Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখ। 

সামাজিকীকরণের বিভিন্ন উপাদান। 




সামাজিকীকরণের মাধ্যম :- 


সামাজিকীকরণ হল একটি বহুউপাদানবিশিষ্ট প্রক্রিয়া। সমাজতাত্ত্বিক কিংসলে ডেভিস সামাজিকীকরণের মাধমগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন - কর্তৃত্বমূলক ও অকর্তৃত্বমূলক। সামাজিকীকরণের কর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি হল সেইসকল মাধ্যম যেগুলি ব্যক্তি বা শিশুর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করে ; যেমন - বাবা - মা , শিক্ষক , রাষ্ট্র - ইত্যাদি। অন্যদিকে অকর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি হল সেইসকল মাধ্যম যেগুলি শিশুর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করেনা ; যেমন - বন্ধুগোষ্ঠী , গণমাধ্যম - ইত্যাদি। 
সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি নিম্নরূপ - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. পরিবার :- 
সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলির মধ্যে পরিবারকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমরূপে বিবেচিত করা হয়। প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পর থেকে তার পরিবারের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য থাকলেও পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি সাধারণতঃ সকল পরিবারে একই ধরণের হয়ে থাকে। শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার মায়ের কাছ থেকে এবং তারপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে। সামাজিক নিয়ম - কানুন , রীতিনীতি ,আদব - কায়দা , প্রথা - এই সমস্তকিছুর শিক্ষা শিশু পায় তার পরিবারের কাছ থেকেই। সেই কারণেই পরিবারকে সামাজিকীকরণের প্রধান ও প্রাথমিক মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। 

২. শিক্ষা - প্রতিষ্ঠান :- 
শিক্ষা - প্রতিষ্ঠান হল সামাজিকীকরণের একটি বিধিবদ্ধ মাধ্যম। প্রাথমিক পর্যায়ে পারিবারিক শিক্ষার পর একজন শিশু বিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করে। বিদ্যালয় জীবনে শিশু বিধিবদ্ধভাবে সামাজিকীকরণের বিষয়টিকে আয়ত্ত করে। বিদ্যালয় সামগ্রিক সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ। তাই একজন শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয় জীবনে শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীকে কেন্দ্র করে। শৃঙ্খলাবদ্ধতা , নিয়মানুবর্তিতা , শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব , নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা , পাঠের প্রতি মনোযোগী হওয়া , প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা - ইত্যাদি সামাজিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত হয় ও দক্ষ হয়ে ওঠে। এইভাবে শিক্ষা - প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটে। 

৩. গণমাধ্যম :- 
গণমাধ্যম হল সমাজের আয়না স্বরূপ। সমাজে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনা , সমাজের পরিবর্তন ও বিবর্তন , সরকারি নীতি , শিক্ষা - সাহিত্য ও সংস্কৃতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সমাজস্থ মানুষের নিকট পরিবেশন করে। শিশুর মধ্যে সামাজিকীকরণের বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলি হল - রেডিও , দূরদর্শন , সংবাদপত্র এবং আধুনিক কালে ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এইসকল গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে শিশু তার পারিপার্শ্বিক , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয় ও সেই সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। গণমাধ্যমগুলি জনমত গঠনের ক্ষেত্রে এবং চিন্তাজগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। 

৪. রাষ্ট্র - ব্যবস্থা :- 
রাষ্ট্র - ব্যবস্থার মূলতঃ তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার। এই তিন বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের উপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে ও নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ অবশ্য ইতিবাচক ; কেননা রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে নাগরিকদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলে। প্রতিটি শিশু রাষ্ট্র - ব্যবস্থার অন্তর্গত একজন সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং সমাজের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সংগঠিত হয়। এইভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা শিশুর সামাজিকীকরণে সহায়তা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. সমবয়সী ও বন্ধুগোষ্ঠী :- 
পরিবার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , রাষ্ট্র - এইসকল বিধিবদ্ধ ও কর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি ছাড়া শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে তার সমবয়সী ও বন্ধুগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজতাত্ত্বিক Piaget শিশুর সঙ্গে তার সমবয়সী বা বন্ধুগোষ্ঠীকে সর্বাধিক গণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছেন। বন্ধুগোষ্ঠীর সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক হয় সহজ - সরল ও অবাধ। শিশু এখানে খোলামেলাভাবে মিশতে পারে। বিভিন্ন কর্মে বন্ধুগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ , তাদের কথাবার্তা ইত্যাদি শিশুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

৬. ধর্মীয় রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠান :- 
প্রতিটি মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের আচার - আচরণ , সমাজ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া , চিন্তা - ভাবনা , আদর্শ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ধর্মের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। ধর্মের বিভিন্ন প্রথা , রীতিনীতি , আচার - অনুষ্ঠান , বিধি - নিয়ম , উপদেশ ও অনুশাসন ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস ( যেমন দেবতার অস্তিত্ব , পাপ - পুণ্যের বোধ - ইত্যাদি ) শিশুর সামাজিকীকরণে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। 

৭. সাহিত্য :- 
বিভিন্ন গ্রন্থ , পত্র - পত্রিকা , সাময়িক পত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে সাহিত্য প্রকাশিত হয়। প্রতিটি সাহিত্যিক রচনায় কবি বা লেখকের জীবনবোধ , দর্শন ও সমাজচেতনা প্রকাশিত হয়। এই চেতনা পাঠকের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। পাঠকবর্গ সাহিত্যপাঠের মধ্যে দিয়ে সমাজের চালচিত্র ও বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। এছাড়াও গ্রন্থপাঠ মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ সমাজে প্রচলিত ধ্যান - ধারণা , রীতি - পদ্ধতি - ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। 

৮. বিভিন্ন প্রকার আদর্শ :- 
প্রতিটি শিশু নিজ জীবনে বহু মহাপুরুষ ও কর্মবীরদের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়। মহাপুরুষদের বাণী ও কর্মবীরদের জীবনকাহিনী সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। সমাজ জীবনে প্রায় প্রতিটি শিশুই শিক্ষার মাধ্যমে বা বড়দের বলা গল্পের মাধ্যমে - এই সকল মহাপুরুষদের আদর্শ সম্পর্কে অবগত হন। এই সকল আদর্শ ব্যক্তিজীবনে ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। 

৯. কর্মজগৎ :- 
শৈশব ও শিক্ষাজীবন শেষ করে মানুষ কর্মজগতে প্রবেশ করে। এই কর্মজগৎ মানুষের সামাজিকীকরণের একটি প্রত্যক্ষ মাধ্যম। মানুষ তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হয়। কর্মক্ষেত্রে মানুষ সমাজকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে এবং সেইমত নিজেদের আচার - আচরণের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। 

পরিশেষে বলা যায় , সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি এককভাবে সামাজিকীকরণ ঘটায় না ; সবগুলি মাধ্যম সম্মিলিতভাবে ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া ঘটায় ও সামাজিকীকরণ সংগঠিত করে। সামাজিকীরণের মাধ্যমগুলি দেশ - কালভেদে মোটামুটি একই রকম থাকে। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমগুলি ব্যক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেললে ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে ; আবার এর উল্টোটাও দেখা যায়। সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি মূলতঃ ব্যক্তিজীবনে তাদের ব্যক্তিত্ব ও আচার - আচরণের গতি - প্রকৃতি নির্ধারণ করে।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   
    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তগুলি আলোচনা কর। 

গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদানগুলি আলোচনা কর। 

গণতন্ত্রকে সফল করে তুলতে কোন কোন উপাদান অপরিহার্য ? 



গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্ত। 

গণতন্ত্র হল মূলতঃ একটি উদারনৈতিক রাষ্ট্রদর্শন। যখন একটি রাষ্ট্র গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে তখন সেখানে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য কিছু শর্তাবলি প্রযুক্ত হয়। মিল , লর্ড ব্রাইস , বার্নস - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ একটি রাষ্ট্র আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য বেশ কিছু শর্তের অবতারণা করছেন। এইসকল শর্তগুলি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করে সাফল্যের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সহায়তা করে। গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তগুলি নিম্নরূপ :-

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


১. গণতান্ত্রিক চেতনা :- 
শিক্ষাব্যবস্থা , সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক চেতনা বিস্তারের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার ঘটে। নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার গণতন্ত্রকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তারের ফলে জনগণ সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং সরকারকে জনগণের স্বার্থে নীতি প্রণয়নে বাধ্য করে। 

২. গণতান্ত্রিক শিক্ষার বিস্তার :- 
রাষ্ট্রের নাগরিকগণের মধ্যে যত বেশি গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রসার ঘটবে গণতান্ত্রিক কাঠামো ততটাই শক্তিশালী হবে। গণতান্ত্রিক শিক্ষা বলতে বোঝায় , গণতান্ত্রিক কাঠামো , গণতান্ত্রিক আদর্শ , নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য - ইত্যাদি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতার বিস্তার। রাজনৈতিক কর্মকান্ড , শিক্ষা - ইত্যাদির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। 

৩. অর্থনৈতিক সাম্য :- 
দেশের অর্থনীতি ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়না। মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতির হাতে যদি দেশের বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয় তাহলে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। কেননা , অর্থনৈতিক সাম্যের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। 

৪. সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা :- 
ভোটাধিকার অর্জনের আগে যদি প্রতিটি নাগরিকদের প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করা যায় তাহলে নাগরিকগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে যথার্থভাবে অবহিত হতে পারে এবং নিজের ভোটাধিকারকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। তাই গণতন্ত্রের সাফল্যের ক্ষেত্রে জন মিল সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

৫. ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি :- 
গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত হল ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ করলে জনগণ সরাসরি প্রশাসনে অংশগ্রহণ করতে পারে। গণতন্ত্রের সাফল্যের একটি অন্যতম শর্ত হল জনগণ কর্তৃক প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অংশগ্রহণ। 

৬. লিখিত সংবিধান :- 
যেহেতু গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয় , সেহেতু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে লিখিত সংবিধান গ্রহণ করা আবশ্যিক। লিখিত সংবিধানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক পরিকাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার স্পষ্ট বন্টন থাকার ফলে সকল কর্তৃপক্ষ ও জনগণ নিজেদের দায়িত্ব , কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে অবগত হতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৭. বিরোধী দলের ভূমিকা :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্যের অন্যতম শর্ত হল শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি। শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতাকে রোধ করতে সক্ষম হয়। বিরোধী দলের সদর্থক ভূমিকা সরকারকে জনবিরোধী নীতি প্রণয়ন থেকে বিরত রাখে। এছাড়াও বিরোধী দল শক্তিশালী হলে জনগণের দাবীসমূহ যথার্থভাবে আইনসভায় উপস্থাপিত হতে পারে। 

৮. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের উপস্থিতি :- 
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের উপস্থিতি গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। বিচারবিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে জনগণ রাষ্ট্রকাঠামোর উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। 

৯. ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা :- 
যেকোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত। শাসক ও বিরোধী দল পরস্পরের প্রতি সহিষ্ণুতার মনোভাব রাখলে গণতন্ত্র সফলভাবে কার্যকরী হয়। 

১০. জনমত :- 
গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হল জনমত। জনমত সরকারের স্বৈরাচারিতাকে রোধ করতে পারে , সরকারকে জনগণের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন করতে বাধ্য করতে পারে , জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সরকারি কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। এছাড়াও শক্তিশালী জনমত রাজনৈতিক কর্মকান্ডকেও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শক্তিশালী জনমত গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত। 

১১. যোগ্য নেতৃত্ব :- 
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যুমপিটার গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য সুযোগ্য নেতৃত্বকে অন্যতম উপাদান হিসাবে দাবী করেছেন। গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী নেতৃবৃন্দের হাত ধরে গণতান্ত্রিক আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রসারলাভ করে। উল্টোদিকে অযোগ্য নেতৃত্বের উপস্থিতি গণতন্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্যগুলিকে নস্যাৎ করে। 

১২. দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা :- 
দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। শাসনব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত না হলে জনগণ শাসনব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সমাজে দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত হলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয় , সকল ক্ষমতা এক শ্রেণীর মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়। তাই গণতন্ত্রকে সফল করে তুলতে শাসনব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া আবশ্যক। 

১৩. সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার :- 
গণতন্ত্রের সাফল্যের অপর একটি অন্যতম শর্ত হল সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার। সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার গৃহীত না হলে প্রশাসনিক ক্ষমতা এক শ্রেণীর মানুষ দখল করবে এবং প্রশাসন শোষণযন্ত্রে পরিণত হবে। 

১৪. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতি :- 
কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতিকে গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতির ফলে আইন , শাসন ও বিচার - এই তিন বিভাগ স্বাধীন , স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। 

পরিশেষে বলা যায় , গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তগুলিকে সফলভাবে প্রয়োগ করতে হলে চাই সদর্থক মানসিকতা , জনগণের রাজনৈতিক চেতনা ও গণতন্ত্রের উপযোগী রাষ্ট্রীয় কাঠামো। সচেতন জনগণ , গণমাধ্যমের সক্রিয়তা - ইত্যাদি বিষয়গুলি গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে কাজ করে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও। গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 

গণতন্ত্রের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি। 

গণতন্ত্রের দোষগুণ আলোচনা কর। 

গণতন্ত্রের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে লেখ।  



গণতন্ত্রের সংজ্ঞা / ধারণা :- 


গ্রিকরা সর্বপ্রথম গণতন্ত্র শব্দটিকে ব্যবহার করেন। গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Democracy শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে - ডিমোস , যার অর্থ জনগণ এবং ক্রেটাস , যার অর্থ শাসন। অর্থাৎ গণতন্ত্র কথাটির বুৎপত্তিগত অর্থ হল - জনগণের শাসন। 

গণতন্ত্র সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - গণতন্ত্রে জনগণই হল চূড়ান্ত ক্ষমতার উৎসস্থল। 

লর্ড ব্রাইস বলেছেন - গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় শাসনক্ষমতা সেদেশের সকলের হাতে অর্পিত থাকলেও তা প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে পরিণত হয়। 

ডাইসি বলেছেন - যেধরনের শাসনব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের হাতে শাসনক্ষমতা অর্পিত থাকে - তাকে বলে গণতন্ত্র। 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন - জনগণের জন্য , জনগণ কর্তৃক পরিচালিত জনগণের শাসন হল গণতন্ত্র। 

সুইজি বলেছেন - গণতন্ত্রে জনগণই হলেন শাসনব্যবস্থার উৎসস্থল। 

তবে গণতন্ত্রের সর্বাধুনিক সংজ্ঞা প্রদান করেছেন - স্যুমপিটার , রবার্ট ডাল , জি সি ফিল্ড - প্রমুখ। স্যুমপিটারের মতে , গণতন্ত্র হল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করা। সি জি ফিল্ড বলেছেন , গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহনের ক্ষমতাকে জনগণ সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে। সার্বিকভাবে বলা যায় , গণতন্ত্র হল এমন এক ধরণের প্রতিষ্ঠান যেখানে শাসন ক্ষমতার উৎস হল জনগণ , প্রয়োজনে জনগণ শাসকদের নিয়ন্ত্রণ ও পদচ্যুত করতে পারেন। তবে সমাজতন্ত্রবাদীরা অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে অভিমত পোষণ করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গণতন্ত্রের সুবিধা / গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তি :- 


১. জনগণের সার্বভৌমত্ব :- 
গণতন্ত্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই হলেন সকল ক্ষমতার মূল উৎস। সরকার গঠিত হয় জনগণের সম্মতিক্রমে এবং জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আশা - আকাঙ্খা দ্বারা প্রভাবিত হয় সরকার পরিচালিত হয়। 

২. স্বাভাবিক অধিকার তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ :- 
একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই স্বাভাবিক অধিকার তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো যায়। মানুষের জীবন , সম্পত্তি ও অধিকার - ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রকাশ ঘটে গণতন্ত্রের মাধ্যমেই। 

৩. আইনের শাসন :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একমাত্র বিধিবদ্ধ পদ্ধতি ছাড়া জনগণের স্বাভাবিক জীবনে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। গণতন্ত্রে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক অধিকারগুলি চরিতার্থ করে আইনের মাধ্যমেই। 

৪. সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যক্তিকল্যাণ :- 
গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হল সর্বাধিক মাত্রায় ব্যক্তি কল্যাণ। একমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যেই একজন ব্যক্তি তার অর্থর্নীহিত সত্তার বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নীতি প্রণয়নের সময়েও সর্বাধিক ব্যক্তিকল্যাণের বিষয়টি খেয়াল রাখে। 

৫. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার জন্য গণতন্ত্রে বিশেষ সাংবিধানিক বিধি - ব্যবস্থা বলবৎ থাকে। ফলে আইন ও শাসন বিভাগ কর্তৃক বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব আরোপের সম্ভাবনা গণতন্ত্রে খুব কম। 

৬. তিনটি মূলনীতি : সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতা :- 
গণতন্ত্রে ফরাসি বিপ্লব উদ্ভুত তিনটি প্রধান আদর্শ - সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এখানে আইন সকলের প্রতি সমানভাবে প্রযুক্ত হয় এবং আইন কর্তৃক সকলেই সমভাবে সংরক্ষিত হন। একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই ব্যক্তিস্বাধীনতা সর্বাধিকরূপে চরিতার্থ করা সম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. ব্যক্তি স্বাধীনতার চরম প্রকাশ :- 
নাগরিকদের বিভিন্ন প্রকার স্বাধীনতা - যেমন পৌর ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা - ইত্যাদি গণতন্ত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ হারে প্রকাশিত হয়। রাষ্ট্র নাগরিকদের এই সকল স্বাধীনতা রক্ষা করতে নাগরিকদের নিকট বদ্ধপরিকর থাকে। 

৮. ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ বিকাশ :- 
একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ থাকায় ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সর্বোচ্চ হারে প্রকাশের সুযোগ পায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের আদর্শ ও সহায়ক পরিবেশ রচনা করে ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষতা বিধান করে। 

৯. রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ :- 
যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসন ক্ষমতার উৎস হলেন জনগণ এবং জনগণের সম্মতিক্রমে ও জনগণের মাধ্যমেই সরকার গঠিত হয় ; তাই গণতন্ত্রে মানুষের রাজনৈতিক ক্রিয়া - কলাপ অধিক পরিমাণে সংগঠিত হয় - ফলে মানুষের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে। 

১০. স্বৈরাচারের সম্ভাবনা হ্রাস :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অধিক সংখ্যক জনগণের সম্মতিক্রমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছাকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয় - ফলে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম। কেননা , গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। 

১১. মানুষের ইচ্ছা - অনিচ্ছার যথার্থ প্রতিফলন :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সম্মতির উপর ভিত্তি করে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ; ফলে সরকার জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছা ও আশা - আকাঙ্খার প্রতি সংবেদনশীল থাকতে বাধ্য থাকেন। ফলে মানুষের রাষ্ট্রীয় নীতিতে জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছার যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। 

১২. বিপ্লবের সম্ভাবনা হ্রাস :- 
জনগণের সম্মতির উপর ভিত্তি করে সরকার নির্বাচিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণ - বিপ্লবের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। 

১৩. দায়বদ্ধতা :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। শাসন বিভাগ আইন বিভাগের প্রতি দায়বদ্ধ  থাকে।               
       
১৪. জনকল্যাণকর রাষ্ট্র :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্য হল জনকল্যাণ। এখানে রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের প্রতি শাসন আরোপিত হওয়ার পরিবর্তে জনগণের কল্যাণের জন্য নীতি আরোপিত হয়। 

গণতন্ত্রের অসুবিধা / গণতন্ত্রের বিপক্ষে যুক্তি :- 


১. অযোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা সরকার পরিচালনার সম্ভাবনা :- 
গণতন্ত্রে সকলের অধিকার সমান ; তাই অযোগ্য ব্যক্তিরাও গণতন্ত্রে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ ও পরিচালনার সুযোগ পান - যা কখনোই উৎকৃষ্ট শাসন পরিচালনা করতে পারেনা। 

২. সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতি অধিক গুরুত্ব :- 
গণতন্ত্রে সরকার প্রতিষ্ঠা থেকে নীতি প্রণয়ন - সবকিছুতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীতি প্রযুক্ত হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই উৎকর্ষতার পরিবর্তে সাধারণের সম্মতির উপর আস্থা প্রকাশের ফলে - শাসন কার্য পরিচালনা ও নীতি প্রণয়ন তার মূল লক্ষ্য চরিতার্থ করতে পারেনা। 

৩. সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থরক্ষা :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে প্রয়াসী হয়ে থাকে ; ফলে গণতন্ত্রে সকলের স্বার্থ সুরক্ষিত হওয়া সম্ভব নয়। এজাতীয় ব্যবস্থায় কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রীয় নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। 

৪. আমলাতান্ত্রিকতা :- 
অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিরা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে শাসন কার্যে অংশগ্রহণ করলে তারা আমলাদের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ফলে শাসন পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণের সকল অংশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেকোনো নীতি নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের সম্মতি ও বিস্তর আলাপ - আলোচনা - ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জরুরি অবস্থার সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। 

৬. ব্যয়বহুল :- 
অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলির তুলনায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিভিন্ন নির্বাচন , উপনির্বাচন , যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনে বিভিন্ন সরকার - ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। আবার এত ব্যয়ের পরেও জনগণের আশা - আকাঙ্খা চরিতার্থ না হলে - তা হয় অপচয়ের নামান্তর। 

৭. দলীয় স্বার্থ :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি রাজনৈতিক দল জনগণের সন্মতিক্রমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু শাসক দল ও বিরোধী দলের মধ্যে স্বার্থের যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয় তার ফলে জনগণের আশা - আকাঙ্খার তুলনায় দলীয় স্বার্থ প্রধান হয়ে ওঠে। 

৮. পুঁজিবাদের বিকাশ :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন একটি প্রধান প্রক্রিয়া। এই নির্বাচনের খরচের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুঁজিপতিদের আশ্রয়প্রার্থী হয় এবং নির্বাচনে জয়লাভের পর শাসক দল পুঁজিপতিদের স্বার্থেই নীতি নির্ধারণ করে ; ফলে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। 

৯. রক্ষনশীলতার সম্ভাবনা:- 
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা যদি মূর্খ ও অযোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয় , তাহলে তা রক্ষণশীল হতে বাধ্য। কেননা অযোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা কখনোই প্রগতিশীল উদ্ভাবন সম্ভব নয় ; ফলে শাসন ব্যবস্থা রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। 

১০. সরকারের স্থায়িত্ব ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী , জাত ও ধর্ম , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান - ইত্যাদির পারস্পরিক স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়। সরকার তাদের সকলের স্বার্থে কাজ না করতে পারলে সরকারের স্থায়িত্ব ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরী হয়।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিকীকরণ কাকে বলে ? সামাজিকীকরণের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 

সামাজিকীকরণ ও তার বৈশিষ্ট। 




সামাজিকীকরণের ধারণা / সংজ্ঞা :- 

প্রতিটি শিশু জৈবিক প্রাণী হিসাবে জন্মলাভ করে। কিন্তু ধীরে ধীরে সমাজের নিয়ম , রীতিনীতি , প্রথা ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং ধীরে ধীরে সামাজিক প্রাণী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ সামাজিকীকরণ হল ব্যক্তির জৈবিক প্রাণী থেকে সামাজিক প্রাণীতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া। 

কিংসলে ডেভিস বলেছেন - সামাজিকীকরণ হল একটি প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে শিশু সামাজিক প্রাণীতে পরিণত হয়। 

ম্যাকাইভার বলেছেন - সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিবর্গ পরপস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং জটিল সামাজিক কাঠামোতে অংশগ্রহণ করে। 

অগবার্ণ ও নিমকফ বলেছেন - সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই ব্যক্তি সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপন করে। 

বোগারডাস বলেছেন - সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই বেক্তিবর্গ পরস্পরের সঙ্গে ব্যবহারিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। 

সুতরাং সামাজিকীকরন হল একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশু সামাজিক জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয় , শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে , শিশু সমাজের সঙ্গে অভিযোজনের দক্ষতা অর্জন করে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই ব্যক্তি তার সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তার ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সামাজিকীকনের বৈশিষ্ট :- 


১. একাধিক মাধ্যম :- 
ব্যক্তি নিজে নিজেই সামাজিকীকরণ ঘটাতে পারেনা। তাকে এই কাজে সাহায্য করে যেসকল উপাদান - সেগুলিকে বলে সামাজিকীকরণের মাধ্যম। সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যমগুলি হল - পরিবার , বন্ধুগোষ্ঠী , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , গণমাধ্যম , রাষ্ট্র , বিভিন্ন আদর্শ - ইত্যাদি। এইসকল উপাদানগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তির সামাজিকীকরণে সহায়তা করে। 

২. উপাদানগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক :- 
সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বর্তমান। ব্যক্তি ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটায়। যেমন রাষ্ট্র যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করলে শিক্ষা ব্যক্তির চেতনার উন্নতি ঘটায়। মানুষের চেতনার উন্নতি সামাজিকীকরণে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। 

৩. সামাজিক প্রক্রিয়া :- 
সামাজিকীকরণ সম্পূর্ণরূপে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজে অবস্থানকারী ব্যক্তি সামাজিক উপাদানগুলির সঙ্গে ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সামাজিকীকরণ ঘটায়। সামাজিকীকরণের প্রতিটি উপাদান সম্পূর্ণরূপে সামাজিক। 

৪. সকল সমাজে বিদ্যমান :- 
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সকল সমাজেই বিদ্যমান। দেশ ও কালভেদে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সকল সমাজেই লক্ষ্য করা যায়। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সমাজ পর্যন্ত ; এমনকী , যেসকল সমাজে সভ্যতার আলো পৌঁছয়নি , সেসকল সমাজেও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. গতিশীল প্রক্রিয়া :- 
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সমাজের পরিবর্তন ও সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটিও সমানতালে সংগঠিত হতে থাকে। 

৬. নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া :- 
সামাজিকীকরণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। মানবজীবন ও সমাজজীবনের কোনো স্তরেই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়না - তা প্রবহমান এবং নিরবচ্ছিন্ন। সমাজ সৃষ্টি থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া নিরন্তর সংগঠিত হয়ে চলেছে। 

৭. সামাজিকীকরণ সমাজের সকল অংশকে প্রভাবিত করে :- 
কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যেই যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় - তা কিন্তু নয়। সামাজিকীকরণ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সংগঠিত হয়। সমাজে বসবাসকারী সকলেই সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে পরিচিত হয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। 

৮. পরিস্থিতিভেদে তারতম্য :- 
পরিস্থিতিভেদে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। একটি আদর্শ সমাজের ব্যক্তিবর্গের সামাজিকীকরণ ঘটে আদর্শরূপে ; অন্যদিকে , যেসকল সমাজের পরিবেশ অসামাজিক , সেসকল সমাজের ব্যক্তিবর্গের সামাজিকীকরণ ঘটে নেতিবাচকরূপে। 

৯. সমাজের পরিবর্তন :- 
সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রধান উপাদান হল সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিবর্গ সমাজের পরবর্তনশীল রীতিনীতির সঙ্গে অভিযোজন ঘটিয়ে সামাজিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে। 

১০. মিথস্ক্রিয়া :- 
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ব্যক্তি , সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সংগঠিত হয়। ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মিথস্ক্রিয়া সামাজিক পরিবর্তনকে সূচিত করে। 

পরিশেষে বলা যায় , সামাজিকীকরণ হল এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তি সমাজের রীতিনীতি , প্রথা , সামাজিক আদব - কায়দা , আদর্শ , মূল্যবোধ ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং অভিযোজনের মাধ্যমে সামাজিক প্রাণীতে পরিণত হয়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিক এবং ব্যক্তিজীবনের সর্বকালীন সঙ্গী , ব্যবহারিক সম্পর্কের অন্যতম কারক , সামাজিক কল্যাণসাধন ও শৃঙ্খলারক্ষার উদ্দীপক বিশেষ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে ? সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম।  




সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা / ধারণা। 


সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হল এমন এক সামাজিক পদ্ধতি যার দ্বারা সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রন করা যায়। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ফলেই সমাজে শান্তি - শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুব্যবস্থিতভাবে সমাজ পরিচালিত হয়। 

ম্যাকাইভার ও পেজ বলেছেন - সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হল এক বিশেষ পদ্ধতি যার দ্বারা সমাজব্যবস্থা সুসংহত ও সংরক্ষিত থাকে , পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং সামগ্রিকভাবে সমাজে সুব্যবস্থিত করে তোলে।    

সমাজতাত্ত্বিক বটোমোর বলেছেন - সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হল বিশেষ কিছু সামাজিক রীতিনীতি , মূল্যবোধ , আইন ও আদর্শের সমষ্টি , যার মাধ্যমে সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের জীবন ও সমাজ বাঞ্ছিত ও নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত হয়। 

সমাজতাত্ত্বিক রস বলেছেন - সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হল কিছু বিধি - ব্যবস্থার সমষ্টি - যার মাধ্যমে একটি আদর্শ মানের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।  

সুতরাং , সামাজিক নিয়ন্ত্রন হল - একটি উপায় বা ব্যবস্থা যার দ্বারা সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষিত হয় , সমাজ পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমসমূহ :- 


১. লোকাচার ও লোকনীতি :- 
সমাজে কতকগুলি স্থায়ী অভ্যাস বা চর্চার অস্তিত্ব থাকে যেগুলি বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে পালন করা হয় - এগুলিকে লোকাচার বলে। তবে , লোকাচারগুলি সর্বদা পালনের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকেনা। আবার যেসকল লোকাচার সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকে তাকে লোকনীতি বলে। লোকনীতিগুলি জনসমাজ পালন করতে বাধ্য থাকে। লোকাচার ও লোকনীতিগুলি সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা করে , সামাজিক শান্তি - শৃঙ্খলা রক্ষা করে ও সমাজকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। 

২. শিক্ষা :- 
শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলোকে জাগরিত করে মানুষকে আলোর পথে পথ চলতে সাহায্য করে। শিক্ষা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। শিক্ষা মানুষের মধ্যে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে ও সংগঠিত হতে সাহায্য করে। এককথায় শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ সামাজিক প্রাণী হিসাবে গড়ে তোলে। এইভাবে শিক্ষা জনসমাজকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

৩. সাংবিধানিক বিধি - ব্যবস্থা :- 
প্রতিটি সমাজেই রাষ্ট্র কর্তৃক সংবিধান প্রচলিত থাকে। সাংবিধানিক আইনগুলিকে জন সমাজ মেনে চলতে বাধ্য থাকে। এই আইনগুলি অমান্য করলে শাস্তি পেতে হয়। যেহেতু এই আইনগুলিকে অধিকাংশ নাগরিক মান্য করে চলেন - তাই সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সমাজেই ব্যক্তিবর্গ সংবিধান কর্তৃক সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হন। 

৪. প্রথাগত আইন :- 
পৃথিবীতে আজও এমন কিছু সমাজ আছে যেখানে সভ্যতার আলো পৌঁছোয়নি। এইসকল সমাজগুলি তাদের প্রথাগত আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করলে গোষ্ঠী বা গোষ্ঠী পরিষদ দ্বারা শাস্তি পেতে হয়। যেসকল স্থানে আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি সেই সকল সমাজে প্রথাগত আইনগুলি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. ধর্মীয় রীতিনীতি :- 
প্রতিটি মানুষের সঙ্গে ধর্ম বিশেষভাবে জড়িত থাকে। সাধারণতঃ মানুষ নিজ ধর্মবিশ্বাসের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকেন। তাই ধর্মীয় রীতিনীতিগুলি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সকল ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে যেতে মানুষ ভয় পায় এবং এগুলির প্রতি গভীরভাবে আস্থাশীল থাকে। বেশিরভাগ মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যেই নিজ জীবন পরিচালিত করে। এইভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে।  

৬. সামাজিক রীতিনীতি  :-
প্রতিটি সমাজে রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত আইন - বিধি ছাড়াও কিছু সামাজিক রীতিনীতির অস্তিত্ব থাকে। এই ধরণের রীতিনীতিগুলি তুলনামূলকভাবে নমনীয় হয়ে থাকে। এইসকল সামাজিক রীতিনীতিগুলি সমাজকে সুগঠিত করে ও মূল্যবোধ রক্ষা করে। যেমন সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য , বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য - ইত্যাদি। 

৭. সাংগঠনিক রীতিনীতি :- 
প্রতিটি সমাজে বহুসংখ্যক সামাজিক সংগঠনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের নিজস্ব কিছু রীতিনীতি ও নিয়মবিধি থাকে। সংগঠনের সদস্যগণ এইসকল নিয়মবিধি পালনে বাধ্য থাকেন। এইভাবে সামাজিক সংগঠনগুলি তাদের সদস্যদের সামাজিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। 

৮. গণমাধ্যম :- 
বৃহত্তর ও স্থানীয় সমাজের সমস্তরকম খবরাখবর গণমাধ্যমগুলির দ্বারা প্রচারিত হয়। ফলে মানুষ প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি , গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা , সরকারি সিদ্ধান্ত ও বিভিন্ন নীতি , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি , কোনো বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের মনোভাব - ইত্যাদি বিষয়ে অবহিত হতে পারেন এবং সামাজিক অভিযোজনের সঙ্গে নিজের সামঞ্জস্যবিধান করতে পারেন। এইভাবে গণমাধ্যম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পরিশেষে বলা যায় , সমাজের পরিবর্তন ও সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলিরও পরিবর্তন ঘটে। আবার সকল সমাজে সবগুলি মাধ্যম সমানভাবে কার্যকর হয়না। ভিন্ন ভিন্ন সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে সকল ক্ষেত্রেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলি সামাজিক শৃঙ্খলা স্থাপন করে সমাজকে সুসংহত পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা কর। 

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ ? 

শিক্ষার্থীর জীবনে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ? 




প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :- 

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অঙ্গ। প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী স্তর প্রাক - প্রাথমিক স্তর নামে পরিচিত। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশুর স্বাভাবিক প্রক্ষোভিক , মানসিক , সামাজিক , কৃষ্টিমূলক দক্ষতাগুলির বিকাশ ঘটানো হয়। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমেই একজন শিশু সামাজিকীকরণের প্রথম পাঠ লাভ করে এবং তাদের সূক্ষ্ম ও কোমল অনুভূতিগুলির বিকাশ ঘটে। শিশুর শৈশব ও পরবর্তী জীবনের জন্য প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. শিক্ষা - দর্শনিকগণের অভিমত :- 
প্লেটো ও মন্তেসরি উভয়ই শিশুর প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার অপরিহার্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে , প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচনা করে। ভারতীয় শিক্ষাচিন্তাবিদদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী , স্বামী বিবেকানন্দ , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , মৌলানা আজাদ - সকলেই প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। 

২. মা - বাবার বিকল্প ভূমিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে :- 
বর্তমান যুগে প্রায় বেশিরভাগ মাতা - পিতা চাকুরি বা অন্যান্য কোনো প্রতিষ্ঠান , ব্যবসা বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মরত। এই অবস্থায় শিশুর জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের জন্য প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মা - বাবার অভাবজনিত ঘাটতি পূরণ করে। 

৩. মাতা - পিতার নিরক্ষরতাজনিত অভাবপূরণ :- 
বহুক্ষেত্রে শিশুর মাতা - পিতা নিরক্ষর থাকলে বা শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয় বিচার - বুদ্ধি না থাকলে তাঁরা যথার্থভাবে শিশুদের শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হন। এই পরিস্থিতিতে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সেই অভাব দূর করে শিশুকে যথার্থ শিক্ষার পথে এগিয়ে নিয়ে চলে। 

৪. সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে :- 
শিশুর প্রথম পাঁচ বছরের জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশু প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষালয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের জন্য সমাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। এইভাবে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু সামাজিকীকরণের প্রথম পাঠ লাভ করে। 

৫. উপযুক্ত পরিবেশে শিশুর বিকাশ :- 
বহু ক্ষেত্রেই শিশুর পরিবারে শিশুর বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ থাকেনা। বাসস্থানের আকারের ক্ষুদ্রতা , খেলার মাঠ না থাকা , পরিবারের অত্যন্ত বেশি সদস্য থাকা , পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উপযুক্ত না থাকা - এইসকল কারণগুলির জন্য শিশুর প্রথম পাঁচ বছরের শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এই সমস্যা দূর করে শিশুর যথার্থ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষন পদ্ধতি শিশুর প্রকৃত বিকাশের সহায়ক  :- 
প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মনোবিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শিশুর বিকাশের জন্য পরিবেশ গড়ে তোলা হয়। এই উপযুক্ত পরিবেশ শিশুর যথার্থ বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক শিক্ষাপোকরণ , মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষন পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৭. ড্রপ - আউট সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে :- 
প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের ভবিষ্যতে ড্রপ - আউট সমস্যার সমাধানে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর প্রারম্ভিক ভিত মজবুত করে তোলে। ফলে পরিবর্তী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়না। এইভাবে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা ড্রপ - আউট সসমস্যার সমাধান করে। 

৮. শিশুদের মধ্যে সু  - অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে :- 
শিশুদের মধ্যে সু - অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিশুদের মধ্যে সু - অভ্যাস গঠন করা। পরিচ্ছন্নতা , স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা , নিজের কাজ নিজে করা , টয়লেটের অভ্যাস - ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পাঠক্রমে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। 

৯. জ্ঞানমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে : -
শিশুর প্রথম পাঁচ বছরের জ্ঞানমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ ও ভাষার প্রতি দক্ষতা গঠন , প্রারম্ভিক গণিত , পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান , সামাজিক আচরণবিধি - এইসকল বিষয়গুলি প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায়। ফলে শিশুর স্বাভাবিক জ্ঞানমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হয়ে ওঠে।       

১০. ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে :- 
প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরেই শিশু সর্বপ্রথম ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিতি , শব্দ গঠনে দক্ষতা ও বাক্য গঠন - এইসকল ভাষাগত দক্ষতার বিকাশ প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরেই সম্পন্ন হয়। এই ভাষাগত দক্ষতা শিশুকে পরবর্তী শিক্ষাস্তরগুলিতে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহায়তা করে। 

পরিশেষে বলা যায় , প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর জীবনের সর্বপ্রধান স্তর। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শিশুকে ভবিষ্যৎ জীবনের পথে উপযুক্ত করে তোলে। তাই প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে অপরিহার্য। আধুনিক গবেষণাপ্রসূত ও মনোবিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা করলে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি বাস্তবায়িত করা সম্ভব।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা কী ? প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর। 

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 




প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা :- 

প্রথাগত শিক্ষা শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী স্তর হল প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা। সাধারণতঃ পাঁচ বা ছয় বছরের পূর্বে যে ধরণের শিক্ষা দেওয়া হয় - তা'ই হল প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা। মূলতঃ নার্সারি , কিন্ডারগার্টেন , ক্রেশ - এইসকল বিদ্যালয়ে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রথাগত শিক্ষার পূর্ব - প্রস্তুতি হিসাবে শিশুকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয়। 
ইতিপূর্বে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল না ; পারিবারিক পরিসরের মধ্যে শিশুদের শৈশবকালীন শিক্ষা প্রদান করা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে আধুনিক শিক্ষা চিন্তার বিস্তার , শিক্ষামূলক গবেষণা , আর্থ - সামাজিক কারণ , সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তার - ইত্যাদি কারণে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে সংযোজিত হয়েছে। বর্তমানে প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর পূর্বে ৩-৪ বছরের প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :- 

প্রথাগত শিক্ষার পূর্বে শিশুকে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পেছনে একাধিক উদ্দেশ্য বর্তমান। যেমন - 

১. শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন :- শৈশবে শিশুদের মধ্যে অভিযোজনের প্রক্রিয়া অতি দ্রুত সংগঠিত হয়। তাই এই বয়সে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - টয়লেটের অভ্যাস , পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস , পোশাক পরিধানের অভ্যাস , খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস , বিদ্যালয় জীবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া - ইত্যাদি। 

২. সামাজিকীকরণের বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশু সর্বপ্রথম বাড়ির বাইরে এবং পরিবারের নিরাপত্তা ও স্নেহছায়ার বাইরে সমাজ জীবনের অংশ হিসাবে নিজেকে মেলে ধরে। তাই এই বয়সে শিশুদের সামাজিকতার বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য। সমাজ স্বীকৃত আদব - কায়দা গড়ে তোলা , অন্যদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সচেতন ও সহানুভূতিশীল করে তোলা - ইত্যাদি প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। 

৩. প্রক্ষোভমূলক বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুদের প্রক্ষোভিক বিকাশের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। শিশুদের নিজেদের আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কে বুঝতে , সেগুলিকে প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা হয়। শিশুদের মধ্যেকার প্রক্ষোভিক বৈশিষ্টগুলিকে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের মাধ্যমে উপযুক্ত পথে পরিচালিত করা হয়। 

৪. কৃষ্টিমূলক বিকাশ :- প্রতিটি শিশুর মধ্যে নান্দনিক বোধ বর্তমান। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুদের সেই নান্দনিক বোধকে বিকশিত ও উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ , খেলাধুলা , বাগান - পরিচর্যা , গান ও কবিতা আবৃত্তি , নাচ - ইত্যাদি কার্যাবলী শিশুর কৃষ্টিমূলক বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। 

৫. পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গঠন :- বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার প্রথম স্তর থেকে পরিবেশের পাঠ শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পরিবেশের সাধারণ পাঠ , পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচিতি , পরিবেশের উপাদান গুলির গুরুত্ব - এইসকল বিষয়ে শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. মানসিক বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পঠন - পাঠন ও বিভিন্ন কার্যে অংশগ্রহণ , প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ , সৃজনশীলতার বিকাশ - ইত্যাদি যথার্থভাবে ঘটছে কি'না - সেবিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়। এজন্য বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ , খেলাধুলা , গান ও কবিতা আবৃত্তি , গল্প শোনা - ইত্যাদি কার্যাবলী শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। 

৭. ভাষাগত বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরেই শিশু প্রথম ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। এই স্তরে মূলতঃ মাতৃভাষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অক্ষরজ্ঞান , শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও শব্দ গঠন করতে শেখা , শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধি , শব্দের সঠিক উচ্চারণ ক্ষমতা - ইত্যাদি ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। প্রাক - প্রাথমিক স্তরে ভাষাগত দক্ষতার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা , ভাষাগত বিকাশ যথাযথ না হলে শিক্ষার পরবর্তী স্তরে সমস্যা দেখা দেবে। 

৮. আগ্রহ ও কৌতুহলের বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে সেই কৌতূহলকে প্রকাশ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষিকাগন তাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে তাদের কৌতূহলের নিরসন করে থাকেন। একটি বিষয়ে কৌতূহল নিরসনের পর শিশুরা অপর একটি বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়ে। 

৯. অঙ্গ সঞ্চালনের দক্ষতার বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুর যথার্থ অঙ্গ সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। নির্দিষ্ট কার্যে নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রয়োগ এবং তার যথাযথ সঞ্চালন , পেশীসমূহের যথার্থ সঞ্চালন দক্ষতার বৃদ্ধি - ইত্যাদি হল প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                     

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates