Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

লিখিত সংবিধান কাকে বলে ? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 

লিখিত সংবিধানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি উল্লেখ কর। 

লিখিত সংবিধানের দোষ - গুন আলোচনা কর। 

What is the written constitution? Discuss the advantages and disadvantages of a written constitution. ( In Bengali ) 




লিখিত সংবিধানের ধারণা :- 


লিখিত সংবিধান বলতে সেই ধরণের সংবিধানকে বোঝানো হয় , যে ধরণের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার সকল বা বেশিরভাগ নিয়ম , নির্দেশ ও পদ্ধতি লিখিত আকারে উপস্থিত থাকে এবং প্রতিটি নিয়ম বা নির্দেশ দলিল হিসাবে উপস্থাপন করা যায়। 

লিখিত সংবিধান সাধারণতঃ কোনো নির্দিষ্ট গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত হয়। লিখিত সংবিধানের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল - ভারত , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , সুইজারল্যান্ড , চীন - ইত্যাদি রাষ্ট্রের সংবিধান। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

লিখিত সংবিধানের সুবিধা :- 


১. লিখিত সংবিধান সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট :- লিখিত সংবিধানের নিয়মবিধি , নির্দেশ ইত্যাদি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থিত থাকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের গঠন , কাঠামো ; সরকারের গঠন ও কার্যাবলী ; নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য সকল বিষয়ই স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকে। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধা হয় ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা কমে ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। 

২. স্থায়িত্ব :- লিখিত সংবিধান সাধারণত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। ফলে খুব সহজে এই সংবিধান পরিবর্তন করা যায় না এবং তা পরিবর্তনের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। এই কারণে লিখিত সংবিধান অলিখিত সংবিধানের তুলনায় অনেক বেশি স্থায়িত্বলাভ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে উপযুক্ত :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে এবং ক্ষমতা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে বন্টিত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত হওয়া বাঞ্চনীয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত না হলে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিরোধ অনিবার্য। 

৪. গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষা :- সংবিধান লিখিত হলে রাষ্ট্র নিজের ইচ্ছামত নাগরিকদের অধিকার সংকুচিত করতে পারেনা। নাগরিকেরা নিজেদের অধিকার অর্জন করতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও আইনগত লড়াই করতে পারে। ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য অধিকারের সুরক্ষায় লিখিত সংবিধান একান্তভাবে কাম্য। 

৫. সুষ্ঠ বিচারকার্যের পক্ষে উপযুক্ত :- লিখিত সংবিধানের সকল নির্দেশ , আদেশ , বিধিনিয়ম - ইত্যাদি লিখিত আকারে স্পষ্টভাবে উপস্থিত থাকে। এছাড়াও লিখিত সংবিধানের প্রতিটি নির্দেশগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সংযুক্ত থাকে। এইসকল কারণে লিখিত সংবিধান সুষ্ঠ বিচারকার্যের পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত। 

৬. জনমতের যথার্থ প্রতিফলন :- লিখিত সংবিধান রচিত হয় গণপরিষদ বা কনভেনশন দ্বারা। গণপরিষদ ও কনভেনশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। ফলে বলা যেতে পারে লিখিত সংবিধানের নির্দেশগুলির মধ্যে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। 

৭. লিখিত সংবিধান মর্যাদার প্রতীক :- লিখিত সংবিধানের নির্দেশগুলিকে সহজে পরিবর্তন করা যায়না। সেগুলি অনেক বেশি স্থায়ী। ফলে জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ ও মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে লিখিত সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই জনগণের কাছে লিখিত সংবিধান অনেক বেশি মর্যাদার প্রতীক। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

লিখিত সংবিধানের অসুবিধা :- 


১. গতিশীলতা অনুপস্থিত :- লিখিত সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। তাই জনগণের আশা আকাঙ্খার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায়না। ফলে পরিবর্তনশীলতার সাথে তাল মিলিয়ে লিখিত সংবিধান চলতে পারেনা। 

২. সরকার পরিচালনায় ভারসাম্যহীনতা ও জটিলতা :- লিখিত সংবিধান সরকার পরিচালনায় ভারসাম্যহীনতা ও জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে। লিখিত সংবিধানের বিভিন্ন ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা সরকারের কাজকর্ম পরিচালনায় অন্তরায় সৃষ্টি করে। 

৩. মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ নয় :- লিখিত সংবিধানগুলি জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিলেও তাতে অনেক বাধা - নিষেধ আরোপ করে। সরকার নিজেদের সুবিধামত এই বাধা নিষেধগুলিকে কাজে লাগিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংকুচিত করে। 

৪. জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় :- লিখিত সংবিধান কোনো অবস্থাতেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। জরুরি অবস্থার সময়ে দ্রুত সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বা নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। কিন্তু লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. অসম্পূর্ণতা :- লিখিত সংবিধানে সকল প্রকার প্রশাসনিক নির্দেশ , সরকার পরিচালনার নীতি - ইত্যাদি লিখিত আকারে উপস্থিত থাকেনা। তাই লিখিত সংবিধাকে অসম্পূর্ণ সংবিধান বলা হয়। 

৬. বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় লিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষাকর্তা বলে মনে করা হয় , তাই সংবিধানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ক্ষমতা ভোগ করে। ফলে সরকারের অন্য দুই বিভাগ যথা - আইন ও শাসন বিভাগের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো     
                

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মৌর্য যুগের আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিচয় দাও। 

Discuss the socio-economic condition of the Maurya era. ( In Bengali ) 




মৌর্য যুগের সামাজিক অবস্থা :- 


বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম প্রথার প্রচলন ; জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা হ্রাস ; নতুন জাতি বা বর্ণের উৎপত্তি:-
হিন্দু সমাজের দুটি বৈশিষ্ট্য বর্ণাশ্রম ও চতুরাশ্রম মৌর্য যুগে প্রচলিত ছিল। গ্রীক লেখকদের বিবরণী থেকে জানা যায় যে , নিজ নিজ বর্ণবৃত্তি ত্যাগ করা নিষিদ্ধ ছিল। অশোকের অনুশাসন লিপিতে গৃহী ও ভ্রাম্যমাণ সন্নাসীদের কথা উল্লেখিত আছে। এর থেকে মনে করা হয় সে সময় সমাজে চতুরাশ্রম প্রথা প্রচলিত ছিল। 
কিন্তু সে যুগে বহু ধর্ম মতের উদ্ভব ও বিদেশী জাতির আগমনের ফলে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। ভারতীয় ও বিদেশী নৃপতিদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। গ্রিক লেখকদের বর্ণনা অনুসারে মৌর্যযুগের বৈশ্য ও শূদ্রদের মধ্যে বৃত্তিমূলক পার্থক্যের অবসান ঘটতে থাকে এবং কৃষক , পশুপালক ও বণিকরা নির্দিষ্ট বর্ণরূপে স্বীকৃতি পায়। এইভাবে সে যুগে জাতিভেদ প্রথার কঠোরতা কিছুটা হ্রাস পাওয়ার ফলে এক সুদুরপ্রসারী সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

বর্ণাশ্রম প্রথার সামাজিক চরিত্র :- 
সমাজের প্রথম তিন বর্ণের লোকেরা শুদ্রদের তুলনায় অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। বৈশ্যরা '' দ্বিজ '' শ্রেণীভূক্ত হলেও ( অর্থাৎ উপনয়ন গ্রহণের  অধিকারী ) তাদের নানাবিধ অসুবিধা ছিল। কেননা ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয়রা বৈশ্যদের সামাজিক স্বীকৃতি দানের ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু বৈশ্যরা ছিলেন  বিত্তশালী এবং তাঁরাই ছিলেন একাধারে দেশের অর্থনীতির প্রধান পরিচালক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক। সুতরাং বৈশ্য শ্রেণীর সাথে অপর দুই উচ্চবর্ণের সংঘাত ছিল অনিবার্য। 

মৌর্য সমাজে নারীর স্থান :-
গুণাঢ্য - এর গ্রন্থে সকল শ্রেণীর নারীদের স্বাধীনতার বহু উল্লেখ পাওয়া যায়।  সে যুগের ইতিহাসে নাবালক পুত্রদের  অভিভাবিকা হিসাবে রাজমহিষীগণ  কর্তৃক রাজ্যশাসনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরা স্বাধীনভাবে দর্শন আলোচনায় অংশ নিতেন এরূপ দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু স্বামীদের সঙ্গে স্ত্রীরা ধর্মশাস্ত্র জ্ঞানার্জনের অধিকার লাভ করতেন না। নারীদের মধ্যে অবরোধ প্রথা প্রচলিত ছিল এবং রাজপরিবার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারীরা দেহরক্ষী হিসেবেও নিযুক্ত থাকতেন। বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষুনীরা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতেন। এই যুগে পুণ্যবতী নারীদের দান ধ্যানের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে পুণ্যবতী রানী গৌতমী বলশ্রীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শাসন কার্যের ব্যাপারে নারীদের উল্লেখ পাওয়া যায়।  যেমন- '' স্ত্রী অধ্যক্ষ মহাপাত্র ''।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

