powers and functions of the house of commons ব্রিটেনে কমন্স সভার গঠন , ক্ষমতা ও কার্যাবলী :-

by - December 12, 2021

ব্রিটেনে কমন্স সভার গঠন , ক্ষমতা ও কার্যাবলী :- 


কমন্স সভার গঠন :- 


ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। এর নিম্ন কক্ষের নাম কমন্স সভা বা , House of Commons  । কমন্স সভা হল প্রকৃতপক্ষে জনপ্রতিনিধি সভা। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ব্রিটিশ নাগরিকেরা কমন্স সভার নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। কমন্স সভার সদস্য সংখ্যা ৬৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ করা হয়েছে। কমন্স সভার সদস্যদের (ক ) কমপক্ষে ২১ বছর বয়স্ক হতে হবে , (খ ) জন্মসূত্রে ও অনুমোদনসূত্রে ব্রিটিশ প্রজা হতে হবে , (গ ) আনুগত্যের শপথ নিতে হবে। এছাড়া কমন্স সভার অযোগ্যতা সম্পর্কিত আইন House of Commons Disqualification Act 1957 - তে লিপিবদ্ধ আছে। 


কমন্স সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী :- 


ব্রিটেনের পার্লামেন্ট বলতে রাজা বা রানী সহ লর্ড সভা ও কমন্স সভাকে বোঝায়। কিন্তু বাস্তবে , ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বভৌমিকতা বলতে কার্যক্ষেত্রে কমন্স সভার সর্বভৌমিকতাকেই বোঝায়। তাই কমন্স সভার সদস্যপদ ইংরেজদের কাছে মর্যাদা ও গৌরবের বিষয়। ব্রিটেনের কমন্স সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপ - 

১. আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
আইন প্রণয়নই হল কমন্স সভার প্রধান কাজ। কমন্স সভা ব্রিটেন ও উপনিবেশগুলির জন্য আইন রচনা করতে পারে। প্রচলিত কোনো আইনকে পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে। ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইনের পর আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লর্ড সভার তুলনায় কমন্স সভা অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। লর্ড সভার অনুমোদন ছাড়াই সংশ্লিষ্ট বিল রাজা বা রানীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো যায়। তাই ব্রিটেনে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমন্স সভার সর্বময় ক্ষমতা অনস্বীকার্য। 

২. অর্থ ও বাজেট এবং আয় - ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
অর্থ সংক্রান্ত বিল কেবলমাত্র কমন্স সভাতেই উপস্থাপিত করা যেতে পারে। কমন্স সভায় পাস হওয়া অর্থ বিলকে লর্ড সভা পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন না। আবার কোনো একটি বিল অর্থ বিল কিনা এ বিষয়ে কমন্স সভার স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কমন্স সভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কর ধার্য , কর সংগ্রহ , অর্থব্যয় করতে পারে না। তিনটি কমিটির মাধ্যমে কমন্স সভা সরকারের আয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে - গণিতক কমিটি , আনুমানিক ব্যয় হিসাব কমিটি , নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক।   



৩. মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষমতা :- 
ব্রিটেনের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকার তথা মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে কমন্স সভার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসারে কমন্স সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। তারপর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীগণ নিযুক্ত হন। অর্থাৎ ব্রিটেনে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে কমন্স সভার ভূমিকাই প্রধান। 

৪. সরকারকে নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
ব্রিটেনের মন্ত্রিসভা কমন্স সভার কাছে দায়িত্বশীল। মন্ত্ৰীসভার পেছনে কমন্স সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন যতদিন বর্তমান থাকে মন্ত্রিসভা ততদিন ক্ষমতাসীন থাকে। এছাড়া কমন্স সভা বিতর্ক , মুলতুবী প্রস্তাব , নিন্দাসূচক প্রস্তাব , ছাঁটাই প্রস্তাব , দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব - ইত্যাদির মাধ্যমে কমন্স সভা সরকার ও মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

৫. সংবাদ ও তথ্য প্রদান :- 
কমন্স সভা সংবাদ ও তথ্য প্রদানকারী সংস্থা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করে। সরকারের কার্যাবলী , প্রশ্ন উপস্থাপন , প্রশ্নের জবাব - ইত্যাদি বিষয়গুলি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রদান করে। এই তথ্যগুলি নির্ভুল হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার বিস্তার ঘটায়। 

৬. জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা :- 
কমন্স সভা সরকারি নীতি ও মন্ত্রিসভার কাজকর্মের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখে। কমন্স সভার বিতর্ক অনুষ্ঠান - ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণ অবহিত হতে পারে। সরকারি ও সরকার বিরোধী বক্তব্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে তা জনমত গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 


৭. শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকার সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
কমন্স সভায় পার্লামেন্টারী কমিশনার নামক একটি পদ বর্তমান এবং এই পদের মাধ্যমে শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রতিকার সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে কমন্স সভা। 

৮. নেতৃত্ব গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
কমন্স সভার আলোচনা , বিতর্ক - ইত্যাদিতে বিচক্ষণতার সঙ্গে অংশগ্রহণ , বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ , বিভিন্ন সমস্যার বিশ্লেষণ ও সমস্যা সমাধানের সাধারণ প্রতিকারের খোঁজ - প্রভৃতি নেতৃত্বের যাবতীয় গুণাবলীর বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে কমন্স সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৯. সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন :- 
ব্রিটেনের কমন্স সভা সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ও তাদের ভূমিকা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদি এবং অন্যদিকে জগণের চাহিদা ও দাবীসমূহের সভায় উপস্থাপন - ইত্যাদির মাধ্যমে কমন্স সভা জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুরূপে কাজ করে। 

১০. অনুসন্ধানমূলক ক্ষমতা :- 
বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে ও কোনো মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রীর দাবিতে বা জনগণের দাবিতে কমন্স সভা বিভাগীয় কমিটি , সিলেক্ট কমিটি গঠন করতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান , সাক্ষ্য গ্রহণ - ইত্যাদির মাধ্যমে কমন্স সভা তার অনুসন্ধানমূলক কর্ম সম্পাদন করে থাকে। তদন্তমূলক এই রিপোর্টের বিষয়বস্তু সরকারি নীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। 

উপসংহার :- 
তবে বর্তমানে নানা কারণে কমন্স সভার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ক্যাবিনেটের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে ব্রিটেনের উদারনৈতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কমন্স সভা হল সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী বিতর্ক মঞ্চ। কমন্স সভার আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসূত্র পাওয়া যায়। বস্তুত কমন্স সভা ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। 

  

You May Also Like

0 comments