সু-অভীক্ষা কী ? সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

by - December 12, 2021

সু-অভীক্ষা কী ?  সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 


সু - অভীক্ষা বা ভালো অভীক্ষার বৈশিষ্ট :- 


মনােবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক অভীক্ষা হল এমন এক ধরনের পরিমাপক কৌশল, যার সাহায্যে আমরা ব্যক্তির আচরণগত বৈশিষ্টের পরিমাপ করে থাকি। ঠিক তেমনিই এই ধরনের অভীক্ষাগুলির মধ্যে আমরা সেই অভীক্ষাগুলিকেই সু-অভীক্ষা বলি; যেগুলির নির্বাচিত কতকগুলি গুণ বা বৈশিষ্ট থাকে এবং কোনাে দোষত্রুটি থাকে না। এককথায় বলা যায়, যে সকল অভিজ্ঞতার মধ্যে কোনাে দোষ বা ত্রুটি থাকে না এবং কতকগলি আকাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞানসম্মত বৈশিষ্টগুণ থাকে, তাকেই বলা হয় সু-অভীক্ষা।


সু-অভীক্ষার বৈশিষ্ট্য :- 

কোনাে অভীক্ষাকে সু -অভীক্ষা হিসেবে গঠন করতে হলে যেসব বিজ্ঞানভিত্তিক বৈশিষ্ট্য বা গুণের প্রয়ােজন, সেগুলি হল—

(১) যথার্থতা :- 
যথার্থতা হল সু-অভীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কোনাে অভীক্ষাকে যথার্থ বলতে বােঝায় অভীক্ষার মাধ্যমে যা পরিমাপ করতে চাওয়া হয় তা সঠিকভাবে পরিমাপ করছে কিনা। কোনাে অভীক্ষা যে বৈশিষ্ট্য পরিমাপের জন্য গঠন করা হয়, অভীক্ষাটি যদি সেই বৈশিষ্ট্যই পরিমাপ করে এবং অন্যান্য কোনাে বৈশিষ্ট্য পরিমাপ না করে, তবেই অভীক্ষাটির যথার্থতা আছে বলে মনে করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ইতিহাস বা ভূগােলের জ্ঞান পরিমাপের সময় পরীক্ষকেরা বিষয় জ্ঞানের সাথে সাথে শিক্ষার্থীর হাতের লেখা, বানান, ভাষামূলক দক্ষতা ইত্যাদি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ করে থাকলে অভীক্ষাটির যথার্থতা থাকে না। অভীক্ষাটিকে যথার্থ করতে হলে যে বিষয়জ্ঞান পরিমাপের জন্য অভীক্ষা গঠন করা হয়, সঠিকভাবে সেই বিষয়জ্ঞানই পরিমাপ করতে হবে।

(২) নির্ভরযােগ্যতা :- 
সু-অভীক্ষাকে অবশ্যই নির্ভরযােগ্য হতে হবে। যে অভীক্ষা যত বেশী নির্ভূল ও নিখুঁত হবে সেই অভীক্ষা তত বেশী নির্ভরযােগ্য হবে। সংক্ষেপে নির্ভরযােগ্যতা হল স্থিরতা। অর্থাৎ কোনাে অভীক্ষা বা মানসিক পরিমাপক যন্ত্রের নির্ভরযােগ্যতা নির্ভর করে যে ক্ষমতা পরিমাপের জন্য অভীক্ষা প্রয়ােগ করা হয়, তার স্থিরতার ওপর। একই অভীক্ষা একই শিক্ষার্থীর ওপর কিছুটা বিরতি দিয়ে বার বার প্রয়ােগ করা যায় এবং সবক্ষেত্রে ফলাফল একরকম থাকে তবেই সেই অভীক্ষাটিকে নির্ভরযােগ্য বলা যাবে ।

(৩) নৈর্ব্যক্তিকতা :- 
কোনাে অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে বােঝায় অভীক্ষাটি কতখানি ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে মুক্ত। নৈর্ব্যক্তিকতা কথাটি অভীক্ষার দুটি দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি হল অভীক্ষা পদের নৈর্ব্যক্তিকতা ও নম্বরদানের নৈর্ব্যক্তিকতা। অভীক্ষাপদের নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে বােঝায় যে, অভীক্ষা পদগুলি এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে সকল অভীক্ষার্থী অভীক্ষাটির একইরকম ব্যাখ্যা করতে পারে। নম্বরদানের নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে বােঝায় যে, নম্বরদান পদ্ধতির এমন একটি আদর্শমান থাকবে, যাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের এই বিষয় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বরদানের মধ্যে সমতা থাকে।


(৪) প্রয়ােগশীলতা :- 
প্রয়ােগশীলতা অভীক্ষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোনাে অভীক্ষাকে অভীক্ষার্থীর ওপর সহজে স্বল্পায়াসে প্রয়ােগ করাকেই বলা হয় অভীক্ষার প্রয়ােগশীলতা। অভীক্ষার প্রয়ােগ পদ্ধতির ওপরই অভীক্ষার ফলাফল নির্ভর করে। অভীক্ষার প্রয়ােগ পদ্ধতি যত সহজ হবে, অভীক্ষার্থীর উত্তরদানও তত সুবিধাজনক হবে। তাই অভীক্ষা স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সহজ হওয়া প্রয়ােজন।

(৫) পরিমিততা :- 
অভীক্ষার পরিমিততা বলতে বােঝায় কমসময়ে, কম পরিশ্রমে ও স্বল্পব্যয়ে অভীক্ষাটি প্রয়ােগ করা। কোনাে অভীক্ষা প্রয়ােগ করতে দীর্ঘ সময় ও অধিক শ্রমের প্রয়ােজন হয়, তাহলে সেই অভীক্ষা অভীক্ষক ও অভীক্ষার্থী উভয়ের কাছেই বিরক্তিকর হবে এবং অভীক্ষার নির্ভরযােগ্যতাও কমে যাবে। 

(৬) নম্বরদানের সমতা :- 
যে কোনাে উত্তম অভীক্ষা গঠন করতে হলে তার নম্বরদানের পদ্ধতিটিকেও বিজ্ঞানসম্মত, সহজ দ্রুত ও নির্ভূল করতে হবে। যে অভীক্ষার নম্বরদান পদ্ধতি যত সহজ ও নির্ভুল হবে, সেই অভীক্ষা অভীক্ষকের কাছে তত বেশী গ্রহণযােগ্য হবে।

(৭) উপযোগিতা :- 
সু-অভীক্ষা গঠন করতে হলে তার প্রয়ােগক্ষেত্রের উপযােগিতা কতটা আছে, তা বিচার করা প্রয়ােজন।  যে উদ্দেশ্যে অভীক্ষাটি গঠন করা হয়, সেই উদ্দেশ্য যদি পূর্ণ করতে পারে, তাহলে অভীক্ষাটিকে উপযােগ বলা হবে। 

(৮) আদর্শায়ন :- 
যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে কোনাে অভীক্ষার সর্বজনীন মান বা নর্ম নির্ণয় করতে হয়, সেই প্রক্রিয়াকে আদর্শায়ন বলা হয়। বহুসংখ্যক ব্যক্তিসমষ্টির ওপর প্রয়ােগ করে অভীক্ষার সর্বজনীন মান নির্ণয় করা হয়। অভীক্ষার আদর্শয়ানের ফলে অভীক্ষা যােগলব্ধ ফলাফল নির্ভরযােগ্য ও ত্রুটিহীন হয় এবং শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোরের বিজ্ঞানসম্মত সংব্যাখ্যান দেওয়া যায়।



You May Also Like

0 comments