দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধা

by - March 25, 2022

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক। 

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দোষ - গুন। 

Advantages and disadvantages of Rigid Constitution. ( In Bengali )


 


দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের ধারণা :- 


লর্ড ব্রাইস সংবিধান সংশোধনের ভিত্তির ওপর সংবিধানকে দুইভাগে ভাগ করেন - সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। যে সকল সংবিধানকে সাধারণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন বা আইন প্রণয়ন করা যায়না - সেইসকল সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। এই ধরণের সংবিধানে আইন প্রবর্তন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ ও জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। 
যেসকল রাষ্ট্রে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান প্রচলিত আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড। 


দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা :- 


১. স্থায়িত্ব :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সাধারণভাবে স্থায়ী প্রকৃতির। কোনো সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তন করা যায়না। ফলে , হঠাৎ করে তৈরী হওয়া জনগণের উচ্ছাস ও আবেগ ; বা সরকারের নিজেদের স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যে সহজে সংবিধান সংশোধন করা যায়না। তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান স্থায়ী প্রকৃতির। 

২. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় না হলে তা প্রশাসনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতা সৃষ্টি করে। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কেন্দ্র সরকার , রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ও কার্যাবলীর বন্টন করে। ফলে কোনো বিভাগের ক্ষেত্রেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। 

৩. কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করতে সাহায্য করে। সংবিধানের দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির ফলে সরকার নিজেদের স্বার্থে খেয়াল খুশিমত সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেনা। ফলে সরকারের পক্ষে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বা রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতা সংকোচন করা সম্ভব হয়না। 

৪. সাংবিধানিক আইনের প্রাধান্য :- দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রচলিত ও সাধারণ আইনের পরিবর্তে সাংবিধানিক আইনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে রাষ্ট্রপরিচালনা জটিলতামুক্ত হয় এবং সরকারের প্রতিটি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান সংবিধান অনুসারে নিজেদের ক্ষমতা ভোগ করে ও কর্তব্য পালন করে। 


৫. নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে নাগরিকদের অধিকার লিখিতভাবে সংযোজিত থাকে। ফলে সরকার নিজেদের স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যে সংবিধান পরিবর্তন করে কোনোভাবেই নাগরিকদের অধিকার সংকুচিত করতে পারেনা। 

৬. সুস্পষ্টতা :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে নাগরিক , সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব , কর্তব্য ও ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। ফলে প্রতিটি বিভাগ নির্দিষ্টভাবে নিজেদের ক্ষমতা ভোগ করে ও দায়িত্ব পালন করে। অন্যদিকে নাগরিকদের অধিকারগুলি সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ থাকার ফলে নাগরিকেরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। 

৭. সংবিধানের প্রাধান্য ও মর্যাদা :- দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকে। সরকার ইচ্ছা করলেই সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে পারেনা। ফলে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান মর্যাদার দিক দিয়ে সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের তুলনায় এগিয়ে থাকে। 

৮. সাংবিধানিক স্বাতন্ত্র্য :- প্রতিটি সংবিধানের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট থাকে। প্রতিটি সংবিধান নির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে রচিত হয়। দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় , সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়ার কারণে সংবিধান তার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। 

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা :- 


১. পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় :- প্রতিটি সমাজ , অর্থনীতি , রাজনীতি - ইত্যাদি সদা পরিবর্তনশীল। কিন্তু সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হলে তা পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান করে চলতে পারেনা। ফলে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। 

২. বিরোধ ও বিক্ষোভের সম্ভাবনা তৈরির আশঙ্কা :- পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তন করা সম্ভব হয়না। ফলে সাংবিধানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের আশা - আকাঙ্খা পূরণ না হলে তা বিরোধ ও বিক্ষোভের সম্ভাবনা তৈরী করে এবং অরাজকতা ও নৈরাজ্যের পথ প্রশস্ত করে।  


৩. বিচার বিভাগের প্রাধান্য :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও ব্যখাকর্তা হল বিচারবিভাগ। ফলে দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সংবিধান কার্যত বিচার বিভাগের নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বিচার বিভাগ সংবিধানকে ব্যাখ্যা করতে পারে ও যেকোনো আইনকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। এইভাবে দুষ্পরিবর্তনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৪. সংকটকালীন সময়ে কার্যকর নয় :- যেকোনো সংকটকালীন বা জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ , আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দুষ্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়না। তাই জরুরি অবস্থার সময় দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কার্যকর নয়। 

৫. রক্ষনশীলতা :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান রক্ষনশীলতার প্রতীক। এই ধরণের সংবিধান পরিবর্তন করা বা নতুন আইন প্রবর্তন করা অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনেক সময় জাতি ও আধুনিকতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

৬. প্রথা - রীতিনীতি - ইত্যাদির ভিত্তিহীনতা :- দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে সাংবিধানিক আইনগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে সকল প্রথা - রীতিনীতি , আদর্শ - ইত্যাদি জাতীয় জীবনের অঙ্গ হয়ে থাকে - তারা এই ধরণের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় কোনো গুরুত্ব পায়না। আবার সকল বিষয়ে পূর্ব হতেই আইন লিপিবদ্ধ থাকেনা। এরূপ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।     


You May Also Like

0 comments