অলিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর।

by - March 22, 2022

অলিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 

অলিখিত সংবিধানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর। 

অলিখিত সংবিধানের দোষ - গুন আলোচনা কর। 

Merits and demerits of the unwritten constitution. ( In Bengali ) 




অলিখিত সংবিধানের ধারণা :- 


অলিখিত সংবিধান লিখিত সংবিধানের মত নির্দিষ্ট পরিকল্পনা , জাতীয় আদর্শ , রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ - ইত্যাদির ভিত্তিতে রচিত হয়না। এমনকি , অলিখিত সংবিধান কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ , গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক রচিত হয়না। সুতরাং অলিখিত সংবিধান হল - দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা সামাজিক ও আইনগত রীতিনীতি , প্রথা - পদ্ধতি , ঐতিহ্য , বিভিন্ন সামাজিক আচার আচরণ - ইত্যাদির মাধ্যমে অলিখিত সংবিধানের ভিত্তি রচিত হয়। 
গ্রেট ব্রিটেনে অলিখিত সংবিধানের ব্যাপক প্রকলন আছে। লিখিত সংবিধানের সাংবিধানিক ব্যবস্থাদির তুলনায় ব্রিটেনে প্রথা ও রীতিনীতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। 


অলিখিত সংবিধানের সুবিধা :- 


১. নমনীয়তা :- অলিখিত সংবিধানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল অলিখিত সংবিধান নমনীয়। যেকোনো ধরণের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অলিখিত সংবিধানের পরিবর্তন ঘটানো যায়। ফলে জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ হয় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। 

২. সুপরিবর্তনীয় :- অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয়। তাই যেকোনো জরুরি অবস্থায় সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তন ঘটানো যায় বা প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন আইনের উদ্ভব ঘটানো যায়। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অলিখিত সংবিধানকে রাষ্ট্রীয় শক্তির ভিত্তি বলে মনে করেন। 

৩. বিরোধের সম্ভাবনা হ্রাস :- সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হলে তা জনগণের আশা আকাঙ্খার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে সবসময় চলতে পারেনা। কিন্তু অলিখিত সংবিধান নমনীয় ও সুপরিবর্তনীয় হওয়ায় তা জনগণের আশা আখাঙ্খার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। ফলে নাগরিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। 


৪. গতিশীলতা :- যেকোনো সংবিধানের কার্যকারিতা নির্ভর করে তার গতিশীলতার উপর। অলিখিত সংবিধান যেহেতু নমনীয় ও সুপরিবর্তনীয় , তাই অলিখিত সংবিধান নিজের গতিশীল চরিত্র বজায় রাখতে পারে। 

৫. জরুরি অবস্থার পক্ষে উপযুক্ত :- রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার উদ্ভব ঘটলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। অলিখিত সংবিধান নিজের নমনীয় বৈশিষ্টের ফলে জরুরি অবস্থার সময় অধিক উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। 

৬. প্রচলিত প্রথা , রীতিনীতি - ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ :- অলিখিত সংবিধানে প্রচলিত সামাজিক , রাজনৈতিক প্রথা , রীতিনীতি , আচার - আচরণ , বিশ্বাস ও আদর্শ , জাতীয় মূল্যবোধ ইত্যাদিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে অলিখিত সংবিধান রাষ্ট্রীয় জীবন ও ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে। 

৭. জটিলতামুক্ত :- অলিখিত সংবিধান সর্বপ্রকারের জটিলতামুক্ত হয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রচলিত রীতিনীতি , প্রথা - ইত্যাদির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করে। ফলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়না। 

অলিখিত সংবিধানের অসুবিধা :- 


১. স্থায়িত্বের অভাব :- রাষ্ট্র পরিচালক বা শাসকদল নিজের নিজের প্রয়োজন ও সুবিধামতো নিয়ম নীতি পরিবর্তন করে থাকেন। ফলে অলিখিত সংবিধানের আইন ও নির্দেশগুলি স্থায়ী হয়না। জনগণের আশা আকাঙ্খা ও সরকারের ইচ্ছা - অনিচ্ছার সাথে সাথে অলিখিত সংবিধান ঘন - ঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। 

২. শাসকের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা :- অলিখিত সংবিধান সরকারের হাতেই পরিবর্তিত হয়। সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। ফলে অলিখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় সরকারের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। 

৩. সুস্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্টতার অভাব :- অলিখিত সংবিধানের আইনগুলি লিখিত আকারে থাকে না। তা কোনো গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক প্রবর্তিত হয়না। এই ধরণের সংবিধানের বিভিন্ন ব্যবস্থার আলোচনা , ব্যাখ্যা - ইত্যাদি অনুপস্থিত। ফলে অলিখিত সংবিধান অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট। 

৪. নাগরিক অধিকার অবহেলিত :- অলিখিত সংবিধান অলিখিত থাকে বলে জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ফলে , সরকার খুব সহজেই জনগণের অধিকার খর্ব করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারে। ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে অলিখিত সংবিধান কোনোভাবেই কার্যকরী নয়। 

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত না হলে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অলিখিত সংবিধান কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

৬. কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য :- অলিখিত সংবিধান সংশোধন ও আইন প্রণয়নের অধিকার লাভ করে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে সকল ক্ষমতা তুলে নিয়ে অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলিকে নিজেদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে। সেক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলির কোনো ক্ষমতা থাকেনা।    


 

You May Also Like

0 comments