Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ও সাম্রাজ্য সুদৃঢ়করণে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ভূমিকা আলোচনা করো। 
অথবা , শাসক ও বিজেতা হিসেবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্বের মূল্যায়ন করো।


Discuss the rise of Maurya Empire under Chandragupta Maurya.



  
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সম্পর্কিত তথ্যাদির সূত্র :-
পুরাণ , কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র , বিশাখাদত্তের মুদ্রারাক্ষস , সোমদেবের কথাসরিৎসাগর , মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা ইত্যাদি থেকে এবং স্ট্রাবো , প্লুটার্ক , জাস্টিন - প্রমুখের রচনা থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়াও হিন্দু কিংবদন্তী , বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থাদির সাক্ষ্য প্রমাণও যথেষ্ট সহায়ক। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


বংশপরিচয় :-
হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে চন্দ্রগুপ্তের মাতা ও নন্দরাজের উপপত্নী মুরার নামানুসারে এই বংশকে মৌর্য বংশ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে রচিত ''মুদ্রারাক্ষস '' নাটকে ও পরবর্তীকালে ক্ষেমেন্দ্র সংকলিত '' বৃহৎকথা '' গ্রন্থে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে নন্দ বংশোদ্ভূত বলা হয়েছে। অন্যদিকে বৌদ্ধগ্রন্থ '' দিব্যবদন '' এ তাঁকে ক্ষত্রিয় মোরিয় বংশোদ্ভূত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। জৈনগ্রন্থ '' পরিশিষ্ট পার্বন '' অনুসারে মোরিয় নামে এক শাক্য গোষ্ঠী হলো চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বংশ। 
উপরোক্ত তথ্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ কিংবদন্তি , পুরাণ - প্রভৃতির তুলনায় বৌদ্ধ গ্রন্থাদির সাক্ষ্য প্রমানকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে ক্ষত্রিয় কুলোদ্ভব বলে বর্ণনা করেছেন। 

সিংহাসনারোহন :-
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসনারোহন সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। যেমন Charpentier  খ্রিস্টপূর্ব ৩১৩ অব্দকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসনারোহনকাল বলে উল্লেখ করেছেন। আবার , স্টেইন খ্রিস্টপূর্ব ৩১৮ অব্দকে , ফ্লিট খ্রিস্টপূর্ব ৩২০ অব্দকে , Smith  খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দকে এবং R.K. Mukherjee খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসনারোহনকাল বলে বর্ণনা করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


মগধের সিংহাসন অধিকার :-
উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে পাটলিপুত্রে প্রেরণ করেন। সেই সময় পাটলিপুত্রে নন্দরাজ ধননন্দের অত্যাচারে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। ঠিক এই সময় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের সিংহাসনারোহনের বাসনা পোষণ করেন। তিনি নন্দ বংশের উচ্ছেদকল্পে গ্রীক সাহায্যলাভের আশায় আলেকজান্ডারের শিবিরে গমন করেন। কিন্তু তাঁর উদ্যত ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে আলেকজান্ডার তাঁর প্রাণদন্ডের আদেশ দেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সেখান থেকে পলায়ন করে বিন্ধ্য পর্বতের অরণ্যে চাণক্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে চাণক্যও নন্দরাজ কর্তৃক অপমানিত হয়ে প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজছিলেন। সুতরাং দুজনের লক্ষ্য এক হওয়াতে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সর্বতোভাবে সহায়তা করতে থাকেন। 
'' মিলিন্দ পঞ্চহো '' নামক গ্রন্থে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নন্দরাজের  বিরুদ্ধে অভিযানের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রথম দুবারের চেষ্টায় বিফল হয়ে তৃতীয়বার চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পাটলিপুত্র অবরোধ করে নন্দরাজ ধননন্দকে সিংহাসনচ্যুত করেন। 

উত্তর - পশ্চিম ভারতে গ্রিকদের বিরুদ্ধে অভিযান -
এরপর তিনি উত্তর পশ্চিম ভারতে গ্রিক শাসন উচ্ছেদ করতে উদ্যোগী হন। আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের পর গ্রিক শিবিরে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই তাঁর মৃত্যুর পর এই বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করে। এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য উত্তর - পশ্চিম ভারতে গ্রিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩১৭ অব্দে গ্রিক সেনাপতি ইউডিমাস ভারত ত্যাগ করলে ভারতের উত্তর - পশ্চিম সীমান্তে গ্রিক শাসনের অবসান ঘটে। 
কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রথমে নন্দরাজকে উচ্ছেদ করেছিলেন না গ্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন সে বিষয়ে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। 
একদিকে Smith এর মতে , 
It appears probable that before he undertook the extension of the foreign garrisons , he had already overthrown …………….. the Nanda king of Magadha .  
আবার ,
‘’ Chandragupta’s fight against the Macedonians , however , must have begun considerably earlier……………… Chandragupta’s next tusk was to rid the country of the internal tyranny of king Nanda . ‘’
[ The Age of Imperial Unity ] 

দাক্ষিণাত্য বিজয় -
দক্ষিণ ভারতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য দক্ষিণ ভারত বিজয় সম্পন্ন করেছিলেন ; আবার অনেকের মতে , বিন্দুসারের আমলেই দক্ষিণ ভারত মৌর্যগণ কর্তৃক বিজিত হয়েছিল। কিন্তু R.C. Roychoudhury  -র মতে , নন্দরাজগন কর্তৃক দক্ষিণ ভারত বিজিত হয়েছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই নন্দবংশের অবসানের পর দাক্ষিণাত্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সেলুকাসের সাথে যুদ্ধ ( খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ অব্দ ) -
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যের পূর্বাংশের অধিপতি সেলুকাস ভারতবর্ষে গ্রিক আধিপত্য পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে সিন্ধু অঞ্চলে এসে উপস্থিত হলে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাথে তাঁর যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধের কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে স্ট্রাবো যে সন্ধির কথা বলেছেন তাতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যেরই জয়লাভের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সন্ধির শর্তানুসারে সেলুকাস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে কাবুল , কান্দাহার , হিরাট , বেলুচিস্তান - ইত্যাদি প্রদেশ প্রদান করেন। এরপর সেলুকাস কর্তৃক মেগাস্থিনিস দূত হিসেবে চন্দ্রগুপ্তের মৌর্যের রাজসভায় প্রেরিত হন। 
এই সন্ধির গুরুত্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন , দু - হাজার বছরের অধিক পূর্বে প্রথম ভারতীয় সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তের অধিকার লাভ করেন - এতটা সাফল্য পরবর্তীকালে মোগল সম্রাটেরা ও ইংরেজরা সমগ্রভাবে লাভ করতে পারেনি। 

সাম্রাজ্যের বিস্তার  -
Dr. R.K. Mukherjee - র মতে , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। 
(i) নন্দ বংশের উচ্ছেদসাধন করে সমগ্র মগধরাজ্য তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। 
(ii) গ্রিকদের বিতাড়িত করে তিনি সমগ্র পাঞ্জাব সহ উত্তর - পশ্চিম ভারত নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। 
(iii) সেলুকাসের কাছ থেকে তিনি কান্দাহার , কাবুল , হীরাট , বেলুচিস্তান লাভ করেছিলেন। 
(iv) জুনাগড় শিলালিপি অনুসারে পশ্চিম ভারতের সৌরাষ্ট্র পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল। 
(v) তামিল কবি মানুলনার রচিত গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে , দক্ষিণ ভারতে তিনেভেলি জেলা পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। 
(vi) মহীশুরে প্রাপ্ত শিলালিপি অনুসারে উত্তর মহীশূর তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।
 

 -:চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্বের মূল্যায়ন :-


নন্দরাজকে ধ্বংস করে এবং গ্রীকদের বিতাড়িত করে তিনি ভারত থেকে বিদেশি শাসনের অবসান ঘটিয়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণে মহীশূর , পূর্বে বঙ্গদেশ থেকে পশ্চিমে সৌরাষ্ট্র পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করে সর্বভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঐক্যের পথ রচনা করেন। 
প্রজাকল্যাণমূলক ও কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে তিনি এই বিশাল সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মেগাস্থিনিস তাঁর শাসন দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
Gokhle  মন্তব্য করেছেন - 
An unrivalled general , an able administrator , a unique personality , Chandragupta stands at the very head of the array of the great rulers of India .    

  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

    

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বৈদিক যুগের সমাজ জীবনের পরিচয় দাও। পরবর্তী বৈদিক যুগে সামাজিক ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন সাধিত হয় ?

Give a pen - picture of the early Vedic society. What changes do you notice in the later Vedic period ?




সমগ্র আর্য সভ্যতাকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করলে - (১) ঋক বৈদিক আর্য ও (২) পরবর্তী বৈদিক যুগের আর্য - এই দুই শ্রেণীভাগ আমাদের চোখে পড়ে। ঋক বৈদিক যুগের আর্যদের সামাজিক ব্যবস্থা বৈদিক সমাজের মূল ভিত্তি হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে এই সমাজ ব্যবস্থার কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সামাজিক ব্যবস্থাকে বহাল রাখা হয়েছিল আবার কিছু অংশের পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগের সামাজিক কাঠামো আলোচনা করলেই আমরা জানতে পারবো ঋক বৈদিক যুগের সামাজিক ব্যবস্থা কেমন ছিল এবং পরবর্তী বৈদিক যুগে এর কী কী পরিবর্তন সাধিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের সমাজ ব্যবস্থা :-


পিতৃ প্রধান পরিবার -
রাষ্ট্রের মতো বৈদিক সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার এবং তা ছিল পিতৃপ্রধান। পরিবারের প্রধান ছিলেন পিতা বা পুরুষ। তিনি গৃহপতি বা দম্পতি নামে পরিচিত ছিলেন। পরিবারভুক্ত সদস্যদের ওপর তার ক্ষমতা ছিল সীমাহীন। 

সমাজে নারীর স্থান -
বৈদিক সমাজে নারী সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারিণী ছিলেন। তাঁরা পুরুষের সহকর্মিনী ও সহধর্মিনী হতেন। নারীদের একাধিক পতি গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। গৃহস্থালীর ব্যাপারে নারীরা সর্বময়ী কর্তৃত্বের অধিকারিণী ছিলেন। অন্তঃপুরের বাইরেও তারা পুরুষদের সহায়তা করতেন। নারীদের মধ্যে অবরোধ প্রথা প্রচলিত ছিল না। তারা উপযুক্ত শিক্ষালাভ করতেন। ঋক বেদের যুগে বিশ্ববারা ,  ঘোষা , অপালা , মমতা , লোপামুদ্রা - প্রমুখ মহিলারা বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বহু বৈদিক স্তোত্রের রচয়িত্রী হিসেবেও প্রসিদ্ধা। সাহিত্য চর্চা ছাড়াও নারীদের যুদ্ধবিদ্যা , অসিচালনা প্রভৃতিও শিক্ষা দেওয়া হতো। বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল না। সতী প্রথাও প্রচলিত ছিল না। তবে নিঃসন্তান , বিধবা ভাতৃবধূকে বিবাহ করার রীতি প্রচলিত ছিল। নারীদের নৈতিক চরিত্রের মান উন্নত ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রেণীহীন সমাজ -
প্রথম দিকে বৈদিক আর্যরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল - যোদ্ধা বা অভিজাত শ্রেণী ; পুরোহিত শ্রেণী ও সাধারণ মানুষ। প্রাথমিক পর্যায়ে  বর্ণভেদ প্রচলিত ছিল না। কোনো বৃত্তি নিষিদ্ধ ছিলনা এবং এই তিনটি শ্রেণীর মধ্যে বিবাহও প্রচলিত ছিল। আহার - ইত্যাদির ব্যাপারেও কোনো নীতিগত বা ধর্মীয় বাধানিষেধ ছিলনা। এই তিনটি শ্রেণীকে নিয়েই আর্যদের প্রাথমিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। 
রোমিলা থাপার - এর ভাষায় - The three divisions merely facilitated social and economic organisation.’’  

বর্ণভেদের উদ্ভব -
কিন্তু আর্য ও অনার্যদের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহ ও সংযোগের ফলে সমাজে শ্রেণিভেদের উদ্ভব হয়। আর্যরা নিজেদের গৌরবর্ণ ও দীর্ঘ আকৃতি বিষয়ে সর্বদাই সজাগ ছিল। অন্যদিকে অনার্যরা ছিল কৃষ্ণকায় ও খর্বাকৃতি। সুতরাং বর্ণের ভিত্তিতেই সর্বপ্রথম আর্য সমাজে শ্রেণিভেদের সূচনা হয়। ঋক বেদের দশম মন্ডলের পুরুষ সূত্রে বর্ণভেদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। 
যাই হোক এরপর কর্ম ও পেশার ভিত্তিতে সমগ্র আর্য সমাজকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় - (১) ব্রাহ্মণ - বিদ্যাচর্চা ও ধর্মকর্মের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা ; (২) ক্ষত্রিয় - যুদ্ধকর্ম ও শাসন কার্যের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা ; (৩) বৈশ্য - উৎপাদন , পশুপালন ও ব্যবসা - বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা এবং (৪) শুদ্র - উপরোক্ত তিন শ্রেণীর সেবায় নিযুক্ত ব্যাক্তিরা। কিন্তু ঋক বেদের যুগে পেশাভিত্তিক শ্রেণীবিভাজনের সৃষ্টি হলেও এর পরিণত রূপ দেখা যায়নি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


চতুরাশ্রম -
চতুরাশ্রম আর্য সমাজের এক অন্যতম বৈশিষ্ট। এই ব্যবস্থা সমাজের প্রথম তিন শ্রেণীর  মধ্যেই প্রচলিত ছিল। (১) জীবনের প্রথম পর্যায়কে বলা হতো ব্রম্মচর্যাশ্রম। এই সময় প্রত্যেককে গুরুগৃহে থেকে বিদ্যাচর্চা করতে হতো। (২) গুরুগৃহে শাস্ত্রচর্চা শেষ করে স্বগৃহে ফিরে '' গার্হস্থ্য আশ্রম '' বা গৃহীর জীবন পালন করতে হতো। এই আশ্রমের মূল কথা ছিল বিবাহ করে স্ত্রী ও সন্তান সহ সংসারধর্ম পালন করা। (৩) তৃতীয় পর্যায় ছিল বানপ্রস্থাশ্রম। প্রৌঢ় অবস্থায় সাংসারিক দায় দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বনে কুটির বেঁধে নির্লিপ্ত জীবন যাপন করতে হতো। (৪) শেষ পর্যায় ছিল সন্ন্যাস বা যতি আশ্রম। এই সময় সন্ন্যাসীর মতো জীবন - যাপন করতে হতো। 

খাদ্য ও আনন্দ উৎসব -
দুধ , ঘি , ফলমূল , গম , যব - ইত্যাদি আর্যদের প্রধান খাদ্য ছিল। উৎসবের সময় মাংস ও পূজাঅর্চণার সময় সোমরস - নামক পানীয় প্রধান ছিল। মৃগয়া , মৎস শিকার , অশ্ব ও রথ চালনা , নৃত্যগীত - ইত্যাদি প্রধান আনন্দ উৎসব ছিল। ঋক বেদে বিবাহ , আহার ও বৃত্তি ক্ষেত্রে কোনো কঠোর বাধানিষেধ ছিলনা। 

পোশাক পরিচ্ছদ -
আর্য সমাজে পোশাক পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারের ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হতো। তিন প্রকার আবরণের প্রচলন ছিল - (১) দেহের উপরাংশের জন্য উত্তরীয় ; (২) নিম্নাংশের জন্য ''নিবি''
; (৩) নিবির ওপর '' পরিধান '' .পোশাক পরিচ্ছদ  সূতি ও মূল্যবান পশুর চামড়া দ্বারা প্রস্তুত করা হতো।   
       
আর্য সমাজে দানের গুরুত্ব -
রোমিলা থাপার প্রাচীন ভারতের আর্থ - সামাজিক জীবনে দানের গুরুত্বের কথা লিখেছেন। ঋক বেদে '' দানস্তুতি '' থেকে জানা যায় যে , এই ব্যবস্থা বিনিময় প্রথার বিকল্প হয়ে উঠেছিল। ক্ষত্রিয়রা কর্তব্য পালনের জন্য ঈশ্বরের কৃপাপ্রার্থী হতেন এবং ব্রাম্মনদের দান করতেন। আর্যদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনে দানের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তবে ঋক বেদের যুগে ভূমিদানের কথা সেরকমভাবে জানা যায় না। 

পরবর্তী বৈদিক যুগে সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন 


নারীর মর্যাদা হ্রাস - নারীর মর্যাদা পূর্বাপেক্ষা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। সম্পত্তি ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়। অবশ্য শিক্ষার দরজা তাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই যুগে নারীদের মধ্যে মৈত্রেয়ী ও গার্গীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

