প্রাণায়ামের গুরুত্ব ও উপযোগিতা। Importance of Pranayama .

by - June 24, 2021

প্রাণায়ামের গুরুত্ব ও উপযোগিতা।  Importance of Pranayama .





প্রাণের আয়াম ( নিয়ন্ত্রণ ) -ই হল প্রাণায়াম। প্রতিমুহূর্তে জীবন আর মৃত্যুর যে অটুট সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে রয়েছে , সেটা প্রাণের সংযোগের দ্বারাই রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় 'জীবন' শব্দ '' জীব - প্রাণধারণ ' ধাতু থেকে তৈরি হয়েছে ; আর 'মৃত্যু' শব্দ তৈরি হয়েছে 'মৃতং প্রাণত্যাগ' থেকে। প্রাণায়াম দ্বারা ইন্দ্রিয় ও মনের সব দোষ দূর করা সম্ভব হয়। আসন দ্বারা যোগীর রজঃগুণ , প্রাণায়াম দ্বারা পাপানিবৃত্তি এবং প্রত্যাহার দ্বারা মানসিক বিকার দূর করা উচিত। প্রাণ এবং মনের মধ্যে সম্পর্ক বড়োই ঘনিষ্ঠ প্রাণ থেমে গেলে মন আপনা থেকেই একাগ্র হয়ে পড়ে। 


প্রাণায়াম করলে মনের উপর আসা অসৎ অবিদ্যা এবং ক্লেশ রুপী তমসের আবরণ পাতলা হয়ে আসে।  পরিশুদ্ধ হয়ে পড়া মনে ধারণা ( একাগ্রতা ) আপনা থেকেই হতে লাগে এবং ধারণা দ্বারা যোগের উন্নতি স্থিতি ধ্যান এবং সমাধির দিকে এগিয়ে চলা যায়। যোগাসন দ্বারা আমরা স্থুল শরীরের বিকৃতি দূর করি। সূক্ষ্ম শরীরের উপরে যোগাসনের থেকে প্রাণায়ামের বেশি প্রভাব পড়ে। শুধুমাত্র সূক্ষ্ম শরীরই নয় , স্থুল শরীরের উপরেও প্রাণায়ামের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আমাদের শরীরে ফুসফুস , হূৎপিন্ড এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে। 


স্থুলরূপে প্রাণায়াম হল শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামের একটি পদ্ধতি , যার দ্বারা ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে , রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয়ে ওঠার ফলে আরোগ্য এবং দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি হয়। শারীরবিজ্ঞান অনুযায়ী মানব শরীরের দুটি ফুসফুস হল শ্বাসকে নিজের ভিতর নেওয়ার সেই যন্ত্র , যাতে ভরা বায়ু শরীরের সমস্ত অঙ্গে পৌঁছে অক্সিজেন প্রদান করে এবং বিভিন্ন অবয়ব থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডকে বাইরে বের করে দেয়। এই ক্রিয়া ঠিকমত চলতে থাকলে ফুসফুস মজবুত হয়ে ওঠে এবং রক্ত শোধন কার্য চলতে থাকে। 

প্রায়ই অধিকাংশ ব্যক্তি , গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অভ্যস্ত থাকে না , যার ফলে তাদের ফুসফুসের এক-চতুর্থাংশ ভাগই কাজ করে , বাকি তিন চতুর্থাংশ ভাগ নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। মৌমাছির চাকের মত ফুসফুসে প্রায় সাত কোটি তিরিশ লক্ষ স্পঞ্জের মতো প্রকোষ্ঠ থাকে। সাধারণ হালকা শ্বাস নিলে তাদের ভিতর প্রায় দুই কোটি ছিদ্রেই প্রাণবায়ুর সঞ্চার হয় , বাকি পাঁচ কোটি তিরিশ লক্ষ ছিদ্রে প্রাণবায়ু না পৌছানোর ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ , সেগুলির মধ্যে জড়তা ও মল জাতীয় দ্রব্য জমা হতে থাকে , যার ফলে ব্যক্তি টি.বি. , কাশি , ব্রংকাইটিস ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। 


এই প্রকার ফুসফুসের কার্যপদ্ধতির অপূর্ণতা রক্তশুদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে। হৃদপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ অকালমৃত্যু উপস্থিত হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তির দীর্ঘ আয়ুর জন্য প্রাণায়ামের  গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। এই কারণেই সনাতন ধর্ম , শুভকার্যে এবং সন্ধ্যা উপাসনার নিত্যকর্মে প্রাণায়ামকে এক আবশ্যক ধর্মরূপে শামিল করা হয়। উদ্বেগ , চিন্তা , ক্রোধ , নিরাশা , ভয় এবং কামুকতা ইত্যাদি মনোবিকারের সমাধান প্রাণায়াম দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। শুধুমাত্র এই নয় , মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে  বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি , বুদ্ধিমত্তা , দূরদর্শিতা , সূক্ষ্ম নিরীক্ষণ , ধারণা , মেধা ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম দ্বারা দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে জীবনের বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্ত করা যেতে পারে। 

প্রাণায়াম করা ব্যক্তি নিজের শ্বাসের প্রয়োগ খুব কম করে থাকেন , তার ফলে তিনি দীর্ঘায়ু হন।এমনিতেও এই সৃষ্টিতে যে প্রাণী যতক্ষণ শ্বাস নেয় সে তত বেশি দিন বেঁচে থাকে। যদিও প্রাণায়ামের বিভিন্ন বিধি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে এবং প্রত্যেক প্রাণায়ামের নিজস্ব একটি বিশেষত্ব আছে ; তবুও সব প্রাণায়ামের অভ্যাস ব্যক্তি প্রতিদিন করতে পারেন না। যদি প্রাণায়ামের পূর্ণ অভ্যাস ব্যক্তি করতে পারেন তবে যেসব লাভ প্রাপ্ত করবেন সেগুলি হল - 

১. বাত , পিত্ত এবং কফ এই ত্রিদোষ নিরাময় করা সম্ভব হয়। 

২. পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সমস্ত প্রকারের উদর রোগ দূর হয়। 

৩. হৃদপিন্ড ও ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক সম্বন্ধীয় সমস্ত রোগ দূর হয়। 

৪. মেদাধিক্য , ডায়াবেটিস , কোলেস্টরল , কোষ্ঠকাঠিন্য , গ্যাস , অম্লপিত্ত , শ্বাস রোগ , অ্যালার্জি , মাইগ্রেন , রক্তচাপ কিডনির রোগ , পুরুষ ও মহিলার সমস্ত যৌন রোগ - ইত্যাদি সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর সব অসাধ্য রোগ দূর হয়। 

৫. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

৬. বংশানুক্রমিক ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

৭. চুল পড়ে যাওয়া ও পেকে যাওয়া , মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া , নেত্রজ্যোতির বিকার , স্মৃতিদৌর্বল্য ইত্যাদি থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। 

৮. মন স্থির , শান্ত , প্রসন্ন এবং উৎসাহিত হয়ে ওঠে , ফলে ডিপ্রেশন জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৯. স্থুল এবং সূক্ষ্ম দেহের সমস্ত রোগ এবং কাম ,ক্রোধ ,লোভ ,মোহ - অহংকার  ইত্যাদি দোষ নষ্ট হয়। 

১০. শরীরের সমস্ত বিকার , টক্সিনস - ইত্যাদি নষ্ট হয়। 

You May Also Like

0 comments