Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সুবিধা - অসুবিধা। 

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষ - গুণ। 

Merit and demerits of the federal government. ( In Bengali ) 




যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সুবিধা বা গুণ :-  

  
১. জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সমন্বয়সাধন :- যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে আঞ্চলিক স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতার সাথে সাথে জাতীয় ঐক্য ও স্বার্থের সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হয়। একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ পূরণ এবং প্রাদেশিক সরকার গুলির মাধ্যমে আঞ্চলিক স্বার্থ পূরণ এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলির মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাগুলি সুরাহা - ইত্যাদির ফলে জাতীয় ঐক্য ও স্বার্থের সাথে আঞ্চলিক ও স্থানীয় স্বার্থের মধ্যে সমন্বয়সাধন ঘটে। 

২. ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতির সুবিধা :-  যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ফলে ক্ষমতা কেবলমাত্র একটি সরকারের অধীনস্থ না থেকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য গুলির সরকার এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে বন্টিত হয়। ফলে সর্বক্ষেত্রে কার্যকরী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয় এবং বিভিন্ন সমস্যাগুলির যথাযথ সমস্যা সমাধানের সম্ভব হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষা :- আঞ্চলিক স্বতন্ত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের যেহেতু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে সেহেতু আঞ্চলিক সরকারগুলো সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতার মাধ্যমে যথেষ্ট স্বাধীনতা ও ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। ফলে আঞ্চলিক স্বতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকার গুলি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্বাধীন ভাবে পালন করতে পারে। 

৪. আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্বে নিয়ন্ত্রণ :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র সরাসরি শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে , আমলাতন্ত্রের পক্ষে সমগ্র শাসন ব্যবস্থার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়না। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের সাথে সাথে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমান্তরাল শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের অভাব - অভিযোগ ও সমস্যাগুলির যথাযথ সমাধান সম্ভব হয়। 

৫. রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ :- যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সর্বদা রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে সহায়ক হয়।  যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ সরকার এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলিতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক যোগদান তাদের রাজনৈতিক চেতনার স্তরকে বৃদ্ধি করে। 

৬. প্রশাসনিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।  একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার অন্যদিকে রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি - প্রত্যেকের সংবিধান প্রদত্ত বা তালিকাভুক্ত ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব এবং কর্তব্য বন্টিত থাকে। এই সকল দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রতিটি অংশ অর্থাৎ কেন্দ্র-রাজ্য ও স্থানীয়স্বায়ত্ত শাসিত সংস্থাগুলিকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেহেতু সংবিধানে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তালিকাভুক্ত থাকে সেহেতু কর্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্ন এখানে আসে না। ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা :- ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সাধন করে। সাধারণত বৃহৎ ও বিপুল জনসংখ্যারভুক্ত দেশগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকে। একটি বৃহৎ ও বিপুল জনসংখ্যাভুক্ত দেশ রাজনীতি , অর্থনীতি , সংস্কৃতি - ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়।  যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এই সকল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক আচরণ করে থাকে। 

৮. স্বৈরাচার প্রতিরোধ :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী আচরণ প্রতিহত করতে সমর্থ হয়। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয় , সেহেতু কেন্দ্র , রাজ্য এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি সকলেই সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। তাই এখানে কোনো একটি সরকার বা শাসন প্রতিষ্ঠানের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়  প্রত্যেকটি সরকার নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার - এই সকল উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য যেকোনো সরকার  স্বৈরাচারের অবলম্বন করলে তার বিরুদ্ধে আদালত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। 

৯. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা ও গণতান্ত্রিকতা :- আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারগুলিতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন সভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা থাকে। কিন্তু এখানে এই ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি আইনসভার হাতে ন্যাস্ত থাকে না। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্য আইনসভাগুলির হাতেও যৌথভাবে অর্পিত থাকে। যে কোন আইন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা , গবেষণা - ইত্যাদির সুফল ভোগ করা যায়।  

১০. বৃহৎ রাষ্ট্রের পক্ষে উপযুক্ত :- একটি বৃহৎ রাষ্ট্রে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাম্য। কেননা একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একটি মাত্র এককেন্দ্রিক সরকারের হাতে থাকলে তা একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়না। এছাড়াও একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের জনসংখ্যা , সংস্কৃতি , রাজনীতি - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্র দেখা যায়। শুধুমাত্র এককেন্দ্রিক সরকার এই  বৈচিত্র্যময় পরিমন্ডলে দক্ষতার সাথে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতে সক্ষম হয় না। তাই বৃহৎ রাষ্ট্রগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার অবশ্যই কাম্য। 

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অসুবিধা বা দোষ 


১. শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা :- যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয় সেহেতু এককেন্দ্রিক সরকার অপেক্ষা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারগুলি দুর্বল প্রকৃতির বলে বিবেচিত হয়। এই জাতীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সকল ক্ষমতা থাকেনা - তা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে বন্টিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য , একটি রাজ্যের সাথে একাধিক রাজ্য , স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলির সাথে রাজ্যের বিরোধ প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারগুলি এককেন্দ্রিক সরকারগুলি দুর্বল হতে বাধ্য হয়। 

২. আন্তর্জাতিক নীতি রূপায়নে জটিলতা :- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সহায়তা না পেলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নীতি প্রণয়নে সক্ষম হয় না। একটি বৃহৎ রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি ও আদর্শের ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনা করে। এই ভিন্ন ভিন্ন নীতি ও আদর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। রাজ্যগুলির আদর্শ ও কর্মসূচির সাথে কেন্দ্রীয় আদর্শ ও কর্মসূচির সমন্বয়সাধন না হলে তা আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. কেন্দ্র - রাজ্য বিরোধের সম্ভাবনা :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক ক্ষমতা বন্টিত থাকার ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহজেই বিরোধের সম্ভবনা তৈরী হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে মতবিরোধের জন্ম নিলে তা রাজ্যগুলির স্বার্থকে বিপন্ন করে আবার কেন্দ্রও অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতি নির্ভরশীল থাকে। ফলে কেন্দ্র - রাজ্য মতবিরোধে কেন্দ্রের স্বার্থও বিপন্ন হয়। 

