Powers and functions of the US President. মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী।

by - December 13, 2021

Powers and functions of the US President. 

মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী। 

মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী :- 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিশেষ ধরনের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি শাসন বিভাগের সর্বময় কর্তা। অধ্যাপক G.F. Strong এর মতে , পৃথিবীর অন্য কোনো গণতান্ত্ৰিক রাষ্ট্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রপ্রধান দেখা যায় না। একদিকে মার্কিন সংবিধানের প্রণেতাগণ মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে একজন শক্তিশালী শাসক হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন আবার অন্যদিকে বিগত শতকের আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতার শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 


১. কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী :- মার্কিন সংবিধানের ২(১) নং ধারায় যুক্তরাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই ন্যাস্ত রয়েছে। তিনি শাসনবিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি। প্রশাসনিক কাঠামোর বিন্যাস , শাসন বিভাগীয় নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ , প্রশাসনিক আদেশ জারী প্রভৃতি কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন এবং প্রশাসনিক এজেন্সিগুলির কাজের তদারকি করেন। 

২. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা :- মার্কিন সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদনসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের বিচারক , কূটনৈতিক দূত , ক্যাবিনেটের সদস্য , বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নিযুক্ত করেন। মার্কিন কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করে নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করতে পারে। 

৩. সামরিক ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দেশের সৈন্যবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে। রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদনক্রমে সৈন্যবাহিনীর ও নৌবাহিনীর অফিসারদের নিয়োগ ও অপসারণ করতে পারেন। এছাড়া যুদ্ধের সময় সর্বোচ্চ সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রপতির। 


৪. যুদ্ধকালীন বিশেষ ক্ষমতা :- যুদ্ধকালীন অবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধকালীন অবস্থায় তিনি নিয়মতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। সৈন্য সংখ্যা , সৈন্য প্রেরণ , যুদ্ধ নীতি , অস্ত্র প্রয়োগ , সামরিক জোট গঠন  - ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ ও অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার অধিকারী।   

৫. পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত ক্ষমতা :- পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের নিয়োগ করে থাকেন। তিনি অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের গ্রহণ করেন এবং বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদন করেন পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে তিনি জাতির একমাত্র প্রতিভূ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রধান কান্ডারি। 

৬. জরুরী অবস্থাকালীন ক্ষমতা :- জরুরি অবস্থায় বা সংকটকালীন পরিস্থিতিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন। জরুরী অবস্থার উদ্ভব হলে তাঁর শাসন সংক্ৰান্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়। যদিও সংবিধানে জরুরী অবস্থার ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলা হয়নি ; তবুও মার্কিন কংগ্রেস ও জনসাধারণ মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই বিশেষ ক্ষমতাকে মেনে নিয়েছে। 

৭. আইন বিষয়ক ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপতি শাসিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হয়েছে। সুতরাং তত্ত্বগত বিচারে মার্কিন রাষ্ট্রপতির আইন বিষয়ক ক্ষমতা থাকার কথা নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আইন সংক্রান্ত ব্যাপারেও মার্কিন রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। মার্কিন সংবিধানের ২ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের কাছে দেশের অবস্থা সম্পর্কে বাণী প্রেরণ করতে পারেন এবং কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। 


৮. ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা :- মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোনো বিল অনুমোদন করতে অস্বীকার করতে পারেন।একে তাঁর Veto ক্ষমতা বলা হয়। ১০ দিনের মধ্যে আপত্তিসহ বিলটি রাষ্ট্রপতি ফেরত পাঠান। কিন্তু কংগ্রেসের উভয়কক্ষে দুই - তৃতীয়াংশের সম্মতিক্রমে পাস হলে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়াই বিলটি আইনে পরিণত হয়। 

৯. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপতিকে সারা বছরের জন্য আনুমানিক আয় - ব্যয়ের একটি হিসাব কংগ্রেসের নিকট পেস করতে হয়। তিনি পরিপূরক ব্যয় - বরাদ্দের দাবিও পেস করতে পারেন। কংগ্রেসের বাজেট ব্যুরো -র ডাইরেক্টর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণাধীনে কাজ করেন। 

১০. শাসন বিভাগীয় আদেশ জারির ক্ষমতা :- বর্তমানে আইনের সংখ্যা ও জটিলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কংগ্রেসের পক্ষে সকল আইন বিস্তারিতভাবে পুরোপরি প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস প্রণীত আইনের ফাঁকগুলিকে পূরণ করার জন্য শাসন বিভাগীয় আদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। এই সমস্ত আদেশ আইনের মতই কার্যকর হয়। 

১১. কমিশন গঠনের ক্ষমতা :- মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্ষেত্রবিশেষে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে অস্থায়ী কমিশন গঠন করতে পারেন। তারপর সেই কমিশন যেন রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুসারে সুপারিশ করে সেজন্য রাষ্ট্রপতি সেই কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। 

১২. বিচার  সংক্রান্ত ক্ষমতা :- রাষ্ট্রপ্রধান ও শাসন বিভাগের প্রধান হিসাবে রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় বিচার বিষয়ক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তির দন্ডাদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে পারেন। তবে অঙ্গরাজ্যের আইনভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা প্রযুক্ত হয়না। 

১৩. দলনেতা হিসাবে ভূমিকা পালন :- নিজের দলের নেতা হিসাবেও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় নেতৃত্বের কারণে তাঁর দলের কর্তৃত্ব তাঁর হাতেই থাকে। এইভাবে তিনি তাঁর দল ও কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি হলেন সারা দেশে নিজের দলের প্রতিনিধি।  

১৪. বিশ্বনেতা হিসাবে ভূমিকা :- বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্ব নিশ্চিতভাবে গৃহীত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন , বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উল্লেখযোগ্য নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন। বর্তমান বিশ্ব একমেরুকেন্দ্রিক এবং এই একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রধান নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি সারা বিশ্বের নেতা হিসাবে ভূমিকা পালন করে থাকেন। 

তবে বলে রাখা দরকার যে , রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বহুলাংশে রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিত্ব ও সমকালীন পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। ওয়াসিংটন , আব্রাহাম লিংকন , রুজভেল্ট প্রমুখ দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাষ্ট্রপতিগণের ভূমিকা মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদকে বিশ্বনেতার পদে পরিণত করেছে।     



You May Also Like

0 comments