শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমন্বয়।

by - October 08, 2023

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমন্বয়। 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে তুমি কোনটিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে কর ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর। 




শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমন্বয়। 


শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য কেবলমাত্র ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ; সমাজ এখানে গৌণ বিষয়। ব্যক্তির বিভিন্ন চাহিদাগুলি পূরণের মাধ্যমে ব্যক্তির বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন - স্যার পার্সি নান , বার্ট্রান্ড রাসেল , স্বামী বিবেকানন্দ - প্রমুখ। 

অন্যদিকে শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য শিক্ষাকে সামাজিক কল্যানে নিয়োজিত করার পক্ষপাতী। ব্যক্তি এখানে গৌণ বিষয়। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যগুলি সমাজকে কেন্দ্র করে রচিত হয়। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের প্রবক্তাদের মতে , কোনো ব্যক্তিই সমাজের উর্দ্ধে নয়। সমাজই ব্যক্তিকে তার দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে এবং চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন - হার্বার্ট স্পেনসার , মহাত্মা গান্ধী - প্রমুখ। 

তবে আধুনিক শিক্ষাবিদ , দার্শনিক ও মনোবিদরা - প্রত্যেকেই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে কোনো একটিকে চরমভাবে গ্রহণ করার পক্ষপাতী নন। তাঁদের মতে , শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে কোনো একটিকে চরমভাবে গ্রহণ করলে তা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকারক হবে। তাই আধুনিককালে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার পক্ষপাতী। এর পেছনে তাঁদের যুক্তিগুলি হল - 


ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা :- 
কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সমাজের বাইরে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় ; আবার , ব্যক্তিকে ছাড়া কোনো সমাজ গঠিত হতে পারেনা। তাই ব্যক্তি ও সমাজ একে অপরের উপর নির্ভরশীল ও পরিপূরক। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সামাজিক পরিবেশেই গড়ে ওঠে ; আবার সমাজের বিবর্তন , ইতিবাচক সংস্কার - ইত্যাদি ব্যক্তির মাধ্যমেই ঘটে থাকে। তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক উভয়ই শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত। 

ব্যক্তি ও সমাজকল্যাণে শিক্ষা :- 
শিক্ষার মাধ্যমে একই সঙ্গে ব্যক্তি ও সমাজ কল্যাণ সাধিত হয়। ব্যক্তিকে প্রদত্ত শিক্ষা সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত হয় এবং সমাজ সর্বদা শিক্ষা সহ ব্যক্তির অন্যান্য চাহিদা পূরণে সক্রিয় হয়। তাই ব্যক্তিকে সেই সকল শিক্ষাই দেওয়া উচিত যা সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত হবে। ব্যক্তি সকল প্রকার আশা আকাঙ্খা পূরণ করে সমাজের মধ্যেই। তাই শিক্ষা সর্বদা সমাজকল্যাণে নিয়োজিত হওয়া উচিত ; তা না হলে ব্যক্তি স্বার্থ বিপন্ন হবে। 


শিক্ষা ও সামাজিক উৎপাদন :- 
শিক্ষা ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে উৎপাদনশীলতা গড়ে তোলে। এই উৎপাদনশীলতার দ্বারা ব্যক্তি সমাজের বিভিন্ন কর্মে লিপ্ত হয় ও সমাজের কল্যাণ সাধন করে। যদি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে এমন ধরণের উৎপাদনশীলতা তৈরী করা হত - যা সমাজে প্রচলিত বা গ্রহণযোগ্য নয় - তাহলে ব্যক্তির সেই উৎপাদনশীলতার মূল্য হত শূন্য। তাই শিক্ষা ব্যক্তির মধ্যে সেই ধরণের উৎপাদনশীলতা তৈরী করে যা সমাজের প্রয়োজনে নিয়োজিত করা যায়। মহাত্মা গান্ধী তাঁর বুনিয়াদি শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার সঙ্গে সামাজিক উৎপাদনশীলতার বিষয়টিকে যুক্ত করেছিলেন। 

শিক্ষা প্রকল্প ও কর্মসূচী :- 
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচী যুক্ত থাকে। এই প্রকল্প ও কর্মসূচীগুলি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে এবং নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , বিদ্যালয়ের তরফে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী গ্রহীত হলে বর্তমান প্রকৃতিতে সবুজের অভাবে প্রকৃতি যে ভীষণভাবে বিপন্ন - সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অবগত হয় এবং তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কর্তব্যকেও উপলব্ধি করতে পারে। তাই শিক্ষা প্রকল্প ও কর্মসূচীগুলি একদিকে যেমন সামাজিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যায় আবার অন্যদিকে শিক্ষার্থীর মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলে। 

পরিশেষে বলা যায় , ব্যক্তি ও সমাজের যথার্থ বিকাশের জন্য শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে আদর্শ সামঞ্জস্য বিধান করা প্রয়োজন। তাই বর্তমান শিক্ষাবিদগণ ও শিক্ষাদর্শনিকগণ শিক্ষাক্ষেত্রে উভয়কেই প্রয়োজনানুসারে গ্রহণ করেছেন।   


You May Also Like

0 comments