৪. পরিবর্তনশীলতার পক্ষে উপযুক্ত নয় :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। তাই প্রশাসনিক রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সাথে সাথে দ্রুত সংবিধানের পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। সংবিধানের দুষ্পরিবর্তনীয়তা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার গুলিতে ভিন্ন ভিন্ন দল ক্ষমতাসীন থাকার ফলে তাদের মধ্যে খুব সহজেই মতবিরোধের জন্ম নেয়। এই মতবিরোধ রাজ্য এবং জাতির স্বার্থ পূরণের এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। 

৫. আদালতের প্রাধান্য :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান এবং আদালতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠাতা থাকে। সকল ক্ষমতার একমাত্র উৎস সংবিধান। কাজেই আইনসভা প্রণীত আইন এবং শাসন বিভাগের বিভিন্ন নির্দেশগুলির বৈধতা বিচার করতে পারে আদালত। আদালত ইচ্ছা করলে যেকোনো আইন বা নির্দেশকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। 

৬. সঙ্কটকালীন পরিস্থিতির পক্ষে উপযুক্ত নয় :- যেকোনো আপৎকালীন বা সংকটকালীন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কাম্য নয়। যেকোনো আপৎকালীন বা সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতা বন্টিত থাকার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না এবং জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয় না। তাই আপৎকালীন বা  সংকটকালীন পরিস্থিতির সাথে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতা :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক ক্ষমতা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে বন্টিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতায় ন্যস্ত থাকে। কেন্দ্র সরকার  একচ্ছত্রভাবে রাজ্য সরকারের চেয়ে অনেক বেশি অধিকার ও ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। তাই রাজ্য সরকারগুলিকে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এই নির্ভরশীলতা রাজ্যের উন্নতির গতিধারাকে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য বিরোধের সৃষ্টি হয়। 

৮. প্রাদেশিকতা উদ্ভবের ক্ষেত্রে সহায়ক :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংকীর্ণতা , প্রাদেশিকতা , বিচ্ছিন্নতাবাদ -  ইত্যাদির বিকাশ খুব সহজেই ঘটতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিশেষ কোনো একটি রাজ্য বা নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রতি বহুদিন ধরে উদাসীন থাকে সেই রাজ্য বা অঞ্চলের যদি বিশেষ কোনো দাবিদাওয়া বহুদিন যাবৎ পূরণ না হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় খুব সহজেই আঞ্চলিকতাবাদ , প্রাদেশিকতা - ইত্যাদির উদ্ভব ঘটে। 

৯. প্রশাসনিক মন্থর গতি :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার তুলনায় মন্থর গতিসম্পন্ন হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিভিন্নভাবে এক্তিয়ার সম্পর্কিত বিরোধ কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধের সূচনা করে। ফলে এই ধরনের বিষয়গুলি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে মন্থর গতি সম্পন্ন করে তোলে। 

১০. ব্যয়বহুল :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়। একদিকে কেন্দ্র বা জাতীয় সরকার এবং অন্যদিকে প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য সরকার এবং তার সাথে সাথে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা - এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যয় এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার তুলনায় অত্যন্ত বেশি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অংশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। 

১১. বিচার বিভাগের সাথে আইন ও শাসন বিভাগের বিরোধের সম্ভাবনা :- যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদালত সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা রূপে বিবেচিত কাজ করে। তাই অনেক সময় আদালত - শাসন ও আইন বিভাগকে স্বপ্রণোদিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যত হয়। ফলে বিচার বিভাগের সাথে শাসন ও আইন বিভাগের বিরোধের সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

এককেন্দ্রিক সরকারের দোষ - গুণ বা সুবিধা - অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা কর। 

Merits and Demerits of the Unitary Government. ( In Bengali ) 




এককেন্দ্রিক সরকারের গুণ বা সুবিধা :- 


১. প্রশাসনিক জটিলতার সম্ভবনা কম :- যেহেতু এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকে সেহেতু প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সমগ্র দেশে একই ধরণের আইন ও শাসন সহজেই বলবৎ করা সম্ভব হয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাই জটিলতা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

২. অঙ্গরাজ্যগুলিতে বৈষম্যের অনুপস্থিতি :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকায় সমগ্র দেশে একই ধরণের নীতি প্রয়োগ করা হয়। ফলে অঙ্গরাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কোনো অভিযোগ উপস্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. জাতীয় সংহতির সহায়ক :- এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় সারা দেশে একই ধরণের আইন ও শাসন ব্যবস্থা বলবৎ থাকে। নাগরিকদের আনুগত্য থাকে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি। সারা দেশে একই ধরণের নীতি প্রচলিত থাকার ফলে প্রাদেশিকতা , বিচ্ছিন্নতাবাদ - ইত্যাদি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। তাই এককেন্দ্রিক সরকার জাতীয় ঐক্যের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

৪. ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের পক্ষে অধিক উপযুক্ত :- ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার তুলনায় এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা অধিক কার্যকরী ও উপযুক্ত। সাধারণতঃ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলিতে জাতি - বর্ণ - ভাষা - সংস্কৃতি - ইত্যাদির বৈচিত্র খুব কম থাকে বৃহৎ রাষ্ট্রের তুলনায়। ফলে এই সকল রাষ্ট্রে এককেন্দ্রিক শাসন অধিক উপযুক্ত। 

৫. আইন প্রণয়নের সুবিধা :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রাধান্যলাভ করে। কেন্দ্রীয় আইনসভা নিজেদের ইচ্ছা ও প্রয়োজন অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করতে পারে। এখানে আইনের ব্যাখ্যা করা বা আইন বাতিল করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের থাকে না। তাই এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় আইন প্রণয়ন ও সংশোধন যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি সহজ। 

৬. আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুবিধা :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একটি মাত্র সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকায় আন্তর্জাতিক চুক্তি , সন্ধি ইত্যাদি সম্পাদনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা হয়। এ সকল চুক্তি সম্পাদন করতে অঙ্গরাজ্যগুলি থেকে কোনো বাধা প্রদান সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকার নিজস্ব প্রয়োজন , নীতি ও সুবিধা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং চুক্তি,  সন্ধি ইত্যাদি সহজেই সম্পাদন করতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিধা :- অর্থনৈতিক বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রেও এককেন্দ্রিক সরকার কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। সমগ্র রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতি এবং তা রূপায়ণ ,  অঙ্গরাজ্যের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং তা প্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র একটি সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা থাকেনা। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে নীতি গ্রহণ করে তা সহজেই প্রণয়ন করতে পারে। 

৮. বিচার বিভাগ কর্তৃক আইন ও শাসন বিভাগের কাজে বাধা প্রদান সম্ভব নয় :-  এককেন্দ্রিক সরকার গুলিতে বিচার বিভাগের কোনো প্রাধান্য থাকে না। ফলে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন , প্রশাসনিক দিক এবং নীতি প্রণয়ন এবং তার রূপায়নের ক্ষেত্রে এককেন্দ্রিক সরকারের কার্যাবলীতে বিচার বিভাগ কোনো প্রকার বাধা প্রদান করতে পারে না। ফলে নীতি গ্রহণ ও রুপায়ন অধিকতর দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতিতে সংঘটিত হয়। 

৯. স্বল্প - ব্যয় :- অধ্যাপক গার্ণার এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের স্বল্প - ব্যয় সম্পন্ন হওয়ার কথা বলেছেন। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে একটি মাত্র সরকার সমগ্র দেশে শাসন পরিচালনা করে। ফলে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম হয়। 

১০. আপাতকালীন পরিস্থিতির পক্ষে সহায়ক :- রাষ্ট্রকে অনেক সময় যুদ্ধ , গণবিদ্রোহ , অর্থনৈতিক অচলাবস্থা , বিচ্ছিন্নতাবাদ , সন্ত্রাসবাদ - ইত্যাদি আপৎকালীন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই সকল পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের তুলনায় এককেন্দ্রিক সরকার অনেক বেশি কার্যকরী হয়। 

এককেন্দ্রিক সরকারের দোষ বা অসুবিধাসমূহ :- 


১. এককেন্দ্রিক সরকারের সমস্ত ক্ষমতা একটিমাত্র সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা থাকে ; আঞ্চলিক সরকারগুলির কোনো গুরুত্ব থাকেনা। আঞ্চলিক সরকারগুলি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়। এই ব্যবস্থা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন এবং গণতন্ত্রের পক্ষে উপযুক্ত নয়। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে স্থানীয় সমস্যাগুলির পরিবর্তে বৃহৎ জাতীয় সমস্যাগুলি প্রাধান্য পায়। ফলে স্থানীয় সমস্যা ও প্রয়োজনগুলি সর্বদা উপেক্ষিত থাকে। 

২. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় আইনসভার হাতে ন্যস্ত থাকে এবং এক্ষেত্রে একমাত্র কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা থাকে। কিন্তু একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক - ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈচিত্র ও বিভিন্নতা থাকে।  এই বৈচিত্রময় পরিমন্ডলে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয়ভাবে আইন প্রণয়ন করলে তা সমগ্র দেশের পক্ষে কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বা সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।  কোন কারণে যদি এককেন্দ্রিক সরকার সেই সংকট প্রতিহত করতে না পারে বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে বিশেষ সমস্যামূলক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সুতরাং আপদকালীন পরিস্থিতির পক্ষে এককেন্দ্রিক সরকার কার্যকর - তা কিন্তু নয়। 

৪. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আঞ্চলিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়া , আঞ্চলিক সমস্যাগুলির প্রতি নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে বা প্রদেশগুলোতে আঞ্চলিকতাবাদ , প্রাদেশিকতা , বিচ্ছিন্নতাবাদ -  ইত্যাদি প্রাধান্য অর্জন করে। এর সাথে সাথে যুক্ত হয় কেন্দ্র বিরোধী মনোভাব। 

৫. বৃহৎ রাষ্ট্রের পক্ষে এককেন্দ্রিক সরকার কোনভাবেই উপযুক্ত নয়। একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ কোনটিই সঠিক নৈপুণ্যের সাথে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সেজন্য এককেন্দ্রিক সরকার বৃহদায়তন রাষ্ট্রের কখনো কার্যকরী হয় না। 

৬. অর্থনৈতিক দিক দিয়েও এককেন্দ্রিক সরকার কাম্য নয়। কেননা একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা থাকতে পারে। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রের সকল অংশের সমস্ত রকম অর্থনৈতিক সুবিধা - অসুবিধার কথা বিচার-বিবেচনা করে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তৈরির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. এককেন্দ্রিক সরকার যেহেতু নমনীয় হয় সেহেতু এককেন্দ্রিক সরকারে অধিষ্ঠিত শাসক দল নিজেদের সুবিধামতো ও নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। এর ফলে স্বৈরাচার ও দলীয় স্বেচ্ছাচার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে এবং রাষ্ট্র একনায়কতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। 

৮. এককেন্দ্রিক সরকার কখনোই রাজনৈতিক চেতনা এবং কার্যকলাপে জনসাধারণকে উৎসাহ প্রদান করতে পারে না। একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক জীবন সীমাবদ্ধ। সেখানে জনসাধারণের অংশগ্রহণ কম। ফলে জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনা এবং প্রশাসনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের অংশগ্রহণের বিশেষ ঘাটতি দেখা যায়। 

৯. এককেন্দ্রিক সরকারগুলি সম্পূর্ণভাবে আমলানির্ভর হয়। এর ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ,  দীর্ঘসূত্রিতা - ইত্যাদি প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এবং তার সাথে সাথে আমলাদের ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকলে শাসনব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক হয়ে ওঠে এবং জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ স্থানীয় সমস্যা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে তার সমাধান ঘটতে পারে না। 

১০. এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই অগণতান্ত্রিক - এমন অভিযোগ করা হয়। কেননা , এখানে শাসন ক্ষমতার একমাত্র উৎস হল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের ইচ্ছা ও স্বার্থ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। আঞ্চলিক সরকার বা অন্যান্য দলগুলির কোন স্বাধীন সত্তা বা অস্তিত্ব থাকে না। এখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয় ও প্রশাসনে সাধারণের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। ফলে এককেন্দ্রিক সরকারকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
    

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে ? এককেন্দ্রিক সরকারের বিভিন্ন বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

এককেন্দ্রিক সরকারের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট :- 

এককেন্দ্রিক সরকারের ধারণা ও বৈশিষ্ট :- 

Definition and features of Unitary Government.  ( In Bengali ) 



শাসন ক্ষমতা বন্টনের ভিত্তিতে সরকারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ; যথা - এককেন্দ্রিক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার। এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা হল এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা যেখানে সরকারের বা রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা কেবলমাত্র একটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এখানে স্বীকৃত নয়। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় রাজ্য সরকারগুলির অস্তিত্ব থাকলেও তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ করে থাকে এবং তাদের অস্তিত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। মূলত তাদের ক্ষমতার উৎস হল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে তাদের সমস্ত কার্যাবলী পরিচালিত হয়। অর্থাৎ , এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংবিধানগতভাবে ক্ষমতা বন্টনের কোন ব্যবস্থা থাকে না , এখানে সমস্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

অধ্যাপক গার্ণারের মতে , এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবাস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতা বন্টনের কোন ব্যবস্থা থাকেনা। এককেন্দ্রিক সরকারে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকারের প্রাধান্য বা স্বাতন্ত্র থাকে না। শুধুমাত্র প্রশাসনিক কার্যাবলী পরিচালনার সুবিধার জন্য অঙ্গরাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক আঞ্চলিক সরকার গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। 

এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বর্তমান যেসকল রাষ্ট্রগুলিতে প্রচলিত সেগুলি হল গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স ,  নিউজিল্যান্ড , ইতালি , রিপাবলিক অফ চায়না , জাপান , বাংলাদেশ , স্পেন , পর্তুগাল - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সকল ক্ষমতা কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বা একটিমাত্র সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। এখানে অঙ্গরাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। যদিও প্রশাসনিক পরিচালনার সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের প্রয়োজনমতো আঞ্চলিক সরকার গঠন করে , তবে এই সকল আঞ্চলিক সরকারগুলির নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকেনা। তাদেরকে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অনুগত হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অর্থাৎ তারা সমগ্র দিক দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ করে থাকে। সুতরাং এককেন্দ্রিক সরকারগুলিতে রাষ্ট্রের যাবতীয় দায়িত্ব , ক্ষমতা , নীতি এবং সরকার পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। 

২. কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় আইনসভার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে এখানে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য থাকে। আইন প্রণয়ন , আইন সংশোধন - ইত্যাদি ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের আইনসভা গুলির কোন ক্ষমতায় থাকে না। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের প্রাধান্যের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকে। অধ্যাপক ডাইসি কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্যকে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সাংবিধানিক বৈশিষ্ট :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধান লিখিত এবং অলিখিত উভয়ই হতে পারে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো  বৈশিষ্ট্য বা নিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। যেমন গণপ্রজাতন্ত্রী চীন , ইতালি , নিউজিল্যান্ড - প্রভৃতি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে লিখিত সংবিধানের অস্তিত্ব দেখা যায়। কিন্তু অপরদিকে ইংল্যান্ডের সংবিধান অলিখিত। সুতরাং এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধান লিখিত না অলিখিত হবে - এ বিষয়ে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। 

৪. সংবিধান সুপরিবর্তনীয়  :- যে সকল রাষ্ট্রে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে সেই সকল রাষ্ট্রের সংবিধান সাধারণত সুপরিবর্তনীয় হয়। কেননা এই ধরনের রাষ্ট্রে যেহেতু সরকারের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র সরকারের হাতে বা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নিহিত থাকে সেহেতু আইনসভাতে শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রাধান্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করা হয়। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের  জন্য কোনো বিশেষ বা জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। এজন্য এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র লির সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি সুপরিবর্তনীয়। 

৫. সংবিধানের প্রাধান্যহীনতা :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য থাকে না। যেহেতু এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় কেবলমাত্র একটি সরকারের বা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকে সেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধের কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। কেননা এখানে রাজ্য সরকারগুলি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন হয়ে থাকে। অঙ্গরাজ্যগুলির সরকারের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়। তাই এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধের কোন সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের প্রাধান্য তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার গুলিতে সাংবিধানিক ক্ষমতা বন্টিত থাকে। কিন্তু যেহেতু এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত থাকে না , সমস্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে -  সেহেতু এখানে সংবিধান গুরুত্বহীন বলে বিবেচিত হয়। 

৬. সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি :- এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ বা জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। এখানে সহজ-সরল পদ্ধতির মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন বা আইন প্রণয়ন করা হয়।  বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে যেমন সংবিধান সংশোধন বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন সভার মোট সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হয় , সেখানে এককেন্দ্রিক আইনসভাগুলিতে সংবিধান সংশোধন ও আইন প্রবর্তনের জন্য শুধুমাত্র সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. বিচার বিভাগের প্রাধান্যহীনতা :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে বিচার বিভাগের কোনো ভূমিকা থাকে না। কেননা ,এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আদালতের তুলনায় বিচার বিভাগের ক্ষমতা এবং গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে এই সকল রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কার্যত শাসন বিভাগের বশ্যতা স্বীকার করে কার্য পরিচালনা করে থাকে। 

৮. সার্বভৌম শাসন ও আইন বিভাগ :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে যেহেতু সরকারের সকল ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে সেহেতু সার্বভৌমিকতার প্রশ্নে এককেন্দ্রিক সরকারগুলি সম্পূর্ণ সার্বভৌম। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেনা। কোনো আঞ্চলিক সংস্থা , আঞ্চলিক সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান এককেন্দ্রিক সরকারগুলিতে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উল্লেখ করা যেতে পারে। ইংল্যান্ডের  পার্লামেন্ট আইনগত দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে সার্বভৌম। 

৯. সরকারের প্রকৃতি :- এককেন্দ্রিক সরকারগুলি রাষ্ট্রপতি শাসিত ও সংসদীয় বা মন্ত্রিসভা পরিচালিত - উভয়ই হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বাঁধাধরা নিয়ম নেই। যেমন ফ্রান্সের সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত কিন্তু অপরপক্ষে ইংল্যান্ডের সরকার মন্ত্রিসভা পরিচালিত। 

১০. এক নাগরিকত্বের স্বীকৃতি :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সাধারণত এক নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে অঙ্গরাজ্যগুলির জন্য পৃথক কোনো নাগরিকত্বের স্বীকৃতির ব্যবস্থা থাকে না। যেমন গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স , নিউজিল্যান্ড - ইত্যাদি দেশে আঞ্চলিক সরকারের অধীনস্থ অধিবাসীদের জন্য আলাদা করে কোনো নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নেই।  কিন্তু এ বিষয়ে অবশ্যই ভারতের শাসন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও ভারতে এক নাগরিকত্ব স্বীকৃত। কিন্তু সাধারণত এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে এক নাগরিকত্ব স্বীকৃত থাকে। 

১১. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতি :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তাই এই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। যদিও অঙ্গরাজ্যগুলিতে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ; কিন্তু সেই সকল প্রাদেশিক সরকারগুলি প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী এবং তাদের নির্দেশিত দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্য নিয়েই। সুতরাং এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারগুলিকে ততটুকুই ক্ষমতা প্রদান করে থাকে যতটুকু ক্ষমতা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখানে অঙ্গরাজ্যগুলি কোনো ভাবেই সার্বভৌম ক্ষমতার দাবিদার নয়। 

এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে ? এককেন্দ্রিক সরকারের বিভিন্ন বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 


এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ড ও ইউরোপে তার প্রতিক্রিয়া।   

Execution of Louis XVI and reaction in Europe. ( In Bengali ) 



ফরাসি বিপ্লবের অগ্রগতি : ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ড। 


ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই কর্তৃক স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান এবং তার পর থেকে ফরাসি বিপ্লব ছিল ঘটনাবহুল। ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতনের পর ফ্রান্সের প্রশাসন জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে। জাতীয় সম্মেলনে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল - জ্যাকোবিন ও জিরন্ডিস্ট। জাতীয় সম্মেলনে জিরন্ডিস্টদের সংখ্যাধিক্য ছিল ও প্রদেশগুলিতে তাদেরই প্রভাব ছিল। কিন্তু তা স্বত্তেও জিরন্ডিস্টরা ছিল দুর্বল। যাইহোক , জ্যাকোবিনরা রাজার প্রাণদন্ডের পক্ষপাতি ছিলেন কিন্তু জিরন্ডিস্টরা রাজার প্রাণদন্ডের বিষয়টি গণভোটের উপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ষোড়শ লুইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ :- 
ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের বিরুদ্ধে মূল কয়েকটি অভিযোগ হল - 
১. ফ্রান্স থেকে যেসকল রাজপন্থী অভিজাতগণ বিদেশে পলায়ন করেছিলেন , ষোড়শ লুই সেই সকল পলাতক রাজপন্থী অভিজাতদের সহায়তা করেছিলেন। 
২. তৃতীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে জাতীয় সম্মেলন কর্তৃক যে সংবিধান রচিত হয় - ষোড়শ লুই সেই নতুন সংবিধান বাতিল করার চেষ্টা করেন। 
৩. ফরাসি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারসাধনে ষোড়শ লুই সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলেন এবং এই সুযোগের ফরাসি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে অভিজাতরা তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর তীব্র অত্যাচার ও শোষণ চালিয়েছিল। 
৪. ষোড়শ লুই ইউরোপের অন্যান্য রাজশক্তিগুলির সাথে মিলিত হয়ে বিপ্লব ধ্বংস করার প্রচেষ্টা করছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ষোড়শ লুইয়ের বিচার :- 
জিরন্ডিস্ট দল রাজার প্রাণদন্ডের পক্ষপাতি ছিলেন না , তাঁরা বিষয়টিকে গণভোটের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু জ্যাকোবিনরা রাজার প্রাণদন্ডের পক্ষে প্রবলভাবে সওয়াল করেন। এরপর ন্যাশনাল কনভেনশন ষোড়শ লুইকে বৈদেশিক শক্তির সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাঁকে '' টেম্পল '' কারাগারে বন্দী করে। 

ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ড :- 
এরপর জাতীয় সম্মেলনে ষোড়শ লুইয়ের শাস্তি প্রসঙ্গে জ্যাকোবিন ও জিরন্ডিস্টদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিনরা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ডের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে অনড় ছিলেন। এরপর জাতীয় মহাসভায় প্রতিনিধিদের মধ্যে ভোটের ভিত্তিতে রাজার প্রাণদন্ডের বিষয়টি স্থির করা হয়। শেষ পর্যন্ত সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে জানুয়ারী গিলোটিনের আঘাতে ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের শিরচ্ছেদ করা হয়। 

ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ডের প্রতিক্রিয়া :- 

১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে জানুয়ারী ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ডের ঘটনা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে এক আতঙ্কময় পরিবেশের জন্ম দেয়। ইউরোপের রাজপন্থী রাষ্ট্রগুলিতে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

১. ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ডের সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবপন্থীরা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করতে থাকে। ফলে ইউরোপের রাজপন্থী রাষ্ট্রগুলিতে ভীতির সঞ্চার হয়। 

২. ইউরোপের রাজতন্ত্রপ্রিয় রাষ্ট্রগুলি অনুভব করে যে অবিলম্বে ফ্রান্সের বিপ্লব ধ্বংস করতে না পারলে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। 

৩. এই ধারণার বশবর্তী হয়ে ইউরোপের রাজপন্থী রাষ্ট্রগুলি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রথম রাষ্ট্রজোট গঠন করে ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। 

৪. ইংল্যান্ড , হল্যান্ড , অস্ট্রিয়া , প্রাশিয়া , সার্ডিনিয়া , স্পেন - ইত্যাদি রাজতন্ত্রপ্রিয় রাষ্ট্রগুলি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শক্তিজোট গঠন করে। 

৫. ফ্রান্স এই শক্তিজোটকে আক্রমণ করলে তারা শোচনীয়ভাবে শক্তিজোটের নিকট পরাজিত হয়। 

৬. বৈদেশিক ক্ষেত্রে শোচনীয় পরাজয়ের পর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও ফ্রান্সকে চরম বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয়। রাজতন্ত্রের সমর্থকরা প্রবলভাবে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির বিরোধিতা করতে থাকলে ফ্রান্সে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। 

এই অবস্থায় জ্যাকোবিন দলের নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেন বিপ্লব ও ফ্রান্সে সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে অবিলম্বে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সর্বত্র সন্ত্রাসের শাসন জারি করা প্রয়োজন। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন শুরু হয় - যা ফ্রান্স তথা সমগ্র ইউরোপের ইতিহাসে এক নক্কারজনক অধ্যায়।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বাস্তিল দুর্গের পতন ও তার গুরুত্ব :- 

The fall of Bastille and its importance ( In Bengali ) .



বাস্তিল দুর্গের পতন :- 


প্রেক্ষাপট :- বাস্তিল দুর্গের পতন ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাস্তিল দুর্গের পতনের পূর্বেকার ঘটনাগুলি ছিল অত্যন্ত গতিময় ও বিপ্লবের পক্ষে অনুকূল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে জুন টেনিসকোর্টের শপথের পর তৃতীয় সম্প্রদায় প্রথম দুই সম্প্রদায় অর্থাৎ যাজক ও অভিজাতদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে ফরাসি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ষোড়শ লুই ২৩ শে জুন এক ঘোষণাপত্রের দ্বারা জনগণের কিছু কিছু অধিকার স্বীকার করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

জাতীয় পরিষদে তৃতীয় শ্রেণীর জয়লাভ :- তবে ষোড়শ লুই জাতীয় পরিষদকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেন , প্রতিনিধি সভার তিনটি শ্রেণী অর্থাৎ যাজক , অভিজাত ও তৃতীয় সম্প্রদায়কে পৃথক পৃথকভাবে মিলিত হওয়ার নির্দেশ জারী করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় সম্প্রদায় বা মধ্যবিত্তরা প্রবল বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে , জাতীয় পরিষদে তৃতীয় শ্রেণী সফলতালাভ করে এবং অবশেষে ২৭ শে জুন তিন শ্রেণীর একত্রে যোগদান স্বীকার করে নেন। 

সংকটময় পরিস্থিতি  :- এরপর থেকে প্যারিসে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কৃষির অবনতি , খাদ্যের সংকট , আর্থিক সংকট , তীব্র শীত - ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের সকল ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ দলে দলে প্যারিস নগরীতে জমায়েত করতে শুরু করে। ফলে সমগ্র প্যারিস ধরে প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়। আন্দোলনকারী মানুষেরা প্যারিসের রুটির দোকান ও কলকারখানাগুলিতে আক্রমণ করে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

প্যারিসের বিদ্রোহ :- এরপর রাজা ষোড়শ লুই প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। ষোড়শ লুই জার্মান , সুইস - ইত্যাদি বিদেশি সেনা সমবেত করলে আন্দোলনকারী জনগণ তীব্র প্রতিরোধ শুরু করে। শ্রমিক , কৃষক ও মজুরেরা খাদ্যের দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ইতিমধ্যে ষোড়শ লুই নেকারকে পদচ্যুত করলে আন্দোলনকারীর হিংস্র হয়ে ওঠে। রাজার সৈন্য বাহিনীর প্রতিরোধ করতে প্যারিসের জনগণ প্যারিসের প্রতিটি রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে। 

বাস্তিলের পতন :- প্যারিস ও প্যারিস সংলগ্ন অঞ্চলে মোট ৪০ টি শুল্ক কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন মঠগুলিতে লুঠপাঠ চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা প্যারিসের আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান ও কারখানাগুলি লুঠপাঠ করে। ইতিমধ্যে গুজব ছড়ায় যে বাস্তিল দুর্গে বহুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ আছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে প্যারিসের উত্তেজিত জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ১৪ ই জুলাই। বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে সমস্ত অস্ত্র লুঠ করা হয় , সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয় , বাস্তিল দুর্গের গভর্নর দ্যলুনে ও সকল প্রহরীদের হত্যা করা হয়। 

বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব / ঐতিহাসিক তাৎপর্য :- 


বাস্তিল দুর্গের পতন ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের পতনের সূত্রপাত হয়। বাস্তিলের পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র ফ্রান্সে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ঐতিহাসিক Goodwin বাস্তিল দুর্গের পতনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেছেন - No other single event of the Revolution had so many - sided and far - reaching results as the fall of Bastille. বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব বা ঐতিহাসিক তাৎপর্যগুলি হল - 

১. জনগণের বিক্ষোভকে বুঝতে পেরে ষোড়শ লুই পুনরায় নেকারকে অর্থমন্ত্রীপদে নিয়োগ করেন। 
২. প্যারিস থেকে সেনা অপসারণ করা হয়। 
৩. সমগ্র ফ্রান্সে বাস্তিলের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র ফ্রান্স জুড়ে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। 
৪. স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতন ছিল রাজতন্ত্রের পতনের পূর্বাভাস। 
৫. জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি প্রদান করতে ষোড়শ লুই বাধ্য হন। 
৬. রাজদরবারে অভিজাতদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিনষ্ট হয়। 
৭. কৃষকশ্রেণীর প্রবল বিক্ষোভের মুখে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটে। 
৮. প্যারিসের জনগণ প্যারিসে পৌর বিপ্লব শুরু করেন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। 
৯. একদল অভিজাত Countd' Artois এর নেতৃত্বে দেশত্যাগ করেন। 
১০. বিশ্বের সর্বত্র সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী প্রচারিত হয়। 

ঐতিহাসিক গুডউইন বলেছেন - '' বাস্তিলের পতনের ঘটনা সমগ্র বিশ্বে স্বাধীনতার উন্মেষকাল হিসেবে চিহ্নিত। ''   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ফরাসি বিপ্লবের অনিবার্যতা বিচার।  

ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ফ্রান্সেই কেন প্রথম রাজতন্ত্র বিরোধী বিপ্লব সংগঠিত হয় ? 

ফরাসি বিপ্লব কি অনিবার্য ছিল ? 

Whether the French Revolution was inevitable ? ( In Bengali ) 

Why was the first anti-monarchy revolution held in France ? ( In Bengali ) 





১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব অপরাপর ইউরোপীয় রাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের নিকট রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকেই সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বৈপ্লবিক পরিস্থিতি তৈরী হয়। তৎকালীন ফ্রান্সের প্রচলিত মধ্যযুগীয় , অচল , পরিবর্তনহীন সমাজ ব্যবস্থায় সমগ্র অষ্টাদশ শতক ধরে বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় পটভূমি রচিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক ফিশার - এর মত অনুসারে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের দোষ ত্রুটিগুলি দূর করতে রাজতন্ত্র চরমভাবে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ফিশারের ধারণা সম্পর্ণরূপে সঠিক নয় ; কেননা , পরিস্থিতি এমন গতিপ্রাপ্ত হয়েছিল যে রাজতন্ত্র সমস্ত ত্রুটিগুলি দূর করলেও বিপ্লব অনিবার্য ছিল। ঐতিহাসিক স্টিফেনস মনে করেন দার্শনিকদের ভূমিকা ফরাসি বিপ্লব অনিবার্য করে তোলে। ঐতিহাসিক Hearnshaw এর মত অনুসারে , ফরাসি বিপ্লবের সংগঠনে রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , সামাজিক কারণ অপেক্ষা অনেক বেশি দায়ী ছিল মুষ্টিমেয় মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগণ দার্শনিকদের রচনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শাসন ক্ষমতা হস্তগত করার  আকাঙ্খা। এই কারণেই ফ্রান্সেই সর্বপ্রথম রাজতন্ত্রবিরোধী বিরোধী বিপ্লব সংগঠিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

প্রথমতঃ ফ্রান্সের তৎকালীন শ্রেণীকে দুটি অংশে ভাগ করা যেতে পারে - একটি হল ক্ষমতাভোগী শ্রেণী এবং অপরটি হল কার্যকরী শ্রেণী। এই কার্যকরী শ্রেণী হলেন তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এই সকল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা শিক্ষা , সংস্কৃতি , অর্থনীতি , রাজনৈতিক চেতনা - ইত্যাদি সকল দিক দিয়েই যাজক ও অভিজাতদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা মর্যাদা ও ক্ষমতা লাভের আকাঙ্খা নিয়ে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে বহুদিন ধরে ক্ষমতা দখল করে থাকা যাজক ও অভিজাতদের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণীর ক্ষমতা প্রাপ্তির আকাঙ্খা ফরাসি বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে। 

দ্বিতীয়তঃ ফ্রান্সে রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র ছিল পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাই রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা শাসনযন্ত্র সর্বদা অভিজাতদের স্বার্থে পরিচালিত হত। এই দুই শ্রেণীর সম্মিলিত স্বার্থের প্রভাবে তৃতীয় শ্রেণীর স্বার্থ বিশেষভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছিল। রাজতন্ত্রের পক্ষে অভিজাতদের স্বার্থ উপেক্ষা করে তৃতীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ সুরক্ষিত করা সম্ভব ছিল না। তাই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নিজেদের রাজনৈতিক ,  সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার তাগিদে অভিজাত ও রাজতন্ত্রের বিরোধিতা শুরু করে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

তৃতীয়তঃ ফরাসি শাসনযন্ত্র দীর্ঘকাল যাবৎ সংস্কারবিহীন অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছিল। ফ্রান্সের কৃষক ও সাধারণ মানুষের সমস্যা ছিল বহুবিধ এবং তাঁদের এই সমস্যাগুলি সম্পর্কে শাসন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। ফলে একদিকে গ্রামীণ ক্ষেত্রে কৃষক শ্রেণীর অসন্তোষ এবং অন্যদিকে শহরে শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের অসন্তোষ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিপ্লবের জন্ম দেয়। 

চতুর্থতঃ সামন্ত শ্রেণী ও রাজতন্ত্রের স্বার্থ ছিল পরস্পর অভিন্ন। রাজা ছিলেন সামন্ততান্ত্রিক পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তর। তাই রাজার পক্ষে সামন্ত শ্রেণীর বিশেষ অধিকারগুলি ক্ষুন্ন করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব ছিল না। ফলে সামন্ত শ্রেণীর বিশেষ অধিকার লোপ করা হলেই বিপ্লব এড়ানো যেত - এ ধারণা সঠিক নয়। কেননা , রাজার নিজের স্বার্থের জন্য রাজাকে সামন্তদের স্বার্থ রক্ষা করতে হত। তাই বিপ্লব ছিল অনিবার্য। 

পঞ্চমতঃ যেহেতু সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক ছিল তাই গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষকদের ক্ষোভ রাজতন্ত্রের উপর পর্যবসিত হয়। কাজেই শুধুমাত্র সামন্তদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সম্ভব ছিল না। কৃষক , শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রাজতন্ত্র প্রশমিত করতে না পারার কারণে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিপ্লব ছিল অনিবার্য। 

ষষ্ঠতঃ ফরাসি শাসনতন্ত্র ছিল জীর্ণ ও পুরাতনপন্থী। তাই ক্ষয় ধরা , সংস্কারবিহীন শাসন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না করে প্রগতিশীল সংস্কার সাধন ছিল অসম্ভব। তাই বিপ্লবের দ্বারা পুরাতনতন্ত্রের পতন অনিবার্য ছিল। 

সপ্তমতঃ ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় ফ্রান্সের কৃষকেরা ছিল শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তাই তারা খুব সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের দুর্দশার কারণ হিসেবে সামন্ত ও রাজতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। করভারে জর্জরিত কৃষকদের নিকট রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। 

অষ্টমতঃ ফরাসি বিপ্লবে ফরাসি দার্শনিকদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির তুলনায় ফ্রান্সের দার্শনিকগণ তাঁদের প্রগতিশীল ভাবধারা প্রকাশ করতে সক্ষম হন। তাঁরা তাঁদের তীব্র লেখনীর সাহায্যে ফরাসি সমাজে প্রচলিত অনাচার ও অব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে ফরাসি জনসাধারণকে সচেতন করেন। ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ফ্রান্সেই প্রথম রাজতন্ত্র বিরোধী বিপ্লব সংগঠিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , তৎকালীন ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে বিপ্লবকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিলনা। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেসকল উপাদানগুলি বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে - সেসকল উপাদানগুলি তৎকালীন ইউরোপে ফ্রান্স ব্যতীত অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রকাশ পায়নি। ঐতিহাসিক Mignet বলেছেন - " The Revolution was the inevitable outcome of a process by which the Third Estate had rises in wealth and intelligence.'' 

ঐতিহাসিক Ketelbey অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে তৎকালীন ফ্রান্সের দুর্বল ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র , দুর্নীতিগ্রস্থ গীর্জা ও যাজক সম্প্রদায় , অভিজাতদের কায়েমী স্বার্থ , শুন্য রাজকোষ , উৎপীড়িত কৃষকশ্রেণী , ক্ষমতাহীন ও অধিকারহীন তৃতীয় শ্রেণী , আর্থিক - প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা - ইত্যাদি একাধিক বিষয় ফ্রান্সকে অনিবার্যভাবে বিপ্লবের মুখে ঠেলে দেয়।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো           


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

টেনিস কোর্টের শপথ ২০ শে জুন ১৭৮৯  

Tennis Court Oath 20th June 1789 ( In Bengali )




টেনিস কোর্টের শপথ : পটভূমি :- 

তীব্র আর্থিক সংকট মোচনের জন্য এবং অভিজাতদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য হন। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই মে প্রায় ১৭৫ বছর পর স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করা হয়। স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন শুরু হলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিরা প্যাট্রিয়ট দল গঠন করেন। স্টেটস জেনারেলের বিধি অনুসারে , যাজক , অভিজাত ও তৃতীয় শ্রেণী - এই তিন শ্রেণীর সদস্যগণ সামগ্রিকভাবে একটি করে ভোট প্রদান করতে পারতো। কিন্তু প্রথম দুই শ্রেণী ; অর্থাৎ যাজক ও অভিজাতগণ নিজেদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় সর্বদা তৃতীয় শ্রেণীর বিপক্ষে অবস্থান করত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

থার্ড এস্টেট বা মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের দাবী :- 
স্টেটস জেনারেলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১২১৪। এর মধ্যে যাজক ৩০৮ , অভিজাত ২৮৫ এবং তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল ৬২১। তৃতীয় শ্রেণীর সদস্যগণ শিক্ষা , সংস্কৃতি , আর্থিক অবস্থা , রাজনৈতিক সচেতনতা - ইত্যাদি সব দিক দিয়ে অপর দুই শ্রেণী থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু তা স্বত্তেও তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিদের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। তাই তাঁদের দাবিগুলি ছিল - 
(i) স্টেটস জেনারেলে মাথাপিছু ভোটের দাবী। 
(ii) শাসনতন্ত্র রচনার অধিকার। 
(iii) স্টেটস জেনারেলকে জাতীয় পরিষদ হিসেবে ঘোষণার দাবী। 

জাতীয় পরিষদ গঠনের ঘোষণা :- 
প্রথম দুই শ্রেণী ; যথা যাজক ও অভিজাতগণ নিজেদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা স্টেটস জেনারেলে পূর্বতন ভোট পদ্ধতি অনুসারে পৃথকভাবে তিন শ্রেণীর ভোটাধিকারের দাবী করে। কিন্তু উদারপন্থী অভিজাত লাফায়েৎ - এর নেতৃত্বে নিম্নযাজকগণ তৃতীয় শ্রেণীর দাবীকে সমর্থন করে। স্টেটস জেনারেলের এই সংকট দূর করতে ষোড়শ লুই ব্যর্থ হন এবং তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিগণ নিজেদেরকে জাতীয় পরিষদ বলে ঘোষণা করে এবং Bailey জাতীয় পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। 

ষোড়শ লুই কর্তৃক তৃতীয় শ্রেণীর জাতীয় পরিষদকে বেআইনি ঘোষণা :- 
ষোড়শ লুই তৃতীয় শ্রেণী কর্তৃক সংঘঠিত জাতীয় পরিষদকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেন এবং ২০ জুন অধিবেশন কক্ষ তালাবন্ধ করে দেন যাতে তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিরা সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। একদিকে যেমন স্টেটস জেনারেলের প্রতিনিধিদের কোনোপ্রকার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অভিজ্ঞতা ছিলনা এবং অন্যদিকে সকলের সাথে সদ্ভাব রক্ষা করে জাতীয় সমস্যা সমাধানে ষোড়শ লুই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ছিলেন। 

টেনিস কোর্টের শপথ ২০ শে জুন ১৭৮৯ :- 


এই ঘটনার প্রতিবাদে তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিগণ Mirabeou এর নেতৃত্বে নিকটবর্তী টেনিসকোর্ট ময়দানে সমবেত হন এবং এখানে তাঁরা শপথ গ্রহণ করেন যে , যতদিন পর্যন্ত তাঁরা ফরাসি জাতির জন্য একটি শাসনতন্ত্র রচনা করতে না পারছেন ততদিন পর্যন্ত তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে অধিবেশন পরিচালনা করবেন। এই টেনিস কোর্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রথম দুই শ্রেণীর অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে এবং জাতীয় পরিষদ সর্বাত্মকভাবে রাজতন্ত্রের বিরোধিতা শুরু করে। 

২৭ শে জুন : মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দাবীর স্বীকৃতি :- 
২০ শে জুন টেনিস কোর্ট শপথ ঘোষণার পর ষোড়শ লুই যাজক , অভিজাত ও তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিদের আলোচনা ও ভোট প্রদানের পূর্বতন প্রথা বহাল রাখলে তৃতীয় শ্রেণীর সাথে রাজার আলোচনার পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়। কিন্তু অক্ষম ষোড়শ লুই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। অবশেষে ২৭ শে জুন ষোড়শ লুই তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হন। তৃতীয় শ্রেণীর প্রধান দুটি দাবী - জাতীয় পরিষদে সকলের একত্র আলোচনা ও মাথাপিছু ভোটদানের অধিকার স্বীকৃত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates