অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে ? অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।

by - February 19, 2025

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে ? অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।  

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 




অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ধারণা / সংজ্ঞা :-


অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলতে শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানগুলির উপর নিয়ন্ত্রবিহীনতা বোঝায়। আধুনিক শিক্ষার প্রধান চারটি মাধ্যম - শিক্ষার্থী , শিক্ষক , পাঠক্রম ও বিদ্যালয়। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার এই চারটি উপাদানের উপর প্রতিষ্ঠান , ব্যক্তি ও রাষ্ট্র - কেউই সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনা। অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল সেই ধরণের শিক্ষা যা কোনোকিছুর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ব্যক্তিজীবনে সংগঠিত হতে পারে। 

শিক্ষাবিদ কুম্বস বলেছেন মানুষ নিয়ন্ত্রণবিহীনভাবে যা কিছু শিক্ষা অর্জন করে - তা'ই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা। 
কোঠারি কমিশনের সম্পাদক জে পি নায়েক বলেছেন - মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজ ও পরিবেশ থেকে যা কিছু শেখে তা'ই হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা। 

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট :- 


অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি হল - 

১. নিয়ন্ত্রণবিহীনতা :-
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট হল নিয়ন্ত্রণবিহীনতা। এখানে শিক্ষার্থী তার পরিবেশ , সমাজ , প্রতিষ্ঠান - ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নিয়ন্ত্রণবিহীনভাবে শেখে। এমনকি , শিক্ষার্থী যা কিছু শেখে এবং তার মূল্যায়ণ - ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়না। 

২. জীবনব্যাপী :- 
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বয়সের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সংগঠিত হয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল জীবনব্যাপী। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পরিবেশ ও সমাজ থেকে শেখে এবং সেই অভিজ্ঞতার দ্বারা নিজের বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটায়। 


৩. পাঠক্রমের অনুপস্থিতি :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট কোনো পাঠক্রমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না। এক্ষেত্রে মানুষের সমাজ ও পরিবেশ সবকিছুই তার পাঠক্রমের অংশ। এক্ষেত্রে মানুষ নিজ প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে। 

৪. শিক্ষকের প্রয়োজনহীনতা :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষকের উপস্থিতি নিষ্প্রয়োজন। এখানে মানুষ নিজেই শেখে এবং নিজেই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। সাধারণতঃ পরিবার , গণমাধ্যম , বন্ধুগোষ্ঠী , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান , প্রকৃতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি হল অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। 

৫. পূর্বপরিকল্পনাহীন :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কোনো কিছুই পূর্বপরিকল্পিত বা সুচিন্তিত নয়। মানুষ এখানে শেখে সমাজ থেকে এবং তার পরিবেশ থেকে। তাই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় পূর্বপরিকল্পনার কোনো অবকাশ নেই। মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে নিজের প্রয়োজন অনুসারে শেখে। 

৬. পাঠ্যপুস্তকের অনুপস্থিতি :-
যেহেতু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনোরূপ পাঠক্রমের উপস্থিতি থাকেনা , তাই নিদিষ্ট পাঠ্যপুস্তকের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়না। মানুষ এখানে নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্য পুস্তক নির্বাচন করে। 


৭. মূল্যায়ণ ও পরীক্ষার অনুপস্থিতি :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না। মানুষ তার অভিজ্ঞতা নিজ বিকাশ ঘটাতে এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করে। 

৮. নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তরের অনুপস্থিতি :- 
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর থাকে। একজন শিক্ষার্থী একটি শ্রেণী থেকে অপর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়।কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় এরূপ কোনো শিক্ষাস্তরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে তার প্রয়োজনমতো যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। 

৯. স্বাধীনতা :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রায় স্বাধীন। এখানে শিক্ষার্থী নিজ সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে। বিষয় নির্বাচন , শিখন , শিক্ষা - পরিকল্পনা , শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্টকরণ - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। 

১০. কৃত্রিমতাবিহীন :- 
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল কৃত্রিমতাবিহীন স্বাভাবিক শিক্ষা। নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মত কোনোকিছুই এখানে শিক্ষার্থীর উপর কৃত্রিমভাবে আরোপ করা হয়না। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে ও স্বাভাবিকভাবে নিজ প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা অর্জন করে।    

You May Also Like

0 comments