Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

গান্ধীজির সত্যাগ্রহ নীতির অর্থ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর। 




সত্যাগ্রহের অর্থ ও প্রকৃতি :- 

গান্ধীজির রাজনৈতিক তত্ত্বের অন্যতম প্রধান নীতি হল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ। সত্যাগ্রহ হল এক সুসংহত জীবনদর্শন ; সত্য প্রতিষ্ঠার নৈতিক সংগ্রামে এক নিরস্ত্র প্রতিরোধ। 
গান্ধীজি তাঁর হিন্দ - স্বরাজ এ সত্যাগ্রহের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন , সত্যাগ্রহ হল ব্যক্তির আত্মপীড়নের মাধ্যমে স্বাধিকার অর্জনের এক প্রচেষ্টা। 
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ গান্ধীজির সত্যাগ্রহকে ব্রিটিশের বিপক্ষে চালিত রাজনৈতিক সংগ্রামের এক কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু গান্ধীজির মতে , সত্যাগ্রহ ছিল সত্য , অহিংসা ও আত্মত্যাগের যোগফল। তাঁর মতে , সত্যাগ্রহ বলতে বোঝায় সকল অন্যায় , অবিচার , নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে পবিত্র আত্মশক্তির প্রতিরোধ। তাঁর ভাষায় '' Satyagraha means the exercise of the purest soul - force against all injustice , oppression and exploitation .'' 
গান্ধীজি মনে করতেন , সত্যাগ্রহ হল যেকোনো ব্যক্তির এক সহজাত জন্মগত অধিকার। এ শুধু পবিত্র অধিকার নয় , পবিত্র কর্তব্যও। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সত্যাগ্রহের প্রকৃতি :- 

গান্ধীজি তাঁর রচনায় সত্যাগ্রহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যেসব দিকের কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - 

১. আত্মিক শক্তির সংগ্রাম :- 
গান্ধীজির মতে , সত্যাগ্রহ হল আত্মিক শক্তির এক সংগ্রাম। এ হল এমন এক ধরণের সংগ্রাম যেখানে প্রচলিত অর্থে জয় - পরাজয় বলে কিছু নেই। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই হল এই সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য। 

২. নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয় , সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার :- 
গান্ধীজির অভিমত অনুসারে সত্যাগ্রহ নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয় , এ হল সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায়কে অস্বীকার করার সংগ্রাম। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ হল দুর্বল , ভীরু ও কাপুরুষের অস্ত্র , সত্যাগ্রহ তা নয়। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিপক্ষের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ থাকতে পারে , তবে সত্যাগ্রহে এসবের স্থান নেই। সত্যাগ্রহ হল সদিচ্ছা ও ভালোবাসার সাহায্যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়কে অস্বীকার করার এক পদ্ধতি। 

৩. জন্মগত অধিকার :- 
গান্ধীজি মনে করতেন , সত্যাগ্রহ হল মানুষের সহজাত জন্মগত অধিকার। এ হল প্রতিটি মানুষের কাছেই জন্মগতভাবে এক অর্জিত অধিকার। এই কারণে গান্ধীজি একে পবিত্র অধিকার ও পবিত্র কর্তব্য বলে অভিহিত করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪. সত্যাগ্রহ ও প্রতিপক্ষ :- 
প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘাতের পথে গিয়ে তার ওপর চরম আঘাত হানা সত্যাগ্রহের কাজ নয়। সত্যাগ্রহের পথ আলাদা। সেখানে অহিংসা , প্রেম ও ভালোবাসার সাহায্যে প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করাই হল এর মূল উদ্দেশ্য। তাই গান্ধীজি সত্যাগ্রহীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন , এ কাজে অধৈর্য হলে চলবে না। অধৈর্য হওয়ার অর্থ হল হিংসার আশ্রয় গ্রহণ করা। অন্যায়কারী প্রতিপক্ষকে বিব্রত করার মনোভাব সত্যাগ্রহীদের থাকা উচিত নয়। 

৫. একটি সৃজনশীল পদ্ধতি :- 
গান্ধীজি মনে করতেন , সত্যাগ্রহ হল এক সৃজনশীল পদ্ধতি। আপাতদৃষ্টিতে সত্যাগ্রহীদের কিছু দাবী আদায় করার লক্ষ্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষের মনে শুভবোধ জাগ্রত করে তার হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটানো। এই কারণে সত্যাগ্রহকে একটি সৃজনশীল পদ্ধতি বলে অভিহিত করা হয়। গান্ধীজি এ কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন , সত্যাগ্রহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় , ব্যক্তির নীতি , কর্মপদ্ধতি ও অনৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধে। 

৬. সত্যাগ্রহ দুর্বলের জন্য নয় :- 
গান্ধীজি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন , সত্যাগ্রহে দুর্বলতা , ভীরুতা ও কাপুরুষতার কোনো জায়গা নেই। তাঁর মতে , যারা ভীরু , কাপুরুষ ও দুর্বল তারা আর যাই হোক সত্যাগ্রহী হতে পারবে না। সত্যাগ্রহের অর্থ সত্যকে জয় না করা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য। এই কাজ দুর্বলচিত্ত মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সত্যাগ্রহ ও অহিংসা :- 
সত্যাগ্রহের সঙ্গে অহিংসার একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। সত্যাগ্রহী কখনও হিংসাকে প্রশ্রয় দেবে না। সে হবে অহিংসার পূজারি। প্রতিপক্ষকে সে ঘৃণা করবে না , তেমনি তাকে অতিরিক্ত শ্রদ্ধাও করবে না। এভাবে অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করার জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এছাড়া গান্ধীজি সত্যাগ্রহীদের আত্মপীড়ণের জন্য তৈরি থাকতেও বলেছিলেন। তিনি মনে করতেন , অন্যায়ের প্রতিরোধ করার জন্য সত্যাগ্রহী আত্মবিসর্জন দিতেও বিন্দুমাত্র ভয় পাবে না। 

৮. সত্যাগ্রহের বিধি :- 
গান্ধীজি তাঁর রচনায় সত্যাগ্রহের বিধি সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন , একজন সত্যাগ্রহী প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করতে কখনোই শঙ্কিত হবে না। প্রতিপক্ষ যদি তাকে কুড়িবারও ঠকায় বা আঘাত করে , তবুও একুশবার সত্যাগ্রহী প্রতিপক্ষকে বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। কারণ সত্যাগ্রহের আদর্শের মূলকথা হল মানুষের প্রকৃতিতে নিয়ত আস্থা রাখা। 

৯. সত্যাগ্রহের কলাকৌশল :- 
গান্ধীজি সত্যাগ্রহের কলাকৌশলের কথাও লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কৌশল হল - 
(ক ) বিবেকের বিরুদ্ধে কোনো কিছু না করা। 
(খ ) প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়া। 
(গ ) বিজয়ীর আধিপত্যের সামনে মাথা নত না করা। 
(ঘ ) জনগণের কাছে যে বিষয়গুলি মৌলিক গুরুত্বের-সেগুলি কষ্ট স্বীকারের মধ্যে দিয়ে অর্জন করা। 
(ঙ ) সত্যাগ্রহে উচ্ছৃঙ্খলতার কোনো স্থান নেই। 
(চ ) সত্যাগ্রহের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করতে এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত থাকা। 

১০. সত্যাগ্রহের চরিত্র :- 
গান্ধীজি বলেছেন , সত্যাগ্রহের চরিত্রই হল সত্যাগ্রহের সৌন্দর্য , এটা আপনা - আপনিই আসে , এর সন্ধান করতে হয়না। নিরন্তর সত্য সন্ধান ও সত্যে উপনীত হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্তের নামই সত্যাগ্রহ। 

