অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা।
গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা।
শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রধানতঃ চারটি গণমাধ্যমের উল্লেখ করা যেতে পারে - বেতার , দূরদর্শন , সংবাদপত্র ও চলচ্চিত্র। এছাড়া বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া - একটি অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমগুলির বিবিধ ইতিবাচক দিক থাকলেও তার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতাগুলি হল -
১. নিরপেক্ষতার অভাব :-
বর্তমানে গণমাধ্যম কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদগুলি অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে। রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অধিকাংশ মিডিয়া হাউসগুলি পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশন করছেন। ফলে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত সংবাদ থেকে। বহুক্ষেত্রেই সামাজিক ঘটনাপ্রবাহগুলির বিকৃত পরিবেশন ঘটছে।
২. আরোপিত জনমত :-
পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের ফলে জনমত ভুলপথে পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দল , কর্পোরেট হাউসগুলি নিজেদের স্বার্থে গণমাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করছে এবং একটি নির্দিষ্ট পক্ষে জনমতকে প্রভাবিত করছে। এই আরোপিত জনমত জাতীয় নীতি ও কর্মসূচিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে এবং গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলেছে।
৩. বিদ্যুৎ নির্ভরশীলতা :-
একমাত্র সংবাদপত্র বাদ দিলে অন্যান্য সকল প্রকার গণমাধ্যম বিদ্যুৎ নির্ভর। ফলে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই - সেই সকল এলাকার মানুষ গণমাধ্যমগুলির সুফল ভোগ করতে পারেন না। ফলে প্রচলিত সামাজিক ভাবধারা থেকে তাঁরা পিছিয়ে পড়েন।
৪. কুরুচিকর চলচ্চিত্র :-
আজকাল বাণিজ্যিক স্বার্থে এমন বহু চলচ্চিত্র তৈরী হচ্ছে যা গণশিক্ষার পরিবর্তে জনগণকে ভুলপথে পরিচালিত করছে। অপ্রয়োজনীয় হিংস্রতা , যৌনতা , যৌন পণ্য হিসাবে নারীদের উপস্থাপন - এইসকল বিষয়গুলি দর্শকের মনকে অসামাজিক ও বিকৃত করে তোলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চলচ্চিত্র তার শিক্ষামূলক ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।
৫. বিজ্ঞাপনের আধিক্য :-
বহুক্ষেত্রেই গণমাধ্যমগুলি পরিচালিত হয় বিজ্ঞাপনের টাকায়। কিন্তু বর্তমানে গণমাধ্যমগুলিতে বিজ্ঞাপনের হার এতটাই বেড়েছে যে প্রকৃত সংবাদ বা অনুষ্ঠান উপেক্ষিত হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন সংবাদপত্র ও দূরদর্শনের পরিসরকে সংক্ষিপ্ত করে তোলে ; সংবাদ পরিবেশনের জায়গা ও সময় কমে যায়।
৬. পীত সাংবাদিকতা :-
বর্তমানে বহু সংখ্যক সাংবাদিক সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য প্রকৃত সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে সংবাদকে একটি মনোরঞ্জনের মোড়কে প্রকাশ করার প্রতিযোগিতায় মেতেছেন। এই পীত সাংবাদিকতা সাংবাদিক আদর্শের পরিপন্থী এবং এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দর্শক , পাঠক ও শ্রোতাদের।
৭. শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের অভাব :-
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি মিডিয়া হাউস কর্পোরেট জগতের সদস্য। ফলে প্রতিটি গণমাধ্যমে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে খুব কম। সকল গণমাধ্যম বর্তমানে মানুষের বিনোদনের চাহিদা পরিতৃপ্ত করতে ব্যাস্ত। ফলে বর্তমান সময়কালে গণমাধ্যমকে কেবলমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
৮. গ্ল্যামার , অর্থ ও যশের হাতছানি :-
ইন্টারনেট নির্ভর সামাজিক মাধ্যমগুলি শিশু ও কিশোর মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সামাজিক মাধ্যমগুলি থেকে অভিজ্ঞতালাভ , জ্ঞানার্জন , তথ্য সংগ্রহ - ইত্যাদির পরিবর্তে সামাজিক মাধ্যমগুলি প্রতিষ্ঠা ও অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদের ভয়ঙ্কর হাতছানি দিচ্ছে। কলুষিত হচ্ছে শৈশব ও কৈশোর। শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবন ভুলে গিয়ে রুপোলি পর্দার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।
৯. অনুকরণ :-
চলচ্চিত্র , সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রদর্শিত - অন্ধকার জগৎ , বলপ্রয়োগ , যৌনতা , মাদক সেবন - ইত্যাদিকে বহু শিক্ষার্থী আধুনিকতা বলে মনে করছে এবং এইসকল অভ্যাসগুলি অনুকরণ করতে চাইছে। ফলে জাতির মেরুদন্ড হিসাবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা ভয়ঙ্কর প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়েছে।
১০. সময়ের অপচয় :-
সোশ্যাল মিডিয়া , চলচ্চিত্র - ইত্যাদি মাধ্যম থেকে বহু শিক্ষার্থী স্থুল আনন্দ খোঁজার তাগিদে ঘন্টার পর ঘন্টা অপচয় করে। ফলে একদিকে যেমন বিঘ্নিত হয় তাদের শিক্ষা অন্যদিকে বাস্তব সমস্যাকে উপেক্ষা করে তারা অলীক কল্পনার জগতে বাস করতে পছন্দ করে।
পরিশেষে বলা যায় , অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু তার নেতিবাচক দিকগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়া দরকার ও গণমাধ্যম ব্যবহার করার পূর্বে সতর্ক থাকা দরকার।
0 comments