সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার নীতি।

by - November 26, 2024

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার নীতি। 




সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার নীতি :- 


বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব নীতি অনুসরণ করা উচিত সেগুলি হল - 

১. গণতান্ত্রিকতার নীতি :-
ব্যক্তি যেমন নিজ ইচ্ছায় বৃত্তি গ্রহণ করে , ঠিক সেরকমভাবেই বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে এবং সেক্ষেত্রে তার দক্ষতার বিকাশের সুযোগ তৈরী হবে। 

২. নির্দিষ্ট সময়ের নীতি  :- 
বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনা করা উচিত। এর ফলে একদিকে যেমন সকল শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে এবং নিজের পছন্দমত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করতে পারবে ; তেমনি অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। 

৩. সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্যের নীতি :- 
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে একটি সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য থাকা উচিত। সুপরিকল্পিত উপায়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনা করতে পারলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। 

৪. সুযোগ্য শিক্ষক নির্বাচনের নীতি  :- 
বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার জন্য সুযোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের একান্ত প্রয়োজন। একজন সুযোগ্য শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীর মধ্যে গঠনমূলকভাবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির রূপরেখা তৈরী করে সেগুলির যথার্থ বাস্তবায়ন ঘটাতে এবং সফলভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ করতে। 

৫. যথার্থ নেতৃত্ব নির্বাচনের নীতি  :- 
বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালিত হয়। এগুলির প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন - বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞান কর্মশালা - এই দুটি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী চরিত্রগতভাবে ভিন্ন। তাই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার সময় নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন নেতৃত্ব নির্বাচন করা উচিত। 


৬. শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের নীতি  :- 
বিদ্যালয়ে পরিচালিত বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যে কোনো এক একাধিক ক্ষেত্রে লিপ্ত হচ্ছে কি'না - সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা অনাগ্রহ , লাজুক স্বভাব , সুযোগ না পাওয়া - ইত্যাদি কারণে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করেনা। ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 

৭. উপকরণের যোগান সংক্রান্ত নীতি :- 
বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। এই সকল উপকরণগুলি বিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিমানে না থাকলে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি যথার্থভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। উপকরণগুলিই শিক্ষার্থীকে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। যেমন বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি ফুটবল থাকলে শিক্ষার্থীরা সহজেই সেই বলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। 

৮. তথ্য নথিভুক্তি ( Data record ) সংক্রান্ত নীতি  :- 
বিদ্যালয়ে পরিচালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির সম্পর্কে সকল তথ্য নথিভুক্ত রাখা উচিত। যেমন - কোন কোন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনা করা হচ্ছে , তাতে কারা কারা অংশগ্রহণ করছে , অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা কারা বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে - ইত্যাদি। এইসকল তথ্য একটি লম্বা সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট উপযুক্ত শিক্ষর্থীকে চিহ্নিত করা সহজ হবে। 

৯. পাঠক্রমকে অবহেলা না করার নীতি  :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি বৈচিত্রময় এবং শিক্ষার্থীরা সহজেই এগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনার সময় গুরুত্বসহকারে খেয়াল রাখা উচিত যাতে পাঠক্রম কোনোভাবেই অবহেলিত না হয়। কেননা , পাঠক্রম অবহেলিত হলে শিক্ষার্থী তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হবে। 

১০. শৃঙ্খলা রক্ষার নীতি  :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি আনন্দদায়ক এবং সেগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। তাই বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনার সময় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। 


১১. মূল্যায়নের নীতি  :- 
বিদ্যালয়ে পরিচালিত প্রতিটি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মূল্যায়ন হওয়া উচিত। তবে পাঠক্রমের ক্ষেত্রে যেমন মূল্যায়নের নীতি অনুসরণ করা হয় , সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে তা ভিন্নধর্মী হতে হবে। যেকোনো সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে মূল্যায়ন ও পুরস্কারের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করে তোলে। 

১২. স্থানীয় বিষয়ে গুরুত্ব প্রদানের নীতি  :- 
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিষয়গুলিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এর ফলে একদিকে যেমন স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে , তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির সঙ্গে একাত্মবোধ করতে পারবে। 

১৩. শিক্ষামূলক ভূমিকা সংক্রান্ত নীতি :- 
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে। তাই প্রতিটি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর একটি শিক্ষামূলক ভূমিকা থাকা উচিত। বিদ্যালয়ে এমন কোনো সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনা করা উচিত নয় - যা শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বহীন। 

১৪. বৈচিত্রের নীতি :-   
বিদ্যালয়ে পরিচালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি অবশ্যই বৈচিত্রময় হওয়া উচিত। তা না হলে সেগুলি শিক্ষার্থীর নিকট একঘেঁয়ে ও বিরক্তিকর হয়ে উঠবে এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বৈচিত্রপূর্ণ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। 

১৫. নমনীয়তার নীতি :- 
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পরিচালনার সময় অবশ্যই নমনীয়তার নীতি অনুসরণ করা উচিত। অনাবশ্যক কঠোরতা , কঠোর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ , শৃঙ্খলা রক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা হরণ করা - ইত্যাদি বিষয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির প্রতি অনীহা তৈরী করবে।   

You May Also Like

0 comments