লিখিত সংবিধান কাকে বলে ? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর।

by - March 21, 2022

লিখিত সংবিধান কাকে বলে ? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 

লিখিত সংবিধানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর। 

লিখিত সংবিধানের দোষ - গুন আলোচনা কর। 

What is the written constitution? Discuss the advantages and disadvantages of a written constitution. ( In Bengali ) 




লিখিত সংবিধানের ধারণা :- 


লিখিত সংবিধান বলতে সেই ধরণের সংবিধানকে বোঝানো হয় , যে ধরণের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার সকল বা বেশিরভাগ নিয়ম , নির্দেশ ও পদ্ধতি লিখিত আকারে উপস্থিত থাকে এবং প্রতিটি নিয়ম বা নির্দেশ দলিল হিসাবে উপস্থাপন করা যায়। 

লিখিত সংবিধান সাধারণতঃ কোনো নির্দিষ্ট গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত হয়। লিখিত সংবিধানের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল - ভারত , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , সুইজারল্যান্ড , চীন - ইত্যাদি রাষ্ট্রের সংবিধান। 


লিখিত সংবিধানের সুবিধা :- 


১. লিখিত সংবিধান সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট :- লিখিত সংবিধানের নিয়মবিধি , নির্দেশ ইত্যাদি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থিত থাকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের গঠন , কাঠামো ; সরকারের গঠন ও কার্যাবলী ; নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য সকল বিষয়ই স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকে। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধা হয় ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা কমে ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। 

২. স্থায়িত্ব :- লিখিত সংবিধান সাধারণত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। ফলে খুব সহজে এই সংবিধান পরিবর্তন করা যায় না এবং তা পরিবর্তনের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। এই কারণে লিখিত সংবিধান অলিখিত সংবিধানের তুলনায় অনেক বেশি স্থায়িত্বলাভ করে। 


৩. যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে উপযুক্ত :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে এবং ক্ষমতা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে বন্টিত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত হওয়া বাঞ্চনীয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত না হলে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিরোধ অনিবার্য। 

৪. গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষা :- সংবিধান লিখিত হলে রাষ্ট্র নিজের ইচ্ছামত নাগরিকদের অধিকার সংকুচিত করতে পারেনা। নাগরিকেরা নিজেদের অধিকার অর্জন করতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও আইনগত লড়াই করতে পারে। ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য অধিকারের সুরক্ষায় লিখিত সংবিধান একান্তভাবে কাম্য। 

৫. সুষ্ঠ বিচারকার্যের পক্ষে উপযুক্ত :- লিখিত সংবিধানের সকল নির্দেশ , আদেশ , বিধিনিয়ম - ইত্যাদি লিখিত আকারে স্পষ্টভাবে উপস্থিত থাকে। এছাড়াও লিখিত সংবিধানের প্রতিটি নির্দেশগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সংযুক্ত থাকে। এইসকল কারণে লিখিত সংবিধান সুষ্ঠ বিচারকার্যের পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত। 

৬. জনমতের যথার্থ প্রতিফলন :- লিখিত সংবিধান রচিত হয় গণপরিষদ বা কনভেনশন দ্বারা। গণপরিষদ ও কনভেনশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। ফলে বলা যেতে পারে লিখিত সংবিধানের নির্দেশগুলির মধ্যে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। 

৭. লিখিত সংবিধান মর্যাদার প্রতীক :- লিখিত সংবিধানের নির্দেশগুলিকে সহজে পরিবর্তন করা যায়না। সেগুলি অনেক বেশি স্থায়ী। ফলে জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ ও মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে লিখিত সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই জনগণের কাছে লিখিত সংবিধান অনেক বেশি মর্যাদার প্রতীক। 


লিখিত সংবিধানের অসুবিধা :- 


১. গতিশীলতা অনুপস্থিত :- লিখিত সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। তাই জনগণের আশা আকাঙ্খার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায়না। ফলে পরিবর্তনশীলতার সাথে তাল মিলিয়ে লিখিত সংবিধান চলতে পারেনা। 

২. সরকার পরিচালনায় ভারসাম্যহীনতা ও জটিলতা :- লিখিত সংবিধান সরকার পরিচালনায় ভারসাম্যহীনতা ও জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে। লিখিত সংবিধানের বিভিন্ন ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা সরকারের কাজকর্ম পরিচালনায় অন্তরায় সৃষ্টি করে। 

৩. মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ নয় :- লিখিত সংবিধানগুলি জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিলেও তাতে অনেক বাধা - নিষেধ আরোপ করে। সরকার নিজেদের সুবিধামত এই বাধা নিষেধগুলিকে কাজে লাগিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংকুচিত করে। 

৪. জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় :- লিখিত সংবিধান কোনো অবস্থাতেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। জরুরি অবস্থার সময়ে দ্রুত সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বা নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। কিন্তু লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। 


৫. অসম্পূর্ণতা :- লিখিত সংবিধানে সকল প্রকার প্রশাসনিক নির্দেশ , সরকার পরিচালনার নীতি - ইত্যাদি লিখিত আকারে উপস্থিত থাকেনা। তাই লিখিত সংবিধাকে অসম্পূর্ণ সংবিধান বলা হয়। 

৬. বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় লিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষাকর্তা বলে মনে করা হয় , তাই সংবিধানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে। ফলে সরকারের অন্য দুই বিভাগ যথা - আইন ও শাসন বিভাগের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

                

You May Also Like

0 comments