অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা আলোচনা কর।

by - February 21, 2025

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা আলোচনা কর। 

শিশুশিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর। 

পরিবারের শিক্ষামূলক কার্যাবলী আলোচনা কর। 




অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা :- 


পরিবার হল শিশুর প্রথম বিদ্যালয় এবং মা হলেন তার প্রথম শিক্ষক। তাই শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবারকে বাদ দিয়ে কোনো শিশুর বিকাশ যথার্থভাবে ঘটতে পারেনা। শিশুর প্রাথমিক বিভিন্ন অভ্যাস , সামাজিকীকরণ , অক্ষরজ্ঞান , পরিবেশ জ্ঞান - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে শিশু পরিচিত হয় তার পরিবারের মাধ্যমেই।    

১. সামাজিকীকরণ :- 
জন্মের সময় শিশু থাকে একটি জৈবিক প্রাণী হিসাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে সমাজের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সে সামাজিক আচার - আচরণগুলো আয়ত্ত্ব করে। শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার শিশুকে সামাজিক নিয়ম , আদব - কায়দা , বিধি - নিষেধ - ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিতি ঘটিয়ে শিশুকে সামাজিক প্রাণীতে পরিণত করে। 

২. সু - অভ্যাস গঠন :- 
শিশু প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সু - অভ্যাসগুলির সঙ্গে পরিচিত হয় তার পরিবারের মাধ্যমেই। টয়লেটে যাওয়ার শিক্ষা , দাঁত মাজার শিক্ষা , হাত ধোয়ার শিক্ষা - ইত্যাদি বিভিন্ন সু - অভ্যাসগুলি শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশে অপরিহার্য এবং এগুলি শিশু তার পরিবার থেকেই রপ্ত করে। 


৩. প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা :- 
শিশুর প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবারের মধ্যেই। বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় , অক্ষরজ্ঞান , বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া , সংখ্যার সঙ্গে পরিচয় - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা শিশু লাভ করে তার পরিবারের মধ্যেই এবং এর মাধ্যমেই শিশু ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। 

৪. সংস্কৃতির শিক্ষা :- 
পরিবার হল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পরিবারের মাধ্যমে শিশু তার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। শিশুর ব্যক্তিত্বের যথার্থ বিকাশের ক্ষেত্রে সংস্কৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার শিশুকে তার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে একদিকে যেমন শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় , অন্যদিকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃতির সঞ্চালনের কাজ করে।          

৫. নৈতিকতার শিক্ষা :- 
শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হল শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো। প্রতিটি শিশু তার পরিবার থেকে ঠিক - ভুল , ন্যায় - অন্যায়ের জ্ঞান পেয়ে থাকে নৈতিকতার আদর্শগুলি রপ্ত করতে পারে। 

৬. পরিবেশ পরিচয় :- 
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক , পরিবেশে ঘটে চলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা - ইত্যাদি সম্পর্কে শিশুর প্রাথমিক কৌতূহল নিরসন করে পরিবার। পরিবারের মাধ্যমেই শিশু প্রকৃতির সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিচিত হতে পারে। 


৭. আত্মীয়তা :- 
পরিবারের মাধ্যমেই শিশু তার বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের আত্মীয় এবং আত্মীয়তার রীতি , আত্মীয়তা সম্পর্কের ধরণ - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশু তার পরিবার থেকেই জ্ঞান অর্জন করে। 

৮. মূল্যবোধের শিক্ষা :- 
মূল্যবোধ প্রতিটি শিশুর আদর্শ জীবন বিকাশে সহায়তা করে এবং তার জীবনকে পরিপূর্ণ রূপ প্রদান করে। মূল্যবোধ সঠিকভাবে গড়ে না উঠলে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন মানসিক ও ব্যক্তিত্বমূলক সমস্যা দেখা যায়। পরিবার থেকে প্রতিটি শিশু মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করে। 

৯. বৃত্তিমূলক শিক্ষা :-
প্রতিটি পরিবার বিভিন্ন পেশা বা বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত থাকে। শিশু ছোটবেলা থেকেই পরিবারের বড়দের বৃত্তিমূলক কাজকর্ম দেখে এবং একটি নির্দিষ্ট বৃত্তি বা পেশা সম্পর্কে অবগত হয়। তার এই অভিজ্ঞতা শিশুর পরবর্তী জীবনে বৃত্তিমূলক দক্ষতার উৎকর্ষতার উপাদান হয়ে ওঠে। 

১০. ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা :- 
ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা প্রতিটি শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশু তার পরিবার থেকে ধর্মবিশ্বাস , ধর্মীয় রীতিনীতি , ধর্মীয় উপাখ্যান , ধর্মতত্ত্ব - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা লাভ করে। 

পরিশেষে বলা যায় , শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবারের মধ্যেই। সামাজিকীকরণসহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুর জীবনে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।   

You May Also Like

0 comments