হিন্দুধর্মের উদ্ভব - গৃহ্যসূত্র ও ধর্মসূত্র অনুসারে সমাজের বিধিব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট করা হয়। গৃহ্যসূত্রে হিন্দুদের পারিবারিক ও পার্থিব জীবনের অনুশাসন সম্পূর্ণরূপে বিবৃত আছে। গৃহ্যসূত্রকে কেন্দ্র করেই হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এই যুগেই হয়। 

দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের উদ্ভব - যদিও যুগে যুগে ধর্মসূত্র রচিত হয়েছিল তথাপি একটি নির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে সমাজজীবন গঠন করার প্রবণতা ধর্মসুত্রে দেখা যায়। ক্রমে ক্রমে একটি সাধারণ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন এবং সামাজিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটে। 

বর্ণভেদের কঠোরতা - ঋক বৈদিক যুগে বর্ণভেদ কঠোর ছিল না। পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণভেদ কঠোর হয়ে জন্মগত হয়। সমাজ চতুর্বর্ণের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ব্রাম্মন ও ক্ষত্রিয়দের বৃত্তি জন্মগত হলো। বৈশ্যদের বৃত্তি হলো কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্য। শুদ্রদের অবস্থা হলো অত্যন্ত হীন। ঐতরেয় ব্রাম্মণে শুদ্রদের '' যথাকাম বধ্য '' বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই চতুর্বর্ণের বাইরে যারা থাকলো তারা হলো অগণিত অ -বর্ণ বা পঞ্চমগন। এদের সামাজিক অধিকার কেড়ে নিয়ে অস্পৃশ্য বলা হলো। 

অনার্যদের আর্য জাতিতে পরিবর্তনের সুবিধা - একথা সত্য যে , চারটি বর্ণে সমাজ বিভক্ত হলেও অনার্যদের আর্যসমাজে গ্রহণ করার পথে কোনো বাধা ছিল না। সামবেদের অন্তর্গত 
'' ব্রাত্য - স্তোম - সূত্রে '' আর্য সমাজে অনার্যদের গ্রহণের সুনির্দিষ্ট বিধি আছে। 

ব্রাত্য ও নিষাদ - ওপর দুটি স্বতন্ত্র জাতি - চতুর্বর্ণ ব্যতীত ব্রাত্য ও নিষাদ নামে ওপর দুটি স্বতন্ত্র জাতির উল্লেখ পরবর্তী বৈদিক যুগে পাওয়া যায়। ব্রাত্যদের ভাষা ছিল প্রাকৃত এবং তারা যাযাবর জীবন যাত্রা করতো। নিষাদরা স্থায়ীভাবে বসবাস করতো। এরা শাসক গোষ্ঠীর কাছে '' স্থপতি '' নামে পরিচিত ছিল। 

শিক্ষায় পরিবর্তন - এই যুগে ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা উভয়ই প্রচলিত ছিল। বেদ , উপনিষদ , ব্যাকরণ , ন্যায় ও আইন শিক্ষার প্রচলন ছিল। চিকিৎসা বিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা এই যুগে যথেষ্ট উৎকর্ষতা লাভ করেছিল। 

পরিশেষে বলা যায় , আধুনিক ভারতীয় সভ্যতার জন্ম হয়েছিল বৈদিক সভ্যতার হাত ধরেই। প্রাথমিক বৈদিক যুগের সামাজিক বৈশিষ্ট গুলি পরবর্তী বৈদিক যুগে অনেকটা পরিবর্তিত হলেও আসলে এটি ছিল সামাজিক বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। এই দুই সময়কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল বর্ণভেদ। ঋক বৈদিক যুগে বর্ণভেদ কঠোর ও ব্যাপক না হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে তা ব্যাপক ও কঠোর হয়ে ওঠে যার প্রভাব হাজার বছর পেরিয়েও বিদ্যমান ছিল।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

বৈদিক আর্যদের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করো। 
Compare broadly the economic condition of the Early Vedic Aryans with that of the later Vedic Age.




ঋক বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা :-


বৈদিক যুগের শুরুতে যাযাবর আর্যরা ভারতে এসে স্থিতিশীল হয়। প্রথমদিকে পশুচারণই ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। প্রাচীন ভাষা বিজ্ঞানে '' গাভীস্তি'' শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর অর্থ হলো গাভীর সন্ধান ( to search for cows )। এরপর তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করলে তাদের পেশার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তারা ক্রমেই পশুচারণ থেকে কৃষিজীবীতে পরিণত হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে , তৎকালীন কৃষি ব্যবস্থা ছিল উন্নত এবং তার প্রধান অঙ্গ ছিল গরু। কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা - বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। জমির মালিকদের মধ্যে থেকে বণিকশ্রেণীর উদ্ভব হয়। আবার পরবর্তী বৈদিক যুগে কৃষি অত্যন্ত আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়। এই যুগের কৃষিতে লৌহের প্রচলন অধিক দেখা যায়। এই যুগে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং শিল্পকূল বা গড়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


পরিবর্তনশীল অর্থনীতি : পশুচারণ থেকে কৃষিজীবী :-
বৈদিক যুগের শুরুতে গবাদি পশু দ্বারা উৎপাদিত সামগ্রী ছিল তখনকার জীবনধারণের প্রধান উপাদান। প্রাথমিক পর্যায়ে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনে গাভীর মূল্য এতই অধিক ছিল যে , এদের মধ্যে গাভী অপহরণের প্রবণতা ছিল প্রবল এবং একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লেগেই থাকতো। আর্যরা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করলে তাদের পেশার পরিবর্তন ঘটে। তারা ক্রমেই পশুচারণ থেকে কৃষিজীবীতে পরিণত হয়। লৌহের ব্যবহার শুরু হলে তা চাষের পক্ষে সহায়ক হয়। ঋক বেদের যুগে আর্যসমাজ চারণভিত্তিক সমাজ (pastoral ) থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


গ্রামীণ অর্থনীতির সূত্রপাত :-
ঋক বেদের যুগে আর্য সভ্যতা গ্রামীণ সভ্যতায় পরিণতি লাভ করে। এর ফলে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনে গ্রাম প্রধান অঙ্গরূপে স্থান গ্রহণ করে। সম্ভবত আর্যরা কৃষিজীবীতে পরিণত হলে তারা স্বনির্ভর গ্রামীণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। স্থানীয় গ্রামীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আর্যদের দ্বারা প্রবর্তিত হলেও একথা অনস্বীকার্য যে , ভারতের অর্থনৈতিক জীবনে গ্রামের গুরুত্ব আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। 

ব্যাক্তিগত মালিকানার উদ্ভব ; মিশ্র অর্থনীতি - কৃষিকাজ ও পশুপালন :-
উৎপাদনের উপকরণ ও সামাজিক ধনসম্পদের উপর যৌথ মালিকানা প্রচলিত থাকায় অনুমিত হয় যে , সমাজে আর্থিক বৈষম্যের সম্ভাবনা ছিল কম। কিন্তু ক্রমে জমি গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের দখলে আসে এবং ব্যাক্তিগত মালিকানা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও উত্তরাধিকার সূত্রে জমি ভোগদখলের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। প্রত্যেক গৃহস্থ পরিবারের নিজস্ব কৃষিজমি ছিল। আবার গ্রামের সকলের পশুচারণের জন্য সাধারণ জমিও ছিল। সুতরাং দেখা যায় যে , সে যুগে কৃষি ও পশুচারণের উপর নির্ভরশীল মিশ্র অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে। 
অনেকে মনে করেন যে , লৌহাস্ত্রের সাহায্যে জলকে পরিষ্কার করে কৃষির উপযোগী করে তোলা হতো। প্রকৃতপক্ষে কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান অবলম্বন। ঋক বেদে লাঙল দিয়ে জমি চাষ , বীজ বপন , ফসল কাটা - ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। 
Dr R.C. Roychoudhury - র মতে , শস্যের মধ্যে প্রধান ছিল ধান ও যব। কিন্তু ধানচাষ সম্পর্কে Dr R.C. Roychoudhury - র মতামত অনেকে সমর্থন করেন না। পশুপালন ছিল সেই যুগের মানুষের দ্বিতীয় প্রধান জীবিকা। যমুনা নদীর দুই তীরস্থ অঞ্চল গরুর জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। গোধন দ্বারা মানুষের সম্পদ নির্ধারিত হতো। এমনকি সৈনিকেরাও যুদ্ধের লুন্ঠিত দ্রব্য হিসেবে গো - সম্পদই কাম্য মনে করতো।  অর্থনীতি ও রাজনৈতিক জীবনে ঘোড়ার গুরুত্বও যথেষ্ট ছিল।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

 
অন্যান্য বৃত্তি ; মুদ্রা ; বণিক সম্প্রদায় ; লৌহের ব্যবহার ; যানবাহন :-
কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রয়োজনে সূত্রধর , ধাতুশিল্পী , চর্মকার , তন্তুবায় ও কুম্ভকারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ধাতুর মধ্যে স্বর্ণ , তাম্র ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার ছিল। মুদ্রা ভিত্তিক অর্থনীতি সেযুগে প্রচলিত না থাকলেও বৈদিক সাহিত্যে '' নিস্ক '' ও '' মানা '' নামক মুদ্রার উল্লেখ আছে। বৈদিক যুগে বণিক সম্প্রদায়েরও উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা বিনিময় প্রথা ছাড়াও মুদ্রার মাধমেও ক্রয় - বিক্রয় করতো। বৈদিক আর্যদের নিকট লৌহের ব্যবহার অজ্ঞাত থাকলেও ঋক বেদে '' আয়াস '' নামক একপ্রকার ধাতুর উল্লেখ আছে যা পরবর্তীকালে লৌহ বলে পরিচিত হয়। ঋক বেদের যুগে পরিবহনের ক্ষেত্রে রথ , গো- শকট ও অন্তরীক্ষ বা আকাশ যানেরও উল্লেখ আছে। 

ব্যবসা - বাণিজ্য : অন্তর্দেশীয় ও সামুদ্রিক :-
কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যেরও সূত্রপাত ঘটে। গাঙ্গেয় উপত্যকার পূর্বাঞ্চলে কৃষির প্রসার ঘটলে গঙ্গানদী বাণিজ্যের সহায়ক হয়ে ওঠে। শক্তিশালী জমির মালিকরা ব্যবসা - বাণিজ্যের দিকে আকৃষ্ট হলে বণিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। এছাড়াও অসিরিয়া , ব্যাবিলন ও এশিয়ার কয়েকটি দেশের সাথে আর্যদের সামুদ্রিক বাণিজ্য চলতো। তবে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ উপকূলরেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ প্রসঙ্গে Cambridge History -র লেখক বলেছেন -  The Indus was the natural outlet to the sea for the Aryan tribes , but in the Rigeda there is no clear sign that they had yet reached the occean .

Basam - এর মতে নিয়মিত ব্যবসায়ী ও মহাজন বলতে যা বোঝায় ঋক বৈদিক যুগে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তবে ঋণের উল্লেখ আছে। 
There is no evidence of a regular class of merchants or money lenders , though indebtedness is sometimes referred to . [ Basam ]  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন :-


১. কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন - পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় এই যুগে চাষের উন্নতি হয় এবং ঋতু অনুযায়ী শস্য রোপনের জ্ঞান সুস্পষ্ট হয়। ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষির ব্যাপক প্রসার ঘটে। কেননা , গাঙ্গেয় উপত্যকার আদ্র জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের প্রাচুর্য স্বচ্ছল কৃষি অর্থনীতির বিকাশের পক্ষে সহায়ক ছিল। এই যুগে আর্যরা ধান ও অন্যান্য শস্যের উৎপাদন শুরু করে। জমিতে সেচ ও সার দেওয়ার কৌশলও আবিষ্কৃত হয়। এই যুগেও কৃষিই ছিল প্রধান জীবিকা। 

২. বাণিজ্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি :- সিন্ধুবাসীর পর এই যুগের আর্যরা মেসোপটেমিয়া ও অন্যান্য পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সাথে বাণিজ্য চালাতে শুরু করে। '' শতপথ ব্রাহ্মণ '' গ্রন্থে বাণিজ্য উপলক্ষ্যে সমুদ্র যাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। 

৩. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সম্প্রসারণ - উত্তর , পূর্ব ভারতে রাজগীর , গয়া , বৈশালী ইত্যাদি অঞ্চল ধরে বাণিজ্যের পথ নেপালের তরাই পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমে বাণিজ্যপথ শ্রাবন্তী , মথুরা , ইন্দ্রপ্রস্থ ও তক্ষশীলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দাক্ষিণাত্যের দিকে এই বাণিজ্যপথ পৈথান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।   

৪. শিল্পের উন্নতি - পরবর্তী বৈদিক যুগে শিল্পের ক্ষেত্রে বহুল উন্নতি সাধিত হয়। এই যুগে বৈশ্য শ্রেণীর মধ্যে Trade Guild গড়ে ওঠে। স্বর্ণকার , মণিকার , সূত্রধর , রঞ্জুক - ইত্যাদি বৃত্তিধর শিল্পীর উল্লেখ পাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে বস্তুগত অগ্রগতির প্রতীকরূপে '' চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্র '' ( Painted Grey Ware Culture ) গুলির আগমন ঘটে। এর , মধ্যে কারিগরি দক্ষতা ও কৃৎকৌশলের প্রমান মেলে। 

৫. ধাতু ও মুদ্রার ব্যবহারে পরিবর্তন - ঋক বৈদিক যুগে স্বর্ণ , তাম্র ও ব্রোঞ্জের প্রচলন ছিল। পরবর্তী বৈদিক যুগে টিন , দস্তা , রৌপ্য ও লৌহের প্রচলন দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ অব্দের শেষের দিকে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। এর ওপর পারসিক প্রভাব দেখা যায়। '' মানা '' নামক মুদ্রা ছিল সম্ভবত স্বর্ণমুদ্রা। 

উপসংহার :-
ঋক বৈদিক অর্থনীতি মোটেই উন্নত ছিল না। মুদ্রার অভাবে ব্যবসা - বাণিজ্যের চলাচল সহজ ছিল না এবং বিনিময় প্রথা ছিল একমাত্র পথ। গরুর বিনিময় ছিল সর্বাধিক। নিস্ক ও মানা নামক মুদ্রাগুলির ব্যবহার ছিল সীমিত। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল নিম্নমানের। কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে ভারতীয় অর্থনৈতিক চিন্তাধারা এক বিশিষ্ট রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে পরবর্তী বৈদিক যুগেই পরবর্তী ভারতের অর্থনৈতিক জীবনের সূচনা হয়।     
‘’ The end of this shadowy age , ……...the beginning of the great period of India’s culture . ……………’’       [Basam ]

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

      

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

What were the causes of the decline of the Maurya Empire ? Was Asoka in any way responsible for it’s decline ? 




 মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ :-


চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য , চাণক্য ও অশোকের প্রচেষ্টায় মৌর্য সাম্রাজ্য বিশাল রূপ পরিগ্রহ করলেও খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩ অব্দে অশোকের মৃত্যুর পর খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দের মধ্যে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে দশম সম্রাট বৃহদ্রথকে তার সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। তবে কোনো একটি বিশেষ কারণের জন্য মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে নি - এর পতনের পেছনে দায়ী ছিল বিবিধ কারণের সমন্বয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরোধিতা :-
পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে , অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণদের বিদ্বেষ ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ। তিনি মনে করেন -
১. পশুবলি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা একমাত্র ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হয়েছিল। 
২. দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতির প্রবর্তন করে অশোক ব্রাহ্মণদের অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছিলেন। 
৩. ধর্মমহামাত্র নিয়োগ করে অশোক ব্রাহ্মণদের একছত্র অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। 
এই সকল কারণে ব্রাহ্মণরা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয়ে মৌর্য বংশের বিলোপ সাধনে সহায়তা করেন। 
কিন্তু Dr. H C Roychoudhury ও Dr R C Mazumdar শাস্ত্রী মহাশয়ের অভিমতের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে , অহিংসা নীতি অনুসরণ করেই অশোক প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা প্রয়োগ করে তিনি শ্রেণী নির্বিশেষে একই ধরণের বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম হন। ধর্মমহামাত্ররা ধর্মপ্রচার ছাড়াও জাতি , ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সুখ - স্বাচ্ছন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। সুতরাং , উদার ও পরধর্ম সহিষ্ণু অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণদের বিদ্বেষাভাবাপন্ন হওয়ার কোনো সঙ্গত কারণ ছিল না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সাম্রাজ্যের বিশালতা :-
মৌর্য সাম্রাজ্যের বিশালতা তার পতনের একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সে যুগে দ্রুত গমনাগমন ব্যবস্থার অভাব ও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অসুবিধার ফলে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির পক্ষে সর্বত্র আধিপত্য বজায় রাখা সম্ভব ছিল না। 

প্রশাসনিক দুর্বলতা :-
রাজনৈতিক দিক দিয়ে মৌর্য প্রশাসন সুগঠিত হওয়া স্বত্তেও এর কতকগুলি মারাত্মক দুর্বলতা ছিল। আমলাতন্ত্র ছিল অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং সকলের আনুগত্য ছিল একমাত্র রাজার প্রতি। সামাজিক ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রাধান্য নিয়ন্ত্রণ করার সুনির্দিষ্ট রীতিনীতি না থাকায় গোষ্ঠীগত প্রশাসন সাম্রাজ্যের সামাজিক প্রশাসন পঙ্গু করে তোলে। এছাড়া , গুপ্তচর প্রথা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতার জটিলতার সৃষ্টি করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার :-
অশোকের শিলালিপি থেকে জানতে পারা যায় যে , অশোক শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজকর্মচারীদের উপর নির্ভর করায় এবং তাদের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল থাকায় প্রদেশগুলিতে প্রাদেশিক শাসকেরা জনসাধারণের উপর অত্যাচার চালাতো। অশোকের মৃত্যুর পর এই অত্যাচার চরমে পৌঁছলে চতুর্দিকে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে শক্তিশালী প্রাদেশিক প্রাদেশিক শাসকেরা সাম্রাজ্যের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করে দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। 

স্বতন্ত্র জাতিগুলির বিদ্রোহ :-
নীতিগতভাবে অশোক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র জাতি ও উপজাতিগুলির স্বতন্ত্রতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিল - অন্ধ্র , পুলিন্দ , কম্বোজ , রাষ্ট্রীক , ভোজ , চোল , পান্ড , সত্যপুত্র ও কেরলপুত্র। অশোকের মৃত্যুর পর এরা শক্তিশালী হয়ে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনে সহায়তা করে। 

পরবর্তী সম্রাটদের অযোগ্যতা :-
অশোকের পরবর্তী সম্রাটগণ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম ছিলেন না। রাজতরঙ্গিনী থেকে জানা যায় যে , জলোকি কাশ্মীরের স্বাধীনতা ঘোষণা করে কনৌজ পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেন। তারানাথ রচিত গ্রন্থ অনুসারে বীরসেন গান্ধারে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সুতরাং , অশোকের উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতা ও পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ। 

অর্থনৈতিক অবনতি :-
যদিও সমগ্র উপত্যকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য ছিল ; কিন্তু সাম্রাজ্যের সর্বত্র অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রকার ভেদও ছিল যথেষ্ট। এর ফলে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়ে গোটা মৌর্য সাম্রাজ্যের ওপর এক চরম অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনে। ফলে সাম্রাজ্যের সুস্থিরতা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনে অশোকের দায়িত্ব 


অশোক দিগ্বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীদের '' ভেরীঘোষ'' এর পরিবর্তে '' ধর্মঘোষ '' নীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। অহিংস নীতিকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করার ফলে সামরিক শক্তি ক্ষুন্ন হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগে বৈদেশিক আক্রমণ ঘটতে থাকে।

 ডক্টর ভান্ডারকরের মতে , অশোকের এই নৈতিক্যবোধের ফলে সামরিকবাদ , রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও বৈষয়িক উন্নয়নের প্রতি মানুষের মনে এক প্রবল অনীহা দেখা দেয়। এর ফলশ্রুতি হলো মৌর্য সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন। 

ডক্টর রায়চৌধুরী অশোকের আরো দুটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন।
 ১. তিনি রাজকর্মচারীদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিয়ে কেন্দ্রে বিরোধী শক্তি পরিপুষ্ট করেছিলেন। 
২. অতিরিক্ত দান , ধ্যান করে তিনি দেশের কোষাগারের ক্ষতিসাধন করেছিলেন। 


কিন্তু নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী এই সমস্ত মতামতের বিরোধিতা করে বলেছেন যে , যুদ্ধ করলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয় না ; ঔরঙ্গজেব জীবনব্যাপী সংগ্রামে লিপ্ত থেকেও মোগল সাম্রাজ্যের পতন রোধ করতে পারেন নি। তত্ত্বগতভাবে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অশোক কে দায়ী করা হলেও তাঁর অহিংস আদর্শই যে সাম্রাজ্যের পতনের কারণ - এমন কথা বলা যায় না। অশোকের ধর্মবিজয় নীতি আংশিকভাবে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হলেও , একথা অস্বীকার করা যায় না যে , তিনি পিতামহের দিগ্বিজয় নীতি অনুসরণ করে চললেও কোনো না কোনো সময়ে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটতো। 

আরব ঐতিহাসিক ইবন খালদুন বলেছিলেন , 
'' প্রতিটি সাম্রাজ্যের জন্ম আছে , উত্থান আছে ও পতনও আছে। ''
সভ্যজগতে অশোক ভারতের যে নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দু'হাজার বছর পর আজও তা অম্লান।                     

ডক্টর মজুমদারের মতে , 
বিশ্বের ইতিহাসে অশোক অতুলনীয় এবং অশোকের আবির্ভাব ভারতকে মহিমান্বিত করেছে।
 
ডক্টর স্মিথ মন্তব্য করেছেন , 
অশোক মানবজাতির প্রথম ধর্মগুরু। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বৈদিক সমাজে নারীদের সামাজিক অবস্থান আলোচনা করো। পরবর্তী বৈদিক যুগের নারীদের সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?




Discuss the social position of women in Vedic society. What were the changes in the social status of women in the later Vedic period?


বৈদিক সমাজে নারীদের সামাজিক অবস্থান :-


বৈদিক সমাজ ছিল পুরুষতান্ত্রিক এবং পিতৃপ্রধান। পুরুষ শাসিত সমাজে নারী-পুরুষের সমানাধিকার আশা করা যায় না। সন্দেহ নেই পুরুষদের তুলনায় তাদের ভূমিকা ছিল গৌণ। অনেক ক্ষেত্রেই গৃহস্থের বাইরে তাদের স্বাধীনতা খর্ব করা হতো। বিবাহের পূর্বে তারা পিতা বা ভ্রাতার অধীনে ছিলেন আবার বিবাহ-উত্তর জীবন কাটতো  স্বামী বা পুত্রের অধীনে। আবার বিবাহ করেননি , চিরকুমারী থেকে গেছেন এমন মহিলাও তখনকার দিনে বিরল ছিলনা। 
অভিভাবকহীন তারা ছিলেন না ঠিকই , কিন্তু সীমিত হলেও তাদেরও কিছু অধিকার ছিল। মেয়েদের সাধারণত একটু বেশি বয়সে বিবাহ হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।  ফলে পতি নির্বাচনে তাদের মতামতের উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। কন্যার স্বেচ্ছায় স্বামী নির্বাচনের অজস্র দৃষ্টান্ত ঋগ্বেদে ছড়িয়ে আছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


গৃহস্থালিতে নারীরাই ছিলেন সর্বময় কর্ত্রী। ধর্মীয় কাজে স্ত্রী স্বামীকে সহযোগিতা করতেন। তাই তাদের বলা হত সহধর্মিনী। তারা পর্দানশিন বা গৃহবন্দী ছিলেন না। সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে তারা অবাধে যোগ দিতেন। এমনকি অন্তপুরের বাইরেও নারীরা পুরুষদের সহায়তা করতেন। 
সে যুগে নারীরা সামরিক ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করতেন।  যুদ্ধক্ষেত্রেও বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন এমন বহু দৃষ্টান্ত ঋগ্বেদে পাওয়া যায়। বিশপলা ও মুদগলানির নাম এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

নারীদের উচ্চশিক্ষার অবাধ সুযোগ ছিল। তাদের মধ্যে অবরোধ প্রথা প্রচলিত ছিল না। ঋগ্বেদের যুগে বিশ্ববারা, ঘোষা , অপালা , মমতা - প্রমূখ মহিলারা বিভিন্ন শাস্ত্রে  বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বহু বৈদিক স্তোত্রের রচয়িত্রী হিসেবেও প্রসিদ্ধা। 
বৈদিক যুগে ধর্ম ও আধ্যাত্মিক চর্চার অধিকার থেকেও নারীদের বঞ্চিত করা হয়নি। নারীরা বৈদিক মন্ত্রও রচনা করেছিলেন। সে যুগে লোমশা , জুহু , পৌলমী ও কামায়নীর মত নারীরা ধর্মীয় সাধনার ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের অধিকারের মিশ্র প্রমাণ পাওয়া যায়। এক পুরুষ , এক স্ত্রী - এই ছিল তখনকার দিনের বিবাহ রীতি। পুরুষেরা কোন কোন ক্ষেত্রে বহুপত্নী গ্রহণ করলেও নারীদের বহুপতি গ্রহণের নিদর্শন ঋগ্বেদে নেই। তবে নিঃসন্তান অবস্থায় স্বামী মারা গেলে নারীরা পুনর্বার বিবাহ করতে পারতেন ; সে ক্ষেত্রে নারীরা সাধারণত স্বামীর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহ করতেন। 
ঋগ্বেদে সতীদাহ প্রথার উপস্থিতির নিদর্শন পাওয়া যায়। সন্তানবতী মহিলারা অনেক সময় স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় প্রাণ বিসর্জন দিতেন। কিন্তু এই সতীদাহ প্রথা কেবলমাত্র সমাজের অভিজাত পরিবারের মধ্যে প্রচলিত ছিল ; সমাজের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


বিবাহে পণপ্রথা প্রচলিত ছিল তবে তা বর্তমান যুগের তুলনায় ছিল ভিন্নধর্মী। বিবাহকে নর-নারীর মধ্যে পবিত্র বন্ধন বলে মনে করা হতো। পণপ্রথা প্রচলিত থাকলেও সাধারণত সে পণ পেতেন কন্যার পিতা। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও ছিল। কন্যা প্রতিবন্ধী হলে বা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কন্যার পিতা বরপণ প্রদান করতে বাধ্য হতো। 
ঋক - বৈদিক সাহিত্যিক উপাদান গুলি থেকে জানা যায় সে যুগে নারীদের নৈতিক চরিত্রের মান উন্নত ছিল। পরকীয়া , বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক - ইত্যাদির কোন উল্লেখ বৈদিক সাহিত্যে নেই। গণিকাবৃত্তি প্রচলিত থাকলেও তারাও নৈতিক চরিত্রের অধিকারীনি ছিলেন এবং সামাজিক সম্মানের অধিকারীনি ছিলেন। 


পরবর্তী বৈদিক যুগের নারীদের মর্যাদাগত পরিবর্তন :-


পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীদের মর্যাদা বিশেষভাবে ক্ষুন্ন হয়। অধিকাংশ পিতামাতা কন্যার জন্মকে সানন্দে গ্রহণ করতেন না ,তারা পুত্র কামনা করতেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে স্পষ্টই বলা হয়েছে কন্যা পরিবারের দুঃখ নিয়ে আসে ; পুত্র পরিবারকে রক্ষা করে। অথর্ববেদে কন্যার জন্ম কে দুর্ভাগ্যজনক বলা হয়েছে। কন্যা পিতার বংশধারা রক্ষা করতে পারে না। তিনি তার পিতৃপুরুষদের জলও দিতে পারেন না। কন্যা যা পারেন না পুত্র অনায়াসে তা সম্পন্ন করতে পারেন ; উপরন্ত কন্যার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে পিতা-মাতার দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। কন্যার জন্মের প্রতি পিতা-মাতার অনীহা পিছনে এই কারণগুলি নিহিত রয়েছে। এছাড়া নারীর সামাজিক অবমূল্যায়নের পিছনে কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ ছিল। কৃষির  বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার ক্ষেত্রে পুরুষের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় থেকেই নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। তাদের পুরুষ নির্ভর জীবন শুরু হয়। আর্য পুরুষদের অনেকেই অনার্য নারীকে বিবাহ করতেন। এ ধরনের বিবাহকে সমাজ পরিপূর্ণ স্বীকৃতি দেয়নি। এর ফলে সাধারণভাবে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়। মৈত্রায়ণী সংহিতায় নারীদের মদ ও পাশার মতো সর্বনাশা বলে নিন্দা করা হয়েছে। 

পরবর্তী বৈদিক যুগেও মেয়েদের সাধারণত একটু বেশি বয়সে বিবাহ হত। গৃহ্যসূত্র ও ধর্মসূত্রাদি গ্রন্থে বাল্য বিবাহের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থগুলির খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পূর্ববর্তী নয়। তবে পুরুষ মহলে বহু বিবাহের প্রচলন নিঃসন্দেহে নারীজাতির সামাজিক মর্যাদাহানির  একটা প্রধান কারণ ছিল। মৈত্রায়ণী সংহিতায় মনুর দশ পত্নীর উল্লেখ আছে। রাজপরিবারে বহুবিবাহ প্রথা খুবই জনপ্রিয় হয়। সাধারণত একজন রাজার  কম করেও চারজন রানী ছিলেন। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান তাকে মহিষী বলা হতো। যিনি স্বামীর প্রিয়তমা ছিলেন তিনি বাবাতা বলে গণ্য হতেন। যিনি অবহেলিত তিনি পরিবৃক্তি ও  চতুর্থ রানী পালাগলী নাম পরিচিতা হতেন। 
ঋকবেদের যুগে যেমন তেমনই এ যুগের প্রথমদিকে নারীকে স্বামীগৃহে মুখ্যত দুটি ভূমিকায় দেখা যেত --একদিকে যেমন তিনি পত্নীরূপে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে স্বামীকে সহায়তা করতেন ; অন্যদিকে তেমনি জায়ারূপে দাম্পত্যজীবনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে তার সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকারের পরিধি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে। গৃহের যে সকল ধর্মীয় কাজকর্ম একদিন তারই পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হতো সেসব কাজের দায়িত্ব ক্রমশঃ পুরোহিতের হাতে চলে যায়। মৈত্রায়ণী সংহিতায় বলা হয়েছে এই যুগে নারীরা সভায় যোগ দিতে পারতেন না। সভায় রাজনীতি , বিচারকার্য ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে আলাপ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত। সভায় যোগদানের অধিকার হারিয়ে ফেলায় নারীদের আর ঘরের বাইরে বৃহত্তর জীবনে কিছু করার থাকল না। ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য পরিবারের ছেলেদের উপনয়ন হতো। উপনয়ন মধ্য দিয়ে তারা দ্বিতীয় জন্ম লাভ করতেন এবং "দ্বিজ ''  বলে গণ্য হতেন। মেয়েরা উপনয়নের অধিকারী ছিলেন না। পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্যই জাতকর্ম , অন্নপ্রাশন -  ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। কিন্তু এক্ষেত্রেও  পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে বৈষম্য করা হতো। পুত্রদের ক্ষেত্রে এই অনুষ্ঠানাদিতে বৈদিক মন্ত্র পাঠ হত , কিন্তু কন্যাদের ক্ষেত্রে মন্ত্র পাঠ নিষিদ্ধ ছিল। 

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সে যুগে কয়েকজন নারী জ্ঞান ও গৌরবের উচ্চতম শিখরে আরোহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে মৈত্রেয় ও গার্গি বাচক্লবীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গার্গী যাজ্ঞবল্কের সঙ্গে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সূক্ষ্ম ও অন্তর্ভেদী প্রশ্ন তুলে তিনি যাগ্যবল্ক কে বিব্রত করেছিলেন। '' যেনাহং নামৃতা স্যাম কিমহং তেন  কুর্যাম '' অর্থাৎ যা আমাকে অমৃত দেবে না তা দিয়ে আমি কী করব -- যাজ্ঞবল্কের প্রতি মৈত্রেয়ীর এই উক্তি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে।  ধনসম্পত্তি প্রত্যাখ্যান করে স্বামীর নিকট ব্রক্ষ্মজ্ঞান লাভের জন্যই প্রার্থনা জানিয়েছিলেন তিনি । তৈত্তিরীয় সংহিতা , মৈত্রায়ণী সংহিতা ও অথর্ববেদে সে যুগের নারীদের নৃত্যগীত অনুশীলনের কথা আছে। অথর্ববেদে সতীপ্রথার উল্লেখ আছে। তবে সে কালে বিধবা বিবাহেরও বিধান ছিল ফলে সতীপ্রথা সমাজে খুব একটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল বলে মনে হয় না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।




Share
Tweet
Pin
Share
No comments

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণগুলি লেখ। Write the reasons for the protest religion movement of the sixth century BC.
অথবা ,  বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থানের পটভূমি আলোচনা করো। 
Or, discuss the background to the rise of Buddhism and Jainism.
অথবা , খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী ধর্মীয় আন্দোলনের পেছনে অন্যান্য কারণ সমূহের সাথে অর্থনৈতিক কারণ কতটা যুক্তিযুক্ত বলে তুমি মনে কর ? 





এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ ।


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ভারতের রাজনীতি ও ধর্মীয় বিবর্তনের ইতিহাসে দিকচিহ্ন হিসেবে পরিচিত। এইসময় একদিকে মগধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয় , অন্যদিকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।   

বৈদিক যুগের শেষদিকে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম জটিল কর্মকান্ডে পরিণত হয়। সরল ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তে বাহ্যিক ধর্মীয় আচার আচরণ বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্য শ্রেণীর একছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বভাবতই সাধারণ জনগণ ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের প্রতি বিরাগভাজন হয়। তারা সহজ সরল ধর্ম বিশ্বাসের পথ খুঁজতে থাকে। উপনিষদে যে সহজ সরল ধর্মীয় চিন্তার অবতারণা করা হয়েছিল তারই সূত্র ধরে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন গড়ে ওঠে। 

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের দুটি ধারা পরিলক্ষিত হয় - (১) নাস্তিকতামূলক ও (২) একেশ্বরবাদী। প্রথম ধারায় সমস্ত বৈদিক দেবদেবীকে অস্বীকার করা হয়। দ্বিতীয় ধারায় একেশ্বরবাদী চিন্তাধারার সমর্থন পাওয়া যায় এবং তারা ভক্তিকে ঈস্বরলাভের একমাত্র পথ বলে বিবেচিত করেন। এইভাবে - বৌদ্ধ , জৈন , শৈব ও বৈষ্ণব - এই চারটি ধর্মীয় ধারার উদ্ভব ঘটে। শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায় বৈদিক দেবতা শিব ও বিষ্ণুকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। তাই তারা সংস্কারবাদী নামে পরিচিত। কিন্তু বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনরূপে আত্মপ্রকাশ করে। 

Dr.A.L. Basam প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উৎপত্তি প্রসঙ্গে বলেছেন -
'' বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক আলোড়নের মধ্যে দিয়ে ভারতে এক যথার্থ ইতিহাসের আবির্ভাব হয় এই যুগে। ''

ঐতিহাসিক Dr. R. S. Sharma  প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উৎপত্তির কারণ হিসেবে কিছু ধর্মীয় কারণকে দায়ী করেছেন। তবে ঐতিহাসিকগণ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ হিসেবে বহুবিধ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। যেমন -

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

সামাজিক কারণ -

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সামাজিক পরিমন্ডলে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই সময় উত্তর পূর্ব ভারতে দ্বিতীয় নগরায়নের সূত্রপাত ঘটে। এর পূর্বে উত্তর পশ্চিম ভারতে হরপ্পা অঞ্চলে প্রথম নগরায়নের আগমন ঘটেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় নগরায়নের ক্ষেত্রে লোহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 
দ্বিতীয় নগরায়ন গঙ্গা উপত্যকায় কেন্দ্রীভূত ছিল। এই সময়ের প্রধান প্রধান নগরগুলি ছিল - রাজগৃহ , বারাণসী , কোসাম্বি , শ্রাবস্তী , চম্পা - ইত্যাদি প্রতিটি নগর - নগরী গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল অধ্যাপক H. Kulke  মনে করেন - বৌদ্ধধর্ম নতুন গঙ্গা কেন্দ্রিক সভ্যতার প্রতিবিম্ব ছিল। 
[ This new Gangetic civilization found its spiritual expression in a reform movement , which was a reaction to the Brahmin - kshatriya alliance of the Later Vedic Age .]

বৈদিক যুগের শেষদিকে সমাজব্যবস্থা অনমনীয় হয়ে উঠেছিল। ব্রাহ্মণদের সামাজিক প্রতিপত্তি , মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। ক্ষত্রিয়দেরও মর্যাদা ছিল ব্রাহ্মণদের নীচে। বৈশ্যদের প্রতিপত্তি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল। ফৌজদারি  বিচারেও জাতিভেদ প্রথা ব্যবহার করা হত। শুদ্রদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত হীন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের এই কঠোর জাতিভেদ প্রথা , ও আধিপত্য সাধারণ মানুষকে বিচলিত করে তুলেছিল। এই পরিস্থিতি ধর্মীয় আন্দোলনের আত্মপ্রকাশে সহায়ক হয়েছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

ধর্মীয় কারণ : বুদ্ধের বৈপ্লবিক আদর্শ -

প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি , কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রবল প্রতাপ। অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধের নতুন ধর্মীয় আদর্শ , উদারতা , সরলতা , আড়ম্বরহীন ধর্মীয় ব্যবস্থা - ইত্যাদি সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। বুদ্ধ সমাজে আর্থিক বৈষম্য ও শ্রেণী সংঘাত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ শ্রেণীর সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পর্কে বিরাগভাজন ছিলেন ; অন্যদিকে তিনি সামাজিক ধনসম্পদ উৎপাদনের সাথে যুক্ত বৈশ্য ও শুদ্র শ্রেণীর প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি এমন এক পথের সন্ধান দেন যা মানুষকে এই দুঃখ দুর্দশার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি যে ধর্ম আন্দোলনের সূচনা করেন , তা একদিকে ছিল আচার অনুষ্ঠান পীড়িত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে ছিল ভোগ , সুখ ও কৃচ্ছসাধন সংক্রান্ত চরম মতবাদের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রদর্শিত পথ সকলের গ্রহনযোগ্য হওয়ায় সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় এই মতাদর্শে বিশ্বাস করে। 

রাজনৈতিক কারণ -

ক্ষত্রিয়রা ছিল শাসক ও রক্ষক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা উপলব্ধি করে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ক্ষত্রিয়দের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। তাই কালক্রমে তারাও ব্রাহ্মণদের বিরোধী হয়ে ওঠে এবং তারা বিকল্প মতবাদে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তৎকালীন রাজন্যবর্গ যথা - চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য , অশোক - প্রমুখের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্ম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে সাথে দক্ষিণ - পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পরে। 

দার্শনিক কারণ -

উপনিষদের নতুন তত্ত্ব প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষ উপনিষদের তত্ত্ব গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছিল এবং তার সাথে সাথে প্রচলিত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অসাড়তা সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছিল। তারা নতুন আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। বস্তুতঃপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের সময়কালে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম সনাতন হিন্দু ধর্মের মূল আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছিলো। আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পরিবর্তে ধর্ম হয়ে উঠেছিল আচার সর্বস্ব ব্যবস্থা। কিন্তু নতুন দার্শনিক চিন্তার আবির্ভাব , উপনিষদের যথার্থ ব্যাখ্যা - ইত্যাদির ফলে মানুষ ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পেরেছিল এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। 

অর্থনৈতিক কারণ -

তদানীন্তন অর্থনৈতিক পরিবর্তনশীলতার কারণে প্রতিবাদী আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেছিলো বলে ঐতিহাসিক ডক্টর রোমিলা থাপার ও ডক্টর রামসরণ শর্মা মনে করেন। ডক্টর ডি এন ঝাঁ মনে করেন , কৃষকের হাতে উদ্বৃত্ত সম্পদ হতে থাকাই হলো প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ। 
ডক্টর আর এস শর্মার মতে , শ্রেষ্ঠী বণিকরা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অপেক্ষা বৌদ্ধ ধর্মকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলো। ফলে বৌদ্ধ ধর্মের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিলো। 
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ও পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটে। এই অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রতিবাদী ধর্মীয় আন্দোলনের আত্মপ্রকাশে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। এই সময় উত্তর - পূর্ব গাঙ্গেয় সমভূমিতে কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। কৃষিকার্য ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে নতুন শ্রেষ্ঠী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। প্রভূত ধন সম্পদের অধিকারী হয়েও এদের সামাজিক মর্যাদা ছিলনা। স্বভাবতই তারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। 

ঐতিহাসিক Romila Thapar মনে করেন The Buddha had greater success among the cities of the monarchial kingdom ‘’। 

অন্যদিকে ডক্টর ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে , সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল। এক শ্রেণীর হাতে প্রচুর ধনসম্পদ থাকলেও সাধারণ মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

প্রতিবাদী আন্দোলনের অর্থনৈতিক কারণের যৌক্তিকতা আলোচনা করতে গিয়ে তদানীন্তন ভারতে প্রচলিত অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিবাদী আন্দোলনের পথকে প্রশস্ত করেছিল বলে ঐতিহাসিক ডক্টর রোমিলা থাপার ও ডক্টর রামসরণ শর্মা মনে করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

উপসংহার -

Smith - এর মতে , উত্তর ও উত্তর - পূর্ব ভারতে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান তথা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের একটি বড় কারণ ছিল যে , এই অঞ্চলের শাসকেরা প্রকৃতপক্ষে আর্য ছিলেন না। তাঁরা মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন এবং তারা বৈদিক ধর্ম সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করতে পারেন নি। এই কারণেই অপেক্ষাকৃত আর্য প্রভাবমুক্ত উত্তর ও উত্তর -পূর্ব ভারতে , গঙ্গা উপত্যকা ও বিহার অঞ্চলে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। 
যাই হোক , খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের প্রকাশ কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিলনা। এই আন্দোলনকে নিছক ধর্মীয় বলাটাও যুক্তিযুক্ত নয়। প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন এক ব্যাপক সামাজিক বিপ্লবের নামান্তর ছিল এবং বৈষয়িক ও মানসিক পটভূমির থেকে উদ্ভুত এক আন্দোলন ভারতের জাতীয় জীবনের বিবর্তনে এক বিবর্তন সৃষ্টি করেছিল।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।          

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

প্রাণায়ামের গুরুত্ব ও উপযোগিতা।  Importance of Pranayama .





প্রাণের আয়াম ( নিয়ন্ত্রণ ) -ই হল প্রাণায়াম। প্রতিমুহূর্তে জীবন আর মৃত্যুর যে অটুট সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে রয়েছে , সেটা প্রাণের সংযোগের দ্বারাই রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় 'জীবন' শব্দ '' জীব - প্রাণধারণ ' ধাতু থেকে তৈরি হয়েছে ; আর 'মৃত্যু' শব্দ তৈরি হয়েছে 'মৃতং প্রাণত্যাগ' থেকে। প্রাণায়াম দ্বারা ইন্দ্রিয় ও মনের সব দোষ দূর করা সম্ভব হয়। আসন দ্বারা যোগীর রজঃগুণ , প্রাণায়াম দ্বারা পাপানিবৃত্তি এবং প্রত্যাহার দ্বারা মানসিক বিকার দূর করা উচিত। প্রাণ এবং মনের মধ্যে সম্পর্ক বড়োই ঘনিষ্ঠ প্রাণ থেমে গেলে মন আপনা থেকেই একাগ্র হয়ে পড়ে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

প্রাণায়াম করলে মনের উপর আসা অসৎ অবিদ্যা এবং ক্লেশ রুপী তমসের আবরণ পাতলা হয়ে আসে।  পরিশুদ্ধ হয়ে পড়া মনে ধারণা ( একাগ্রতা ) আপনা থেকেই হতে লাগে এবং ধারণা দ্বারা যোগের উন্নতি স্থিতি ধ্যান এবং সমাধির দিকে এগিয়ে চলা যায়। যোগাসন দ্বারা আমরা স্থুল শরীরের বিকৃতি দূর করি। সূক্ষ্ম শরীরের উপরে যোগাসনের থেকে প্রাণায়ামের বেশি প্রভাব পড়ে। শুধুমাত্র সূক্ষ্ম শরীরই নয় , স্থুল শরীরের উপরেও প্রাণায়ামের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আমাদের শরীরে ফুসফুস , হূৎপিন্ড এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

স্থুলরূপে প্রাণায়াম হল শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের একটি পদ্ধতি , যার দ্বারা ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে , রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয়ে ওঠার ফলে আরোগ্য এবং দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি হয়। শারীরবিজ্ঞান অনুযায়ী মানব শরীরের দুটি ফুসফুস হল শ্বাসকে নিজের ভিতর নেওয়ার সেই যন্ত্র , যাতে ভরা বায়ু শরীরের সমস্ত অঙ্গে পৌঁছে অক্সিজেন প্রদান করে এবং বিভিন্ন অবয়ব থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডকে বাইরে বের করে দেয়। এই ক্রিয়া ঠিকমত চলতে থাকলে ফুসফুস মজবুত হয়ে ওঠে এবং রক্ত শোধন কার্য চলতে থাকে। 

প্রায়ই অধিকাংশ ব্যক্তি , গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অভ্যস্ত থাকে না , যার ফলে তাদের ফুসফুসের এক-চতুর্থাংশ ভাগই কাজ করে , বাকি তিন চতুর্থাংশ ভাগ নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। মৌমাছির চাকের মত ফুসফুসে প্রায় সাত কোটি তিরিশ লক্ষ স্পঞ্জের মতো প্রকোষ্ঠ থাকে। সাধারণ হালকা শ্বাস নিলে তাদের ভিতর প্রায় দুই কোটি ছিদ্রেই প্রাণবায়ুর সঞ্চার হয় , বাকি পাঁচ কোটি তিরিশ লক্ষ ছিদ্রে প্রাণবায়ু না পৌছানোর ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ , সেগুলির মধ্যে জড়তা ও মল জাতীয় দ্রব্য জমা হতে থাকে , যার ফলে ব্যক্তি টি.বি. , কাশি , ব্রংকাইটিস ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

এই প্রকার ফুসফুসের কার্যপদ্ধতির অপূর্ণতা রক্তশুদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে। হৃদপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ অকালমৃত্যু উপস্থিত হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তির দীর্ঘ আয়ুর জন্য প্রাণায়ামের  গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। এই কারণেই সনাতন ধর্ম , শুভকার্যে এবং সন্ধ্যা উপাসনার নিত্যকর্মে প্রাণায়ামকে এক আবশ্যক ধর্মরূপে শামিল করা হয়। উদ্বেগ , চিন্তা , ক্রোধ , নিরাশা , ভয় এবং কামুকতা ইত্যাদি মনোবিকারের সমাধান প্রাণায়াম দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। শুধুমাত্র এই নয় , মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে  বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি , বুদ্ধিমত্তা , দূরদর্শিতা , সূক্ষ্ম নিরীক্ষণ , ধারণা , মেধা ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম দ্বারা দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে জীবনের বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্ত করা যেতে পারে। 

প্রাণায়াম করা ব্যক্তি নিজের শ্বাসের প্রয়োগ খুব কম করে থাকেন , তার ফলে তিনি দীর্ঘায়ু হন।এমনিতেও এই সৃষ্টিতে যে প্রাণী যতক্ষণ শ্বাস নেয় সে তত বেশি দিন বেঁচে থাকে। যদিও প্রাণায়ামের বিভিন্ন বিধি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে এবং প্রত্যেক প্রাণায়ামের নিজস্ব একটি বিশেষত্ব আছে ; তবুও সব প্রাণায়ামের অভ্যাস ব্যক্তি প্রতিদিন করতে পারেন না। যদি প্রাণায়ামের পূর্ণ অভ্যাস ব্যক্তি করতে পারেন তবে যেসব লাভ প্রাপ্ত করবেন সেগুলি হল - 

১. বাত , পিত্ত এবং কফ এই ত্রিদোষ নিরাময় করা সম্ভব হয়। 

২. পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সমস্ত প্রকারের উদর রোগ দূর হয়। 

৩. হৃদপিন্ড ও ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক সম্বন্ধীয় সমস্ত রোগ দূর হয়। 

৪. মেদাধিক্য , ডায়াবেটিস , কোলেস্টরল , কোষ্ঠকাঠিন্য , গ্যাস , অম্লপিত্ত , শ্বাস রোগ , অ্যালার্জি , মাইগ্রেন , রক্তচাপ কিডনির রোগ , পুরুষ ও মহিলার সমস্ত যৌন রোগ - ইত্যাদি সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর সব অসাধ্য রোগ দূর হয়। 

৫. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

৬. বংশানুক্রমিক ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

৭. চুল পড়ে যাওয়া ও পেকে যাওয়া , মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া , নেত্রজ্যোতির বিকার , স্মৃতিদৌর্বল্য ইত্যাদি থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। 

৮. মন স্থির , শান্ত , প্রসন্ন এবং উৎসাহিত হয়ে ওঠে , ফলে ডিপ্রেশন জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৯. স্থুল এবং সূক্ষ্ম দেহের সমস্ত রোগ এবং কাম ,ক্রোধ ,লোভ ,মোহ - অহংকার  ইত্যাদি দোষ নষ্ট হয়। 

১০. শরীরের সমস্ত বিকার , টক্সিনস - ইত্যাদি নষ্ট হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates