Powers and Functions of the House of Lords ; লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী

by - December 11, 2021

লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী (Powers and Functions of the House of Lords) 

লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী 


লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্তমান শতাব্দীতে বিশেষভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে ক্ষমতার দিক দিয়ে লর্ড সভা কমন্স সভার প্রায় সমকক্ষ ছিল। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে লর্ড সভার ক্ষমতাই ছিল অধিক। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। বস্তুত লর্ড সভা হল সামন্ততান্ত্রিক স্বার্থের প্রতিভূ। সামন্ত শ্রেণীর রক্ষক ও অভিভাবক হিসাবেই এর উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু ব্রিটেনে কালক্রমে উদারনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হয়। তার ফলে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাধান্য হ্রাস পেতে থাকে এবং এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে সামন্তশক্তির প্রতিভূ-স্বরূপ লর্ড সভারও ক্ষমতা হ্রাস পায়। 


লর্ড সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। এই ভাগগুলি হল: (ক) আইন প্রণয়ন ও অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা,(খ) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা, (গ) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং (ঘ) অন্যান্য ক্ষমতা। 

(ক) আইন প্রণয়ন ও অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা (Legislative and Financial Powers): 

লর্ড সভা হল ব্রিটেনের আইনপ্রণয়নকারী সংস্থা পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ১৯১১ সালের আগে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লর্ড সভার হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল। সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে লর্ড সভা ও কমন্স সভা ছিল সমক্ষমতাসম্পন্ন। অর্থ বিল ছাড়া অন্য সকল বিল কমন্স সভার মত লর্ড সভাতেও উত্থাপন করা যেত। লর্ড সভা কমন্স সভায় গৃহীত বিল সংশােধন ও প্রত্যাখ্যান করতে পারত। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইন প্রণীত হওয়ার পর লর্ড সভার আইন প্রণয়ন ও অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা বিশেষভাবে সঙ্কুচিত হয়। ১৯৪৯ সালের আইন অনুসারে লর্ড সভা সাধারণ বিল পাসের ক্ষেত্রে ১ বছর বিলম্ব ঘটাতে পারে মাত্র। বলা হয়েছে যে-কোন সাধারণ বিল যদি কমন্স সভার পরপর দু’টি অধিবেশনে গৃহীত হয় এবং প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় পাঠ এবং দ্বিতীয় অধিবেশনের তৃতীয় পাঠের মধ্যে ১ বছর অতিবাহিত হয় তবে সেই বিল লর্ড সভার অনুমােদন ছাড়াই আইনে পরিণত হতে পারে।


(১) কম বিতর্কমূলক বিলে লর্ড সভার ভূমিকা :- বর্তমানে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়নের দায়-দায়িত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমন্স সভার পক্ষে এই সমস্ত দায়িত্ব এককভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। তাই লর্ড সভাকেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অর্থ বিল ছাড়া অন্য যে-কোন বিল পালমেন্টের যে-কোন কক্ষে উত্থাপন করা যায়।  অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কমূলক বিলগুলি প্রথমে লর্ড সভায় উত্থাপন করা। 

(২) ত্রুটিমুক্ত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা :-  অনেক সময় লর্ড সভা বিলের পুনর্বিবেচনা ও প্রয়ােজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করে। এইভাবে লর্ড সভার আইন সংক্রান্ত সুপারিশের ক্ষমতা ব্যক্ত হয়। লর্ড সভার কাজে যাঁরা অংশ গ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও শিল্প-বাণিজ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও থাকেন। লর্ড সভার সদস্যদের হাতে প্রচুর সময় থাকে, নিবাচকমন্ডলীর চাপ থাকে না এবং আঞ্চলিক ও দলীয় সংগঠনের দাবি থাকে না। 

(৩) কমিটির কাজকর্মে ভূমিকা :-  স্থানীয় বা বিশেষ অর্থসংক্রান্ত বিল বিচার-বিবেচনা করার জন্য পার্লামেন্টে কমিটি ব্যবস্থা আছে। জেনিংস (SirIvor Jennings)-এর মতানুসারে কর্মব্যস্ত কমন্স সভার সদস্যদের তুলনায় লর্ডগণই অধিক উদ্যোগী এবং উপযােগী ভূমিকা গ্রহণ করেন। 

(৪) বেসরকারি বিল ও অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন :- বেসরকারী বিল এবং অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লর্ড সভা সমান দায়িত্ব পালন করে এবং কমন্স সভার কর্মভার লাঘব করে। 

(৫) প্রাজ্ঞ পরিষদের ভূমিকা :- লর্ড সভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু কৃতী ব্যক্তি থাকেন। এঁদের সদস্যপদ স্থায়ী। তাই এঁরা অভিজ্ঞ। এঁদের আলােচনা ও সমালােচনার গুণগত উৎকর্ষ অনেক বেশী। লর্ড সভার সদস্যরা দীর্ঘকাল ধরে আইন সভার সদস্য থাকেন। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকেন না। তার ফলে তাঁরা অভিজ্ঞতা-প্রসূত জ্ঞানের ভিত্তিতে যথাযথ প্রাজ্ঞ পরিষদের ভূমিকা আইন প্রণয়ন করতে পারেন। 

(৬) গণতন্ত্রের প্রহরী :- অনেকের মতে লর্ডসভা ব্রিটিশ গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। লর্ড সভা জনস্বার্থবিরােধী যে-কোন আইনকে আটকে দিতে পারে। এইভাবে সে বিষয়ে জনমত সৃষ্টির সুযােগ হয় এবং অসংযমী কমন্স সভা সংযত হতে বাধ্য হয়। 

(খ) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা (Executive Powers): -

সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে লর্ড সভা অবাধে এবং বিস্তারিতভাবে আলােচনা করতে পারে। এই সভা সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। তা ছাড়া, লর্ড সভা প্রশাসনিক নির্দেশাদি অনুমােদন ও পরীক্ষা করে দেখতে পারে। কমন্স সভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদীয় ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়। সরকারের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার তেমন কোন উপায় থাকে না। এই রকম অবস্থায় অনেক সময় লর্ড সভা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে। বিচারপতিদের পদচ্যুত করার ব্যাপারে লর্ড সভা কমন্স সভার মতই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। বিচারপতি অপসারণের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষ যৌথভাবে ক্ষমতা প্রয়ােগ করে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কোন দপ্তরের দায়িত্বও লর্ড সভার কোন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে এমন নজিরও আছে।


(গ) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা (Judicial Powers): - 

লর্ড সভা হল ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত। লর্ড সভা যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ আপীল আদালত হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। এই সভার মূল ও আপীল উভয় এলাকাই আছে। বর্তমানে মূল এক্তিয়ারের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। লর্ড সভা হল দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় প্রকার আপীল মামলার সর্বোচ্চ আদালত। তা ছাড়া বিচারপতিদের অপসারণ করার ব্যাপারে লর্ড সভা ও কমন্স সভা সম  গুরুত্বসম্পন্ন। অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রেও লর্ড সভার বিচার বিষয়ক ক্ষমতা আছে। লর্ড উপাধি সংক্রান্ত যাবতীয় বিরােধের যাবতীয় বিরােধের মীমাংসা করে লর্ডসভা। আবার সভার অধিকার ভঙ্গের
অভিযোগে অভিযুক্তকে জরিমানা করতে পারে বা জেলে পাঠাতে পারে।

 (ঘ) অন্যান্য ক্ষমতা (Other Powers) :- 

উপরিউক্ত দায়িত্ব ছাড়াও লর্ড সভা - 
(১). প্রাইভেট বিল ও বিতর্কবিহীন বিল বিচার-বিবেচনা করে। 
(২) অনেক সময় পার্লামেন্টের সদস্য নন এমন ব্যক্তিকে ‘লর্ড’ উপাধি প্রদান করে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়। আবার প্রাক্তন মন্ত্রী, বয়স্ক রাজনীতিবিদ প্রভৃতি ব্যক্তিদের লর্ড সভায় ঠাঁই দিয়ে আধা-রাজনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। 
(৩) সরকার ও জনমতকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেও লর্ড সভার ক্ষমতা ও ভূমিকার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। উচ্চমানের গঠনমূলক আলােচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে লর্ড সভা এই ভূমিকা পালন করে।
(৪) কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলােচনার ক্ষেত্রে লর্ড সভা কমন্স সভাকে সাহায্য করতে পারে। এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। 
(৫) লর্ড সভা এখনও বিধিবদ্ধ আইন (Statutory Law) অনুযায়ী রচিত আইন ও বিধি নির্দেশকে প্রত্যখ্যান করতে পারে। প্রকৃত প্রস্তাবে একটি প্রাজ্ঞ পরিষদ হিসাবে লর্ড সভা সরকার ও জনসাধারণের উপর তার প্রভাব খাটাতে পারে। 

উপসংহার :- 

ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় লর্ড সভার কার্যকারিতা ও প্রয়ােজনীয়তা আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই। কমন্স সভার তুলনায় লর্ড সভা কম মর্যাদাসম্পন্ন। এতত্সত্ত্বেও এই কক্ষের হাতে এখনও যে সমস্ত ক্ষমতা আছে তার গুরুত্ব কম নয়। লর্ড সভা আইন, নীতি ও প্রশাসনিক বিষয়ে আলােচনা করতে পারে। সরকারী নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে লর্ড সভা হল বিশ্বের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ কক্ষ। এই কক্ষের বৌদ্ধিক মান বিরােধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। 

You May Also Like

0 comments