ন্যায়বিচারের বৈশিষ্টগুলি লেখ।

by - December 03, 2022

ন্যায়বিচারের বৈশিষ্টগুলি লেখ। 

ন্যায়বিচারের বিভিন্ন বৈশিষ্টগুলি উল্লেখ কর। 



ন্যায়বিচারের বৈশিষ্ট :- 


ন্যায়বিচার শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Justice শব্দটি বুৎপত্তিগতভাবে এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'Jus' থেকে। ন্যায়বিচার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন অধ্যাপক বার্কার তাঁর Principles of Social and Political Theory গ্রন্থে। বার্কার অভিমত পোষণ করেছেন - প্রত্যেকের মধ্যেই ন্যায়ের ধারণা বর্তমান এবং ন্যায়ের সঠিক স্বরূপ সম্পর্কে সকলেই কমবেশি অবহিত। ন্যায় কোনো কাল্পনিক ধারণা বা আদর্শ নয় ; এটি একটি চূড়ান্ত বাস্তব বিষয়। ন্যায়বিচারের বৈশিষ্টগুলি হল - 

১. নৈতিকতা :- 
ন্যায় ও নৈতিকতা এক বিষয় না হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমান। সমাজস্থ প্রতিটি ব্যক্তি সামাজিক দিক দিয়ে পরস্পর সম্পর্কিত। মানুষের সেই সামাজিক ও বাহ্যিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে ন্যায়। মানুষের অভ্যন্তরীণ নৈতিকতার উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয় বাহ্যিক ন্যায়। এইভাবে নৈতিকতার প্রকাশ হল ন্যায় এবং তা মানুষের বাহ্যিক আচার - আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

২. সমন্বয়সাধনকারী বন্ধন :- 
মানবজীবন বিভিন্ন আদর্শকে প্রত্যক্ষ করে ; যেমন - স্বাধীনতা , সৌভাতৃত্ব , মৈত্রী , সহযোগিতা , সাম্য - ইত্যাদি। এইসকল মহৎ আদর্শগুলিকে মানব জীবনের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে ন্যায়বিচার। তাই ন্যায়বিচার সকল মহৎ সামাজিক আদর্শের সঙ্গে মানুষের এক বন্ধন স্বরূপ। 


৩. ভারসাম্যের ধারণা :- 
অধ্যাপক বার্কার ন্যায়বিচারকে ভারসাম্যের ধারক হিসাবেও মনে করেন। সামাজিক বিভিন্ন আদর্শগুলির মধ্যে পরস্পর বিরোধ ঘটলে তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে ন্যায়। সামাজিক প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার ব্যর্থ হলে সামাজিক ক্ষেত্রে বিবাদ - বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই ন্যায়বিচার সামাজিক আদর্শগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে সেগুলিকে সামাজিকভাবে উপযোগী করে তোলে। 

৪. সামাজিক সম্পর্ক :- 
ন্যায়বিচার সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক , সৌহার্দ্যতা , সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। সকল সমাজ সামাজিক শান্তি ও প্রতিষ্ঠার কথা বলে। ন্যায়বিচার এই কাজটিকে সহজ করে তোলে। আবার পরোক্ষভাবে এই লক্ষ্য চরিতার্থ করতেই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

৫. সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা :- 
ন্যায়বিচার মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলি সংরক্ষণ করে। কোনো কারণে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের সামাজিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে মানুষ তার সামাজিক অধিকার প্রাপ্ত করতে পারে। তাই মানুষের সামাজিক অধিকারের সঙ্গে ন্যায়বিচারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 

৬. যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা :- 
জনসমাজের মধ্যে যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে মানুষ নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। ফলে প্রতিটি বিষয় ও সমস্যাকে যুক্তির নিরিখে বিচার করতে পারে।  

৭. ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়ক :- 
ন্যায়বিচার হল একটি সামগ্রিক ধারণা যার মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এই দিক দিয়ে বিচার করলে ন্যায়বিচারকে ব্যক্তিত্বের নিয়ন্ত্রণকারীও বলা যেতে পারে। ন্যায়বিচার সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আচরণ কীরূপ হওয়া উচিত - সে বিষয়ে পথনির্দেশ করে। 

৮. কর্তব্যবোধ :- 
ন্যায়বিচারের সঙ্গে কর্তব্যবোধের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এবিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দার্শনিক প্লেটো বলেছেন - ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের কর্তব্যের যোগ আছে। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি নিজের নিজের অবস্থান , পদাধিকার ও মর্যাদা অনুসারে কর্তব্য পালনের অধিকারী হন। এই কর্তব্যপালনের মধ্যে দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৯. সামাজিক ন্যায় - নীতির প্রতিষ্ঠা :- 
ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় - নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজস্থ ব্যাক্তিবর্গ যখন কোন অন্যায় বা শোষণের শিকার হন ; তখন ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই সমাজের ন্যায় - নীতিগুলিকে সংরক্ষণ করা যায়। সমাজে ন্যায় - নীতির অনুপস্থিতি সমাজকে বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ করে তুলবে। 

১০. মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা :- 
সামাজিক জীবনের জন্য প্রয়োজন পূর্ণ মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা। এই মূল্যবোধের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে স্বাধীনতা , সাম্য , মৈত্রী , সৌভাতৃত্ব - ইত্যাদি মহৎ আদর্শগুলি। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই মহৎ আদর্শগুলি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। 

১১. শ্রেণী - সংগ্রামের অবসান :- 
সমাজে পরিপূর্ণরূপে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রেণী - সংগ্রামের বিলুপ্তি ঘটবে। শ্রেণী সংগ্রামের জন্ম হয় সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর মধ্যে। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর মধ্যে ব্যবধান দূর হবে। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই শ্রেণী সংগ্রামের সম্ভাবনা দূর হবে। 

পরিশেষে বলা যায় , ন্যায়বিচার সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠা , শান্তি , সৌভাতৃত্ব , সাম্য , স্বাধীনতা - ইত্যাদির ভিত্তিস্বরূপ। ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই সমাজের মহৎ আদর্শগুলি সংরক্ষিত ও সঞ্চারিত হয়। ন্যায়বিচার সমাজের সর্বস্তরে ভারসাম্য রক্ষা করে।  

       

You May Also Like

1 comments

  1. I am very benefited from reading this post of yours. Thank you very much. I love reading your writings. I posted one too. Will check a bit 🙏 ভালোবাসার ছন্দ


    This is the best post of my life. Thank you very much. I love reading your writings. I posted one too. Will check a bit 🙏 বেগরাউন পিকচার

    ReplyDelete