অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ত্রুটি।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার অসুবিধা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং মানবজীবনে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ভূমিকাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে যা কিছু শেখে - তা'ই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাও সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত নয়। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সীমাবদ্ধতাগুলি হল -
১. শিক্ষকের অভাব :-
উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি বড় ত্রুটি। একজন উপযুক্ত শিক্ষক একটি বিষয় বা পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সেতুবন্ধনের কাজ করে এবং শিক্ষার্থীর নিকট বিষয়টিকে সহজ ও সরল করে তোলে। ফলে একটি বিষয় বা সমস্যার অভিজ্ঞতা লাভ করা শিক্ষার্থীর পক্ষে সহজ হয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় সেই সুযোগ নেই।
২. উপযুক্ত পাঠক্রমের অভাব :-
উপযুক্ত পাঠক্রম শিক্ষার্থীর শিক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত পথে পরিচালিত করে। শিক্ষার্থীর জ্ঞান হয়ে ওঠে সুব্যবস্থিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনোরূপ পাঠক্রমের অস্তিত্ত্ব না থাকায় শিক্ষর্থীর শিক্ষা নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করা সম্ভব হয়না।
৩. মূল্যায়নহীনতা :-
মূল্যায়ণ একদিকে যেমন শিক্ষার্থীর সামর্থ্য ও দুর্বলতা শিক্ষকের নিকট উন্মোচিত করে , তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার্থীও ও সামর্থ্য ও দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় মূল্যায়ণের কোনো অস্তিত্ত্ব না থাকায় সে সুযোগ নেই।
৪. শংসাপত্রের অভাব :-
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক নয় তাই শিক্ষালাভের পর শংসাপত্রেরও কোনো অস্তিত্ব থাকেনা। কিন্তু বাস্তব জীবনে শংসাপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃত্তি ও পেশার জগৎ , সরকারি কাজকর্ম - ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই সংসাপত্রের প্রয়োজন হয়। শংসাপত্রের অভাবে শিক্ষার্থীর জ্ঞান স্বীকৃতি পায়না।
৫. বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব :-
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা শিক্ষার্থীর জীবনকে সমৃদ্ধ করলেও বাস্তব জীবনে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বড়ই অভাব। বাস্তব সমাজে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয়। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা যেহেতু শিক্ষার্থী নিজেই শেখে - তাই সেই শিক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা আজ পর্যন্ত স্বীকৃত নয়।
৬. গ্রহণযোগ্যতার অভাব :-
নির্দিষ্ট শিক্ষক , পাঠক্রম , মূল্যায়ণ - ইত্যাদি ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ঘটে এবং যেহেতু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক নয় - তাই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা কম। যেমন , কোনো শিক্ষার্থী কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্নাতকোত্তর জ্ঞান অর্জন করলেও সমাজ , কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাক্ষেত্রে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা।
৭. পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণের কুপ্রভাব :-
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা পরিচালিত হয় কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণের দ্বারা। তাই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাতে বহুক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী জ্ঞানলাভের পরিবর্তে শুধুমাত্র অনুকরণ করতে শেখে এবং সামগ্রিকভাবে বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেনা। ফলে শিক্ষার্থীর জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
৮. শিশুর সামগ্রিক বিকাশের পক্ষে উপযুক্ত নয় :-
একজন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন - মানসিক , নৈতিক , সামাজিক , জ্ঞানমূলক , বৌদ্ধিক , কৃষ্টিমূলক , বৃত্তিমূলক - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বিকাশ। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা দ্বারা কোনো অবস্থাতেই শিশুর উপরোক্ত চাহিদাগুলির পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়।
৯. অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা :-
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিশুর অভিজ্ঞতা থাকে অসম্পূর্ণ। বিষয়ের গভীরে সে জ্ঞানলাভের সুযোগ পায়না। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শুধুমাত্র অনুকরণের দ্বারা শিক্ষার্থী কিছু প্রাথমিক জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয় ঠিকই ; কিন্তু শিক্ষক , পাঠক্রম , পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদির অভাবে তাকে অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
১০. সমাজ পরিবর্তনের উপযুক্ত নয় :-
রাশিয়ার চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ভি আই লেনিন শিক্ষাকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার বলেছেন। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থী নিজের প্রয়োজনভিত্তিক কিছু তাৎক্ষণিক ও অসম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে। সমাজের গতিপ্রকৃতি , সামাজিক বিভিন্ন আদর্শ , সমাজ পরিবর্তনের রীতি , জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবন - ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কার্যকর নয়।
পরিশেষে বলা যায় , অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও শিক্ষার্থীর জীবনে এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায়না। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাও সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। তাই শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত ও অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মেলবন্ধন।