নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে ? নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে ? নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট।
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ধারণা ও সংজ্ঞা :-
শিক্ষার বিভিন্ন রূপগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল সর্বাধিক গৃহীত এবং বিজ্ঞানসম্মত একটি ব্যবস্থা। এককথায় প্রথাগত শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠানগত শিক্ষাকেই নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলা হয়। নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সকল উপাদান সুনিয়ন্ত্রিত। এই ধরণের ব্যবস্থায় শিক্ষক , শিক্ষার্থী , পাঠক্রম ও বিদ্যালয় - সকল উপাদানগুলিই সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীর বয়স , পাঠক্রম , শিক্ষণ পদ্ধতি , পরীক্ষা ও মূল্যায়ন - ইত্যাদি সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিত। শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও পূর্বনির্ধারিত।
কোঠারি কমিশনের সম্পাদক জে পি নায়েক নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলতে সেই ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বুঝিয়েছেন যা সুনির্দিষ্ট ও সুসংবদ্ধ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়।
অক্সফোর্ড অভিধান অনুসারে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা হল যেখানে শিক্ষার প্রতিটি মুখ্য ও গৌণ উপাদানগুলি নিয়ন্ত্রিত এবং এই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ক্রমোচ্চ বিন্যাসে সজ্জিত।
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্টগুলি হল -
১. বিদ্যালয় :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে। সমাজে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরণের বিদ্যালয় রয়েছে। যেমন , প্রাথমিক বিদ্যালয় , মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ইত্যাদি। বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে প্রদত্ত নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা স্বীকৃত নয়।
২. শিক্ষক :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকেন শিক্ষক। পাঠক্রম এবং বিষয় অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের উপস্থিতি প্রতিটি বিদ্যালয়ে লক্ষ্য করা যায়। কেবলমাত্র যোগ্য শিক্ষকেরাই নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়ে পাঠদানের সুযোগ পান। নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষক পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
৩. পাঠক্রম :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত পাঠক্রমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শ্রেণীকক্ষের সকল প্রকার পঠন - পাঠন ও মূল্যায়ন সার্বিকভাবে পাঠক্রম নির্দিষ্ট। শিশুর যোগ্যতা ও চাহিদার ভিত্তিতে পাঠক্রম রচিত হয়।
৪. নির্দিষ্ট বয়স :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী বা পাঠক্রমের জন্য শিক্ষার্থীর বয়স নির্দিষ্ট থাকে। উপযুক্ত বয়সের শিক্ষার্থীরাই নির্দিষ্ট শ্রেণীতে পঠন পাঠনের সুযোগ পায়। যেমন বর্তমানে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার বয়স ছয় বছর।
৫. মূল্যায়ন ও পরীক্ষা :-
সকল প্রকার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন ও পরীক্ষা হল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাঁচাই করা হয়। বর্তমানে এককালীন পরীক্ষার পরিবর্তে সারা বছর ধরে মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে।
৬. নির্দিষ্ট লক্ষ্য :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই লক্ষ্য গুলির মধ্যে অন্যতম হল - বৃত্তিমূলক লক্ষ্য , সামাজিক লক্ষ্য , নৈতিকতার লক্ষ্য , গণতান্ত্রিক লক্ষ্য - ইত্যাদি। এই সকল প্রকার লক্ষ্যের প্রধান লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ।
৭. শৃঙ্খলা :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কঠোর শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়। পঠন - পাঠনে অংশগ্রহণ , সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী , শ্রেণী - শিক্ষণ , মূল্যায়ন - ইত্যাদি সবকিছুই পরিচালিত হয় কঠোর শৃঙ্খলার মাধ্যমে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামান্য ঘটনাও শিক্ষক - ছাত্র কারো কাছ থেকেই কাম্য নয়।
৮. নিয়মিত উপস্থিতি :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক , শিক্ষার্থী সকলেরই নিয়মিত উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। অযথা অনুপস্থিতিকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। এছাড়া নিয়মিত উপস্থিত না থাকলে শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষতা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৯. শিক্ষক - শিক্ষার্থী সম্পর্ক :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শ্রেণী শিক্ষণে ছাত্রদের কাছ থেকে সরাসরি ফিডব্যাক পাওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পাঠের কোন কোন অংশে দুর্বল তা শিক্ষকেরা সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
১০. পরিবর্তনশীলতা :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানগুলি পরিবর্তনশীল। যেমন পাঠক্রম , শিক্ষণ - পদ্ধতি , পরীক্ষা পদ্ধতি , সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি সময় ও স্থানভেদে পরিবর্তনশীল।
১১. পাঠ্যপুস্তকের উপর নির্ভরশীলতা :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যপুস্তক একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সামগ্রিক পঠন - পাঠন এবং জ্ঞানার্জন সংগঠিত হয় পাঠ্যপুস্তকের ভিত্তিতে। নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় পাঠক্রম তার বাস্তব রূপ পায় পাঠ্য পুস্তকের মাধ্যমে।
১২. রাষ্ট্রের ভূমিকা :-
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষালয়গুলি পরিচালনা , শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ , আর্থিক সংস্থান , পরীক্ষা পরিচালনা , শিক্ষক শিক্ষণ ও শিক্ষক নিয়োগ , বিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রদান , বিদ্যালয় নির্মাণ - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র সরাসরি নিজ কর্তৃত্ব আরোপ করে। এমনকী , বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত শর্তগুলি মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
0 comments