শিক্ষাগত নির্দেশনায় শিক্ষকের ভূমিকা।

by - August 05, 2022

শিক্ষাগত নির্দেশনায় শিক্ষকের ভূমিকা। 




শিক্ষাগত নির্দেশনায় শিক্ষকের ভূমিকা :- 


শিক্ষাগত নির্দেশনা পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - এমন অভিমত পোষণ করেছেন কোঠারি কমিশন। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলিকে বাস্তবায়িত করতে শিক্ষক সার্থকভাবে শিক্ষা নির্দেশনা পরিচালনা করেন। শিক্ষা নির্দেশনাকে কার্যকরী করে তুলতে শিক্ষককে বিশেষ কিছু ভূমিকা পালন করতে হয়। যেমন - 

১. শিক্ষার্থী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে :- শিক্ষার্থী সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থী সংক্রান্ত তথ্যগুলি বর্তমান সমস্যার বিশ্লেষণ ও সমাধান সূত্র নির্ণয় এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ। এই সকল তথ্যগুলির সাহায্যেই শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা ও দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করা যায় , শিক্ষার্থীর আগ্রহের গতি - প্রকৃতি নির্ধারণ করা যায়। শিক্ষক এই সকল তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে শিক্ষা নির্দেশনার কাজকে সার্থক করে তোলেন। 

২. শিক্ষার্থীর আগ্রহ , সামর্থ্য ও দক্ষতার গতি - প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে :- বিদ্যালয় স্তরের শিশুরা নিজের অভিজ্ঞতা অনুসারে নিজের চাহিদা , যোগ্যতা , সামর্থ্য ও দক্ষতা নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক আলোচনা , বিশ্লেষণ - ইত্যাদির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সামর্থ্য ও চাহিদা সম্পর্কে অবগত হন এবং তাদের দক্ষতা ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে উপযুক্ত পথের সন্ধান দেন। 


৩. বৃত্তিগত তথ্য প্রদান :- বিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থী বৃত্তিমূলক তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকে না। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত বৃত্তিগত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক ক্ষেত্রে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন। শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত বৃত্তিগত পথের সন্ধান দিতে পারেন। 

৪. শিক্ষক - অভিভাবক সমন্বয়সাধন :- শিক্ষার্থীর আগ্রহ , চাহিদা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়ই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত ও বৃত্তিগত নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। কিন্তু শিক্ষক ও অভিভাবক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নির্দেশনা প্রদান করলে তা শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। তাই শিক্ষার্থীকে প্রকৃত নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক নিজের সঙ্গে অভিভাবকদের সমন্বয়সাধন করেন। 

৫. সমস্যামূলক পরিস্থিতি উপলব্ধি ও তার সমাধান :- বিদ্যালয় জীবনে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা ও অপসঙ্গতিমূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষক এই সকল সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করেন এবং উপযুক্ত নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সেই সকল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। 

৬. শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ : - আধুনিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য শিক্ষার্থীর মধ্যে - জ্ঞানমূলক , নৈতিক , সামাজিক ,  সাংস্কৃতিক , কৃষ্টিমূলক - ইত্যাদি বিভিন্ন চাহিদার যথার্থ পরিতৃপ্তি সাধনের উদ্দেশ্যে শিক্ষক বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। 

৭. পাঠক্রম নির্বাচনে সহায়তা :- বিদ্যালয় জীবনেই পাঠক্রমের বিভাগীয়করণ শুরু হয়। কিন্তু বহু শিক্ষার্থী নিজের আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম নির্বাচনে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সামর্থ্য বিবেচনা করে নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত পাঠক্রম নির্বাচনের কাজে সহায়তা করেন। 

৮. সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্দিষ্টকরণ :- বিদ্যালয় জীবনে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনা করেন। শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত এই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে। 

পরিশেষে বলা যায় , শিক্ষা নির্দেশনায় শিক্ষকের কাজ বহুমুখী। একদিকে শিক্ষককে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হয় এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিকককে শিক্ষা নির্দেশনা পরিচালনা করতে হয়।


You May Also Like

0 comments