অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের ভূমিকা।

by - February 22, 2025

অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের ভূমিকা। 

শিশু শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা।

গণমাধ্যমের শিক্ষামূলক কার্যাবলী। 




অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের ভূমিকা। 


অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের উল্লেখ করা যায়। গণমাধ্যম হল সেই সকল মাধ্যম যার সাহায্যে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলি হল - সংবাদপত্র , বেতার , চলচ্চিত্র , দূরদর্শন - ইত্যাদি। গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে সমাজের এক বিরাট অংশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং মানুষ এগুলির দ্বারা জ্ঞানলাভ করে , অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং তাঁদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। 

১. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ :- 
গণমাধ্যমগুলি - বিশেষ করে দূরদর্শন , বেতার ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষ স্থানীয় , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে এবং নিজেদের জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সাম্প্রতিক সংবাদগুলি সম্পর্কে অবগত না থাকলে মানুষের জ্ঞানের জগৎ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 

২. বৃত্তিমূলক শিক্ষা :- 
বিভিন্ন সংবাদপত্র , বেতার ও দূরদর্শনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশাগত জগতের মানুষ বৃত্তি বা পেশার বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করেন। এর ফলে দর্শক বা শ্রোতা বৃত্তিমূলক জীবনের বিভিন্ন দিকগুলির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। 


৩. জনমত গঠন :- 
বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলি স্থানীয় , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদগুলি নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করে। ফলে মানুষ একদিকে যেমন সেগুলি সম্পর্কে অবগত হতে পারে , অন্যদিকে তেমনি মতামত প্রদান করতে পারে। সরকার বা রাষ্ট্র , সামাজিক নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ জনগণের মতামত গণমাধ্যম থেকেই জানতে পারে এবং নীতি নির্ধারণ করতে পারে। 

৪. ভাষার উৎকর্ষতা :- 
নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ বা সংবাদ পরিবেশন শ্রবণ করলে শ্রোতার ভাষা , শব্দের প্রয়োগ , নতুন নতুন শব্দ সম্পর্কে জ্ঞান - ইত্যাদি সম্পর্কে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যক্তির ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং ভাবের আদান - প্রদান করতে ব্যক্তি আরও দক্ষ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। 

৫. সামাজিকীকরণ :- 
প্রতিটি গণমাধ্যম ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা , সামাজিক বিভিন্ন আদর্শ , রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ - ইত্যাদি মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে সমাজ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ফলে মানুষ ও সমাজের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। 

৬. স্বল্প খরচ :- 
সকল প্রকার গণমাধ্যমগুলিকেই খুব স্বল্প খরচেই ব্যবহার করা যায়। যেমন বেশিরভাগ সংবাদপত্রের দাম অতি নগন্য। রেডিও এবং টেলিভিশন একবার কিনলে তারপর থেকে তার খরচও অতি সামান্য। তাই স্বল্প খরচ হওয়ার কারণে সমাজের সকল স্তরের মানুষ গণমাধ্যমগুলি ব্যবহার করতে পারে। 


৭. সাংস্কৃতিক বিকাশ :- 
প্রতিটি গণমাধ্যমই সংস্কৃতির সঞ্চালনে সহায়তা করে। স্থানীয় ও জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলন ঘটে গণমাধ্যমগুলির মধ্যে। ফলে মানুষ খুব সহজেই তার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং তাদের মধ্যে খুব স্বাভাবিকভাবে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। 

৮. পরিবেশ সচেতনতা :- 
গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে আমরা পরিবেশের বর্তমান গতি - প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। পরিবেশের বর্তমান সমস্যা এবং সেক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি সম্পর্কে অবগত হতে পারি। এছাড়াও গণমাধ্যমগুলিতে পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নীতি ও কর্মসূচীগুলি প্রকাশ করে। ফলে মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারে। 

৯. শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা :- 
বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলিতে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় বা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর আলোচনা , বিষয়ভিত্তিক আলোচনা - ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের উপকৃত করে। এছাড়াও নির্দিষ্ট পরীক্ষা বা বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করে। 

১০. বিজ্ঞান সচেতনতা : -
গণমাধ্যমগুলিতে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান , সংবাদ - ইত্যাদি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করে মানুষকে মানুষকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে ভাবতে শেখায়। গণমাধ্যম আধুনিক বিজ্ঞান চেতনাকে উৎসাহিত করে এবং সাম্প্রতিকতম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রয়োগ সম্পর্কে মানুষকে অবগত করে তোলে। 

১১. বৈচিত্রপূর্ণ :- 
গণমাধ্যমগুলিতে পরিবেশিত অনুষ্ঠান বা সংবাদ কোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটেনা। শিক্ষা , সংস্কৃতি , বিজ্ঞান , বিনোদন , ক্রীড়া , রাজনীতি , অর্থনীতি , সরকারি নীতি ও কর্মসূচি , সাহিত্য - মানবজীবনের প্রায় সকল অঙ্গ নিয়েই অনুষ্ঠান বা সংবাদ পরিবেশিত হয়। এই বৈচিত্রপূর্ণ বৈশিষ্টের জন্য সকল বয়স ও শ্রেণীর মানুষ গণমাধ্যম থেকে শিক্ষা লাভ করে। 

১২. সঙ্গতিবিধান :- 
সমাজ সর্বদা গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। দেশ ও কাল ভেদে সমাজে কোথায় কী পরিবর্তন হচ্ছে , কোথায় কোন ভাবধারা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বর্জন করা হচ্ছে - ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে মানুষ গণমাধ্যম থেকে জানতে পারে। ফলে পরিবর্তনশীল সমাজ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ সঙ্গতিবিধান করতে পারে। 

পরিশেষে বলা যায় গণমাধ্যম কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদ বা অনুষ্ঠনে সর্বদা যে নিরপেক্ষভাবে পরিবেশিত হয় - তা কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তা রাজনৈতিক ও আদর্শগত পক্ষপাতদুষ্ট। ফলে গণমাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা উচিৎ।       

You May Also Like

0 comments