বাস্তিল দুর্গের পতন ও তার গুরুত্ব :-

by - February 08, 2022

বাস্তিল দুর্গের পতন ও তার গুরুত্ব :- 

The fall of Bastille and its importance ( In Bengali ) .



বাস্তিল দুর্গের পতন :- 


প্রেক্ষাপট :- বাস্তিল দুর্গের পতন ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাস্তিল দুর্গের পতনের পূর্বেকার ঘটনাগুলি ছিল অত্যন্ত গতিময় ও বিপ্লবের পক্ষে অনুকূল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে জুন টেনিসকোর্টের শপথের পর তৃতীয় সম্প্রদায় প্রথম দুই সম্প্রদায় অর্থাৎ যাজক ও অভিজাতদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে ফরাসি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ষোড়শ লুই ২৩ শে জুন এক ঘোষণাপত্রের দ্বারা জনগণের কিছু কিছু অধিকার স্বীকার করেন। 


জাতীয় পরিষদে তৃতীয় শ্রেণীর জয়লাভ :- তবে ষোড়শ লুই জাতীয় পরিষদকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেন , প্রতিনিধি সভার তিনটি শ্রেণী অর্থাৎ যাজক , অভিজাত ও তৃতীয় সম্প্রদায়কে পৃথক পৃথকভাবে মিলিত হওয়ার নির্দেশ জারী করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় সম্প্রদায় বা মধ্যবিত্তরা প্রবল বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে , জাতীয় পরিষদে তৃতীয় শ্রেণী সফলতালাভ করে এবং অবশেষে ২৭ শে জুন তিন শ্রেণীর একত্রে যোগদান স্বীকার করে নেন। 

সংকটময় পরিস্থিতি  :- এরপর থেকে প্যারিসে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কৃষির অবনতি , খাদ্যের সংকট , আর্থিক সংকট , তীব্র শীত - ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের সকল ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ দলে দলে প্যারিস নগরীতে জমায়েত করতে শুরু করে। ফলে সমগ্র প্যারিস ধরে প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়। আন্দোলনকারী মানুষেরা প্যারিসের রুটির দোকান ও কলকারখানাগুলিতে আক্রমণ করে।     


প্যারিসের বিদ্রোহ :- এরপর রাজা ষোড়শ লুই প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। ষোড়শ লুই জার্মান , সুইস - ইত্যাদি বিদেশি সেনা সমবেত করলে আন্দোলনকারী জনগণ তীব্র প্রতিরোধ শুরু করে। শ্রমিক , কৃষক ও মজুরেরা খাদ্যের দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ইতিমধ্যে ষোড়শ লুই নেকারকে পদচ্যুত করলে আন্দোলনকারীর হিংস্র হয়ে ওঠে। রাজার সৈন্য বাহিনীর প্রতিরোধ করতে প্যারিসের জনগণ প্যারিসের প্রতিটি রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে। 

বাস্তিলের পতন :- প্যারিস ও প্যারিস সংলগ্ন অঞ্চলে মোট ৪০ টি শুল্ক কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়। বিভিন্ন মঠগুলিতে লুঠপাঠ চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা প্যারিসের আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান ও কারখানাগুলি লুঠপাঠ করে। ইতিমধ্যে গুজব ছড়ায় যে বাস্তিল দুর্গে বহুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ আছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে প্যারিসের উত্তেজিত জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ১৪ ই জুলাই। বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে সমস্ত অস্ত্র লুঠ করা হয় , সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয় , বাস্তিল দুর্গের গভর্নর দ্যলুনে ও সকল প্রহরীদের হত্যা করা হয়। 

বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব / ঐতিহাসিক তাৎপর্য :- 


বাস্তিল দুর্গের পতন ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের পতনের সূত্রপাত হয়। বাস্তিলের পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র ফ্রান্সে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ঐতিহাসিক Goodwin বাস্তিল দুর্গের পতনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেছেন - No other single event of the Revolution had so many - sided and far - reaching results as the fall of Bastille. বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব বা ঐতিহাসিক তাৎপর্যগুলি হল - 

১. জনগণের বিক্ষোভকে বুঝতে পেরে ষোড়শ লুই পুনরায় নেকারকে অর্থমন্ত্রীপদে নিয়োগ করেন। 
২. প্যারিস থেকে সেনা অপসারণ করা হয়। 
৩. সমগ্র ফ্রান্সে বাস্তিলের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র ফ্রান্স জুড়ে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। 
৪. স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতন ছিল রাজতন্ত্রের পতনের পূর্বাভাস। 
৫. জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি প্রদান করতে ষোড়শ লুই বাধ্য হন। 
৬. রাজদরবারে অভিজাতদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিনষ্ট হয়। 
৭. কৃষকশ্রেণীর প্রবল বিক্ষোভের মুখে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটে। 
৮. প্যারিসের জনগণ প্যারিসে পৌর বিপ্লব শুরু করেন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। 
৯. একদল অভিজাত Countd' Artois এর নেতৃত্বে দেশত্যাগ করেন। 
১০. বিশ্বের সর্বত্র সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী প্রচারিত হয়। 

ঐতিহাসিক গুডউইন বলেছেন - '' বাস্তিলের পতনের ঘটনা সমগ্র বিশ্বে স্বাধীনতার উন্মেষকাল হিসেবে চিহ্নিত। ''   


You May Also Like

0 comments