লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের পার্থক্য।

by - March 24, 2022

লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের পার্থক্য। 

লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between written and unwritten constitution. ( In Bengali ) 




১. লিখিত সংবিধান প্রশাসনিক বা বিচারগত ক্ষেত্রে দলিল আকারে পেশ করা যায়। কিন্তু অলিখিত সংবিধান কোনোভাবেই দলিল আকারে পেশ করা যায়না। ফলে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে লিখিত সংবিধান অলিখিত সংবিধানের তুলনায় অধিক ক্ষমতা , মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। 

২. উৎসগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধান গৃহীত হয় সাধারণতঃ গণপরিষদ , কনভেনশন বা আইনসভা কর্তৃক। কিন্তু অলিখিত সংবিধান হল দীর্ঘদিনের প্রচলিত প্রচলিত প্রথা , রীতিনীতি , ধর্মীয় বিশ্বাস , রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ , আচার - আচরণ , আদালতের বিভিন্ন রায় , ঐতিহ্য , নজির ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। 


৩. রচনাকাল সংক্রান্ত পার্থক্য :- লিখিত সংবিধানের রচনাকাল সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে বা তার রচনাকাল নির্দিষ্টরূপে উল্লেখ করা থাকে। প্রতি আইন নির্দিষ্ট তারিখ সহ উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু অলিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে আইনগুলি দীর্ঘদিনের বিবর্তনের ফলে গড়ে ওঠে। তাই এগুলির রচনাকাল নির্দিষ্ট নয়। 

৪. সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি সাধারণত জটিল। আইনসভাতে নির্দিষ্ট সদস্যদের উপস্থিতিতে জটিল প্রক্রিয়ার সাহায্যে লিখিত সংবিধান সংশোধন করা যায়। কিন্তু অলিখিত সংবিধান খুব সহজেই সরকার কর্তৃক সংশোধিত হয়। তাই লিখিত সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় এবং অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয়। 

৫. প্রাধান্যের প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধানের আইন হল দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই ধরণের আইন মেনে চলতে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বাধ্য থাকে। কিন্তু অলিখিত আইনের ক্ষেত্রে আইনগুলি লংঘিত হলে তা আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। লিখিত আইন ও অলিখিত আইনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে লিখিত আইনগুলির প্রাধান্যই আদালত কর্তৃক স্বীকৃত হয়। 

৬. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বন্টনের প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বন্টন করে দেওয়া থাকে। কিন্তু অলিখিত সংবিধান হল প্রথা ও রীতিনীতি নির্ভর। তাই অলিখিত সংবিধানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে বন্টিত থাকে না। 


৭. নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধান সরকার সহজে পরিবর্তন করতে পারেন না। ফলে লিখিত সংবিধান নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার প্রশ্নে অধিক কার্যকরী। কিন্তু সংবিধান অলিখিত হলে সরকার খুব সহজেই নাগরিক অধিকার সংকুচিত করে নিজেদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করে। 

৮. মর্যাদার প্রশ্নে পার্থক্য :- যেহেতু লিখিত সংবিধানের আইনগুলি সরকার কর্তৃক সহজে পরিবর্তিত হয়না এবং আইনগুলি স্থায়ী তাই লিখিত সংবিধানের আইন অলিখিত সংবিধানের তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদাশীল। কিন্তু অলিখিত সংবিধানের আইনগুলি অস্থায়ী প্রকৃতির এবং তা সহজেই সরকার কর্তৃক পরিবর্তিত হয় - তাই অলিখিত সংবিধানের আইনগুলি লিখিত সংবিধানের আইনের মত মর্যাদার অধিকারী হতে পারেনা। 

৯. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কার্যকারিতার প্রশ্নে পার্থক্য :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সকল বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ও পার্থক্য সুনির্দিষ্টভাবে বন্টিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগগুলির মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দেবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় লিখিত সংবিধান কার্যকরী ;  কিন্তু অলিখিত সংবিধান কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

১০. বিচার বিভাগের প্রাধান্যের প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সংবিধানকে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা থাকে বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষাকর্তা বলা হয়। কিন্তু অলিখিত সংবিধানে সরকার ও আইনসভার হাতে আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তনের সকল ক্ষমতা নিহিত থাকে। ফলে অলিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য থাকেনা। 

১১. গতিশীলতার প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধান সাধারণত দুষ্পরিবর্তনীয়। তাই লিখিত সংবিধান আপাতদৃষ্টিতে গতিশীল নয়। কিন্তু অলিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল সমাজ , অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা ; জনগণের আশা - আকাঙ্খা - ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সহজেই পরিবর্তন করা হয়। তাই অলিখিত সংবিধান গতিশীল। 

১২. প্রথা , ঐতিহ্য , রীতিনীতি - ইত্যাদির প্রাধান্যের প্রশ্নে পার্থক্য :- লিখিত সংবিধানে প্রথা , রীতিনীতি ইত্যাদির তুলনায় গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক গৃহীত আইনগুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অলিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রথা , রীতিনীতি - ইত্যাদিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়।       


       

You May Also Like

0 comments