শিবাজীর সাফল্যের কারণ :- Reasons for Shivaji's success: -

by - December 23, 2021

Reasons for Shivaji's success: -

শিবাজীর সাফল্যের কারণগুলি আলোচনা করো। 

শিবাজীর সাফল্যের কারণ :- 


ঐতিহাসিক গর্ডন শিবাজী সম্পর্কে বলেছেন - The most charismatic and dynamic leader in Maratha history . মারাঠারা তাঁকে '' মহামানব '' বলে মনে করত। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব , দেশপ্রেম , কূটনৈতিক কৌশল মারাঠা জাতিকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। শিবাজীর জীবনকালে ঔরঙ্গজেব সমগ্র শক্তি প্রয়োগ করেও মারাঠা জাতিকে পদানত করতে পারেননি। এমনকি , মারাঠা জাতিকে শিবাজী যে দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন , তাঁর মৃত্যুর পরও মারাঠা জাতি মোগল প্রতিরোধে অনেকটাই সফল হয়েছিল। শিবাজীর সাফল্যের কারণগুলি হল - 


১. শিবাজীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতা :- শিবাজী নিজে ছিলেন একজন পরাক্রমী ও সুদক্ষ যোদ্ধা। তাঁর দূরদৃষ্টি ও কূটনৈতিক চেতনা ছিল প্রবল। প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও শিবাজী সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। শিবাজীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও নেতৃত্ব মারাঠাদের সফলতা এনে দেয়। 

২. পরধর্মসহিষ্ণুতা :-  হিন্দু ধর্মের প্রবল অনুরাগী হয়েও শিবাজী ছিলেন পরধর্মসহিষ্ণু। মোগল অঞ্চলগুলিতে আক্রমণকালে তিনি কখনোই অযথা হিংসার আশ্রয় গ্রহণ করেননি বা মসজিদের ওপর আক্রমণ করেননি।  এমনকি বাবা ইয়াকত দরগাতেও তিনি অর্থসাহায্য করেছিলেন। 

৩. শিবাজীর মানবতাবাদী চরিত্র :- শিবাজীর মানবতাবাদী চরিত্রের প্রশংসা তাঁর ঘোর শত্রুরাও করে থাকেন। শিবাজী কখনোই অপ্রয়োজনে হত্যা করেননি বা মুসলিম নারী , শিশুদের ওপর অত্যাচার করেননি। 

৪. ভৌগোলিক বিষয় :- মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক প্রকৃতি শিবাজীর সাফল্যের সহায়ক হয়েছিল। পশ্চিমঘাট , সাতপুরা , বিন্ধ্য , আরাবল্লী - ইত্যাদি পর্বত দ্বারা মারাঠা সাম্রাজ্য বেষ্টিত থাকায় মোগল সহ অন্যান্য শত্রুরা সহজে মারাঠা রাজ্য আক্রমণ করতে সক্ষম হত না। 

৫. যুদ্ধনীতি : - শিবাজী মোগল প্রতিরোধে গেরিলা যুদ্ধনীতি অনুসরণ করেছিলেন। মারাঠারাজ্যের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিমন্ডলে মারাঠারা যতটা সহজে গেরিলা যুদ্ধ কৌশলে দক্ষ হয়ে উঠেছিল সেই দক্ষতা মোগলদের পক্ষে কখনোই অর্জন করা সম্ভব ছিল না। 

৬. জাতীয়তাবোধ :- শিবাজীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেম ছিল প্রবল। তাঁর সৈন্যবাহিনীকে তিনি দেশপ্রেমের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছিলেন। পক্ষান্তরে মোগল বাহিনীর মধ্যে দেশপ্রেম বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। 


৭. সুদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা :- জাতীয়তাবোধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একটি প্রজাকল্যাণমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর ন্যায়পরায়ণ ও উদারনৈতিক শাসনে তিনি প্রজাবর্গের সহযোগিতা ও সমর্থনলাভে সমর্থ হয়েছিলেন। 

৮. বিজাপুর ও গোলকোন্ডার সাহায্য ও সমর্থনলাভ :- ঔরঙ্গজেব বিজাপুর ও গোলকোন্ডা আক্রমণ করলে তা শিবাজীর পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠে। ওই দুই রাজ্যের কর্মচ্যুত সৈনিকরা মারাঠা সেনাদলে যোগদান করলে শিবাজীর শক্তিবৃদ্ধি ঘটে। 

৯. হিন্দু সমর্থনলাভ :- ঔরঙ্গজেবের উগ্র হিন্দু বিরোধিতা হিন্দুদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় হিন্দুরা শিবাজীকে হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন এবং তাঁকে সর্বতোভাবে সমর্থন করতে থাকেন। 

১০. মোগল সাম্রাজ্যের বিশালতা :- ঔরঙ্গজেবের আমলে মোগল সাম্রাজ্য বিশালাকার ধারণ করে। ফলে সম্রাটের পক্ষে সমগ্র শক্তি শিবাজীর বিরুদ্ধে নিয়োজিত করা সম্ভব ছিলনা। এছাড়াও ঔরঙ্গজেব সাম্রাজ্যের অন্যত্র বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। 

১১. মারাঠা ঐক্য স্থাপন :- শিবাজীর পূর্বে মারাঠারা ছিল শতধাবিভক্ত একটি জাতি। শিবাজী মারাঠাদের ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় রাষ্ট্রের সূচনা করেন। ফলে তিনি মারাঠা জাতির কিংবদন্তি নেতায় পরিণত হন। 

১২. সুদক্ষ গুপ্তচর বাহিনী :- মোগল আক্রমণ প্রতিরোধে শিবাজী একটি সুদক্ষ গুপ্তচর বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। এই গুপ্তচর বাহিনী শিবাজীর রাজনৈতিক সাফল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল। 


You May Also Like

0 comments