মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ :- causes of decline of the Maurya Empire

by - June 26, 2021

What were the causes of the decline of the Maurya Empire ? Was Asoka in any way responsible for it’s decline ? 




 মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ :-


চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য , চাণক্য ও অশোকের প্রচেষ্টায় মৌর্য সাম্রাজ্য বিশাল রূপ পরিগ্রহ করলেও খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩ অব্দে অশোকের মৃত্যুর পর খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দের মধ্যে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে দশম সম্রাট বৃহদ্রথকে তার সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। তবে কোনো একটি বিশেষ কারণের জন্য মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে নি - এর পতনের পেছনে দায়ী ছিল বিবিধ কারণের সমন্বয়। 


ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরোধিতা :-
পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে , অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণদের বিদ্বেষ ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ। তিনি মনে করেন -
১. পশুবলি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা একমাত্র ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হয়েছিল। 
২. দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতির প্রবর্তন করে অশোক ব্রাহ্মণদের অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছিলেন। 
৩. ধর্মমহামাত্র নিয়োগ করে অশোক ব্রাহ্মণদের একছত্র অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। 
এই সকল কারণে ব্রাহ্মণরা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের নেতৃত্বে বিদ্রোহী হয়ে মৌর্য বংশের বিলোপ সাধনে সহায়তা করেন। 
কিন্তু Dr. H C Roychoudhury ও Dr R C Mazumdar শাস্ত্রী মহাশয়ের অভিমতের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে , অহিংসা নীতি অনুসরণ করেই অশোক প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা প্রয়োগ করে তিনি শ্রেণী নির্বিশেষে একই ধরণের বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম হন। ধর্মমহামাত্ররা ধর্মপ্রচার ছাড়াও জাতি , ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সুখ - স্বাচ্ছন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। সুতরাং , উদার ও পরধর্ম সহিষ্ণু অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণদের বিদ্বেষাভাবাপন্ন হওয়ার কোনো সঙ্গত কারণ ছিল না। 


সাম্রাজ্যের বিশালতা :-
মৌর্য সাম্রাজ্যের বিশালতা তার পতনের একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সে যুগে দ্রুত গমনাগমন ব্যবস্থার অভাব ও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অসুবিধার ফলে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির পক্ষে সর্বত্র আধিপত্য বজায় রাখা সম্ভব ছিল না। 

প্রশাসনিক দুর্বলতা :-
রাজনৈতিক দিক দিয়ে মৌর্য প্রশাসন সুগঠিত হওয়া স্বত্তেও এর কতকগুলি মারাত্মক দুর্বলতা ছিল। আমলাতন্ত্র ছিল অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং সকলের আনুগত্য ছিল একমাত্র রাজার প্রতি। সামাজিক ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রাধান্য নিয়ন্ত্রণ করার সুনির্দিষ্ট রীতিনীতি না থাকায় গোষ্ঠীগত প্রশাসন সাম্রাজ্যের সামাজিক প্রশাসন পঙ্গু করে তোলে। এছাড়া , গুপ্তচর প্রথা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতার জটিলতার সৃষ্টি করে। 


প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার :-
অশোকের শিলালিপি থেকে জানতে পারা যায় যে , অশোক শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজকর্মচারীদের উপর নির্ভর করায় এবং তাদের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল থাকায় প্রদেশগুলিতে প্রাদেশিক শাসকেরা জনসাধারণের উপর অত্যাচার চালাতো। অশোকের মৃত্যুর পর এই অত্যাচার চরমে পৌঁছলে চতুর্দিকে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে শক্তিশালী প্রাদেশিক প্রাদেশিক শাসকেরা সাম্রাজ্যের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করে দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। 

স্বতন্ত্র জাতিগুলির বিদ্রোহ :-
নীতিগতভাবে অশোক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র জাতি ও উপজাতিগুলির স্বতন্ত্রতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিল - অন্ধ্র , পুলিন্দ , কম্বোজ , রাষ্ট্রীক , ভোজ , চোল , পান্ড , সত্যপুত্র ও কেরলপুত্র। অশোকের মৃত্যুর পর এরা শক্তিশালী হয়ে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনে সহায়তা করে। 

পরবর্তী সম্রাটদের অযোগ্যতা :-
অশোকের পরবর্তী সম্রাটগণ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম ছিলেন না। রাজতরঙ্গিনী থেকে জানা যায় যে , জলোকি কাশ্মীরের স্বাধীনতা ঘোষণা করে কনৌজ পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেন। তারানাথ রচিত গ্রন্থ অনুসারে বীরসেন গান্ধারে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সুতরাং , অশোকের উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতা ও পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ। 

অর্থনৈতিক অবনতি :-
যদিও সমগ্র উপত্যকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য ছিল ; কিন্তু সাম্রাজ্যের সর্বত্র অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রকার ভেদও ছিল যথেষ্ট। এর ফলে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়ে গোটা মৌর্য সাম্রাজ্যের ওপর এক চরম অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনে। ফলে সাম্রাজ্যের সুস্থিরতা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। 


মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনে অশোকের দায়িত্ব 


অশোক দিগ্বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীদের '' ভেরীঘোষ'' এর পরিবর্তে '' ধর্মঘোষ '' নীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। অহিংস নীতিকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করার ফলে সামরিক শক্তি ক্ষুন্ন হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগে বৈদেশিক আক্রমণ ঘটতে থাকে।

 ডক্টর ভান্ডারকরের মতে , অশোকের এই নৈতিক্যবোধের ফলে সামরিকবাদ , রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও বৈষয়িক উন্নয়নের প্রতি মানুষের মনে এক প্রবল অনীহা দেখা দেয়। এর ফলশ্রুতি হলো মৌর্য সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন। 

ডক্টর রায়চৌধুরী অশোকের আরো দুটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন।
 ১. তিনি রাজকর্মচারীদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিয়ে কেন্দ্রে বিরোধী শক্তি পরিপুষ্ট করেছিলেন। 
২. অতিরিক্ত দান , ধ্যান করে তিনি দেশের কোষাগারের ক্ষতিসাধন করেছিলেন। 


কিন্তু নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী এই সমস্ত মতামতের বিরোধিতা করে বলেছেন যে , যুদ্ধ করলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয় না ; ঔরঙ্গজেব জীবনব্যাপী সংগ্রামে লিপ্ত থেকেও মোগল সাম্রাজ্যের পতন রোধ করতে পারেন নি। তত্ত্বগতভাবে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অশোক কে দায়ী করা হলেও তাঁর অহিংস আদর্শই যে সাম্রাজ্যের পতনের কারণ - এমন কথা বলা যায় না। অশোকের ধর্মবিজয় নীতি আংশিকভাবে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হলেও , একথা অস্বীকার করা যায় না যে , তিনি পিতামহের দিগ্বিজয় নীতি অনুসরণ করে চললেও কোনো না কোনো সময়ে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটতো। 

আরব ঐতিহাসিক ইবন খালদুন বলেছিলেন , 
'' প্রতিটি সাম্রাজ্যের জন্ম আছে , উত্থান আছে ও পতনও আছে। ''
সভ্যজগতে অশোক ভারতের যে নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দু'হাজার বছর পর আজও তা অম্লান।                     

ডক্টর মজুমদারের মতে , 
বিশ্বের ইতিহাসে অশোক অতুলনীয় এবং অশোকের আবির্ভাব ভারতকে মহিমান্বিত করেছে।
 
ডক্টর স্মিথ মন্তব্য করেছেন , 
অশোক মানবজাতির প্রথম ধর্মগুরু। 


You May Also Like

0 comments