মৌর্য যুগের আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিচয় দাও।

by - March 06, 2022

মৌর্য যুগের আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিচয় দাও। 

Discuss the socio-economic condition of the Maurya era. ( In Bengali ) 




মৌর্য যুগের সামাজিক অবস্থা :- 


বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম প্রথার প্রচলন ; জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা হ্রাস ; নতুন জাতি বা বর্ণের উৎপত্তি:-
হিন্দু সমাজের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম মৌর্য যুগে প্রচলিত ছিল। গ্রীক লেখকদের বিবরণী থেকে জানা যায় যে , নিজ নিজ বর্ণবৃত্তি ত্যাগ করা নিষিদ্ধ ছিল। অশোকের অনুশাসন লিপিতে গৃহী ও ভ্রাম্যমাণ সন্নাসীদের কথা উল্লেখিত আছে। এর থেকে মনে করা হয় সে সময় সমাজে চতুরাশ্রম প্রথা প্রচলিত ছিল। 
কিন্তু সে যুগে বহু ধর্ম মতের উদ্ভব ও বিদেশী জাতির আগমনের ফলে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। ভারতীয় ও বিদেশী নৃপতিদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। গ্রিক লেখকদের বর্ণনা অনুসারে মৌর্যযুগের বৈশ্য ও শূদ্রদের মধ্যে বৃত্তিমূলক পার্থক্যের অবসান ঘটতে থাকে এবং কৃষক , পশুপালক ও বণিকরা নির্দিষ্ট বর্ণরূপে স্বীকৃতি পায়। এইভাবে সে যুগে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা কিছুটা হ্রাস পাওয়ার ফলে এক সুদুরপ্রসারী সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হয়। 


বর্ণাশ্রম প্রথার সামাজিক চরিত্র :- 
সমাজের প্রথম তিন বর্ণের লোকেরা শুদ্রদের তুলনায় অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। বৈশ্যরা '' দ্বিজ '' শ্রেণীভূক্ত হলেও ( অর্থাৎ উপনয়ন গ্রহণের  অধিকারী ) তাদের নানাবিধ অসুবিধা ছিল। কেননা ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয়রা বৈশ্যদের সামাজিক স্বীকৃতি দানের ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু বৈশ্যরা ছিলেন  বিত্তশালী এবং তাঁরাই ছিলেন একাধারে দেশের অর্থনীতির প্রধান পরিচালক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক। সুতরাং বৈশ্য শ্রেণীর সাথে অপর দুই উচ্চবর্ণের সংঘাত ছিল অনিবার্য। 

মৌর্য সমাজে নারীর স্থান :-
গুণাঢ্য - এর গ্রন্থে সকল শ্রেণীর নারীদের স্বাধীনতার বহু উল্লেখ পাওয়া যায়।  সে যুগের ইতিহাসে নাবালক পুত্রদের  অভিভাবিকা হিসাবে রাজমহিষীগণ  কর্তৃক রাজ্যশাসনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরা স্বাধীনভাবে দর্শন আলোচনায় অংশ নিতেন এরূপ দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু স্বামীদের সঙ্গে স্ত্রীরা ধর্মশাস্ত্র জ্ঞানার্জনের অধিকার লাভ করতেন না। নারীদের মধ্যে অবরোধ প্রথা প্রচলিত ছিল এবং রাজপরিবার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারীরা দেহরক্ষী হিসেবেও নিযুক্ত থাকতেন। বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষুনীরা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতেন। এই যুগে পুণ্যবতী নারীদের দান ধ্যানের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে পুণ্যবতী রানী গৌতমী বলশ্রীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শাসন কার্যের ব্যাপারে নারীদের উল্লেখ পাওয়া যায়।  যেমন- '' স্ত্রী অধ্যক্ষ মহাপাত্র ''।


দাসত্ব প্রথা :-
মৌর্য যুগে দাসত্ব প্রথা সমাজ স্বীকৃত ছিল। অশোক দাস ও মজুদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য নিরূপণ করেছিলেন এবং সকলের প্রতি সদয় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য আরিয়ান ও মেগাস্থিনিস দাসত্ব প্রথার উল্লেখ করেননি। সম্ভবত ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ভারতের দাসত্ব প্রথা কঠোর ছিল না বলেই তা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। দাসদের অধিকাংশই ছিল নিম্নবর্ণভুক্ত। 

পরিবারও বিবাহ :- 
পিতা ছিলেন গৃহকর্তা এবং পরিবারের যৌথ সম্পত্তি প্রধান পরিচালক। পরিবারের সকল সদস্য সম্পত্তির সমান অধিকারী হত। সে যুগে ব্যক্তির পরিবর্তে পরিবারই ছিল সমাজ ব্যবস্থার প্রধান অঙ্গ। জীবিত ও মৃতদের মধ্যে যোগসূত্র সাধনের উদ্দেশ্যে মৃতদের প্রতি শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান ছিল এক মহান পারিবারিক ধর্মানুষ্ঠান। প্রাচীন আইন শাস্ত্রতে সন্তান - সন্ততিদের ওপর পিতা বা গৃহকর্তার অধিকার স্বীকৃত ছিল।  পিতা-পুত্রকে বিক্রয় পর্যন্ত করতে পারতেন।  কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রথা নিন্দনীয় বলে বিবেচিত হয়। 

মৌর্য যুগের ছাত্রজীবনের মেয়াদ ছিল প্রায় 12 বছর। সাধারণত প্রতিটি ছাত্র কুড়ি বছর বয়সে গুরুগৃহ থেকে ফিরে কর্মে সংশ্লিষ্ট হত। একই বর্ণের ও শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ দেওয়া হতো। তবে স্বগোত্রে বিবাহ ছিল অবাঞ্ছিত। ধর্মশাস্ত্রতে আট প্রকার বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিল - রাক্ষস বিবাহ , পৈশাচ বিবাহ , অসুর বিবাহ এবং গান্ধর্ব বিবাহ। 


শিক্ষা ; শিক্ষাকেন্দ্র ও শিক্ষার বিষয় :- 
মৌর্য যুগে শিক্ষার বহুল প্রচলন ছিল। ধর্মশাস্ত্রে অশিক্ষিত ব্রাহ্মণদের নিন্দা করা হয়েছে। ব্রাক্ষ্মনেরাই একমাত্র শিক্ষার অধিকার লাভ করতেন। কিন্তু বুদ্ধের পর বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শিক্ষার বিস্তারে সচেষ্ট হন। প্রাচীনকাল থেকেই উজ্জয়িনী ,  তক্ষশীলা , বারাণসীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিদ্যা শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। 
পাণিনির সময় থেকে ( খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ) ব্যাকরণ পাঠে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং তা ছিল প্রধান পাঠ্য বিষয়। মহাভারত ও পুরাণ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারিগরি বিদ্যা , গণিত , ছন্দ - ইত্যাদি বিষয়ক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। মনুসংহিতায় যান্ত্রিক ও খনিজ বিদ্যায় বিশেষ  শিক্ষাদানের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতেও  চিকিৎসাশাস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

ধর্ম ও উৎসব - অনুষ্ঠান :- 
এই যুগে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম প্রবল হয়ে উঠলেও ব্রাহ্মধর্মও প্রচলিত ছিল।  জৈন ধর্ম বিহার ও ওড়িষায় খুবই জনপ্রিয় ছিল। জনশ্রুতি অনুসারে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম ভারত ও ভারতের বাইরেও বিস্তার লাভ করেছিল। বহু ধর্ম ও ধর্মমতের প্রচলন থাকা সত্বেও মৌর্য যুগে ধর্ম সহিষ্ণুতার পরিচয় পাওয়া যায়। 
বাৎসায়নের রচনায় অবসরভোগী ও সংস্কৃতি সম্পন্ন ধনী যুবকদের ব্যয়বহুল জীবনের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। '' সংযুক্ত নিকায় ''  গ্রন্থে '' সবরতিভর '' উৎসবের উল্লেখ আছে। যা লিচ্ছবিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের মধ্যে ঋতু উৎসব ও বসন্ত উৎসবের পরিচয় পাওয়া যায়। জৈন গ্রন্থে দীপাবলি উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। 


মৌর্য যুগের ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা :- 


মৌর্য রাজাদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে মৌর্য যুগ থেকে ভারতীয় অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। বিশেষ করে প্রথম তিনজন মৌর্য সম্রাট - চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য , বিন্দুসার ও অশোকের আমলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি উৎকর্ষতা লাভ করে। পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাই মৌর্য যুগকে এক ''বিপ্লবী যুগ'' বলা যায়। এই সময় ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়েছিল এ কথা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। 

মৌর্য যুগে ভারতীয় শিল্প বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসে। মৌর্য সম্রাটদের প্রশাসনিক দক্ষতা ব্যবসা-বাণিজ্যের ও শিল্পের প্রসারে  সহায়ক হয়ে ওঠে  এবং বৃত্তিমূলক শিল্পগুলি ক্ষুদ্রায়তন শিল্পে পরিণত হয়।  অর্থশাস্ত্রে  শিল্পক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ভূমিকার কথা বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন , রপ্তানি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করত। এ জন্য বহু সংগঠন ছিল যেমন - ''ব্যবসামূলক নিগম '' ও ''বৃত্তিমূলক নিগম '' -  ইত্যাদি। এছাড়াও নিগমগুলি আধুনিক যুগের ব্যাংক এর মত কাজ করত। ডক্টর ব্লক পাটলিপুত্র নগরে আধুনিককালের বাণিজ্য সংস্থার মতো এক বিরাট সংস্থার অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। 

মৌর্য যুগের বহুবিধ শিল্পজাত পণ্য উৎপাদিত হতো। যেমন বস্ত্রশিল্প। মৌর্য যুগে ভারতীয় বস্ত্রশিল্প উন্নত ছিল। দেশে ও বিদেশে ভারতীয় বস্ত্রের যথেষ্ঠ প্রসার লক্ষ্য করা যায়। সুতি বস্ত্রের সঙ্গে রেশম ও পশম বস্ত্রেরও সে যুগে খ্যাতি ছিল।গান্ধার পশম বস্ত্রের প্রধান কেন্দ্র ছিল।  সে যুগের কারুকার্যময় কার্পাস ও রেশম বস্ত্রের প্রচলন ছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে মসলিন বস্ত্র রোমে  রপ্তানি হতো। গাঙ্গেয় উপত্যকায় মসলিন বস্ত্রের বহু কেন্দ্র ছিল। বস্ত্র শিল্প সেযুগের বহু মানুষের জীবিকা ছিল। 

মৌর্য শিল্পীরা কাষ্ঠ , হস্তিদন্ত ও চর্ম শিল্পে অসাধারণ নৈপুণ্য অর্জন করেছিল।    চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাষ্ঠনির্মিত প্রাসাদ কাষ্ঠ  শিল্পের উৎকর্ষের চরম নিদর্শন। এ ব্যতীত সমুদ্রগামী নৌ যান , শকট  , রথ প্রভৃতি নির্মাণেও মৌর্য শিল্পীরা অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিল। 

খনি শিল্পও যথেষ্ট উন্নত ছিল। অর্থশাস্ত্রে নানাপ্রকার ধাতু শিল্পের উল্লেখ আছে। খনিজবিদ্যা সম্পর্কে ভারতবাসী জ্ঞান লাভ করেছিল। খনির কার্য পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মচারী নিযুক্ত হতেন। স্বর্ণ , রৌপ্য , লৌহ , তাম্র , ব্রোঞ্জ ও টিন প্রভৃতি ধাতুর বহুল প্রচলন ছিল। 

বুদ্ধের সময় থেকে ভারতে ধণতন্ত্রবাদের উদ্ভব হয়। মৌর্য যুগে সম্পদ পুঞ্জীভূত হবার দৃষ্টান্ত আছে। এই যুগে বণিক ও ব্যবসায়ীরা ছিল বিত্তশালী এবং এদের বিপুল ঐশ্বর্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।  সাঁচি স্তুপ গুলিতে ধনীদের প্রচুর অর্থ দানের উল্লেখ আছে। মন্দির ও বৌদ্ধ বিহার গুলিতে ধনী বণিকরা অকাতরে অর্থ দান করতেন। বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থ বণিক শ্রেণীর প্রচুর অর্থ সম্পদের উল্লেখ আছে। সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ছাড়াও  সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার মৌর্য যুগের বৈষয়িক সমৃদ্ধির  অন্যতম কারণ। 

ভূমি রাজস্ব সে যুগে  প্রধান আয় ছিল সত্য ; কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেও প্রচুর অর্থ সমাগম হত।  সেযুগে '' বলি '' ও '' ভাগ '' এর সঙ্গে বাণিজ্য শুল্কও রাষ্ট্রের প্রধান আয় ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন কালে একটি স্বতন্ত্র নৌ  বিভাগ ও নাবাধ্যক্ষের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব ছিল নদীবন্দর গুলি রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং সমুদ্রপথে বাণিজ্যপোত  চলাচলে উৎসাহ দান করা। কলিঙ্গ বিজয়ের পর কলিঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বিখ্যাত বাণিজ্য বন্দর গুলি মৌর্য সাম্রাজ্যের অধিকারভুক্ত হওয়ায় সমুদ্রপথে বাণিজ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। মৌর্য রাজাদের আমলে পাটলিপুত্র শহর বহু বিদেশি বসবাস করত। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ব্যবসায়ী।  বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে মৌর্য সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল স্থলপথ ও জলপথ ধরে।  বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হতো ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলো থেকে। ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ গুলি আরব সাগরের উপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে উপস্থিত হত। আবার লোহিত সাগরের ভিতর দিয়ে ভারতীয় বাণিজ্য পোত্ গুলি মিশর দেশেও যাতায়াত করত। অপরদিকে স্থলপথেও পারস্য ও এশিয়া মাইনরের মধ্যে ভারতীয় পণ্যদ্রব্য ভূমধ্যসাগরের উপকূলে পাঠানো হতো। 

মৌর্য যুগের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নত ও সুনিয়ন্ত্রিত ছিল। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্র মনোযোগী ছিল এবং বাণিজ্যপথগুলির নিরাপত্তার প্রতি রাষ্ট্রের সজাগ দৃষ্টি থাকতো। প্রধানত নদীপথ বেয়েই অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের চলাচল ছিল এবং স্থলপথে গো শকট ও উটের পিঠে পণ্যদ্রব্য আদান-প্রদান করা হতো। গঙ্গা , যমুনা , গোদাবরী ও সিন্ধু নদীগুলি ছিল প্রধান  জলপথ। দেশের অভ্যন্তরে বড় বড় সড়ক পথ বিভিন্ন দিকে প্রসারিত ছিল। এই যুগে রাজপথ '' মহামার্গ '' নামে অভিহিত হত। স্থলপথে বণিকদের পথনির্দেশের জন্য '' স্থল নিয়ামক ''  নামে এক শ্রেণীর কর্মচারী নিযুক্ত থাকতো। বাংলাদেশ ও মগধ থেকে সুদূর কাশ্মীর ও গান্ধার পর্যন্ত বনিকরা পন্য নিয়ে কারবার করত। উত্তর ভারতের রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপিত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। 

বৈদিক যুগে মুদ্রার স্থলে বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল।  কিন্তু ক্রমশ বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে পণ্য বিনিময়ের পরিবর্তে মূল্যবান ধাতুর বিনিময় প্রথা প্রচলিত হয়।  মৌর্য যুগে মূল্যবান ধাতুর মুদ্রার প্রচলন বহু হারে বৃদ্ধি পায়। 
পাণিনির '' ব্যাকরণ'' , ''জাতক'' ,  ''অর্থ শাস্ত্র '' তে  বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার উল্লেখ আছে। স্বর্ণমুদ্রা '' নিবক '' ও '' সুবর্ণ '' নামে অভিহিত হত এবং রৌপ্যমুদ্রা '' কার্যাপন '' ও '' প্রবন '' নামে প্রচলিত ছিল। '' কার্যাপন '' নামক তাম্রমুদ্রারও উল্লেখ পাওয়া যায়।  এছাড়া অর্থশাস্ত্রে '' পণ '' নামক একপ্রকার রৌপ্য ও '' মাবক '' নামক একপ্রকার তাম্রমুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। মৌর্য শাসন কালে রাজা বা রাষ্ট্রই একমাত্র মুদ্রা প্রচারের অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও বণিক সংঘ ও পৌর প্রতিষ্ঠানগুলিও    মুদ্রা প্রচার করার অধিকার লাভ করত।  মুদ্রা থেকে মৌর্য যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার আভাস পাওয়া যায়। 




You May Also Like

0 comments