দাসত্ব প্রথা :-
মৌর্য যুগে দাসত্ব প্রথা সমাজ স্বীকৃত ছিল। অশোক দাস ও মজুদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য নিরূপণ করেছিলেন এবং সকলের প্রতি সদয় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য আরিয়ান ও মেগাস্থিনিস দাসত্ব প্রথার উল্লেখ করেননি। সম্ভবত ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ভারতের দাসত্ব প্রথা কঠোর ছিল না বলেই তা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। দাসদের অধিকাংশই ছিল নিম্নবর্ণভুক্ত। 

পরিবারও বিবাহ :- 
পিতা ছিলেন গৃহকর্তা এবং পরিবারের যৌথ সম্পত্তি প্রধান পরিচালক। পরিবারের সকল সদস্য সম্পত্তির সমান অধিকারী হত। সে যুগে ব্যক্তির পরিবর্তে পরিবারই ছিল সমাজ ব্যবস্থার প্রধান অঙ্গ। জীবিত ও মৃতদের মধ্যে যোগসূত্র সাধনের উদ্দেশ্যে মৃতদের প্রতি শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান ছিল এক মহান পারিবারিক ধর্মানুষ্ঠান। প্রাচীন আইন শাস্ত্রতে সন্তান - সন্ততিদের ওপর পিতা বা গৃহকর্তার অধিকার স্বীকৃত ছিল।  পিতা-পুত্রকে বিক্রয় পর্যন্ত করতে পারতেন।  কিন্তু পরবর্তীকালে এই প্রথা নিন্দনীয় বলে বিবেচিত হয়। 

মৌর্য যুগের ছাত্রজীবনের মেয়াদ ছিল প্রায় 12 বছর। সাধারণত প্রতিটি ছাত্র কুড়ি বছর বয়সে গুরুগৃহ থেকে ফিরে কর্মে সংশ্লিষ্ট হত। একই বর্ণের ও শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ দেওয়া হতো। তবে স্বগোত্রে বিবাহ ছিল অবাঞ্ছিত। ধর্মশাস্ত্রতে আট প্রকার বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিল - রাক্ষস বিবাহ , পৈশাচ বিবাহ , অসুর বিবাহ এবং গান্ধর্ব বিবাহ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষা ; শিক্ষাকেন্দ্র ও শিক্ষার বিষয় :- 
মৌর্য যুগে শিক্ষার বহুল প্রচলন ছিল। ধর্মশাস্ত্রে অশিক্ষিত ব্রাহ্মণদের নিন্দা করা হয়েছে। ব্রাক্ষ্মনেরাই একমাত্র শিক্ষার অধিকার লাভ করতেন। কিন্তু বুদ্ধের পর বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শিক্ষার বিস্তারে সচেষ্ট হন। প্রাচীনকাল থেকেই উজ্জয়িনী ,  তক্ষশীলা , বারাণসীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিদ্যা শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। 
পাণিনির সময় থেকে ( খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ) ব্যাকরণ পাঠে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং তা ছিল প্রধান পাঠ্য বিষয়। মহাভারত ও পুরাণ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারিগরি বিদ্যা , গণিত , ছন্দ - ইত্যাদি বিষয়ক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। মনুসংহিতায় যান্ত্রিক ও খনিজ বিদ্যায় বিশেষ  শিক্ষাদানের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতেও  চিকিৎসাশাস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

ধর্ম ও উৎসব - অনুষ্ঠান :- 
এই যুগে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম প্রবল হয়ে উঠলেও ব্রাহ্মধর্মও প্রচলিত ছিল।  জৈন ধর্ম বিহার ও ওড়িষায় খুবই জনপ্রিয় ছিল। জনশ্রুতি অনুসারে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম ভারত ও ভারতের বাইরেও বিস্তার লাভ করেছিল। বহু ধর্ম ও ধর্মমতের প্রচলন থাকা সত্বেও মৌর্য যুগে ধর্ম সহিষ্ণুতার পরিচয় পাওয়া যায়। 
বাৎসায়নের রচনায় অবসরভোগী ও সংস্কৃতি সম্পন্ন ধনী যুবকদের ব্যয়বহুল জীবনের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। '' সংযুক্ত নিকায় ''  গ্রন্থে '' সবরতিভর '' উৎসবের উল্লেখ আছে। যা লিচ্ছবিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের মধ্যে ঋতু উৎসব ও বসন্ত উৎসবের পরিচয় পাওয়া যায়। জৈন গ্রন্থে দীপাবলি উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

মৌর্য যুগের ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা :- 


মৌর্য রাজাদের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে মৌর্য যুগ থেকে ভারতীয় অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। বিশেষ করে প্রথম তিনজন মৌর্য সম্রাট - চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য , বিন্দুসার ও অশোকের আমলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি উৎকর্ষতা লাভ করে। পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাই মৌর্য যুগকে এক ''বিপ্লবী যুগ'' বলা যায়। এই সময় ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়েছিল এ কথা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। 

মৌর্য যুগে ভারতীয় শিল্প বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসে। মৌর্য সম্রাটদের প্রশাসনিক দক্ষতা ব্যবসা-বাণিজ্যের ও শিল্পের প্রসারে  সহায়ক হয়ে ওঠে  এবং বৃত্তিমূলক শিল্পগুলি ক্ষুদ্রায়তন শিল্পে পরিণত হয়।  অর্থশাস্ত্রে  শিল্পক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ভূমিকার কথা বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন , রপ্তানি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করত। এ জন্য বহু সংগঠন ছিল যেমন - ''ব্যবসামূলক নিগম '' ও ''বৃত্তিমূলক নিগম '' -  ইত্যাদি। এছাড়াও নিগমগুলি আধুনিক যুগের ব্যাংক এর মত কাজ করত। ডক্টর ব্লক পাটলিপুত্র নগরে আধুনিককালের বাণিজ্য সংস্থার মতো এক বিরাট সংস্থার অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। 

মৌর্য যুগের বহুবিধ শিল্পজাত পণ্য উৎপাদিত হতো। যেমন বস্ত্রশিল্প। মৌর্য যুগে ভারতীয় বস্ত্রশিল্প উন্নত ছিল। দেশে ও বিদেশে ভারতীয় বস্ত্রের যথেষ্ঠ প্রসার লক্ষ্য করা যায়। সুতি বস্ত্রের সঙ্গে রেশম ও পশম বস্ত্রেরও সে যুগে খ্যাতি ছিল।গান্ধার পশম বস্ত্রের প্রধান কেন্দ্র ছিল।  সে যুগের কারুকার্যময় কার্পাস ও রেশম বস্ত্রের প্রচলন ছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে মসলিন বস্ত্র রোমে  রপ্তানি হতো। গাঙ্গেয় উপত্যকায় মসলিন বস্ত্রের বহু কেন্দ্র ছিল। বস্ত্র শিল্প সেযুগের বহু মানুষের জীবিকা ছিল। 

মৌর্য শিল্পীরা কাষ্ঠ , হস্তিদন্ত ও চর্ম শিল্পে অসাধারণ নৈপুণ্য অর্জন করেছিল।    চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাষ্ঠনির্মিত প্রাসাদ কাষ্ঠ  শিল্পের উৎকর্ষের চরম নিদর্শন। এ ব্যতীত সমুদ্রগামী নৌ যান , শকট  , রথ প্রভৃতি নির্মাণেও মৌর্য শিল্পীরা অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিল। 

খনি শিল্পও যথেষ্ট উন্নত ছিল। অর্থশাস্ত্রে নানাপ্রকার ধাতু শিল্পের উল্লেখ আছে। খনিজবিদ্যা সম্পর্কে ভারতবাসী জ্ঞান লাভ করেছিল। খনির কার্য পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কর্মচারী নিযুক্ত হতেন। স্বর্ণ , রৌপ্য , লৌহ , তাম্র , ব্রোঞ্জ ও টিন প্রভৃতি ধাতুর বহুল প্রচলন ছিল। 

বুদ্ধের সময় থেকে ভারতে ধণতন্ত্রবাদের উদ্ভব হয়। মৌর্য যুগে সম্পদ পুঞ্জীভূত হবার দৃষ্টান্ত আছে। এই যুগে বণিক ও ব্যবসায়ীরা ছিল বিত্তশালী এবং এদের বিপুল ঐশ্বর্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।  সাঁচি স্তুপ গুলিতে ধনীদের প্রচুর অর্থ দানের উল্লেখ আছে। মন্দির ও বৌদ্ধ বিহার গুলিতে ধনী বণিকরা অকাতরে অর্থ দান করতেন। বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থ বণিক শ্রেণীর প্রচুর অর্থ সম্পদের উল্লেখ আছে। সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ছাড়াও  সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার মৌর্য যুগের বৈষয়িক সমৃদ্ধির  অন্যতম কারণ। 

