রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য।

by - April 06, 2022

রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য। 

রাষ্ট্র ও সরকারের বৈসাদৃশ্য। 

রাষ্ট্র ও সরকারের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between state and government. ( In Bengali ). 




রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য :- 


১. সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান :- 
রাষ্ট্র ও সরকারের ধারণা সমার্থক নয় ; সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান মাত্র। রাষ্ট্র একটি সামগ্রিক সত্তা , কিন্তু সরকার রাষ্ট্রের একটি অংশ বিশেষ। তাই পরিধি ও ব্যাপকতার দিক দিয়ে সরকার ও রাষ্ট্র কখনোই সমার্থক নয়। 

২. অস্তিত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র ব্যতীত সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার রাষ্ট্রের অন্তর্গত একটি সংস্থা। অপরদিকে সরকার ছাড়াও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্ভব। 


৩. জনসমষ্টিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সমগ্র জনসমষ্টি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সরকার গঠিত হয় সেই জনসমষ্টির সামান্য কিছু অংশ নিয়ে। 

৪. মূর্ততার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত বিষয় - যা একটি কল্পনা বা মানসিক বিষয়। কিন্তু সরকারের ধারণা মূর্ত এবং সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের বিমূর্ত প্রতিরূপ মূর্ত সত্তায় পরিণত হয়। 

৫. নাগরিকদের বিরোধিতার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের নাগরিকেরা কখনোই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারেনা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার অর্থ দেশদ্রোহিতা। কিন্তু জনগণ খুব সহজেই সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে , প্রয়োজনে সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে পারে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপ দাবী করতে পারে। 

৬. নীতি প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত সত্তা। তাই রাষ্ট্র কখনোই নীতি প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনা। কিন্তু সরকার জনগণের আশা - আকাঙ্খা ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন অনুযায়ী নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে। 


৭. সার্বভৌমিকতার প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র হল চরম সর্বভৌমিক সত্তা ; কিন্তু সরকারের সর্বভৌমিকতা সরকার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। সরকার রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সীমাবদ্ধরূপে সর্বভৌমিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। এখানে রাষ্ট্র হল প্রধান সংস্থা এবং সরকার তার অধীনস্থ। 

৮. স্থায়িত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্র স্থায়ী ; তার সচরাচর কোনো পরিবর্তন হয়না। কিন্তু সরকার পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার লাভ করে ; কিন্তু এতে রাষ্ট্রের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়না। সুতরাং রাষ্ট্র স্থায়ী , কিন্তু সরকার পরিবর্তনশীল। 

৯. গঠনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
গঠনগত বৈশিষ্টের দিক দিয়ে রাষ্ট্র সর্বদা এক এবং সমস্ত রাষ্ট্রই এক। কিন্তু বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের সরকার থাকতে পারে। যেমন - এককেন্দ্রিক সরকার , যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার , রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার , মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকার - ইত্যাদি। 

১০. জৈব তত্ত্ব সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
ররাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে রাষ্ট্রকে একটি জীবদেহের সাথে তুলনা করেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র হল একটি জীবদেহ এবং সরকার হল তার মস্তিস্ক। এক্ষেত্রে উভয়ে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। ঠিক যেভাবে দেহ ছাড়া মস্তিষ্কের কোনো অস্তিত্ব নেই , তেমনি মস্তিস্ক ছাড়া দেহের অস্তিত্ব অর্থহীন। সেভাবেই , রাষ্ট্র ছাড়া সরকারের অস্তিত্ব নেই , আবার সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অর্থহীন। 

১১. বৈশিষ্টগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট হল চারটি। যথা - নির্দিষ্ট ভুখন্ড , নির্দিষ্ট জনসমষ্টি , সরকার ও সর্বভৌমিকতা। অন্যদিকে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট নেই - বিভিন্ন দেশে , বিভিন্ন ধরণের সরকারের ক্ষেত্রে বৈশিষ্টের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন , যুক্তরাষ্ট্রীয় ও এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট সর্বক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। 

১২. আদর্শগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
প্রতিটি সরকারের নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ থাকে। সরকার সেই আদর্শের অনুরূপে গড়ে ওঠে এবং আদর্শগুলিকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। রাষ্ট্রীয় আদর্শ সরকারের মাধ্যমেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে। 

               

You May Also Like

0 comments