রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য।

by - April 08, 2022

রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য। 

রাষ্ট্র ও সমাজের বৈসাদৃশ্য। 

রাষ্ট্র ও সমাজের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between Society and State. ( In Bengali ). 




রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য :- 


১. প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র সৃষ্টির বহু পূর্ব হতেই সমাজের উৎপত্তি ঘটেছিল। আসলে রাষ্ট্র হল সমাজ বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়। আদিম মানবদের মধ্যেও সমাজের অস্তিত্ব ছিল। পক্ষান্তরে রাষ্ট্র অনেক নবীন বিষয়। 

২. প্রতিষ্ঠানগত পার্থক্য :- 
অনেকগুলি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি সমাজ গঠিত হয়। রাষ্ট্র হল সেই সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। সুতরাং রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের ধারণা অনেক বেশি ব্যাপক। 


৩. আইনগত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি আছে ; কিন্তু সমাজের আইনগত ভিত্তি নেই। রাষ্ট্র আইনগতভাবে সংগঠিত ; তাই রাষ্ট্রের ভেতর অবস্থানকারী জনগণ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ; কিন্তু সমাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সম্ভব নয়।  

৪. সদস্যপদের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারেন ; কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে এমন শর্ত প্রযুক্ত নয়। একজন ব্যক্তি একই সাথে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পারেন। 

৫. উদ্দেশ্যগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মূলত আইন ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে জনকল্যাণকামী আদর্শকে বাস্তবায়িত করা। বার্কার বলেছেন , রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল বৈধ উদ্দেশ্য সাধন। কিন্তু সমাজের উদ্দেশ্য বহুমুখী। একটি সমাজের মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক , ধর্মীয় , নৈতিক - ইত্যাদি বিভিন্ন ও বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধিত হয়। 

৬. পরিধিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সমাজের পরিধি রাষ্ট্রের পরিধির তুলনায় অনেক ব্যাপক। রাষ্ট্রের পরিধি কেবলমাত্র মানুষের রাজনৈতিক জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু , মানুষের সমগ্র জীবনের সমস্ত বিষয় হল সমাজের অন্তর্ভুক্ত। 


৭. নির্দিষ্ট ভুখন্ড সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ড থাকা রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্ত। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। 

৮. সরকার সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারের অস্তিত্ব বাধ্যতামূলক ; সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু সরকার কখনোই সমাজ পরিচালনা করেনা। সমাজ পরিচালনা করে সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিকভাবে। 

৯. সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের একটি মৌলিক উপাদান হল সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌম ক্ষমতার দ্বারা রাষ্ট্র তার অধীনস্থ সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব দাবী করে। প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি অপ্রয়োজনীয়। সামাজিক বিধি - নিয়ম মেনে চলতে ব্যক্তি বাধ্য থাকেনা। 

১০. কার্যপদ্ধতি ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য বলপ্রয়োগ করে থাকে। তাই মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রকে উৎপীড়নের যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেই। সমাজের নিয়ম বিধি কার্যকর হয় মানুষের স্বাভাবিক সম্মতির উপর ভিত্তি করে। 

পরিশেষে বলা যায় , রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান। রাষ্ট্র ও সমাজ এক না হলেও স্বতন্ত্রভাবে তাদের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। মানুষের সামাজিক প্রয়োজন , ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আশা - আকাঙ্খা - ইত্যাদির বাস্তবায়ন ঘটে রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমেই। আবার প্রতিটি রাষ্ট্র সামাজিক প্রথা , রীতিনীতি - ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই রাষ্ট্র ও সমাজ এক না হলেও তাদের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান। 

     

You May Also Like

0 comments