Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য। 

রাষ্ট্র ও সমাজের বৈসাদৃশ্য। 

রাষ্ট্র ও সমাজের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between Society and State. ( In Bengali ). 




রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য :- 


১. প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র সৃষ্টির বহু পূর্ব হতেই সমাজের উৎপত্তি ঘটেছিল। আসলে রাষ্ট্র হল সমাজ বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়। আদিম মানবদের মধ্যেও সমাজের অস্তিত্ব ছিল। পক্ষান্তরে রাষ্ট্র অনেক নবীন বিষয়। 

২. প্রতিষ্ঠানগত পার্থক্য :- 
অনেকগুলি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি সমাজ গঠিত হয়। রাষ্ট্র হল সেই সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। সুতরাং রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের ধারণা অনেক বেশি ব্যাপক। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. আইনগত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি আছে ; কিন্তু সমাজের আইনগত ভিত্তি নেই। রাষ্ট্র আইনগতভাবে সংগঠিত ; তাই রাষ্ট্রের ভেতর অবস্থানকারী জনগণ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ; কিন্তু সমাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সম্ভব নয়।  

৪. সদস্যপদের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারেন ; কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে এমন শর্ত প্রযুক্ত নয়। একজন ব্যক্তি একই সাথে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারেন। 

৫. উদ্দেশ্যগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মূলত আইন ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে জনকল্যাণকামী আদর্শকে বাস্তবায়িত করা। বার্কার বলেছেন , রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল বৈধ উদ্দেশ্য সাধন। কিন্তু সমাজের উদ্দেশ্য বহুমুখী। একটি সমাজের মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক , ধর্মীয় , নৈতিক - ইত্যাদি বিভিন্ন ও বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধিত হয়। 

৬. পরিধিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সমাজের পরিধি রাষ্ট্রের পরিধির তুলনায় অনেক ব্যাপক। রাষ্ট্রের পরিধি কেবলমাত্র মানুষের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু , মানুষের সমগ্র জীবনের সমস্ত বিষয় হল সমাজের অন্তর্ভুক্ত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. নির্দিষ্ট ভুখন্ড সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ড থাকা রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্ত। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। 

৮. সরকার সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারের অস্তিত্ব বাধ্যতামূলক ; সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু সরকার কখনোই সমাজ পরিচালনা করেনা। সমাজ পরিচালনা করে সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিকভাবে। 

৯. সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের একটি মৌলিক উপাদান হল সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌম ক্ষমতার দ্বারা রাষ্ট্র তার অধীনস্থ সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব দাবী করে। প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি অপ্রয়োজনীয়। সামাজিক বিধি - নিয়ম মেনে চলতে ব্যক্তি বাধ্য থাকেনা। 

১০. কার্যপদ্ধতি ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য বলপ্রয়োগ করে থাকে। তাই মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রকে উৎপীড়নের যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেই। সমাজের নিয়ম বিধি কার্যকর হয় মানুষের স্বাভাবিক সম্মতির উপর ভিত্তি করে। 

পরিশেষে বলা যায় , রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান। রাষ্ট্র ও সমাজ এক না হলেও স্বতন্ত্রভাবে তাদের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। মানুষের সামাজিক প্রয়োজন , ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আশা - আকাঙ্খা - ইত্যাদির বাস্তবায়ন ঘটে রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমেই। আবার প্রতিটি রাষ্ট্র সামাজিক প্রথা , রীতিনীতি - ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই রাষ্ট্র ও সমাজ এক না হলেও তাদের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            
     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য। 

রাষ্ট্র ও সরকারের বৈসাদৃশ্য। 

রাষ্ট্র ও সরকারের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between state and government. ( In Bengali ). 




রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য :- 


১. সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান :- 
রাষ্ট্র ও সরকারের ধারণা সমার্থক নয় ; সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান মাত্র। রাষ্ট্র একটি সামগ্রিক সত্তা , কিন্তু সরকার রাষ্ট্রের একটি অংশ বিশেষ। তাই পরিধি ও ব্যাপকতার দিক দিয়ে সরকার ও রাষ্ট্র কখনোই সমার্থক নয়। 

২. অস্তিত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র ব্যতীত সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার রাষ্ট্রের অন্তর্গত একটি সংস্থা। অপরদিকে সরকার ছাড়াও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. জনসমষ্টিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সমগ্র জনসমষ্টি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সরকার গঠিত হয় সেই জনসমষ্টির সামান্য কিছু অংশ নিয়ে। 

৪. মূর্ততার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত বিষয় - যা একটি কল্পনা বা মানসিক বিষয়। কিন্তু সরকারের ধারণা মূর্ত এবং সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের বিমূর্ত প্রতিরূপ মূর্ত সত্তায় পরিণত হয়। 

৫. নাগরিকদের বিরোধিতার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের নাগরিকেরা কখনোই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারেনা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার অর্থ দেশদ্রোহিতা। কিন্তু জনগণ খুব সহজেই সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে , প্রয়োজনে সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে পারে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপ দাবী করতে পারে। 

৬. নীতি প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত সত্তা। তাই রাষ্ট্র কখনোই নীতি প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনা। কিন্তু সরকার জনগণের আশা - আকাঙ্খা ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন অনুযায়ী নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সার্বভৌমিকতার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র হল চরম সর্বভৌমিক সত্তা ; কিন্তু সরকারের সর্বভৌমিকতা সরকার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। সরকার রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সীমাবদ্ধরূপে সর্বভৌমিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। এখানে রাষ্ট্র হল প্রধান সংস্থা এবং সরকার তার অধীনস্থ। 

৮. স্থায়িত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র স্থায়ী ; তার সচরাচর কোনো পরিবর্তন হয়না। কিন্তু সরকার পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার লাভ করে ; কিন্তু এতে রাষ্ট্রের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়না। সুতরাং রাষ্ট্র স্থায়ী , কিন্তু সরকার পরিবর্তনশীল। 

৯. গঠনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
গঠনগত বৈশিষ্টের দিক দিয়ে রাষ্ট্র সর্বদা এক এবং সমস্ত রাষ্ট্রই এক। কিন্তু বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের সরকার থাকতে পারে। যেমন - এককেন্দ্রিক সরকার , যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার , রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার , মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকার - ইত্যাদি। 

১০. জৈব তত্ত্ব সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
ররাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে রাষ্ট্রকে একটি জীবদেহের সাথে তুলনা করেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র হল একটি জীবদেহ এবং সরকার হল তার মস্তিস্ক। এক্ষেত্রে উভয়ে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। ঠিক যেভাবে দেহ ছাড়া মস্তিষ্কের কোনো অস্তিত্ব নেই , তেমনি মস্তিস্ক ছাড়া দেহের অস্তিত্ব অর্থহীন। সেভাবেই , রাষ্ট্র ছাড়া সরকারের অস্তিত্ব নেই , আবার সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অর্থহীন। 

১১. বৈশিষ্টগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট হল চারটি। যথা - নির্দিষ্ট ভুখন্ড , নির্দিষ্ট জনসমষ্টি , সরকার ও সর্বভৌমিকতা। অন্যদিকে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট নেই - বিভিন্ন দেশে , বিভিন্ন ধরণের সরকারের ক্ষেত্রে বৈশিষ্টের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন , যুক্তরাষ্ট্রীয় ও এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট সর্বক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। 

১২. আদর্শগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রতিটি সরকারের নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ থাকে। সরকার সেই আদর্শের অনুরূপে গড়ে ওঠে এবং আদর্শগুলিকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। রাষ্ট্রীয় আদর্শ সরকারের মাধ্যমেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
               

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রের বৈশিষ্টগুলি লেখ। 

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও রাষ্ট্রের উপাদান। 

Definition and features / elements of state. ( In Bengali ).  




রাষ্ট্রের সংজ্ঞা :-   


ল্যাস্কি বলেছেন - রাষ্ট্র হল এমন একটি ভূখন্ড সমন্বিত জনসমাজ যা সরকার এবং প্রজায় বিভক্ত এবং তা ভূখন্ডে অবস্থিত সকল প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব দাবী করে। 

গেটেল বলেছেন - রাষ্ট্র হল স্থায়ীভাবে সুনির্দিষ্ট ভূখন্ডের অধিকারী জনসমাজ। এই জনসমাজ সকল প্রকার বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত এবং এই জনসমাজ একটি সরকারের অধীনে থাকে। এই সরকার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে। 

বার্জেস বলেছেন - কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত জনসমষ্টি। 

গার্নার বলেছেন - রাষ্ট্র হল এমন একটি জনসমাজ যা কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং যা বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বা প্রায় মুক্ত এবং যার একটি সুসংগঠিত সরকার আছে এবং ভূখন্ডে বসবাসকারী বেশিরভাগ জনগণ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। 

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলির মধ্যে গার্নার প্রদত্ত সংজ্ঞাকেই অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। তবে মার্কসবাদীরা রাষ্ট্র সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেন। মার্কসবাদীদের মতে , রাষ্ট্র হল শ্রেণীশোষণের হাতিয়ার ও উৎপীড়নের যন্ত্র। রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক শ্রেণীর মানুষ অন্য এক শ্রেণীর উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। 

সর্বোপরি বলা যায় , রাষ্ট্র হল এমন এক সংগঠন যার একটি সুনির্দিষ্ট জনসমাজ আছে এবং এই জনসমাজ নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস করেন। এই জনসমাজ তার সকল ক্ষমতা একটি সরকারের উপর ন্যাস্ত করে এবং এই জনসমাজ সম্পূর্ণভাবে বা প্রায় বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট / রাষ্ট্রের উপাদান :- 


রাষ্ট্রের উপাদানগুলিকে মূলতঃ দুই ভাগে ভাগ করা যায় - অপরিহার্য বৈশিষ্ট বা উপাদান ; এবং অপরিহার্য নয় - এমন বৈশিষ্ট বা উপাদান। রাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট বা উপাদানগুলি হল - নির্দিষ্ট জনসমষ্টি , নির্দিষ্ট ভূখন্ড , সরকার ও সর্বভৌমিকতা। এছাড়া অপরিহার্য নয় - এমন বৈশিষ্ট বা উপাদানগুলি হল - স্থায়িত্ব , অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও জাতীয়তাবাদ। 

১. নির্দিষ্ট জনসমষ্টি :- নির্দিষ্ট জনসমষ্টি রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট। প্রাচীন ইউরোপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনসমষ্টি বিশিষ্ট রাষ্ট্রের অস্তিত্ব দেখা যায়। প্লেটো , অ্যারিস্টটল - প্রমুখেরা স্বল্প জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাষ্ট্রকেই আদর্শ বলে মনে করতেন। কিন্তু বর্তমানে বৃহৎ জনসমষ্টিযুক্ত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বর্তমান। ভারত , চীন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - প্রভৃতি রাষ্ট্রে বিপুল জনসংখ্যা বর্তমান। 

জনসমষ্টিকে মূলতঃ তিনভাগে ভাগ করা যায় - 
(ক ) নাগরিক - রাষ্ট্রের প্রতিটি সদস্য যাদের আইনগত স্বীকৃতি আছে - তারা হলেন নাগরিক। 
(খ ) বিদেশি - একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্য রাষ্ট্রের যে সকল সদস্যরা বাস করে - তারা হলেন বিদেশি। 
(গ ) প্রজা - কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপনিবেশে বসবাসকারী নাগরিকেরা হলেন সেই সাম্ৰাজ্যবাদী শক্তির প্রজা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. নির্দিষ্ট ভূখন্ড :- নির্দিষ্ট ভূখন্ড হল ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা বেষ্টিত একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ সকল প্রকার ভূমিরূপ - পাহাড় - পর্বত , নদ - নদী , আকাশ পথ , সমুদ্র উপকূল , বনাঞ্চল - ইত্যাদি সকল প্রকার ভূমিরূপগুলি রাষ্ট্রীয় ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্ত। তবে , সমুদ্র উপকূল ও আকাশ পথের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ আন্তর্জাতিক আইন প্রচলিত আছে। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখন্ডের উপরে ১০০ - ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন। অন্যদিকে , সমুদ্র উপকূলে রাষ্ট্রীয় সীমারেখার ক্ষেত্রে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে , সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কর্তৃক গৃহীত সামুদ্রিক আইন সংক্রান্ত তৃতীয় সম্মেলনে ১২ মাইল পর্যন্ত এলাকাকে রাষ্ট্রীয় ভূখন্ডের অংশ বলে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। 

রাষ্ট্রীয় ভূখন্ডের আয়তন সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন - রুশো ক্ষুদ্র আয়তন বিশিষ্ট রাষ্ট্রকে আদর্শ বলে মনে করতেন। তবে , ট্রিটসকে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে '' পাপের প্রতীক '' বলে মনে করতেন। রাষ্ট্রীয় ভূখন্ড বৃহৎ হলে বৃহৎ জনসমষ্টি দ্বারা তার সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়। আবার রাষ্ট্রীয় ভূখন্ড ক্ষুদ্র হলে জাতীয়তাবাদ , গণতন্ত্র - ইত্যাদির সহজ বিকাশ ঘটে। 

৩. সরকার :- রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান প্রতিষ্ঠান হল সরকার। সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের কল্পনা করা যায়না। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র মূর্ত হয়ে ওঠে। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ইচ্ছা , আদর্শ , নীতি , কর্মসূচি - গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। 
ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মাঝে সেতুবন্ধনের কাজ করে সরকার। জনকল্যাণকামী নীতি , সামাজিক স্বার্থ , মানুষের ন্যুনতম দাবী - ইত্যাদি বাস্তবায়িত হয়। রাষ্ট্রের সকল অভ্যন্তরীণ নীতি সহ রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করে সরকার। 
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের সরকারের অস্তিত্ব চোখে পড়ে। যথা - গণতান্ত্রিক , একনায়ক , রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার , মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকার , এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার - ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন , বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি সরকারের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে ; এর মূল কারণ হল বিশ্বায়ন , জনকল্যাণকামী নীতির প্রণয়ন , আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি - ইত্যাদি। 

৪. সর্বভৌমিকতা :- রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম মৌলিক এবং অপরিহার্য উপাদান হল সর্বভৌমিকতা। সার্বভৌম ক্ষমতা হল এমন এক চূড়ান্ত ক্ষমতা যার দ্বারা রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ , নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে। সর্বভৌমিক ক্ষমতা ব্যতীত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অর্থহীন। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ও আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যে চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করে - তা'ই হল সর্বভৌমিকতা। 

রাষ্ট্রীয় সর্বভৌমিকতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় - অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ সর্বভৌমিকতা দ্বারা রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরস্থ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব দাবী করে , নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়ন করে। আবার বাহ্যিক সর্বভৌমিকতা হল রাষ্ট্রের সেই ক্ষমতা যার দ্বারা রাষ্ট্র সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিদেশনীতি পরিচালনা করতে পারে ও আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. জাতীয়তাবাদ :- রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হিসেবে মনে করার পক্ষপাতী। তাদের মতে , রাষ্ট্রের নাগরিকেরা যদি রাষ্ট্রের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের বন্ধনে আবদ্ধ না হন তাহলে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। কিন্তু এই ধারণার বিপক্ষে সমালোচনাও বিস্তর। বিশ্বায়নের যুগে বিশেষ কারণ ছাড়া জাতীয়তাবাদ সুপ্ত চিন্তাধারায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া , অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদ বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেবে ; রাষ্ট্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিরোধের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। 

৬. স্থায়িত্ব :- কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্থায়িত্বকে রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু এই ধারণা সর্বজনীন স্বীকৃতিলাভ করেনি। মার্কসবাদীরা মনে করেন , শোষণের যন্ত্র হিসাবেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেছে এবং শ্রেণীহীন ও শোষণমুক্ত সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই রাষ্ট্রীয় ধারণা বিলুপ্ত হবে। 

৭. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি :- অনেকে মনে করেন যে অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। কেননা , রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর নির্ভরশীল নয়। অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি অধিকাংশক্ষেত্রেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। রাজনৈতিক স্বার্থেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীন , সোভিয়েত রাশিয়া - ইত্যাদি রাষ্ট্রকে পাশ্চাত্য ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি বহুদিন স্বীকৃতি প্রদান করেনি। 

পরিশেষে বলা যায় , রাষ্ট্রের মৌলিক ও প্রধান উপাদান চারটি - নির্দিষ্ট জনসমষ্টি , নির্দিষ্ট ভুখন্ড , সরকার ও সর্বভৌমিকতা। অন্যান্য উপাদানগুলি রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক ;কিন্তু অপরিহার্য উপাদান নয়।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                           


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি :- 

Discuss Marxism in the discussion of political science. ( In Bengali ). 




ভূমিকা :- 
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির মধ্যে অন্যতম হল মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি। মার্কসবাদ এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমাজ ও মানুষের রাজনৈতিক জীবনকে বিশ্লেষণ করেছেন। মার্কসবাদ অনুসারে সমাজে দ্বন্দ্ব সর্বদা বিদ্যমান। এই দ্বন্দ্ব হল সমাজে অবস্থানকারী বিভিন্ন শ্রেণীগত স্বার্থের বিরোধ। মানুষের রাজনৈতিক জীবন এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে। মার্কসবাদী দর্শনে রাষ্ট্র হল সমাজের একটি উপরি - কাঠামো। এবং এই উপরি - কাঠামোর মূল ভিত্তি হল অর্থনীতি। রাজনীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেনিন বলেছেন , রাজনীতি হল শ্রেণীসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ; যে সম্পর্কের ভিত্তি হল অর্থনীতি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাষ্ট্র একটি উপরি - কাঠামো :- 
উপরি - কাঠামো হল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সমস্ত প্রতিষ্ঠান , সামরিক ব্যবস্থা , পুলিশ , বিচারালয় , শিক্ষা , সাহিত্য , সংস্কৃতি , ধর্ম , দর্শন - ইত্যাদি সমস্ত কিছুর যোগফল। এই উপরি - কাঠামোর মূল ভিত্তি হল অর্থনীতি। এক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। এই উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে মানুষের রাজনৈতিক জীবন। এই রাজনৈতিক জীবন রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। 

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অর্থনীতির ভূমিকা :- 
মার্কসবাদী রাজনৈতিক দর্শনে মানুষের রাজনৈতিক জীবনে অর্থনীতিকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করা হয়েছে। রাষ্ট্র , রাজনৈতিক জীবন ও অর্থনীতি পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তাই রাজনৈতিক জীবনকে বিশ্লেষণ করতে হলে অর্থনীতির আলোচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। অর্থনীতি ও রাজনীতিকে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করা সম্ভব নয়। মার্কসবাদীদের মতে , রাষ্ট্রীয় উপরি - কাঠামোর সকল অংশগুলির মূল ভিত্তি হল অর্থনীতি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনীতির ভূমিকা :- 
মার্কসবাদী রাষ্ট্রদর্শনে অর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয় উপরি - কাঠামোর মূল নিয়ন্ত্রক বলা হলেও এই অর্থনীতিকে পক্ষান্তরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে রাজনীতি। এ প্রসঙ্গে লেনিন বলেছেন - Politics must take precedence over economics.  । রাষ্ট্রীয় উপরি - কাঠামো ও রাজনীতির সংমিশ্রনে তৈরী হয় কোনো একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতি। প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে অর্থনীতি সমাজ - পরিকাঠামোর বৈশিষ্টগুলি নির্ধারণ করে। 

সমাজ একটি অবিভাজ্য সামগ্রিক সত্তা :- 
মার্কসবাদ হল একটি বিশ্ববীক্ষা ; তাই মার্কসবাদ সমাজের বিশেষ কোনো অংশকে নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করেনা। সমাজের মধ্যেকার রাজনীতি , অর্থনীতি , সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের অন্যান্য উপরি - কাঠামোগুলি সম্পর্কে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করা মার্কসবাদীরা কৃত্রিম ও খামখেয়ালি বলে মনে করেন। মার্কসবাদের মতে , সমাজ হল একটি সামগ্রিক সত্তা ; তাই সমাজের আলোচনায় সকল অংশগুলিকে সমন্বিত করা উচিত। 

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ :- 
মানব সমাজ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সমাজে উপনীত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধিততে সমাজ বিবর্তনের বিশ্লেষণই হল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। মার্কসবাদ বিজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজ বিকাশের ধারাটিকে বিশ্লেষণ করে থাকে এবং এই বিবর্তনের মধ্যে যে চালিকা শক্তি থাকে তার সম্পর্কে পরীক্ষণ , পর্যবেক্ষণ ও সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও তার স্বরূপ তুলে ধরে। 

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ :- 
মার্কসবাদ অনুসারে , সমাজ সর্বকালেই পরিবর্তনশীল ও ক্রমবর্ধমান। এই ক্রমবর্ধমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে উৎপাদন শক্তির সঙ্গে উৎপাদন সম্পর্কের বিরোধ তৈরী হয়। এর ফলে সমাজে বিপ্লবের সূচনা হয়। এই বিপ্লব সমাজের প্রতিটি কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করে। এইভাবেই সমাজ একে একে আদিম সমাজ থেকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমাজ , তারপর দাস ও সামন্ততান্ত্রিক সমাজ , তা থেকে ধনতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক সমাজ এবং তা পরিবর্তিত হয়ে গণতান্ত্রিক সমাজ ও আধুনিককালে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের জন্ম হয়েছে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ইতিহাস প্রসঙ্গে মার্কসবাদ :- 
মার্কসবাদীরা সমাজ পরিবর্তনের ধারাটিকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইতিহাসের উপর জোর দিয়েছেন। তাই ইতিহাসকে তাঁরা কেবল রাজার বা যুদ্ধের কাহিনী বা সাম্রাজ্যের উত্থান - পতনের কাহিনী হিসেবে বিবেচনা করেন না। মার্কসবাদীদের মতে , ইতিহাস বিবর্তনের ধারায় সমাজ বিকাশের মূল চালিকা শক্তিটিকে চিহ্নিত করে সমাজ বিবর্তনের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনায় সহায়তা করে।   

মার্কসবাদের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা :- 
রাজনৈতিক বিশ্লেষণের অন্যান্য সকল পদ্ধতিগুলির মধ্যে একমাত্র মার্কসবাদকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। মার্কসবাদের আলোচনার সাহায্যে সমাজ বিকাশের ধারাটিকে যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। এ প্রসঙ্গে এঙ্গেলস বলেছেন , মার্কসবাদ কোনো বদ্ধ ধারণা নয় ; মার্কসবাদ হল একটি পদ্ধতি ও অনুসন্ধান পদ্ধতি যার সাহায্যে মানুষের রাজনৈতিক জীবনকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। 

গতিশীলতা :- 
সমাজের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রাজনৈতিক জীবন গতিশীল। তাই মার্কসবাদ তার আলোচনা ক্ষেত্রকে  কোনো সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাননি। যুগের বিবর্তনের সাথে সাথে মার্কসবাদ সেই বিবর্তন থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে ও রাজনৈতিক আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেছে। পরিবর্তনশীল সমাজ থেকে মার্কসবাদ উপাত্ত সংগ্রহ করে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় প্রয়োগ করে। 

সাম্যবাদ ও সর্বহারার একনায়কতন্ত্র :-
সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য লেনিন রাজনৈতিক শ্রেণিসংগ্রামকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রধান শর্ত হল - কৃষক , শ্রমিক , সর্বহারা কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। একমাত্র তাহলেই প্রকৃত অর্থে ধনতান্ত্রিক ও সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটবে। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুটি শ্রেণী অবস্থান করে - অধিকারভোগী ও অধিকারহীন শ্রেণী। সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে এই শ্রেণী বৈষম্যের অবসান ঘটবে। 

পরিশেষে বলা যায় , মার্কসবাদ  সামগ্রিকভাবে ইতিহাস , বিবর্তনবাদ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ভিত্তিতে সমাজ বিবর্তনের ধারাটিকে বিশ্লেষণ করে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে খন্ড খন্ড করে আলোচনার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করে। এর সঙ্গে সঙ্গে সমাজে অবস্থানকারী শ্রেণী ও শ্রেণিদ্বন্দ্ব , সাম্যবাদ , সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো         


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

আচরণবাদ কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট ও সীমাবদ্ধতাগুলি লেখ। 

Behaviorist approach in the discussion of political science. ( In Bengali ).




আচরণবাদের অর্থ ও ধারণা :- 


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সীমাবদ্ধতা বর্তমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিংশ শতকের প্রথম পর্বে আচরণবাদের উদ্ভব ঘটে। আচরণবাদ হল মূলত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রাজনীতিকে ব্যাখ্যার চেষ্টা ও মনোবিদ্যা , সমাজবিদ্যা , অর্থনীতি , নৃতত্ব - ইত্যাদি বিষয়ের সাহায্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে বিজ্ঞানসম্মত করে তোলার পক্ষপাতী। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করাই হল আচরণবাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। 

রবার্ট ডাল আচরণবাদকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন বলে বর্ণনা করেছেন। 

আর্নল্ড ব্রেখট আচরণবাদকে রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে একটি অভিজ্ঞতাবাদী এবং চিরস্থায়ী তত্ত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

আচরণবাদের বৈশিষ্ট :- 


১. আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঘটনা , কাঠামো , প্রতিষ্ঠান ও মতাদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তি ও সামাজিক গোষ্ঠীর আচরণকে তাত্ত্বিক ও অভিজ্ঞতাবাদী বিশ্লেষণের একক বা লক্ষ্য বলে গ্রহণ করেন। 

২. আচরণবাদ রাজনৈতিক তত্ত্ব ও গবেষণার গন্ডিকে সমাজ - মনোবিদ্যা ও সংস্কৃতিগত নৃতত্ব পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পক্ষপাতী। 

৩. রাজনৈতিক আচরণবাদ তত্ত্ব ও গবেষণার পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। আচরণবাদ পূর্বেকার বর্ণনাত্মক অভিজ্ঞতাবাদের মত নিছক ঘটনাকে নিয়ে আলোচনা করে না ; আত্মসচেতনভাবেই তা তত্ত্বকেন্দ্রিক। 

৪. আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ক্ষমতা প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো কার্যকেই রাজনৈতিক কার্য বলে বিবেচনা করে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাসূচির অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী। 

৫. একটি সুসংবদ্ধ অভিজ্ঞতাবাদী রাজনৈতিক তত্ত্ব গঠন করাই হল আচরণাবাদীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। তাঁরা মূল্যের পরিবর্তে ঘটনার উপর গুরত্ব প্রদান করেন। আচরণবাদীরা তাঁদের আলোচনাকে মূল্যমান নিরপেক্ষ করে তোলার পক্ষপাতী। 

৬. সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের উপর গুরত্ব প্রদান করেন আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ। তাঁদের মতে , সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে সংযোগ স্থাপন না হলে ব্যক্তির সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা পূর্ণাঙ্গভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। 

৭. আচরণাবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাজনৈতিক সমস্যাসমূহের বিশ্লেষণের উপর গুরত্ব আরোপ করেন। তাঁরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সমস্যাগুলির বিশ্লেষণ করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

আচরণাবাদের সমালোচনা / সীমাবদ্ধতা :- 


১. আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাজনীতির একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নিরুপনে ঐক্যমত্য হতে পারেননি। কেবলমাত্র মানুষের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতির সংজ্ঞা নিরুপন করা যায়না বলে সনাতন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ অভিযোগ করেন। 

২. আচরণবাদের বিরুদ্ধে অন্যতম সমালোচনা করা হয় যে , আচরণবাদ সংখ্যাতত্ত্বের নামান্তর। কেননা , আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সংখ্যাতত্বকে অধিক মাত্রায় গুরুত্ব প্রদান করে। 

৩. আচরণবাদ মূল্যবোধকে অস্বীকার করে। তাই আচরণবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে , আচরণবাদীরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণে কেবলমাত্র তথ্য , তালিকা ও রেখাচিত্র ব্যবহার করে - এগুলির মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের যথাযথ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। 

৪. অনেকেই আচরণবাদকে রক্ষণশীল মতবাদ হিসাবে সমালোচনা করেন ; কেননা , আচরণবাদ বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষপাতী। আচরণবাদ কখনই সমাজ পরিবর্তন , রাষ্ট্র বিপ্লব , সমাজ পরিবর্তন - এগুলি নিয়ে আলোচনা করেনা। 

৫. মানুষের রাজনৈতিক জীবনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আচরণবাদীরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নিয়মগুলিকে অন্ধভাবে অনুকরণ করেছেন। মানুষের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনের বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক। 

৬. অনেকে অভিযোগ করেন যে আচরণবাদীরা নিজেদের আলোচনাকে মূল্যমান নিরপেক্ষ করে তোলার পক্ষপাতী হলেও বাস্তবে তা মূল্যমান নিরপেক্ষ নয়। কেননা , আচরণবাদীরা মার্কিন গণতন্ত্রকেই উপযুক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে মনে করে রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করেন। 

৭. আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে অধিক মাত্রায় সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। ফলে সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন এর ফলে আচরণবাদীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলিক বৈশিষ্ট ক্ষুন্ন করেছেন। 

পরিশেষে বলা যায় , উপরোক্ত বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাগুলির জন্য আচরণবাদী আন্দোলন দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়নি। তবে , আচরণবাদী আন্দোলনের পর উত্তর - আচরণবাদী আন্দোলন শুরু হয় যা সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমন্বয়সাধন করার প্রয়াস করেছে।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক আলোচনা কর। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল ? 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য। 

Relation between political science and history . ( In Bengali ). 




রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক :- 


রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস - উভয় শাস্ত্রই সমাজ বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখা। উভয় শাস্ত্রই মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। আবার অন্যভাবে বলতে গেলে উভয় শাস্ত্রই পরস্পর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক বিচার করতে গিয়ে John Seeley মন্তব্য করেছেন - History without political science has no fruit ; Political science without history has no root. এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক অতি গভীর। 

'' History is past politics , politics is present history. '' - Freeman 

'' Political science stands midway between History and politics , between past and present. It has drawn material from the one , it has to apply them to the other. '' - Lord Bryce. 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সাদৃশ্য ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা  :- 


১. রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস উভয় বিষয়ই মানুষের সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। মানুষের রাজনৈতিক জীবন উভয় শাস্ত্রেই আলোচিত হয়। 

২. বর্তমান হল অতীতের পরিবর্তিত রূপ। আধুনিক রাষ্ট্রের যাবতীয় উপাদান ও বৈশিষ্ট লুকিয়ে আছে অতীতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইতিহাস থেকে অতীত সমাজের ধারণা গ্রহণ করে বর্তমান সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে। 

৩. ইতিহাস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বর্তমান সমাজের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি সম্পর্কে  বিশ্লেষণাত্মক আলোচনার মাধ্যমে সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এই সাধারণ সূত্রগুলির মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধান অনেকাংশে সম্ভব। 

৪. ইতিহাসের ধারণা ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা সম্পূর্ণ নয় ; আবার রাষ্ট্রনৈতিক আলোচনা ছাড়া ইতিহাস অসম্পূর্ণ। উভয় শাস্ত্র পরস্পরের উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল।  

৫. রাষ্ট্রের আলোচনাকে সম্পূর্ণতা প্রদান করতে হলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি , ইতিহাস , বিবর্তন , ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ঘটনাবলী - ইত্যাদি বিষয়গুলি সংযুক্ত করা দরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এই সকল জ্ঞান ইতিহাস থেকে লাভ করে। এইভাবে ইতিহাসের সাহায্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তার আলোচনাকে সম্পূর্ণ করে তোলে। 

৬. আবার ইতিহাসও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ , কারণ অনুসন্ধান , ফলাফল বিচার - ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করে। এইভাবে ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে রাষ্ট্র সম্পর্কে তার আলোচনাকে যুক্তিগ্রাহ্য ও রাষ্ট্রনৈতিক করে তোলে। 

৭. রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন উপাদান যথা - স্বাধীনতা ,জাতীয়তাবাদ , আন্তর্জাতিকতা , সমাজতন্ত্রবাদ - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তত্ত্বমূলক আলোচনা করে এবং এক্ষেত্রে ইতিহাসের আলোচনা মূলতঃ তথ্যভিত্তিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা বিষয়গুলি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা অর্জন করতে পারি এবং ইতিহাসের মাধ্যমে বিষয়গুলি বাস্তবে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে - সে সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে পারি। 

৮. মানুষের রাজনৈতিক জীবন ও রাজনৈতিক কার্যকলাপকে বাদ দিয়ে কোনো দেশের ইতিহাস সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারেনা। ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাছ থেকে মানুষের রাজনৈতিক জীবন , বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান , রাজনৈতিক তত্ত্ব - ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে তোলে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পার্থক্য / বৈসাদৃশ্য :- 


১. বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা :- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় ইতিহাসের বিষয়বস্তু অনেক বেশি ব্যাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধুমাত্র মানুষের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু ইতিহাস মানুষের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ , অর্থনীতি , সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। 

২. মূল্যবোধের পার্থক্য :- রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। তাই এই ধরণের আলোচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ব্যক্তিগত পক্ষপাত প্রযুক্ত হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস মূল্যবোধের আলোচনার উর্দ্ধে। ইতিহাস শুধুমাত্র প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার বিশ্লেষণ করে , ঘটনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেনা। 

৩. কাল্পনিক তত্ত্বগত পার্থক্য :- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বহু আলোচনায় কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করে। যেমন রাষ্ট্রের উৎপত্তি , জাতীয় জীবনের উৎপত্তি ও বিকাশ - ইত্যাদি সম্পর্কে বহু কাল্পনিক তত্ত্বের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ইতিহাস কখনো কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করেনা। শুধুমাত্র প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার বিবরণ দেয়। 

৪. পদ্ধতিগত পার্থক্য :- ইতিহাস তার বিষয়গুলির বর্ণনাত্মক বিবরণ দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধুমাত্র কিছু তত্ত্ব ও ঘটনা সংক্রান্ত আলোচনা করে। ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে সামাজিক জীবনের ব্যাখ্যা প্রদান করে ; কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধুমাত্র মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের উপর আলোকপাত করে। 

৫. ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- ইতিহাসের আলোচনা ধারাবাহিক ; অর্থাৎ , ইতিহাস সময়ের ধারাবাহিক ঘটনাবলীর বিবরণ দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান ধারাবাহিক বিবরণের পরিবর্তে শুধুমাত্র মানুষের রাজনৈতিক জীবনের সাথে যুক্ত ঘটনা ও বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে। 

৬. পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেবলমাত্র ইতিহাস থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেনা ; ইতিহাস ছাড়াও নৃতত্ব , দর্শন - ইত্যাদি শাস্ত্র থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু ইতিহাস অনেক বেশি করে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান , সাহিত্য - ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। 

৭. রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের আলোচনার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- মানুষের রাজনৈতিক জীবনের আলোচনা করতে গিয়ে ইতিহাস বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তত্ত্ব নির্মাণ করে। 

৮. বস্তুনিষ্ঠ ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান :- ইতিহাস হল মূলত একটি বস্তুনিষ্ঠ বা বিষয়নিষ্ঠ সমাজবিজ্ঞান। ইতিহাস কখনোই ঔচিত্যের কথা আলোচনা করেনা - সে শুধু ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রীয় জীবনের ব্যাখ্যা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে উচিত , অনুচিত ও নীতিগত দিকটিও তুলে ধরা হয়। 

পরিষেশে বলা যায় , রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও উভয় শাস্ত্রের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান - তা অস্বীকার করা যায়না ; উভয় শাস্ত্রই একে - অপরের পরিপূরক ও সাহায্যকারী। আসলে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল এবং কোনো শাখাকেই অপর শাখা থেকে পৃথক করা যায়না।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
                        
  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি - পরিধি আলোচনা কর। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা কর। 

Nature and scope of Political Science. ( In Bengali ).  



রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি - পরিধি :- 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল আলোচনা ক্ষেত্র হল সমাজ এবং সমাজে অবস্থানকারী মানুষের রাজনৈতিক আচরণ। যেহেতু সমাজ ও মানুষের আচরণ সর্বদা পরিবর্তনশীল তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয় বস্তুও পরিবর্তনশীল। মানুষের সতত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও কার্যাবলী পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা ক্ষেত্রেও গতিশীল হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি - পরিধি , আলোচনা ক্ষেত্র সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত আলোচনা :- রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভিন্ন তত্ত্ব বর্তমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত সেই সকল তত্ত্বগুলিকে তুলে ধরে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছোবার চেষ্টা করে। এছাড়াও রাষ্ট্রের বিভিন্ন উপাদান , কার্যাবলী - ইত্যাদি বিষয়েও রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। 

২. রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও বিভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা :- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। এই সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - রাষ্ট্রপতি শাসিত রাষ্ট্র , সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত রাষ্ট্র , এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার , একক পরিচালক ও বহুপরিচালক - ইত্যাদি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এই সমস্ত ধরণের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট , দোষ - গুন - ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার বিভাগ সংক্রান্ত আলোচনা :- প্রতিটি রাষ্ট্রে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত প্রধান তিনটি বিভাগ হল - আইন , শাসন ও বিচার বিভাগ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এই প্রতিটি বিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করে। প্রতিটি বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলী , গঠন , স্বাধীনতা রক্ষার শর্ত - ইত্যাদি বিষয়গুলি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় প্রাধান্য পায়।   

৪. বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদ সম্পর্কিত আলোচনা :- রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় ও উপাদান সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানগন বিভিন্ন মতবাদ তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিজের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় সেই সকল মতবাদগুলিকে স্থান দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী করে তুলেছে। মার্কস , প্লেটো ,অ্যারিস্টটল , হবস , লক , রুশো , জন মিল , গেটেল , গার্নার - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদেরা যেসকল মূল্যবান মতবাদ প্রবর্তন করেছেন - রাষ্ট্রবিজ্ঞান সেগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে। 

৫. আন্তঃবিষয়কেন্দ্রিক আলোচনা :- রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি গতিশীল সমাজবিজ্ঞান। প্রতিটি সমাজবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে ইতিহাস , সমাজতত্ত্ব , অর্থনীতি , নৃতত্ব , জন - প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সেই সম্পর্ক , তাদের মধ্যেকার সাদৃশ্য - বৈসাদৃশ্য - ইত্যাদি সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা করে। 

৬. রাজনৈতিক দল , চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী , জনমত সম্পর্কিত আলোচনা :- প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল ,চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ও জনমতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়।  রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট ও ভূমিকা , চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলী , জনমতের প্রভাব , জনমত গঠনের প্রক্রিয়া , জনমতের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির সম্পর্ক - ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আলোচনা :- প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি প্রধান কাজ হল আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অংশগ্রহন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি রাষ্ট্র তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন ধরণ , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস , বর্তমান পরিস্থিতি , বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভূমিকা - ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টিকে প্রাঞ্জল করে তোলে। 

৮. তত্ত্বগত ও ফলিত রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত আলোচনা :- সিজউইক , পোলক - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন - তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক রাজনীতি। রাষ্ট্রের উৎপত্তি , বিবর্তন , আইন , স্বাধীনতা , ন্যায় , সাম্য - ইত্যাদি হল তত্ত্বগত আলোচনা এবং সরকার , কূটনীতি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান - এগুলি হল ব্যবহারিক বিষয়বস্তু। 

৯. ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সংক্রান্ত আলোচনা :- বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির ভূমিকা - যেমন - ভোটদাতা হিসাবে ব্যক্তির ভূমিকা , প্রশাসক হিসাবে ব্যক্তির ভূমিকা - ইত্যাদি বিষয়গুলি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। আবার বেন্টলে প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে গোষ্ঠীর ভূমিকাকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। 

১০. প্রভাব ও প্রভাবশালীদের সম্পর্কে আলোচনা :- লাসওয়েল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ প্রভাব ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী সম্পর্কিত আলোচনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্থান দিয়েছেন। প্রভাবশালী গোষ্ঠী হল সেইসকল গোষ্ঠী যারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে। 

১১. বিরোধ ও অনৈক্য সংক্রান্ত আলোচনা :- রবার্ট ডাল , অ্যালান বল - প্রমুখেরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেকার বিরোধ ও অনৈক্যকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন। প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন উপাদান ও প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিরোধ ও অনৈক্য বর্তমান। সেই বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। 

১২. অতিসাম্প্রতিক পরিধি ও উত্তর - আধুনিকতা ও বিশ্বায়ন :- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  পরিধি সদা পরিবর্তনশীল। এই কারণে আধুনিক মতবাদের পর উত্তর আধুনিক মতবাদের উদ্ভব হয়। উত্তর আধুনিক বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত হল বর্তমান রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , রাজনৈতিক পরিবর্তনশীলতা - ইত্যাদি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উত্তর - আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন - এরিক হবসবম। 

১৩. মার্কসবাদ সম্পর্কিত আলোচনা :- মার্কসবাদীদের মতে , রাষ্ট্র হল শ্রেণী শোষণের যন্ত্র এবং এর ফলে রাষ্ট্রের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম ও বিপ্লব সংগঠিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মার্কসবাদের - শ্রেণী ও বিপ্লব তত্ত্ব , সাম্যবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুকে সমৃদ্ধ করেছে। 

১৪. আচরণবাদের আলোচনা :- আচরণবাদীরা গণিত , সংখ্যাতত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাকে মূল্যমান নিরপেক্ষ করে তোলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আচরণবাদী আলোচনা ও তত্ত্বগুলিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় স্থান দিয়ে আলোচনাকে মূল্যমান নিরপেক্ষ করে তুলেছে।     

পরিশেষে বলা যায় , রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাক্ষেত্রকে কোনো সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। যেহেতু রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিবর্তনশীল সমাজ থেকে তার উপাত্ত সংগ্রহ করে , সেহেতু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতাই প্রতিটি সমাজবিজ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট।       

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো               

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates