features of indian rural society গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ :-

by - December 13, 2021

Features of Indian Rural Society 

গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ :- 


গ্রামীণ সমাজের প্রকৃতি আলোচনা করলে এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামীণ সমাজের বহু এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্তমান। বৈশিষ্ট্যগুলি হল - 

১. কৃষি বৃত্তি :- মূলত কৃষিকে কেন্দ্র করেই গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়ে থাকে। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যরা হলেন প্রধানত কৃষিজীবী। গ্রামবাসীদের পেশা ও জীবিকার উৎস হলো কৃষি। গ্রামবাসীদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক রুজি রোজগারের উপায় - উৎস থাকলেও সেগুলো মূলত কৃষির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদন্ডই হল কৃষি। 

২. জনসম্প্রদায়গত চেতনা :- গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে এক সমষ্টিগত চেতনার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধের বর্তমান থাকে।  স্বভাবতই গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে এক গভীর জনসচেতনার সৃষ্টি হয়। 


৩. যৌথ পরিবার ব্যবস্থা :- গ্রামীণ সমাজের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো যৌথ পরিবার ব্যবস্থা। একান্নবর্তী যৌথ পরিবার ব্যবস্থার অস্তিত্ব গ্রামাঞ্চলে এখনো কমবেশি বর্তমান। এর একটি বড় কারণ হল গ্রামাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কারণে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে যৌথ পরিবার ব্যবস্থার প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। 

৪. সরল গ্রামীণ জীবন :- সরলতা গ্রামীণ সমাজ ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকৃতিগতভাবে গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীরা সহজ ও সরল। তাদের জীবনধারা সহজ স্বচ্ছন্দ ও শান্তিপূর্ণ। গ্রামবাসীদের আচরণের মধ্যে সঠতা থাকে না। তাদের আচার-ব্যবহার হলো কৃত্রিমতা বর্জিত এবং স্বতঃস্ফূর্ত। 

৫. প্রতিবেশীসুলভ আচরণ :- গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। গ্রামীণ জনসম্প্রদায় সাধারণত স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট হয় ও সীমাবদ্ধ পরিসরের মধ্যে এই ধরনের জনসম্প্রদায় গড়ে ওঠে। এই সমস্ত কিছুর জন্য গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেশী সুলভ আচরণ তৈরি হয়। 

৬. বিচ্ছিন্নতা :- গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বর্তমান থাকে। এই বিচ্ছিন্নতা গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীদের ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতা নয় ; এ হল গ্রামীণ পরিবারগুলো মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা। যেহেতু গ্রামবাসীদের অধিকাংশ আর্থসামাজিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা যে যার পরিবারের মধ্যেই করে থাকে - সেহেতু গ্রামীণ জীবন স্বল্প পরিমাণে হলেও বিচ্ছিন্ন হয়। 


৭. দারিদ্রতা :-  ভারতীয় গ্রামীণ সমাজের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দারিদ্রতা। গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীদের মুখ্য জীবিকা হল কৃষি। কিন্তু কৃষির উপর জনসংখ্যার চাপ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।  তাদের রুজি রোজগার অত্যন্ত কম আর এসব কিছুর ফলশ্রুতি হিসেবে দারিদ্রতা গ্রামের মানুষের  জীবনসঙ্গী। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে পরিপূরক উপার্জনের সংস্থানও অত্যন্ত কম। 

৮. অশিক্ষা ও নিরক্ষরতা :- ভারতের গ্রামীণ সমাজ অনেকাংশে অশিক্ষার অন্ধকারে আচ্ছন্ন। এখানে নিরক্ষরতার হার অত্যন্ত বেশি এবং শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা এখানে নিতান্তই কম। গ্রামাঞ্চলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও উচ্চশিক্ষার দরজা গ্রাম গুলির জন্য যেন বন্ধই থাকে। বিদ্যালয়গুলির জরাজীর্ণ অবস্থা , শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনীহা , অর্থের অভাব - এসকল হলো গ্রাম অঞ্চলে অশিক্ষা ও নিরক্ষরতার প্রধান কারণ। 

৯. স্বয়ংসম্পূর্ণতা :- স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভারতের গ্রামীণ সমাজের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়।  ভারতের গ্রামগুলি মোটামুটি স্বনির্ভর। অন্তত উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভারতীয় সমাজের স্বয়ংসম্পূর্ণতা পরিলক্ষিত হয়। তবে ইংরেজ শাসন এবং স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বিশ্বায়নের পরবর্তী সময়ে এই স্বয়ংসম্পূর্ণতা বহুলাংশে বিলুপ্ত হয়েছে। 

১০. রক্ষণশীলতা :- ভারতের গ্রামাঞ্চলের সমাজ ও জনসম্প্রদায় মধ্যে রক্ষণশীলতা বিশেষভাবে বর্তমান। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী সনাতন প্রথা ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন। গ্রামবাসীরা প্রচলিত জীবনধারার আঁকড়ে ধরে থাকতে আগ্রহী। এর ফলে একদিকে যেমন ঐতিহ্য ও রক্ষণশীলতা রক্ষিত হয় অন্যদিকে সামাজিক সচলতা ও আধুনিকতার পথ বন্ধ হয়। 


১১. স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা :- স্বাধীন ভারতে গ্রামাঞ্চল গুলিতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা হিসাবে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মূলত তিনটি স্তরের পঞ্চায়েতিরাজ স্বায়ত্তশাসনের পরিচালনা করে থাকেন।  গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। 

১২. গ্রামীণ সমাজে ধর্মীয় প্রভাব :- গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রায় ধর্মের প্রভাব অত্যন্ত বেশি থাকে। ধর্মের সাথে কুসংস্কারচ্ছন্নতাও গ্রামীণ জীবনে উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এর প্রভাব অতিমাত্রায় বেশি থাকে। এখানে অধিবাসীদের জীবনধারা ধর্মীয় বিষয় দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। 

১৩. জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্য :- ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। বর্ণ ও জাতিভেদের ভিত্তিতে ভারতের গ্রামীণ জীবন ক্রম স্তরবিন্যাস্ত। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত থাকেন ও তাদের ভূমিকা ও মর্যাদা , সুযোগ-সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি গ্রামবাসীদের জীবনধারার বিভিন্ন বিষয় নির্ধারিত নিয়ন্ত্রিত হয় জাতিব্যবস্থার দ্বারা। 

উপসংহার :- পরিশেষে বলা যায় , সাম্প্রতিক কালে ভারতের গ্রামগুলিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার গ্রামীণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হয়েছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকারি উদ্যোগে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থা ,  প্রাথমিক শিক্ষা , উচ্চশিক্ষা - ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে গ্রামগুলিতে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক জীবন ধারার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী ও পরিষেবা আজ গ্রামগুলোতে উপস্থিত। ভারতের গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে শহরাঞ্চলের এখন গভীর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের চিন্তা-চেতনায় , আচার-ব্যবহারে এখন আধুনিকতার সুস্পষ্ট প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়।  

You May Also Like

0 comments