাধারণভাবে পরিবর্তনশীল চরিত্রের জন্য সুপরিবর্তনীয় সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে উপযুক্ত নয়। 
কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান স্থিতিশীল এবং তা সরকারি বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতা বন্টন করে। তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে উপযুক্ত।        



You May Also Like

0 comments