ভূমি রাজস্ব সে যুগে  প্রধান আয় ছিল সত্য ; কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেও প্রচুর অর্থ সমাগম হত।  সেযুগে '' বলি '' ও '' ভাগ '' এর সঙ্গে বাণিজ্য শুল্কও রাষ্ট্রের প্রধান আয় ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন কালে একটি স্বতন্ত্র নৌ  বিভাগ ও নাবাধ্যক্ষের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব ছিল নদীবন্দর গুলি রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং সমুদ্রপথে বাণিজ্যপোত  চলাচলে উৎসাহ দান করা। কলিঙ্গ বিজয়ের পর কলিঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বিখ্যাত বাণিজ্য বন্দর গুলি মৌর্য সাম্রাজ্যের অধিকারভুক্ত হওয়ায় সমুদ্রপথে বাণিজ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধি পায়। মৌর্য রাজাদের আমলে পাটলিপুত্র শহর বহু বিদেশি বসবাস করত। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ব্যবসায়ী।  বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে মৌর্য সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল স্থলপথ ও জলপথ ধরে।  বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হতো ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলো থেকে। ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ গুলি আরব সাগরের উপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে উপস্থিত হত। আবার লোহিত সাগরের ভিতর দিয়ে ভারতীয় বাণিজ্য পোত্ গুলি মিশর দেশেও যাতায়াত করত। অপরদিকে স্থলপথেও পারস্য ও এশিয়া মাইনরের মধ্যে ভারতীয় পণ্যদ্রব্য ভূমধ্যসাগরের উপকূলে পাঠানো হতো। 

মৌর্য যুগের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নত ও সুনিয়ন্ত্রিত ছিল। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্র মনোযোগী ছিল এবং বাণিজ্যপথগুলির নিরাপত্তার প্রতি রাষ্ট্রের সজাগ দৃষ্টি থাকতো। প্রধানত নদীপথ বেয়েই অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের চলাচল ছিল এবং স্থলপথে গো শকট ও উটের পিঠে পণ্যদ্রব্য আদান-প্রদান করা হতো। গঙ্গা , যমুনা , গোদাবরী ও সিন্ধু নদীগুলি ছিল প্রধান  জলপথ। দেশের অভ্যন্তরে বড় বড় সড়ক পথ বিভিন্ন দিকে প্রসারিত ছিল। এই যুগে রাজপথ '' মহামার্গ '' নামে অভিহিত হত। স্থলপথে বণিকদের পথনির্দেশের জন্য '' স্থল নিয়ামক ''  নামে এক শ্রেণীর কর্মচারী নিযুক্ত থাকতো। বাংলাদেশ ও মগধ থেকে সুদূর কাশ্মীর ও গান্ধার পর্যন্ত বনিকরা পন্য নিয়ে কারবার করত। উত্তর ভারতের রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপিত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। 

বৈদিক যুগে মুদ্রার স্থলে বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল।  কিন্তু ক্রমশ বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে পণ্য বিনিময়ের পরিবর্তে মূল্যবান ধাতুর বিনিময় প্রথা প্রচলিত হয়।  মৌর্য যুগে মূল্যবান ধাতুর মুদ্রার প্রচলন বহু হারে বৃদ্ধি পায়। 
পাণিনির '' ব্যাকরণ'' , ''জাতক'' ,  ''অর্থ শাস্ত্র '' তে  বিভিন্ন প্রকারের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার উল্লেখ আছে। স্বর্ণমুদ্রা '' নিবক '' ও '' সুবর্ণ '' নামে অভিহিত হত এবং রৌপ্যমুদ্রা '' কার্যাপন '' ও '' প্রবন '' নামে প্রচলিত ছিল। '' কার্যাপন '' নামক তাম্রমুদ্রারও উল্লেখ পাওয়া যায়।  এছাড়া অর্থশাস্ত্রে '' পণ '' নামক একপ্রকার রৌপ্য ও '' মাবক '' নামক একপ্রকার তাম্রমুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। মৌর্য শাসন কালে রাজা বা রাষ্ট্রই একমাত্র মুদ্রা প্রচারের অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও বণিক সংঘ ও পৌর প্রতিষ্ঠানগুলিও    মুদ্রা প্রচার করার অধিকার লাভ করত।  মুদ্রা থেকে মৌর্য যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার আভাস পাওয়া যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো



Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মহম্মদ বিন তুঘলকের কৃতিত্বের মূল্যায়ন

মহম্মদ বিন তুঘলক - এর রাজত্বকালের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক ঘটনা ও সংস্কারগুলি আলোচনা করো। তাঁকে কি বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ বলা যায় ? এ প্রসঙ্গে তোমার অভিমত ব্যাক্ত করো। 

অথবা , মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের প্রধান - প্রধান ঘটনাগুলি উল্লেখ করো। সেগুলি কী কারণে ব্যর্থ হয় ?

অথবা , সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে মহম্মদ বিন তুঘলকের কৃতিত্বের মূল্যায়ন করো। 






মহম্মদ  বিন তুঘলক 1325 -1351 সংস্কার ও কৃতিত্ব:-


আলাউদ্দিন খলজির নরপতিত্বের আদর্শের সার্থক অনুসরণকারী ছিলেন মহম্মদ বিন তুঘলক। ভারতের সমকালীন রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে আলাউদ্দিনের আদর্শ এক মহান আদর্শের ইঙ্গিত দেখায়। সেই আদর্শ ভারতে রাজতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় করতে এবং উলেমা , অভিজাত্যের ক্ষমতা নস্যাৎ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।  ধর্ম ও শ্রেণী বিশেষের আধিপত্য ও প্রভাব থেকে রাজতন্ত্র তথা রাষ্ট্রকে মুক্ত রেখে এক নতুন আদর্শের অবতারণা আলাউদ্দিন করেছিলেন তার বাস্তবায়ন করতে মহম্মদ বিন তুঘলক প্রয়াসী হন।
আর পি ত্রিপাঠীর মতে , ''মহম্মদ বিন তুঘলক ধর্ম বিষয়ে আইন-কানুন অগ্রাহ্য করে যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে রাজতন্ত্র কে শক্তিশালী করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।''

তবে আলাউদ্দিন খলজির নরপতিত্বের আদর্শের মত মহম্মদ বিন তুঘলকের আদর্শ প্রয়োজনভিত্তিক ছিল না। তা ছিল যুক্তিবাদ সম্মত। মহম্মদ বিন তুঘলকের নরপতিত্বের আদর্শ - এর মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাবর্গের মঙ্গল সাধন।  তিনি রাষ্ট্রকে নিপীড়ন যন্ত্রের পরিবর্তে মানবহিতৈষী সংস্থা হিসেবে গণ্য করতেন। মহম্মদ বিন তুঘলকের অভিপ্রায় ছিল উলেমা ও অভিজাতরা  রাষ্ট্রের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরিবর্তে নিজের কর্তব্য পালন করবেন। একথা সত্য নয় যে তিনি উলেমা ও অভিজাতদের প্রতি অহেতুক কঠোর ছিলেন।  ইবন বতুতার বিবরণ থেকে জানা যায় যে , উলেমা অভিজাতদের অনেকেই সুলতানের বদান্যতা ও দয়া-দাক্ষিণ্য লাভ করেছিলেন। সিংহাসনে উপবিষ্ট তিনি মুসলমান প্রজাদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে খলিফার আশীর্বাদ অনুমোদন লাভেরও চেষ্টা করেন নি। এক কথায় তিনি সকল ধর্মের প্রভাব থেকে রাজতন্ত্রকে বিযুক্ত রাখবার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাস আলোচনা করলে মহম্মদ বিন তুঘলক কে আমরা ব্যতিক্রমী চরিত্র রূপে দেখতে পাই। তার আমলে বহুবিধ পরিকল্পনা ও সংস্কার যেগুলি সম্পর্কে বহুবিধ সমালোচনা বর্তমান - তার চরিত্রকে এক ব্যতিক্রমী রূপ দেয়। তার রাজত্বের বিভিন্ন সংস্কারগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাজস্ব সংস্কার :- 
ক্ষমতায় উপবিষ্ট হয়ে মহম্মদ বিন তুঘলক রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে বিবিধ সংস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি রাজ্যের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করেন। রাজ্যের আয় বৃদ্ধি করার জন্য দোয়াব অঞ্চলে করের পরিমাণ বৃদ্ধি করেন। সম্ভবত ভূমিকর বৃদ্ধি করার পরিবর্তে অন্যান্য কর শতকরা 5 থেকে 10 গুণ বৃদ্ধি করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সুলতানের রাজকর্মচারীদের উৎপীড়নের ফলে গ্রামাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং কৃষকদের দুর্দশা চরমে ওঠে। এই অবস্থায় সুলতান প্রচুর ঋণদান ও জল সেচের ব্যবস্থা করে কৃষকদের সাহায্য করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা অবশেষে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর ফলে অর্থের অপব্যবহার হয় , কর অনাদায়ী থাকে এবং সুলতানের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। 

এছাড়াও কৃষির উন্নতি কল্পে তিনি '' আমীরে - কোহী '' নামে একটি নতুন কৃষি  বিভাগ স্থাপন করেন। সরকারি ব্যয়ে পতিত জমিকে কৃষি উপযোগী করে তোলাই এ বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল। এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে দু'বছরে প্রায় 70 লক্ষ টাকা ব্যয় হয় এবং বহু কর্মচারী নিযুক্ত হয়। কিন্তু অবশেষে এই পরিকল্পনাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিফলতার কারণ হলো - 
প্রথমত :-যেসকল জমি এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তার অধিকাংশ ছিল চাষের অনুপযোগী। 

দ্বিতীয়তঃ এ পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এবং এর সাফল্যের জন্য সুলতানের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানের  একান্ত প্রয়োজন ছিল। 

তৃতীয়তঃ সুলতান নিজে তত্ত্বাবধান করতে না পারায় অধিকাংশ অর্থের অপচয় ঘটে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাজধানী স্থানান্তর :- 
মহম্মদ বিন তুঘলকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিকল্পনা হলো দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর। একাধিক কারণে সুলতান এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। 

প্রথমতঃ  সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় স্থানে রাজধানী স্থাপন করা। 
দ্বিতীয়ত দিল্লি উত্তর - পশ্চিম সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় সর্বদাই মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা থাকতো। সুতরাং দূরবর্তী দেবগিরি এই বিষয়ে অধিকতর নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। 
তৃতীয়তঃ দেবগিরি থেকে দক্ষিণ ভারতের সুলতানি শাসন পরিচালনা করা বেশি সহজ ছিল। 
চতুর্থতঃ  ইবন বতুতার মতে দিল্লির নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিরক্ত হয়ে সুলতান রাজধানী স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। 

সুলতানের আদেশে দিল্লির সমস্ত অধিবাসীসহ রাজধানী দেবগিরিতে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন রাজধানীর নাম হয় দৌলতাবাদ। যাত্রীদের জন্য পথে ছায়া বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং সেখানে সরাইখানা নির্মাণ করা হয়। দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে দূরত্ব ছিল 1500 কিমি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জনগণের শারীরিক ক্লেশ ও দুর্দশার সীমা ছিল না। দিল্লিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য মানুষ কাতর হয়ে ওঠে। একথা সত্য যে শুধুমাত্র রাজধানী স্থানান্তরিত করে সন্তুষ্ট থাকলে হয়তো এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হতো না কিন্তু সুলতান সেইসঙ্গে দিল্লির নাগরিকদেরও স্থানান্তরিত করে মারাত্মক ভুল করেছিলেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যে সুলতান নিজ ভ্রম বুঝতে পেরে পুনরায় দৌলতাবাদ থেকে সকলকে দিল্লি প্রত্যাবর্তনের আদেশ দেন। পুনরায় যাত্রা শুরু হয় এবং সুদীর্ঘ পথ পর্যটনের ক্লেশ সহ্য করতে না পেরে বহুলোক পথিমধ্যেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং যারা জীবিতাবস্থায় দিল্লিতে ফিরেছিল তাদের দুঃখ কষ্টের সীমা ছিল না। দিল্লির পূর্ব গৌরব ফিরে আসতে বহু সময় লাগে এবং দৌলতাবাদ জনশূন্য ও পরিত্যক্ত হয়। 
লেনপুল এর ভাষায় ‘’ Daulahatabad remained a monument of misdirected energy.’’ 

তবে পরিকল্পনা নেই ব্যর্থ হলেও দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরের  ফলে কয়েকটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। যেমন - দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের মধ্যে যোগসূত্র রচিত হয়। দক্ষিণ ভারতে তুর্কি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য উত্তর ভারতের প্রসার লাভ করে।  এছাড়া রাজনৈতিক দিক থেকে দেবগিরিতে প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন দক্ষিণ ভারতের রাজনীতির পক্ষে ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

মুদ্রা সংস্কার ও প্রতীকী তাম্রমুদ্রার প্রচলন :-
মুদ্রানীতির সংস্কার ছিল মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের অপর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মূল্যবান ধাতুর পরিবর্তিত মূল্য অনুসারে তিনি নতুন মুদ্রার প্রবর্তন করেন। ''দোকানি'' নামে এক নতুন মুদ্রা প্রচলন করা হয়। '' দিনার '' নামে এক নতুন স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করা হয় এবং ইবন বতুতার মতে এর ওজন ছিল দুইশত গ্রেন বা রতি।  এছাড়া 140 রতি ওজনের এক নতুন রৌপ্যমুদ্রার ( টঙ্কা ) প্রচলন করা হয়। 

কিন্তু মহম্মদ বিন তুঘলকের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা হলো প্রতীকী তাম্র মুদ্রা প্রবর্তন। এই প্রতীকী তাম্রমুদ্রার প্রবর্তনের কারণ সম্পর্কে সমসাময়িক ও আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।  বারণির মতে , সুলতানের অপরিমিত দানশীলতার ফলে রাজকোষে মুদ্রার অনটন দেখা দেয় এবং বিশ্বজয় পরিকল্পনা সার্থক করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এই কারণে তিনি তাম্র মুদ্রা প্রচলন করেছিলেন। তাছাড়া রাজধানী দেবগিরিতে স্থানান্তরিত করার ফলে রাজকোষের অপরিমিত ক্ষতিপূরণের জন্য তাম্র মুদ্রার প্রচলন করা হয়। 
কিন্তু জাল মুদ্রার অবাধ প্রচলনের ফলে মুদ্রার মূল্য হ্রাস পায়। বিদেশি বণিকরা তাম্রমুদ্রা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। প্রতীকী তাম্রমুদ্রা প্রবর্তনের 4 বছরের মধ্যে সুলতান এই পরিকল্পনার ব্যর্থতা উপলব্ধি  করে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে তাম্রমুদ্রা প্রত্যাহার করে নেন।  সুতরাং সুলতান জনগণকে প্রতারণা করেছিলেন এমন অভিযোগ যথার্থ নয়। 

মহম্মদ বিন তুঘলকের বিদেশনীতি :  খোরাসান জয়ের পরিকল্পনা :- 
ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই মহম্মদ বিন তুঘলক খোরাসান ও ইরাক জয় করতে উদ্যোগী হন। সম্ভবতঃ কয়েকজন খোরাসানী বিদ্রোহীদের প্ররোচনায় তিনি এই পরিকল্পনায় প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। এই উপলক্ষে প্রায় 3 লক্ষ 70 হাজার সেনা সংগৃহীত হয় এবং এক বছর ধরে তাদের পোষণ করা হয়। অবশেষে হিন্দুকুশ এর দুর্গম গিরিপর্বতের মধ্যে দিয়ে সুদূর মধ্য-এশিয়া অভিযান অসম্ভব উপলব্ধি করে সুলতান এই সংকল্প ত্যাগ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বারণি লিখেছেন - ‘’ The coveted countries were not acquired and his treasure was expended ‘’.

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

মহম্মদ বিন তুঘলকের সাফল্য ও কৃতিত্বের পর্যালোচনা :-


মহম্মদ বিন তুঘলকের সাফল্য ও কৃতিত্ব বিচারের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। মহম্মদ বিন তুঘলকের সমসাময়িক ঐতিহাসিক ইবন বতুতা ও বারণি তার সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছেন। বারণি সুলতানকে রক্তপিপাসু ও বর্বর বলে প্রতিপন্ন করেছেন। কিন্তু ইবন বতুতা তার প্রতি এরূপ কোন অভিযোগ করেননি।  বরং তিনি তাকে বিনয়ী , সত্যনিষ্ঠ ও উদার প্রকৃতির নরপতি বলে বর্ণনা করেছেন। 

অপরদিকে এলফিনস্টোন , স্মিথ , হ্যাভেল , এডওয়ার্ড , টমাস প্রমুখ  আধুনিক ঐতিহাসিকরা তাঁকে উন্মাদ ও বিকৃতমস্তিস্ক বলে সমালোচনা করেছেন। পক্ষান্তরে , গার্ডনার ব্রাউনের বর্ণনায় সুলতানের বিকৃত মস্তিষ্ক ও রক্তপিপাসু অভিযোগ পাওয়া যায় না। 

একথা সত্য যে মহম্মদ বিন তুঘলক কখনো কখনো সামান্য অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি দান করতেন এবং এর কারণ হলো তিনি নিজে অপরাধের তারতম্য করতে পারতেন না। মধ্যযুগের ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রাণদণ্ড অতিসাধারণ দন্ড হিসেবে বিবেচিত হতো। মহম্মদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হলো তিনি ছিলেন কল্পনাপ্রবন।  একথা অনস্বীকার্য তিনি ছিলেন খামখেয়ালি প্রকৃতির ; নতুনত্বের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল প্রবল। কিন্তু তিনি যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন সেগুলির মধ্যে সৃষ্টিশীল প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।  যেমন তার রাজস্ব ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত সংস্কার। কিন্তু তার পরিকল্পনাগুলি যুগোপযোগী ছিল না বলে  ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

বিদ্যা , মানসিক উৎকর্ষ ও প্রতিভার দিক দিয়ে বিচার করলে মহম্মদ বিন তুঘলককে  মধ্যযুগের ভারতীয় নৃপতিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বললে অত্যুক্তি হবেনা। তার পাণ্ডিত্য সর্বজনবিদিত ছিল। একাধারে তিনি ছিলেন দার্শনিক , বৈজ্ঞানিক ও গণিত শাস্ত্রবিদ ,  জ্যোতির্বিদ্যা ও ফার্সি ভাষার উপর তাঁর  অসামান্য পান্ডিত্য ছিল। ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল অপরিসীম। 

মহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা গুলির ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ ছিল। যেমন :- 
প্রথমত - বদাউনির ভাষায় - ‘’ The king was freed from his people and they from the king’’.
কিন্তু , ঐতিহাসিক লেনপুল লিখেছেন যে , " সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সামঞ্জস্যের অভাবে মহম্মদ বিন তুঘলক ব্যর্থ হন। ''  একথা সত্য যে মহম্মদ বিন তুঘলকের বহুমুখী প্রতিভা ও দূরদর্শী পরিকল্পনায় গ্রহণের ক্ষমতার অভাব ছিলনা ; কিন্তু ব্যবহারিক বুদ্ধির অভাবে তাঁর পরিকল্পনাগুলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

দ্বিতীয়তঃ - রাজধানী স্থানান্তর পরিকল্পনার মধ্যে তার বাস্তব বুদ্ধির অভাব দেখা যায়। রাজধানী স্থানান্তর করা ইতিহাসে কোন নতুন বিষয় নয় কিন্তু  সুলতান দিল্লির অধিবাসীদের স্থানান্তরিত করতে গিয়ে মারাত্মক ভুল করেছিলেন। 

তৃতীয়তঃ - খোরাসান জয়ের পরিকল্পনায় অযৌক্তিক কিছু ছিল না।  কিন্তু সমগ্র দেশ যখন অশান্তি ও বিদ্রোহে নিমজ্জিত - সেসময়ে এ  ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা মোটেই সময়োপযোগী হয়নি। 

চতুর্থতঃ - তার পরিকল্পনা গুলির মধ্যে মৌলিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু সেগুলি যুগোপযোগী ছিল না বলেই কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। এই কারনেই তার তামার নোট প্রচলন প্রচেষ্টা সার্থক হয়নি। 

পঞ্চমতঃ - রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে উলামাদের প্রতিপত্তি খর্ব করে  সুলতান উলেমাদের  বিরোধিতা ও বিদ্বেষ অর্জন করেছিলেন। তার পরিকল্পনার ব্যর্থতার জন্য শাসকগোষ্ঠীর এই দুই প্রভাবশালী অংশের বিরোধিতা অনেকাংশে দায়ী। 

ষষ্ঠত -  সুলতানের অন্তর্দৃষ্টি , ধৈর্যশীলতা ও সাধারণ বিচার-বিবেচনার অভাব এবং সংস্কারকাজে অস্থিরতা তার বিফলতা অনিবার্য করে তুলেছিল। 

সপ্তমতঃ -  রাজকর্মচারীদের কাছ থেকেও তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা লাভ করেননি। সেই কারণেই তার রাজস্ব-সংক্রান্ত সংস্কারগুলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

একথা সন্দেহাতীত যে তার 26 বছরে রাজত্বকাল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। 
১. মহম্মদ বিন তুঘলকের বিফলে সুলতানি সাম্রাজ্যের মর্যাদাহানি হয়। 
২. একাধিক পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের রাজকোষ প্রায় শুন্য হয়ে পড়েছিল। 
৩. দারুন অর্থাভাব হেতু সাম্রাজ্যের শাসনযন্ত্র একেবারে ভেঙে পড়েছিল। 
৪. শাসনকার্যে দক্ষতা বিনষ্ট হওয়ায় সাম্রাজ্যের সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 
৫. অশান্তির মধ্যে দাক্ষিণাত্য স্বাধীন হয়ে যায়। বাংলাদেশ  সুলতানি সাম্রাজ্যের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। সিন্ধু দেশ স্বাধীন হয়ে যায় এবং সাম্রাজ্যভুক্ত অঞ্চলগুলিতে বারংবার বিদ্রোহ শুরু হয়। 
৬.  মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে রাজ্যের সংহতি ও স্থায়িত্ব অনেকাংশে শিথিল করে তুলেছিল। 

এইভাবে নিজের অজান্তে মহম্মদ বিন তুঘলক সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। তবে সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে মহম্মদ বিন তুঘলক এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসাবে সর্বদাই পরিচিত হয়ে থাকবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব না উল্লেখ করলে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যেমন নিরপেক্ষ  বিচার ব্যবস্থা স্থাপন , ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা স্থাপন , কৃষির উন্নতিসাধন - প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা মধ্যযুগীয় শাসকদের মধ্যে এক কৃতিত্বের দাবিদার। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করো। 

Discuss the features of Mesolithic Age . ( In Bengali ) 




মধ্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্টসমূহ :-


সুদূর অতীত থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উপাদানের প্রাপ্তি কালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ বলা হয়। বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করে প্রস্তর যুগ কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন যথা - (১) প্রাচীন প্রস্তর যুগ (২) মধ্য প্রস্তর যুগ ও (৩) নব্য প্রস্তর যুগ। নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করে। তারা সর্বপ্রথম তামা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার শেখে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময় কাল হলো তাম্র প্রস্তর যুগ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

প্রেক্ষাপট ও সময়কাল :-
হেলোসিন যুগের শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বে এবং এখনো এই যুগ চলছে। এ যুগের প্রথমদিকে কোনো লিপির আবিষ্কার হয় নি। ফলে এসময়ের ইতিহাস জানার জন্য জীবাশ্ম , সেসময়কার মানুষের গুহাচিত্র , হাতিয়ার , ব্যবহার্য সামগ্রী প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। প্লেইস্টোসিন যুগের শেষদিকে চতুর্থ অর্থাৎ সর্বশেষ বরফের যুগের অবসানের পর ভূপ্রকৃতিতে বড়ো ধরণের পরিবর্তন আসে। এসময় বরফের আস্তরণ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠে জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ইউরোপের তুন্দ্রা অঞ্চল বনভূমিতে ছেয়ে যায়। নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মাঠঘাটগুলি মরুভূমিতে পরিণত হয়। নতুন এই আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে এ যুগে বেশ কিছু প্রাণী ও কিছু কিছু মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। বেঁচে থাকা মানব প্রজাতিগুলি এই সময় নতুন সংস্কৃতির জন্ম দেয়। 

খাদ্যসংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল মধ্য প্রস্তর যুগ নামে চিহ্নিত হয়। এ যুগের সময়সীমা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে , খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ পর্যন্ত মধ্য প্রস্তর যুগ বিস্তৃত ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

জীবিকা :- 
অন্ত পুরা পাথর পর্বের জীবিকা এসময়ও বজায় ছিল। অর্থাৎ মানুষ খাদ্যসংগ্রহ এবং শিকার করেই জীবিকা চালাত। তবে এই পর্বে পশুশিকারের তুলনায় বিভিন্ন ধরণের ফলমূল , শামুক , ঝিনুক , মধু - প্রভৃতি সংগ্রহের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়। পশু শিকার অপেক্ষা মৎস শিকারের প্রতি অধিক আগ্রহ দেখা দেয়। আসলে এর জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী ছিল। যেমন 

প্রথমতঃ - যুগে নীল , টাইগ্রিস - ইউফ্রেটিস , সিন্ধু , হোয়াং - হো - প্রভৃতি নদীতে বার্ষিক প্লাবন দেখা দেয়। মরু অঞ্চলের কিছু কিছু অংশে উর্বর জমির সৃষ্টি হয়। 

দ্বিতীয়তঃ - অপর দিকে প্লেইস্টোসিন পর্বে লোমশ হাতি , লোমশ গন্ডার প্রভৃতি প্রাণী শীতল আবহাওয়ায় অবলুপ্ত হয়। 

তৃতীয়তঃ - বল্গা হরিণের দল ক্রমশ পশ্চিম ইউরোপ থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সরে যায়। 
চতুর্থতঃ - সর্বোপরি জলাভূমি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ তার খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি পরিমাণে মাছ , শামুক , ঝিনুক প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করে।       

তবে এযুগের মানুষ যে বড় প্রাণী একেবারেই শিকার করতো না - এমনটা কিন্তু নয়। কিছু সহজলভ্য বড় প্রাণী শিকারের পাশাপাশি তারা লাল হরিণ , বনবিড়াল , নেউল - প্রভৃতি পশুও শিকার করতো। এ যুগের মানুষ কোনো কোনো পশুকে পোষ মানাতেও শিখেছিল। এ যুগের মানুষের জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। 

হাতিয়ার :- 
এই যুগের মানুষ হাতিয়ার তৈরিতে আরও দক্ষতার পরিচয় দেয়। এই যুগের হাতিয়ারগুলি পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ক্ষুদ্র হয়। এ যুগের মানুষের প্রধান হাতিয়ারগুলো ছিল তিরধনুক , ব্লেড , হারপুন , বড়শি - প্রভৃতি। ছোট পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরির এই সংস্কৃতি '' মাইক্রোলিথ '' নামে পরিচিত। যেহেতু এই যুগে হাতিয়ারগুলি ক্ষুদ্র আকারে তৈরী হত সেজন্য এই যুগকে '' ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ '' ও বলা হয়। 
 
পাথর ছাড়া অন্য উপাদানে হাতিয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরী - মধ্য প্রস্তর যুগের অপর এক অন্যতম বৈশিষ্ট। বিশেষতঃ এই যুগে শিঙের ব্যবহার ছিল লক্ষণীয়। শিঙ বা হাড় জলে ভিজিয়ে নরম করে তা কেটে ছুরি , তিরের ফলা ইত্যাদি তৈরী করা হত। হাড় ও কাঠের হাতল লাগিয়ে চাকু , করাত , কাস্তে , বর্শা তৈরী হত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পশুপালন :-
মধ্য প্রস্তর যুগের কোনো এক সময় মানুষ পশুপালন করতে শেখে। মানুষের উদ্বৃত্ত খেতে কুকুর মানুষের বাসস্থানের পাশাপাশি বসবাস করতে থাকায় কুকুর হয় মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু। বসতি এলাকা পাহারা দিতে এবং শিকারের জন্য কুকুরের প্রয়োজন হয়েছিল। এছাড়া এই পর্বে মানুষ গরু , ছাগল , মহিষ , শুকর , বিড়াল - প্রভৃতি পশুকে পোষ মানিয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মধ্য প্রস্তর যুগের যে নিদর্শন পাওয়া গেছে , সেখানে গৃহপালিত পশুর অস্থি - একথাই প্রমান করে। 

সমাজবদ্ধতা :-
প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ শিকারের প্রয়োজনে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছিল। কিন্তু মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল অর্ধ যাযাবর। এই পর্বে মানুষ পশুশিকার ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য জোটবদ্ধ হয়। তা ছাড়াও বন্য পশুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তো তারা বহু পূর্বেই জোটবদ্ধ হয়েছিল। 

যানবাহন :-
মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষ যোগাযোগ রক্ষার জন্য কোনো যানবাহন তৈরী করেছিল কি'না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কারণ চাকা মধ্য প্রস্তর যুগে আবিষ্কৃত হয়নি। তবে মনে করা হয় মধ্য প্রস্তর যুগের আদিম মানুষ স্লেজগাড়ির ব্যবহার জানতো। এই গাড়ি টানার জন্য তারা কুকুরকে কাজে লাগতো। তারা জলপথে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে গাছের গুড়ি খোদাই করে নৌকা তৈরী করতো। 

চিত্রকলা :-
মধ্য প্রস্তর যুগের চিত্রকলাতে আদিম মানুষ বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। এই পর্বে আদিম মানুষ পাথরের ওপর মূর্তি খোদাই করার কাজ শুরু করেছিল। এ ছাড়া মাটির মূর্তি নির্মাণ করার প্রয়াসও তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। নিত্যদিনের ব্যবহার্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন হাতিয়ার ছিল এ যুগের চিত্রকলার বিষয়বস্তু। মানুষ ও পশুর চিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি এই পর্বে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার অঙ্কনের চেষ্টা শুরু করা হয়। ত্রিকোণ , চতুস্কোন , বৃত্তাকার চিত্র - এই পর্বের মানুষেরা আকঁতে শুরু করে। 

অস্তিত্বের নিদর্শন :-
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ভারতবর্ষে মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা , মহারাষ্ট্রের নেভামা , রাজস্থানের দিদওয়ালা এবং উত্তরপ্রদেশ , পাঞ্জাব ও গুজরাটের বিভিন্ন জায়গায় মধ্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। ভারতের বাইরে সুইডেন , ফিনল্যান্ড , রাশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার কিছু কিছু অঞ্চলে মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে। 

সুতরাং দেখা যায় যে , মধ্য প্রস্তর সংস্কৃতির সময়কাল ছিল স্বল্প কিন্তু সংস্কৃতির পরিবর্তন ছিল তাৎপর্যবহ। প্রস্তর যুগ থেকে সভ্যতার পথে অগ্রসর হওয়ার এই পর্বকে সভ্যতার ঊষালগ্ন 
( Down of Civilisation ) বলা যায়। মধ্য প্রস্তর যুগের বিবর্তন ব্যাতিরকে পরবর্তী নব্য প্রস্তর যুগ সম্পর্কে অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

শিক্ষা ও দর্শনের সম্পর্ক আলোচনা করো। 

Discuss the relation between Education and Philosophy . ( In Bengali ) 




আধুনিক অর্থে , শিক্ষাকে একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য জ্ঞানের যে বিশেষ শাখা - তা'ই হলো শিক্ষাবিজ্ঞান। অন্যদিকে বিশ্বব্রম্মান্ডের চিরন্তন সত্যকে অনুসন্ধান করার যে প্রবণতা - তা'ই হল দর্শন। ইংরেজি Philosophy শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্ট। Philos  শব্দের অর্থ হলো ভালোবাসা বা আকর্ষণ এবং Sophia শব্দের অর্থ হলো জ্ঞান। সুতরাং Philoophy শব্দের অর্থ হলো জ্ঞানের প্রতি আসক্তি। আদর্শগত দিক দিয়ে বলা যেতে পারে সত্যকে আবিষ্কার করার জন্য মানুষের যে অবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা তা'ই হলো দর্শন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Adams শিক্ষাকে দর্শনের গতিশীল দিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [ dynamic aspect of philosophy ]
Fichte বলেছেন , দর্শন ব্যাতিরকে শিক্ষার শিল্পসৌন্দর্য কখনোই এককভাবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বা স্পষ্টতা অর্জন করতে পারেনা।[ The art of education will never attain complete clearness in itself without Philosophy ] 
শিক্ষাবিদ Ross বলেছেন শিক্ষার সমস্ত প্রশ্নই অন্তিমে দর্শনের প্রশ্ন হয়ে ওঠে। 
জন ডিউই বলেছেন , দর্শন হচ্ছে অতীব সাধারণ বৈশিষ্ট সমন্বিত শিক্ষার এক অভিনব তত্ত্ব। 

শিক্ষাবিজ্ঞানী Ross  শিক্ষা ও দর্শনের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাবার জন্য বলেছেন - দর্শন ও শিক্ষা হচ্ছে একই মুদ্রার দুটি দিক। প্রথমটি হচ্ছে চিন্তার দিক , অপরটি হচ্ছে সক্রিয়তার দিক। 
[ ‘’Philosophy and Education are the two sides of a coin , the former is contemplative side and the letter is the active side ‘’] 

বস্তুতঃপক্ষে , মানুষের জীবনের চলার পথকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন মৌলিক কার্যকরী নীতি ও তত্ত্ব। এই মৌলিক নীতি ও তত্ত্বগুলি যদি সুচিন্তিত , সুপরিকল্পিত ও সুপরিক্ষিত হয় তবেই মানুষের জীবন কল্যাণের পথে অগ্রসর হয়। দর্শনের কাজ হচ্ছে এই মৌলিক নীতি ও তত্ত্বগুলির যোগান দেওয়া। আবার দর্শন প্রদত্ত নীতি ও তত্ত্ব কার্যকরী করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। সুতরাং দর্শন ও শিক্ষার সম্পর্ক অতি নিবিড়। শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে দর্শনের প্রায়োগিক দিক। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষার লক্ষ্য ও দর্শন :-

প্রত্যেকটি শিক্ষার লক্ষ্যের মূলে একটি জীবনাদর্শ থাকে। অর্থাৎ , যেকোনো সময়ে , যেকোনো দেশে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ দার্শনিক চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য। দার্শনিকেরা তাঁদের বিচার ও চিন্তার ফল হিসেবে , মানুষের জীবনের জন্য কতকগুলি চরম মূল্যবোধ নির্ধারণ করেন। এই মূল্যবোধগুলিই পরবর্তীকালে সেই সময়ের সেই সমাজের শিক্ষার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এইভাবে দার্শনিক তত্ত্বচিন্তা শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের কাজকে প্রভাবিত করে। 
তাই অধ্যাপক Nunn বলেছেন - Every scheme of education , being at bottom a practical philosophy necessarily touches life at every point .

পাঠক্রম ও দর্শন :-

শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের পর প্রয়োজন হয় পাঠক্রম নির্বাচনের। পাঠক্রম হলো শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় মাত্র। যেহেতু শিক্ষার লক্ষ্য দার্শনিক আদর্শের দ্বারা নির্ধারিত হয় , সেহেতু পাঠক্রমের মধ্যে কী ধরণের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে - সেটিও স্থিরীকৃত হয় দার্শনিক মূল্যবোধগুলির দ্বারা। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্রিগস ( Briggs) বলেছেন পাঠক্রম নির্ধারণের কাজকে প্রয়োগমূলক দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। দার্শনিকেরা নিজ আদর্শ ও দার্শনিক মূল্যবোধ দ্বারা পাঠক্রম নির্ধারণের কাজকে প্রভাবিত করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পাঠ্যপুস্তক ও দর্শন :-

আদর্শ পাঠ্যপুস্তক আধুনিক শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই পাঠ্যপুস্তককেও শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আদর্শ পাঠ্যপুস্তক নির্মাণ করতে হলে নীতি ও মূল্যবোধের প্রয়োজন। শিক্ষাদর্শন পাঠ্যপুস্তকের এই আদর্শমান নির্ধারণে সহায়তা করে। 
দার্শনিকগণ বলেছেন , আদর্শ পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের সামনে সমকালীন জীবনাদর্শকে তুলে ধরবে। বিভিন্ন দার্শনিকগণ বিভিন্ন সময়ে পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে যে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ প্রচার করেছেন , সেগুলি বিভিন্ন দেশের পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষাব্যবস্থাকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই আধুনিক শিক্ষাবিদগণ মনে করেন , শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক রচনা ও নির্বাচনের উপর দর্শনের প্রভাব বর্তমান। 

শিক্ষন পদ্ধতি ও দর্শন :-

শিক্ষন পদ্ধতি শিক্ষার একটি কার্যকরী অংশ। যে উপায়ে বা কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তাকে'ই সাধারণভাবে বলা হয় শিক্ষন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। বর্তমানে যে সকল শিক্ষা পদ্ধতিগুলির কথা বলা হয় , তার প্রত্যেকটিই কোনো না কোনো জীবনদর্শন দ্বারা প্রভাবিত। 
যেমন - (১) ব্যেক্তিকেন্দ্রীক শিক্ষন পদ্ধতির মূলে আছে প্রকৃতিবাদী দর্শন। 
(২) আধুনিক কর্মকেন্দ্রিক পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে প্রয়োগবাদী দর্শন থেকে। 
(৩) প্রকল্প পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে প্রয়োগবাদী দর্শন থেকে। 
এইভাবে , বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারা থেকে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা ও দর্শন :-

শিক্ষক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তিনি সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রস্বরূপ। তাই শিক্ষকের জীবন যে আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত সেই আদর্শের দ্বারা শিক্ষাও সামগ্রিক ভাবে প্রভাবিত হয়। তাই আদর্শ শিক্ষকের কিছু গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষকের এই গুণগত মান কী হবে তা নির্ধারণ করে দর্শন। তাছাড়া , শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা ও কর্তব্য কি হবে - তা'ও নির্ধারণ করে শিক্ষা দর্শন। যেমন - (১) ভাববাদী দার্শনিকদের মতে শিক্ষক বিদ্যালয়ে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। 
(২) প্রয়োগবাদী দার্শনিকদের মতে , শিক্ষকের দায়িত্ব সহায়কের ভূমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। 
এইভাবে শিক্ষকের ব্যাক্তিগত বৈশিষ্ট , দায়িত্ব , শিক্ষাক্ষেত্রে তার ভূমিকা - ইত্যাদি সবই নির্ধারিত হয় দার্শনিকদের দ্বারা।   

মূল্যায়ন পদ্ধতি ও দর্শন :-

মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাপ্তি বিচার করা। বিশেষ শিক্ষন পদ্ধতি , পাঠক্রম , শিক্ষক - সকল উপাদানগুলির সামগ্রিক সক্রিয়তার ফলে , শিক্ষার লক্ষ্য তার অভিমুখে কতটা অগ্রসর হয়েছে - তা বিচার করা'ই হলো মূল্যায়নের উদ্দেশ্য। শিক্ষার লক্ষ্যের বিচারে সামগ্রিক অগ্রগতির এই পরিমাপকে বলা হয় মূল্যায়ন। এই মূল্যায়ন যেহেতু লক্ষ্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয় সেহেতু তার উপরেও দর্শনের প্রভাব বর্তমান। আবার শিক্ষার লক্ষ্য যেহেতু দার্শনিক আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে , তাই মূল্যায়নও সেই আদর্শের বিচারে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই দর্শন শিক্ষাগত মূল্যায়নের প্রক্রিয়াকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। 

উপসংহার :-
শিক্ষাক্ষেত্রে দর্শনের প্রভাব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই দর্শনের প্রভাব অপরিসীম। জীবন প্রক্রিয়া ও শিক্ষা কখনোই পৃথক নয়। এর কোনোটিই আদর্শ ছাড়া চলতে পারে না। শিক্ষা ও দর্শন উভয়েই ব্যাক্তিকেন্দ্রিক জীবনের তাত্ত্বিক বিশ্লেষক। আর দর্শনের জীবনকেন্দ্রিক প্রয়োগই হলো শিক্ষা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ Adams বলেছেন -
‘’ Education is the dynamic side of Philosophy . ‘’

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

তোমার মতে একজন শিক্ষকের কী কী গুণ থাকা উচিত ?




অ্যারিস্টটল বলেছেন '' শিক্ষকেরা যাঁরা শিশুদের প্রকৃত শিক্ষা দেন তাঁরা পিতা মাতার থেকে বেশি সন্মানীয়। কেননা , প্রতিটি শিশুর সুস্থ ও সভ্য জীবন বিকাশে সাহায্য করেন শিক্ষক সমাজ। '' 
কোঠারি কমিশনের রিপোর্টেও বলা হয়েছে শিক্ষার অন্যান্য সকল উপাদানের মধ্যে শিক্ষকদের গুণাবলীর , যোগ্যতার ও দায়িত্ববোধের গুরুত্ব অপরিসীম। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষকের ব্যাক্তিগত গুণ বা যোগ্যতা :-


ব্যাক্তিগত গুণ বলতে সাধারণতঃ সেই গুণ বা বৈশিষ্টগুলিকেই বোঝানো হয়ে থাকে যেগুলো শিক্ষকের নিজস্ব ব্যাক্তিসত্তার অধীন। এই গুণগুলি শিক্ষককে শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা করে। শিক্ষকের নিজস্ব এই গুনগুলোর কিছু অর্জিত ও কিছু জন্মগত। এই গুনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলো তাঁর ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন আদর্শ। এই জন্যই বলা হয় একজন সুশিক্ষক আদর্শ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হবেন। 

প্রথমতঃ -ডক্টর কে এল ক্লাপ আদর্শ ব্যাক্তিত্বের ১০ টি গুনের কথা উল্লেখ করেছেন যেমন - (১) উত্তম শরীর , (২) আশাবাদ , (৩) সংযত চরিত্র , (৪) উৎসাহ , (৫) ন্যায় পরায়ণতা , (৬) সততা , (৭) সহানুভূতি , (৮) প্রাণধর্মিতা , (৯) বিদ্যাবত্তা ও (১০) ছাত্রপ্রীতি। বস্তুতঃ এই সকল ব্যাক্তিগত গুণগুলি একজন সুশিক্ষকের পক্ষে আবশ্যক। 

দ্বিতীয়তঃ - আদর্শ শিক্ষকের পক্ষে তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বিচরশৈলী একান্ত প্রয়োজন। ব্যাগলে ( Bagley ) ও কিথ (Keith)  বিভিন্ন ব্যাক্তিগত গুণের সঙ্গে সাংগঠনিক কৌশল , বিচক্ষণতা , উত্তম কণ্ঠস্বর ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন। বস্তুতঃ শিশুদের আচরণকে মনোবিজ্ঞানসম্মত পথে পরিচালনা একজন সুশিক্ষকের উপরোক্ত গুণগুলি অপরিহার্য। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

তৃতীয়ত :- একজন সুশিক্ষকের দায়িত্ববোধ ( Sense of responsibility ) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগরিত করতে পারেন। 

চতুর্থতঃ - সুশিক্ষক হবেন প্রগতিশীল চিন্তার গ্রাহক , ধারক , বাহক ও রক্ষক। প্রকৃতপক্ষে তিনি নিত্য প্রবহমান ও পরিবর্তনশীল জীবনধারার প্রতীকস্বরূপ এবং এই ভাবধারা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সঞ্চারিত করবেন। 

পঞ্চমতঃ - সুশিক্ষকের একটি গুন হচ্ছে তাঁর প্রক্ষোভমূলক জীবনের পরিণমন যা সাধারণত তাঁর প্রক্ষোভিক ভারসাম্য থেকেই জন্মায়। 

ষষ্ঠত :- সুশিক্ষকের একটি মূল্যবান গুন হল উন্নত জীবনাদর্শবোধ। অধ্যাপক রাস্ক ( Rusk ) বলেছেন - একজন সুশিক্ষকের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট জীবন দর্শনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

সপ্তমতঃ - সুশিক্ষকের জীবনের অপর বৈশিষ্ট হলো তাঁর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ চিন্তার ক্ষমতা। বস্তুতঃ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষমতা জাগাতে হলে সর্বাগ্রে শিক্ষককে সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে। 

অষ্টমতঃ - শিক্ষকের মধ্যে ত্যাগ ও সেবার মনোভাব থাকা একান্ত প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ এ সম্পর্কে বলেছেন - '' তবুও নানাপ্রকার প্রতিকূল অবস্থা স্বত্তেও অনেক শিক্ষক আছেন যাঁহারা দেনাপাওনার সম্পর্ক ছাড়াইয়া ওঠেন নিজেদের মাহাত্মগুনে। ''

নবমতঃ - সুশিক্ষকের জীবনের আর একটি বৈশিষ্ট হলো তাঁর জ্ঞানপিপাসা। তিনি অনন্ত জ্ঞানপিপাসু হয়ে বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানের ভান্ডার বা জ্ঞানের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা হিসেবে নিজেকে ভাস্বর করে তুলবেন। 
  
দশমত :- শিক্ষক হবেন সদা আনন্দময় ও স্বতঃস্ফূর্ততার প্রতীক।Sense of humor  হবে তাঁর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। এই বৈশিষ্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করবে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষকের পেশাগত গুণ বা যোগ্যতা :-


ব্যাক্তিগত গুণাবলী ছাড়াও একজন শিক্ষকের পেশাগত বৃত্তিতে স্বতন্ত্র বেশ কিছু গুন অর্জন করা খুবই প্রয়োজন। যেমন -

প্রথমতঃ - একজন সুশিক্ষকের পান্ডিত্য ও জ্ঞানই তাঁকে নিজস্ব বৃত্তিতে সাফল্য এনে দেয়। শুধু জ্ঞান থাকলেই চলে না - এর সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান সঞ্চালন দক্ষতাও একজন সুশিক্ষকের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজন। এজন্য একজন সুশিক্ষকের আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক মনোবিজ্ঞানসম্মত গতিশীল পদ্ধতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। 

দ্বিতীয়তঃ - একজন সুশিক্ষকের আর একটি বৈশিষ্ট হলো তাঁর পরীক্ষণলব্ধ শিক্ষন পদ্ধতি গ্রহণের ও ব্যবহারের মনোভাব। তিনি কেবল গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করবেন না , তিনি নিজস্ব বৃত্তিতে তাঁর প্রতিষ্ঠাকে স্থায়ী করার জন্য পরিস্থিতি অনুসারে শিক্ষাপদ্ধতি র পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতেও সক্ষম হবেন। 

তৃতীয়তঃ - শিক্ষাপদ্ধতিকে বাস্তবধর্মী , মনোমুগ্ধকর , শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার তাগিদে সুশিক্ষককে বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি ও সহায়ক পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির মূল কথা , Teach through the senses মেনে একজন সুশিক্ষককেই বিমূর্ত জ্ঞানকে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য করে তুলতে পারেন।
 
চতুর্থতঃ - একজন সুশিক্ষকের মূল্যায়ন সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। শিশুদের বিকাশের ক্রমিক ধারা অনুশীলন করার জন্য কিভাবে সর্বাত্মক পরিচয়লিপি ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কেও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

পঞ্চমতঃ - একজন সুশিক্ষকের পক্ষে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। এই সমস্ত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা ও যোগ্যতা অর্জন করার মধ্যেই একজন সুশিক্ষকের বৈশিষ্ট লুকিয়ে থাকে। 

ষষ্ঠত :- শিক্ষকের অন্যতম পেশাগত বৈশিষ্ট হিসেবে তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গি , পক্ষপাতহীনতা , ব্যেক্তিপার্থক্য বুঝে শিক্ষাপ্রণালী রচনা করার যোগ্যতা , অর্থবহ উপদেশ প্রদান - ইত্যাদি গুণগুলি থাকা বাঞ্চনীয়।
 
পরিশেষে বলা যায় , শিক্ষার্থীর প্রকৃত পথপ্রদর্শক হিসেবে একজন সুশিক্ষক সর্বদা শিক্ষালয় ও শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার কাজে সচেষ্ট থাকেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে  কাম্য ও বাঞ্ছিত আচরণধারা মূর্ত করে তুলতে সদাব্যস্ত থাকেন।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য / তুলনামূলক আলোচনা। 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য / তুলনামূলক আলোচনা। 

Distinction / Difference between Parliamentary and Presidential forms of Government . ( In Bengali ) 



রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য। 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য। 


ক্ষমতা স্বাতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সরকারগুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ; যথা - রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকার ও মন্ত্রিসভা পরিচালিত বা সংসদীয় সরকার। এই দুই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। তবে , উভয় ধরণের সরকারের ক্ষেত্রে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ :- 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. আইনসভার গঠনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান আইনসভা কর্তৃক নিযুক্ত হন না। তিনি সরাসরি জনগণ কর্তৃক নিযুক্ত হন। তাই রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান কোনোভাবেই আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বা আইনসভা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। 
কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান হন নিয়মতান্ত্রিক এবং তিনি আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে বা স্থগিত রাখতে পারেন। এমনকি রষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারেনা। 

২. রাষ্ট্রপ্রধানের প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত থাকে। তিনি হলেন দেশের প্রকৃত শাসক। 
অন্যদিকে মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান হলেন নিয়মতান্ত্রিক। অর্থাৎ তত্ত্বগতভাবে তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও সরকারের প্রধান নন। অর্থাৎ তিনি তাঁর অধীনস্থ মন্ত্রীবর্গ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রকৃত প্রধান হন প্রধানমন্ত্রী। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. আইনসভার নিকট দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ কর্তৃক নিযুক্ত হন। তাই তিনি তার কাজের জন্য কোনোভাবেই আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল নন। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারে মন্ত্রিসভা আইনসভা কর্তৃক নিযুক্ত হয়। ফলে তারা জনগণ ও আইনসভার নিকট যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকে। 

৪. রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে আইনসভা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে পদচ্যুত করতে পারেনা। কেবলমাত্র অক্ষমতা , দেশদ্রোহীতা - ইত্যাদি অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করা যায়। 
কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভাকে আইনসভাকে সর্বদা সংখ্যা গরিষ্ঠতা বজায় রাখতে হয়। মন্ত্রিপরিষদ সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারালে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে পারে আইনসভা। 

৫. আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত থাকে বলে আইনসভা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে কোনোরূপ সম্পর্ক থাকেনা। এখানে আইনসভা কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা এবং রাষ্ট্রপতি আইনসভার অধিবেশনে অংশগ্রহণ বা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। 
কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সরকার ও আইনসভার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক থাকে। আইনসভা এখানে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকেই মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচিত হন। 

৬. মন্ত্রিসভার ক্ষমতাগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীগণ নির্বাচিত হন সরাসরি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক। মন্ত্রীদের কার্যকালের স্থায়িত্ব নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা - অনিচ্ছার উপর। এখানে মন্ত্রীবর্গ রাষ্ট্রপতির অনুগত কর্মচারীমাত্র। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীরাই প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীপদে নিযুক্ত হন। এই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকলেও অন্যান্য মন্ত্রীবর্গের স্বাধীন ক্ষমতা ও নীতি প্রণয়নের অধিকার থাকে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. মন্ত্রিসভার গঠনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীগণ সরাসরি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছা - অনিচ্ছার ভিত্তিতে তাঁর অধীনস্থ কর্মচারী বা অন্যান্যদেরকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের সদস্যদের নিয়োগ করলেও তিনি তা করেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ক্যাবিনেট গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সরাসরি কোনো ক্ষমতাভোগ করেন না। 

৮. স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত শাসন ব্যবস্থার চেয়ে অধিক স্থায়ী হয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া রাষ্ট্রপতি বা অন্যান্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করা যায়না। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো যেতে পারে। 

৯. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয়। এখানে শাসন , আইন ও বিচার বিভাগ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে পরস্পর পরস্পরের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কার্যপরিচালনা করে। 
কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয়না। ফলে এখানে আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে এবং কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পরস্পরকে প্রভাবিত করে। 

১০. বিচার বিভাগের প্রাধান্যের ক্ষেত্রে :- রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের প্রাধান্য অগ্রাধিকার লাভ করে থাকে। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তে আইনসভাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং আইন ও শাসন বিভাগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

১১. জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে সংসদীয় ব্যবস্থার তুলনায় অধিক কার্যকরী। এখানে রাষ্ট্রপতি নিজেই জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরণের আলাপ - আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা অধিক কার্যকরী নয়। 

১২. আইনসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ কর্তৃক নিযুক্ত হন। এখানে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের সাথে আইন সভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার কোনো সম্পর্ক নেই। 
কিন্তু মন্ত্রিসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় সরকার গঠিত হয় আইন সভাতে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। একমাত্র সংখ্যা গরিষ্ঠতা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকার গঠন করা যায়না।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                      


Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates