পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর পার্থক্য।
পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর পার্থক্য।
পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির তুলনামূলক আলোচনা।
পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির পার্থক্য।
১. পূর্বনির্ধারিত :-
প্রতিটি পাঠক্রম পূর্বনির্ধারিত। শিক্ষার্থীদের বয়স , সামর্থ্য ইত্যাদির ভিত্তিতে সুপরিকল্পিতভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা পাঠক্রম রচিত হয়।
কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি পূর্ব নির্ধারিত হতেও পারে আবার না'ও হতে পারে। যেমন বিদ্যালয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন হল একটি পূর্বনিধারিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ; কিন্তু হঠাৎ করে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার বিষয়টি সবসময় পূর্বনির্ধারিত থাকে না।
২. মূল্যায়ণ :-
প্রতিটি পাঠক্রমের চূড়ান্ত স্তর হল মূল্যায়ণ। প্রতিটি শিক্ষার্থীর দক্ষতা যাঁচাইয়ের ক্ষেত্রে মূল্যায়ণ হল একটি প্রথাগত রীতি।
কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি বিদ্যালয়ে পালন করা হলেও সেবিষয়ে কোনো মূল্যায়ণ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয়না।
৩. তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক :-
পাঠক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকের প্রতিই গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক দিকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হলেও তাত্ত্বিক দিকটি সাধারণতঃ উপেক্ষিত থাকে।
৪. শিক্ষক :-
পাঠক্রম পরিচালনা করেন নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন এবং শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জন করেন।
কিন্তু সহকপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতা বাঞ্চনীয় নয়। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিষয়গুলি শিক্ষক , ছাত্র - সকলের দ্বারা সামগ্রিকভাবে পরিচালিত হয়।
৫. শংসাপত্র :-
পাঠক্রম হল একটি প্রথাবদ্ধ বিষয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পাঠক্রমের শেষে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হয় এবং নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী শংসাপত্র লাভ করে। এই শংসাপত্র তাকে ভবিষ্যৎ পঠন - পাঠন ও বৃত্তি ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শংসাপত্রের ব্যবস্থা থাকলেও সেই শংসাপত্র ভবিষ্যৎ পঠন - পাঠনে খুব একটা গুরুত্ব পায় না।
৬. শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ :-
পাঠক্রমে অংশগ্রহণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কর্তব্য এবং বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষার্থীকে পাঠক্রমের প্রতিটি স্তরে অংশগ্রহণ করতে হয়। যেমন বিদ্যালয়ের পঠন - পাঠন ও পরীক্ষায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু বিদ্যালয়ে পরিচালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিতে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের নিকট আবশ্যিক কর্তব্য নয়। তারা ইচ্ছা করলে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলিতে অংশগ্রহণ করতেও পারে আবার না'ও পারে।
৭. সামাজিকীকরণ :-
পাঠক্রমের একটি অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সামাজিকীকরণ। তাত্ত্বিক দিক দিয়ে সেই লক্ষ্যে পাঠক্রমের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সংযোজিত করা হলেও বাস্তবে শিক্ষার্থীর সামাজিকীকরণের বিষয়টি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমেই সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়।
৮. বৈচিত্র :-
আধুনিক পাঠক্রমে বৈচিত্রময় বিষয়ের সংযোজন ঘটানো হলেও স্বভাবগতভাবে তা শিক্ষার্থীর নিকট অতি দ্রুত একঘেঁয়ে বলে মনে হয়। কেননা পাঠক্রমের মধ্যে বৈচিত্র যতই থাকুক না কেন , প্রকৃতপক্ষে তা পঠন - পাঠন ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক।
কিন্তু বিদ্যালয়ে পালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিতে শিক্ষার্থী সর্বদা আকর্ষণবোধ করে এবং তা পরোক্ষভাবে বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
৯. সৃজনশীলতা :-
পাঠক্রমের মধ্যে বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বিষয়ের সংযোজন ঘটানো হলেও তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশে যথেষ্ট নয়।
কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলি খুব সহজেই শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তোলে। যেমন , বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে সাহিত্যপাঠ শিক্ষার্থীকে সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে - এমন সম্ভাবনা খুব কম ; কিন্তু বিদ্যালয় পত্রিকার জন্য লেখা চাওয়া হলে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা সহজেই সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে উৎসাহিত হয়ে উঠবে।
১০. নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ :-
বিদ্যালয়ে পাঠক্রম পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। এক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরভেদে নির্দিষ্ট কর্তৃত্বের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকেনা এবং এগুলি পরিচালিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ উদ্যোগে।
0 comments