নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা।

by - February 24, 2025

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষামূলক ভূমিকা। 

শিশু শিক্ষায় বিদ্যালয়ের ভূমিকা। 




নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা। 


নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান উপাদান হল বিদ্যালয়। নিজের জীবনের একটি বড় সময় শিশু বিদ্যালয়ে অতিবাহিত করে। শিশুর জ্ঞানের বিকাশ , বৌদ্ধিক বিকাশ , সামাজিকীকরণ এবং সর্বোপরি ব্যক্তিত্বের বিকাশ - ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে বিদ্যালয় হল একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। একটি শিশুর জীবনে বিদ্যালয়ের ভূমিকা বহুমুখী এবং এর প্রধান লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। 

১. জ্ঞানার্জন ও বৌদ্ধিক বিকাশ :- 
শিশুর সকল চাহিদার মধ্যে একটি অন্যতম হল জানার চাহিদা। বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণীতে শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যেহেতু এটি নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম , তাই জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে শিশু যাতে বৈচিত্রময় জ্ঞানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে - সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়। এই বৈচিত্রপূর্ণ জ্ঞানার্জনের ফলে শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে। 

২. সামাজিকীকরণ :- 
বিদ্যালয় হল সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। একটি শিশু তার পরিবারের বাইরে বিদ্যালয়ের মাধ্যমেই বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। বিদ্যালয়ের পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীগুলির মাধ্যমে শিশু তার সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে অবগত হয়। সামাজিক নিয়ম , স্বীকৃত আচার - আচরণ , নৈতিকতা - ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। এইভাবে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে। 


৩. ব্যক্তিত্বের বিকাশ :- 
প্রতিটি শিশুর চাহিদা , সামর্থ্য , মেধা , রুচি ও আগ্রহ - ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন। শিশুর মধ্যে যেসকল সম্ভাবনা থাকে সেগুলিকে চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই সকল সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করা - হল বিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বিদ্যালয় শিশুর সামাজিক , প্রক্ষোভিক , মানসিক , নৈতিক , কৃষ্টিমূলক - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটিয়ে শিশুকে উপযুক্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তোলে। 

৪. গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ :- 
বিদ্যালয়ের পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে খুব সহজেই শিশুর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটে। গণতান্ত্রিক আদর্শের বিভিন্ন বৈশিষ্ট , গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে মানুষ অবগত হতে পারে। 

৫. সৃজনশীলতা ও কৃষ্টিমূলক বিকাশ :- 
বিদ্যালয় জীবনে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের আগ্রহ , সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হতে পারে ; যেমন - সাহিত্যচর্চা , আবৃতি চর্চা , অঙ্কন , নৃত্য , ভাস্কর্য , ক্রীড়া। শিক্ষার্থী বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এইসকল কর্মকান্ডে নিযুক্ত হয়ে নিজেদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারে। 

৬. সু - অভ্যাস গঠন :- 
শিক্ষার্থীরা যাতে উপযুক্ত প্রাত্যহিক অভ্যাস রপ্ত করতে পারে - সেবিষয়ে বিদ্যালয় কঠোর দৃষ্টি রাখে। যেমন - বইপত্র যত্ন করা , জামা - কাপড় পরিষ্কার রাখা , নখ - চুল সঠিক রাখা , হাত ধোয়া - ইত্যাদি বিষয়গুলি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে রপ্ত করে ফেলে। 


৭. পরিবেশ সচেতনতা :- 
প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পরিবেশের বর্তমান সমস্যাগুলি কী কী , সেই সমস্যা দূর করতে শিক্ষার্থীদের কর্তব্য কী - এইসকল বিষয়ে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সচেতন করে। আজকের পরিবেশ সচেতন শিক্ষার্থীদের দ্বারা আগামীদিনে পরিবেশ সংরক্ষিত হবে - এমনটা আশা করা যায়। 

৮. সাংস্কৃতিক বিকাশ :- 
প্রতিটি সমাজের একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি থাকে। বিদ্যালয় থেকে প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজেদের স্থানীয় সংস্কৃতি ও জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। এইভাবে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংস্কৃতির সঞ্চালন ঘটে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে চালিত হয়। 

৯. জাতীয় চেতনার বিকাশ :- 
বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে জাতির ইতিহাস , প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ভূগোল , স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস , জাতীয় ঐতিহ্য - এইসকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে - যা শিক্ষার্থীদের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সহায়তা করে। 

১০. আন্তর্জাতিকতাবোধের বিকাশ :- 
বিদ্যালয়ের পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন , তাদের লক্ষ্য - উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি - ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। ফলে এইসকল বিষয় পাঠের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর চেতনা আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হয় এবং তাদের আন্তর্জাতিকতাবোধের বিকাশ ঘটে। 

১১. মূল্যায়ন :- 
মূল্যায়ন বিদ্যালয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মূল্যায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষক জানতে পারেন শিক্ষার্থীদের মেধা ও দুর্বলতার দিকগুলি এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীও নিজেদের দক্ষতা ও দুর্বলতার বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। ফলে মূল্যায়ন শিক্ষার্থীকে আত্মসমীক্ষায় সহায়তা করে। 

১২. বৃত্তিমূলক বিকাশ :- 
শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তিমূলক বিকাশ ঘটানো। বৃত্তি ও পেশা জগতের বিভিন্ন দিকগুলি বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিকট উন্মোচিত করে। শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দমত কোনো একটি বৃত্তি বা পেশাতে নিজেকে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে নিজেকে যোগ্য করে তোলার প্রস্তুতি নিতে পারে।  

You May Also Like

0 comments