সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব বা উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা কর।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব বা উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা কর।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর শিক্ষামূলক গুরুত্ব।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর শিক্ষামূলক গুরুত্ব।
১. দৈহিক ও মানসিক বিকাশ :-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী দৈহিক ও মানসিক উভয় ধরণের বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। দৈহিক সুস্থতা ও দৈহিক বিকাশকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মানসিক বিকাশ ঘটানো অর্থহীন। তাই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি শিক্ষার্থীকে দৈহিক বিকাশের পথ প্রশস্ত করে। ফলে শিক্ষার্থী উপযুক্ত জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
২. নেতৃত্বদানের শিক্ষা :-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা তৈরী করে। বিদ্যালয়ে আয়োজিত বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিতে শিক্ষার্থীদেরকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের মানসিকতা গড়ে ওঠে।
৩. মানবিক গুণাবলীর বিকাশ :-
পাঠক্রমের সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এইসকল মানবিক গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম হল - উদার মনোভাব , প্রীতি , সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা , সংবেদনশীলতা , সংবেদনশীলতা , বন্ধুপ্রীতি - ইত্যাদি।
৪. সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ :-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক গুণাবলীর বিকাশেও সহায়তা করে। এইসকল সামাজিক শিক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম হল - মত প্রকাশের ক্ষমতা , সংযোগসাধনের ক্ষমতা , সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি , পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের ক্ষমতা , নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা , সুনাগরিকের শিক্ষা , সেবামূলক মনোভাব - ইত্যাদি। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উক্ত বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা গ্রহণ করে ও সমাজে উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
৫. নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশ :-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশ ঘটাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে পালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান , ক্রীড়া প্রতিযোগিতা , সামাজিক পরিষেবামূলক কার্যাবলী - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তোলে।
৬. বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ :-
বিদ্যালয়ে পালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি চরিত্রগতভাবে বৈচিত্রময়। শ্রেণীকক্ষের কঠোরতা , মূল্যায়ন - ইত্যাদির কঠোরতা এখানে না থাকায় শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ বোধ করে। ফলে পরোক্ষভাবে বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ তৈরী হয়।
৭. শৃঙ্খলাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের বিকাশ :-
বিদ্যালয়ে পালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলির সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের উপর। ফলে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের বিকাশ গড়ে ওঠে।
৮. সৃজনশীলতার বিকাশ :-
শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সুপ্ত প্রতিভাগুলি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। সংগীত , অঙ্কন , সাহিত্য রচনা , খেলাধুলা , বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ , হাতের কাজ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর নিকট উন্মোচিত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারে।
৯. অবসর যাপনের শিক্ষা :-
অবসর যাপনের শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর জীবনের একটি মূল্যবান শিক্ষা। অবসর যাপনের শিক্ষা যথার্থ হলে শিক্ষার্থীর জীবন হয়ে ওঠে অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। সহপাঠক্রম শিক্ষার্থীদের কৃষ্টিমূলক বিকাশে উৎসাহিত করে। শিক্ষার্থী অবসর সময়ে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতাকে অনুসরণ করে। যথার্থ অবসর যাপনের শিক্ষা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
১০. জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতাবোধের শিক্ষা :-
বিদ্যালয়ে পালিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস - যেমন - স্বাধীনতাদিবস পালন , প্রজাতন্ত্র দিবস পালন , স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালন - ইত্যাদি ; এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস যেমন - বিশ্ব পরিবেশ দিবস , আন্তর্জাতিক নারী দিবস - ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতাবোধের চেতনা গড়ে ওঠে।
0 comments