শিক্ষা বিজ্ঞানের পরিধি / আলোচনার বিষয়বস্তু।

by - January 02, 2022

শিক্ষার পরিধি আলোচনা করো। 

শিক্ষা বিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা করো। 

শিক্ষা বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। 

শিক্ষা বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তু।


শিক্ষার পরিধি :- 

শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিক্ষা সম্পর্কে প্রাচীন ধ্যান - ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এখন শিক্ষা বলতে পুঁথিনির্ভর মুখস্থ বিদ্যাকে বোঝায় না। আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে , শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর জীবনের সামগ্রিক বিকাশের একটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীকে বাঞ্ছিত অভিজ্ঞতালাভে সহায়তা করে এবং আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদান বর্তমান - যথা - শিক্ষার্থী , শিক্ষক , পাঠক্রম ও বিদ্যালয়। শিক্ষার এই চারটি উপাদান পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার ধারা প্রবহমান থাকে। শিক্ষার আলোচনার পরিধি সম্পর্কে বিভিন্নভাবে আলোচনা করা যায়। 


১. শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া :- আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে , শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে শিশুর শিক্ষা শুরু হয় প্রকৃতপক্ষে তার মাতৃজঠরে। শিশু জন্ম নেওয়ার পর বিভিন্ন নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়ন্ত্রিত মাধ্যম থেকে অভিজ্ঞতালাভ শুরু করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সামাজিক অবস্থাগুলির সাথে মানুষ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করতে থাকে - অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। 

২. শিক্ষা দর্শনের আলোচনা :-  শিক্ষাবিজ্ঞান কয়েকটি দার্শনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন - ভাববাদ বা আদর্শবাদ , প্রয়োগবাদ , প্রকৃতিবাদ - ইত্যাদি। শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই দার্শনিক তত্ত্বগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এই সকল দার্শনিক তত্ত্বগুলি নিয়ে আলোচনা করা শিক্ষার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 


৩. সমাজের সাথে সম্পর্কের আলোচনা :- শিক্ষা বিজ্ঞান হল একটি প্রয়োগমূলক সামাজিক বিজ্ঞান। তাই মানুষের সাথে সমাজের বিভিন্ন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কীভাবে শিক্ষাকে প্রভাবিত করে - সে সম্পর্কে আলোচনা করাও শিক্ষা বিজ্ঞানের কাজ। সমাজ ও শিক্ষার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা করে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিদ্যা।    

৪. শিক্ষন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা :- আধুনিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকেন্দ্রীক। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি , বিভিন্ন প্রণালী ও পর্যবেক্ষণ , শিক্ষন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলচনা শিক্ষাবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ধারণাটি '' Psychology of teaching and learning '' নামে পরিচিত।  

৫. শিক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা :- পূর্বতন শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার ভিত রচনা করে ; তার ভিত্তিতেই আবার গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের শিক্ষা। তাই শিক্ষার ইতিহাস আলোচনা করা শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ। শিক্ষার অতীত জ্ঞান ভবিষ্যৎ শিক্ষার কাঠামোর মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে শিক্ষাবিজ্ঞান। 

৬. শিক্ষা - বিষয়ক অর্থনীতি সম্পর্কে আলোচনা :- প্রতিটি শিক্ষার্থী এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে জাতীয় নীতি , জাতীয় আয় - ব্যয় , অর্থনৈতিক পরিকল্পনা - ইত্যাদির মাধ্যমে। বর্তমানে একটি বিষয় স্বীকৃত যে , জাতীয় আয় বিষয়টির সাথে শিক্ষা বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় আজ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। ফলে শিক্ষা বিষয়ক অর্থনীতি শিক্ষাবিজ্ঞানের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। 


৭. বিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা :- শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদানের মধ্যে একটি অন্যতম হল বিদ্যালয় বা শিক্ষালয়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথার্থ শিক্ষা প্রশাসনিক পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে সফল করতে পারে। তাই বিদ্যালয় প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি প্রধান কাজ। 

৮. শিক্ষা - প্রযুক্তি সম্পর্কিত আলোচনা :- আধুনিক যুগে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সাথে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার প্রচলিত হয়েছে। যথার্থ শিক্ষা প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা পরিচালনা ও শিক্ষাদানের কাজকে অনেক বেশি যথার্থ করে তোলা সম্ভব। তাই শিক্ষা প্রযুক্তি বর্তমানে শিক্ষা বিজ্ঞানের আলোচনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৯. শিক্ষা ও জাতীয়তাবোধ :- প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ। এর ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে ভবিষ্যত নাগরিক হিসেবে পালনীয় কর্তব্যগুলি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। তাই জাতীয়তাবোধ বিকাশ সংক্রান্ত আলোচনা শিক্ষাবিজ্ঞানের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। 

১০. জীবনশৈলী , স্বাস্থ্য শিক্ষা , নৈতিকতা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত আলোচনা :- শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে জীবনশৈলী , স্বাস্থ্য শিক্ষা , নৈতিকতা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। শিক্ষা বিজ্ঞান এই সকল বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সেই প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় , শিক্ষা বিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি সর্বদাই আপেক্ষিক। ব্যক্তি ও সমাজের ব্যাপ্তি প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা বিজ্ঞানের আলোচনার পরিধির পরিবর্তন ও বিকাশ ঘটে। ফলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন তত্ত্ব ও দর্শন সংযোজিত হয়েছে। আধুনিককালে , বিশ্বায়ন , আধুনিকীকরণ , জাতীয় নীতি , আন্তর্জাতিক শিক্ষা নীতি - ইত্যাদির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে শিক্ষা বিজ্ঞানের পরিধিও সর্বদা পরিবর্তনশীল।   

   

You May Also Like

0 comments