গান্ধীজি বিনয় ও নম্রতাকে সত্যাগ্রহের সর্বাপেক্ষা কঠিন অংশ বলে মনে করতেন। ১৯২৫ সালের ১৯ মার্চ গান্ধীজি তাঁর সম্পাদিত " Young India " পত্রিকায় লিখেছেন , সত্যাগ্রহীদের নিজ পদ্ধতির ওপর অখন্ড বিশ্বাস ও অসীম ধৈর্য থাকতে হবে। সত্যাগ্রহের মূলে আছে মানব চরিত্রে বিশ্বাস , অন্যায়কারীদের মনে ন্যায়বোধ ও শুভবুদ্ধি জাগ্রত করা। গান্ধীজি কর্তৃক অনুসৃত সত্যাগ্রহের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল - সত্য , অহিংসা ও আত্মনিয়োগ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

গান্ধীজির রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্রগুলি আলোচনা কর। 





গান্ধীজির রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্র :- 

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি কোনো রাষ্ট্র - দার্শনিক ছিলেন না। কোনো সুসংবদ্ধ ও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক তত্ত্ব বা দর্শন তিনি গড়ে তোলেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছেন , '' গান্ধীবাদ বলে কোনোকিছুই নেই। আমার পরে কোনো বিশেষ সম্প্রদায় রেখে যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। নতুন কোনো মৌলিক নীতি বা আদর্শের স্রষ্টা হিসেবে আমি কিছু দাবি করি না। আমি কেবল আমার নিজের মতো করে শাশ্বত সত্যকে আমার দৈনন্দিন জীবন ও সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করেছি। '' 
পরবর্তী সময়ে গান্ধীজির অনুগামীরা তাঁর মতামত ও বক্তব্য সংকলন করে গান্ধীবাদ নামে একটি রাজনৈতিক দর্শন প্রচার করেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যাগ্রহকে কার্যোপযোগী করাই হল গান্ধীজির সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। গান্ধীজির রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্রগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


১. অহিংসা :- 
গান্ধীজির মতাদর্শের অন্যতম মূলনীতি হল অহিংসা। সাধারণভাবে অহিংসা বলতে অপরের প্রতি হিংসা না করা বোঝায়। গান্ধীজির মতে , অহিংসা বলতে ' চরমতম স্বার্থহীনতা'কে বোঝায়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে অহিংসা হল ' ইতিবাচক ভালোবাসা '। অহিংসা দুর্বলতা নয় , অহিংসা এক নৈতিক শক্তি , এক সদর্থক ধারণা। 

২. সত্যাগ্রহ :- 
আভিধানিক অর্থে সত্যাগ্রহ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ। গান্ধীজির সত্যাগ্রহের আদর্শ হল সত্যের জন্য তপস্যা , অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। সত্যাগ্রহ দুর্বলের অস্ত্র নয় , এটি একটি আত্মিক শক্তি। সত্যাগ্রহে কাপুরুষতা বা ভীরুতার কোনো স্থান নেই। গান্ধীজির সত্যাগ্রহ হল এমন এক আদর্শ যেখানে প্রেম ও ভালোবাসার সাহায্যে প্রতিপক্ষের হৃদয় পরিবর্তন করা যায়। সত্যাগ্রহের পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে প্রতীকী বা আমরণ অনশন , অসহযোগ আন্দোলন , আইন অমান্য আন্দোলন , সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৩. সর্বোদয় :- 
সর্ব এবং উদয় এই দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত হয় সর্বোদয়। সর্বোদয়ের আক্ষরিক অর্থ হল সকলের কল্যাণ ( Uplift for All ) । সমাজে এক উন্নত নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা সর্বোদয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। সত্য , অহিংসা এবং সৎ উপায়ের সাহায্যে এই পরিবেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে গান্ধীজি মনে করতেন। অনাড়ম্বর জীবনযাপন ও মহৎ চিন্তার মাধ্যমে পারস্পরিক প্রেমবন্ধন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সর্বোদয় সমাজ গঠন করা সম্ভব। সর্বোদয়ে গ্রামভিত্তিক সভ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সর্বোদয় অর্থনীতি হবে কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পনির্ভর। আধুনিক বৃহৎ শিল্প সভ্যতাকে সর্বোদয় সমর্থন করেনা। 

৪. রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা :- 
গান্ধীজির মতে , বলপ্রয়োগ হল আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। রাষ্ট্র যে চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একটি প্রতিষ্ঠান - একথা গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন না। তিনি সম্পূর্ণ নৈতিক কর্তৃত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত জনগণের সর্বভৌমিকতায় আস্থাশীল ছিলেন। তিনি মনে করতেন , সেই রাষ্ট্রই সবচেয়ে ভালো যা সবচেয়ে কম শাসন করে। এভাবে গান্ধীজি রাষ্ট্রের কর্মপরিধিকে সীমিত রাখতে চেয়েছিলেন। আদর্শ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় '' রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র '' থাকবে বলে গান্ধীজি মনে করতেন। রাষ্ট্রহীন এই গণতন্ত্র হল গান্ধীজির রামরাজ্য যাকে গ্রামভিত্তিক করে তুলতে তিনি পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থা পত্তনের কথা বলেছিলেন। 

৫. স্বরাজ সম্পর্কিত ধারণা :- 
স্বরাজ কথাটির অর্থ হল স্ব - রাজ্য বা স্ব - শাসন। সাধারণ অর্থে স্বরাজ হল পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি। তাঁর মতে , স্বরাজ হল এক আদর্শ মানবসমাজ , এক উন্নততর সামাজিক অবস্থা , যার মূল ভিত্তি হল পরিপূর্ণ সামাজিক সাম্য , স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার। গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন , একটি জাতির জন্য স্বরাজের অর্থ হল সেই জাতির আত্মঅনুশাসন। 

৬. গ্রামীণ পুণর্গঠনের ধারণা :- 
কৃষিপ্রধান ভারতের উন্নয়নের জন্য গান্ধীজি গ্রামীণ পুনর্গঠনের ধারণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন , ভারতের প্রাণশক্তি গ্রামগুলির উন্নতির মধ্যে নিহিত রয়েছে। গ্রামীণ ভারতের পুনর্গঠনের জন্য গান্ধীজি যে বিষয়গুলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন , তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সমবায় প্রথার প্রচলন , জমিদারি প্রথার সংস্কার , গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ , গ্রাম স্বরাজ , স্বাবলম্বন প্রভৃতি।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

 

৭. গণতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণা :- 
গান্ধীজির মতে , প্রকৃত গণতন্ত্র কখনও অসত্য ও সহিংস পথে আসতে পারেনা। গণতন্ত্র ও হিংসা পাশাপাশি চলা দুস্কর। পশ্চিমের গণতন্ত্রকে তিনি '' নামমাত্র গণতন্ত্র '' বলেছেন। গণতন্ত্রে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে গান্ধীজির অভিমত ছিল , মানুষ হিসেবে যারা ভালো ও খাঁটি তাদের মধ্যে থেকেই প্রতিনিধি বাছাই করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়না বলে তিনি আধুনিক গণতন্ত্রকে প্রকৃত গণতন্ত্রের মর্যাদা দেননি। গণতন্ত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। পারস্পরিক সহনশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ গণতন্ত্রের ভিত্তি বলে গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন। গান্ধীজি পঞ্চায়েতিরাজ থেকে এই গণতন্ত্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। 

৮. অছি সম্পর্কিত তত্ত্ব :- 
গান্ধীজির অছি - সম্পর্কিত তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল , সমাজের ধনী ব্যক্তিরা তাদের ন্যূনতম চাহিদা মিটিয়ে সম্পদের বাকি অংশটুকু সর্বসাধারণের জন্য দান করবে। অছি হিসেবে তারাই অতিরিক্ত সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে সমস্ত রকম শ্রেণিদ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং সমাজে নৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। গান্ধীজির মতে , অছি - রক্ষণ বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজকে সাম্যবাদী পরিবর্তিত করার উপায়। এই ব্যবস্থা পুঁজিবাদকে সমর্থন করেনা , কিন্তু বর্তমান মালিকশ্রেণিকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয়। 

৯. জাতীয়তাবাদ - সম্পর্কিত ধারণা :- 
জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে গান্ধীজি বলেছিলেন যে , তাঁর কাছে দেশপ্রেম ও মানবতা সমার্থক। তাঁর মতে , ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী বা ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির নয়। সংকীর্ণ জাতিবিদ্বেষ বা উগ্র স্বাদেশিকতাকে জাতীয়তাবাদে স্থান দেননি গান্ধীজি। তাঁর চিন্তাধারায় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনো বিরোধ ছিলনা। 

পরিশেষে বলা যায় যে , গান্ধীজির সত্যাগ্রহ তত্ত্বটিকে অনেকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। সৈয়দ শাহেদুল্লার মতে , গান্ধির সত্যাগ্রহ হল এমন একটি বুর্জোয়া প্রতারণার ফাঁদ , যা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি ক'রে জনসাধারণের ক্রোধ ও ঘৃণাকে বিপথে পরিচালিত করেছিল। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে , গান্ধী তাঁর মনোনীত সত্যাগ্রহী নামধারী প্রবর বা এলিটদের নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করাকে নিরাপদ বলে মনে করতেন। 

কিন্তু উপরিউক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও গান্ধীজির সত্যাগ্রহ ধারণার ইতিবাচক দিকটিকে কোনোমতেই উপেক্ষা বা অস্বীকার করা যায়না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলন , আইন অমান্য আন্দোলন - ইত্যাদি অহিংস আদর্শের ভিত্তিতে কার্যত গণ আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল। রেজাউল করিম বলেছেন যে , গান্ধীজি ভারতবর্ষকে যে সত্যাগ্রহের আদর্শ দিয়েছেন , তা একটি পরিপূর্ণ জীবনদর্শন। কেননা , স্বাধীনতা লাভই সত্যাগ্রহের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। সেই সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত ছিল চিত্তশুদ্ধি , সাম্প্রদায়িক ঐক্যসাধন , কুটিরশিল্পের উন্নতিসাধন এবং মানুষের জীবনের নৈতিক চরিত্র গঠন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যাগ্রহকে কার্যোপযোগী করাই হল তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান।        

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

     
    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কর। 


রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব :- 


বিশ্বায়নের ধারণা :- 

বিশ্বায়ন বা Globalization বিষয়টিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। বিশ্বায়ন কোনো আকস্মিক প্রক্রিয়া নয় , তা বহু পূর্ব থেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিসমাপ্তির পরে বিশ্বায়ন পরিভাষাটির প্রয়োগ নতুন মাত্রা পায়। জোসেফ স্টিগলিট্স এর মতে , বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এক নিবিড় সংযোগসাধনের প্রক্রিয়া। রোল্যান্ড রবার্টসনের মতে , বিশ্বায়ন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা সম্প্রসারণের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। 
এককথায় বলতে গেলে , বিশ্বায়ন হল বিশ্বব্যবস্থা সম্প্রসারণের এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা রাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত সংকীর্ণ ধারণার অবসান ঘটে এবং অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অবাধ আদান প্রদানের পথ সুগম হয়। পুঁজির অবাধ চলাচল , মুক্ত বাজার অর্থনীতি , উদারীকরণ এবং বেসরকারিকরণ প্রভৃতি বিষয় বিশ্বায়নের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। IMF , World Bank , WTO - ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নকে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


সার্বভৌমিকতার ধারণা :- 

আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক ও তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান হল সার্বভৌমিকতা। সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা বোঁদা -র মতে , Sovereignty is the supreme and perpetual power of state  । রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা চরম , অবাধ , অসীম এবং অবিভাজ্য। রাষ্ট্র ছাড়া কোনো সংঘ বা প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ ক্ষমতা ভোগ করার অধিকার নেই। 
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা অনুযায়ী রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে চরম ক্ষমতার অধিকারী ; রাষ্ট্রীয় নির্দেশ বা আদেশ রাষ্ট্রে অবস্থিত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রযোজ্য হয়। আবার বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা অনুসারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব :- 


১. জাতি রাষ্ট্রের সংকট :- 
রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন জাতি - রাষ্ট্রের সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে মনে করেন। জাতি রাষ্ট্রগুলির সাবেকি চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ধারণা বিশ্বায়নের যুগে বহুলাংশে অচল হয়ে পড়েছে। বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করে রাষ্ট্রকে একটি বাজারকেন্দ্রিক  সংগঠনে পরিণত করেছে। 

২. সার্বভৌমিকতার চিরাচরিত ধারণার অবসান :- 
অধ্যাপক হলটন তাঁর Globalization and the Nation State গ্রন্থে জাতি - রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন , জাতি রাষ্ট্রগুলি যে পৃথিবীতে বাস করে তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্বায়ন হল সেই পরিবর্তনের একটি প্রধান উৎস। বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিক জাতি - রাষ্ট্রগুলির ভূমিকা ও পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন সাধন করেছে। এই ধরণের পরিবর্তন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যে রাষ্ট্রের চরম সার্বভৌমত্বের চিরাচরিত ধারণার অবসান ঘটাতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৩. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ :- 
জোসেফ এস নাই এবং জন ডি জোনাহিউ তাঁদের Governance as a Globalization World নামক গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন , বিশ্বায়নের যুগে মূলধনের সচলতা ( Mobility of Capital ) , এক দেশ থেকে অন্য দেশে দক্ষ শ্রমিকের নির্গমন , তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ ও শেয়ার হস্তান্তর ইত্যাদি বিষয়গুলির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এই বিষয়গুলি সরকারের কর আরোপ করার চিরাচরিত ক্ষমতাকে ব্যাহত করেছে। 

৪. স্বাধীন অর্থনতিক নীতির বিপন্নতা :- 
অনেকে মনে করেন , বিশ্বায়নের ফলে সার্বভৌম জাতি - রাষ্ট্রের স্বাধীন অর্থনতিক নীতি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রভাবে সমস্ত দেশের অর্থনীতি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মূলধন ও প্রযুক্তির বিশাল প্রবাহ পণ্য ও পরিসেবার বাণিজ্যকে সমৃদ্ধতর করেছে। ফলে , বিভিন্ন জাতীয় রাষ্ট্রের অর্থনীতি পরস্পরের সাথে সংযোজিত হয়ে সমগ্র বিশ্বে এক অখন্ড বাজারের প্রবর্তন করেছে। 
বহুজাতিক সংস্থা ( MNC ) , শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বৃহদাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থা একুশ শতকের বিশ্ব - অর্থনীতির মুখ্য পরিচালক ও নিয়ন্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে জাতি - রাষ্ট্রের স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতি বিপন্নতার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি কাঠামোগত সংস্কার , সরকারি ক্ষেত্রগুলির বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ , ভর্তুকি প্রত্যাহার , কর্মী সংকোচন - প্রভৃতি নীতির রূপায়ণ করতে বাধ্য হচ্ছে। 

৫. রাষ্ট্রব্যবস্থার মর্যাদা হ্রাস :- 
বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা তার চিরাচরিত প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে একদিকে পৃথিবীতে ক্রমাগত আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বেড়ে চলেছে ; অন্যদিকে , জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাগুলির সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। এই পটভূমিকায় সার্বভৌমত্বের সাবেকি ব্যাখ্যা অচল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল , বিশ্বায়ন শুধুমাত্র স্বায়ত্তশাসনকে খর্ব করেনি , বিশ্বায়ন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক , সামাজিক , জাতীয় এবং আঞ্চলিক পরিকাঠামোকে পরিবর্তিত করেছে। নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের চিরাচরিত ক্ষমতা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। 

পরিশেষে , অধ্যাপক ডেভিড হেল্ডের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায় , বিশ্বায়নের প্রতিকূল প্রভাব সকল রাষ্ট্রের ওপর সমানভাবে পড়েনি। অনগ্রসর ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অধ্যাপক হেল্ডের মতে , তা স্বত্বেও আইনানুগ সার্বভৌমিকতার ধারণার বাধ্যবাধকতা অব্যাহত রয়েছে। তবে জটিল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ফলে রাষ্ট্রের স্বাধিকার বর্তমানে সীমিত হয়ে পড়েছে।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো



Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বিশ্বায়নের প্রভাব  বা ফলাফল আলোচনা কর।  




বিশ্বায়নের প্রভাব বা ফলাফল :- 


আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব পর্যালোচনা করতে গিয়ে নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলির কথা তুলে ধরা যেতে পারে। 

১. উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে বৈষম্য :- 
বিশ্বায়নের ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে বৈষম্য প্রকট হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার , বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক গৃহীত বিশ্বায়নের নীতি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের পক্ষে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ উন্নত দেশগুলির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এডওয়ার্ড এস হারমানের মতে , বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্র দেশে বসবাসকারী পৃথিবীর ২০ শতাংশ জনগণের আয়ের ফারাক ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ৩০ : ১ থেকে বেড়ে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ৮২ : ১ হয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসম্পদ অধিকারের ( TRIPS ) প্রয়োগ :- 
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বাণিজ্যিক বিশ্বায়নের নীতিকে কার্যকরী করার জন্য বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসম্পদ অধিকারের যে চুক্তি বলবৎ করেছে তার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলি এই অধিকার অনুযায়ী পেটেন্ট , কপিরাইট , ট্রেডমার্ক , ব্যবসায়িক গোপনীয়তার সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলি কতটা নিজেদের এক্তিয়ারে সংরক্ষিত রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এসব ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতাতেও তারা টিকে থাকতে পারছে না। 

৩. কর্পোরেট বিশ্বে বহুজাতিক সংস্থার ( MNC ) আধিপত্য :- 
বিশ্বায়নের ফলে বাণিজ্য সম্পর্কিত বিনিয়োগ ব্যবস্থা ( Trade Related Investment Measures or TRIMS ) গৃহীত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থা বা কর্পোরেট বিশ্বের আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এই ব্যবস্থা অনুযায়ী এমন কতগুলি বিধান পালন করতে হয় যার ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের কর্তৃত্ব বিস্তারের সুযোগ লাভ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে , বহুজাতিক সংস্থাগুলি উন্নত দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের বৃহত্তম বহুজাতিক সংস্থাগুলির মধ্যে ৬১% মার্কিনি সংস্থা , ৩৩% ইউরোপীয় সংস্থা , ২% জাপানি সংস্থা। সারা বিশ্ব জুড়ে এই বৃহত্তম বহুজাতিক সংস্থাগুলি উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষুদ্র সংস্থাগুলিকে অধিগ্রহণ বা সংযুক্তির মাধ্যমে দখল করে নিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪. নয়া ঔপনিবেশিক অর্থনীতি :- 
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা উন্নত ও ধনী দেশগুলির কুক্ষিগত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নয়া ঔপনিবেশিক অর্থনীতির উদ্ভব ঘটেছে। উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল বিশ্বের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে সম্পূর্ণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এর ফলে ধনী দেশগুলি কর্তৃক দরিদ্র দেশগুলির শোষণ অব্যাহত রয়েছে। 

৫. উত্তর - দক্ষিণ সংঘাত :- 
উন্নত দেশসমূহের কর্তৃত্বাধীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা যেভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির ওপর শ্রমখরচ সংক্রান্ত বিধান , অভিন্ন শ্রমিক স্বার্থ সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ , কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানো প্রভৃতি বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ; তার ফলে উত্তর ( উন্নত ) বনাম দক্ষিণ ( উন্নয়নশীল ) সংঘাত দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ মোগেনস বুখ হানসেনের মতে , বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা নির্দেশিত উদার অর্থনৈতিক পথে চলতে গিয়ে ধনী বিশ্ব আরও ধনী হচ্ছে এবং অন্যদিকে দরিদ্র বিশ্ব দরিদ্রতর হচ্ছে। 

৬. কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের ফলাফল :- 
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার , বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নির্দেশে উন্নয়নশীল দেশসমূহ যে কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসে হাত দেয় , তার ফলে ব্যাপকভাবে কর্মী সংকোচন , ছাঁটাই , যে অফ , লক আউট , রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বিলগ্নিকরণ , জাতীয় আয়ের সংকোচন - ইত্যাদি প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কাঠামোগত এই পুনর্বিন্যাসের ফলে - বেকারত্ব , দারিদ্র্য , আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা - প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সমাজের অনগ্রসর ও দুর্বল শ্রেণীর মানুষরা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সাংস্কৃতিক সমতার প্রভাব :- 
বিশ্বায়নের ফলে সারা বিশ্ব জুড়ে সাংস্কৃতিক সমতা তৈরির চেষ্টা চলছে। ইন্টারনেটসহ অত্যাধুনিক গণমাধমের সহায়তায় এক পণ্যমুগ্ধ ভোগবাদী সংস্কৃতির নিরন্তর প্রচারের ফলে আঞ্চলিক ও জাতীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ক্ষুন্ন হতে বসেছে। বিশ্বায়ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহকে এক ছাঁচে ঢেলে এক ধরণের সাংস্কৃতিক সমতা চাপিয়ে দিতে চায়। অনেকে একে মার্কিনি ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের বৈচিত্রপূর্ণ বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। 

৮. জাতি - রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সংকট :- 
বিশ্বায়নের প্রভাবে জাতি - রাষ্ট্র ( Nation State ) এর সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব তার নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ও নাগরিকবৃন্দের ওপর চূড়ান্তভাবে প্রযোজ্য হয়। বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের এই ভুখন্ডকেন্দ্রিক সর্বব্যাপী ক্ষমতাকে খর্ব করে রাষ্ট্রকে একটি বাজারকেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত করেছে বলে মনে করা হয়। বস্তুতঃ বিশ্বায়নের পটভূমিকায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ লাভ করেছে। 

৯. পরিবেশদূষণের ব্যাপক প্রসার :- 
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে , বিশেষতঃ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বহুজাতিক সংস্থাগুলির যেসব শিল্প ও কলকারখানা গড়ে উঠেছে , সেগুলির মধ্যে বেশ কিছুকে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এইসব শিল্পের মধ্যে জৈব রসায়ন জাতীয় শিল্পের  কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উন্নত দেশগুলিতে পরিবেশ রক্ষার আইন কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পরিবেশদূষণকারী  শিল্প গড়ে তোলার কাজে বিশেষভাবে যত্নবান হয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা কর। 




বিশ্বায়নের প্রকৃতি :- 


বিশ্বায়ন কোনো নতুন ধারণা নয়। বিশ্বায়ন একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া যা বহু পূর্বেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বজায় ছিল। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে প্রয়োগের কাজ গত শতাব্দীতে , বিশেষত ১৯৯০ এর পর শুরু হয়। রোল্যান্ড রবার্টসন - এর মতে বিশ্বায়ন এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা ( New World Order ) প্রসারের ধারণার সঙ্গে জড়িত। পুঁজির অবাধ চলাচল , মুক্তবাজার অর্থনীতি , উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণ প্রভৃতি ধারণার সঙ্গে বিশ্বায়ন ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। বিশ্বায়নের প্রকৃতিকে মূলতঃ যে সমস্ত দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে , সেগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. অর্থনৈতিক দিক : - 
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মূল ভিত্তি হল তার অর্থনৈতিক প্রকৃতি। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার ( IMF ) , বিশ্বব্যাংক (World Bank ) এবং GATT ( General Agreement on Trade and Tariff ) চুক্তির পরবর্তী পর্যায়ে গঠিত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ( WTO ) অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার প্রধান দিকগুলির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববাণিজ্যের দ্রুত প্রসার , লগ্নি পুঁজির অবাধ আদান প্রদান , বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে অভিগমন ও নির্গমন , এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ ও অন্যান্য বিনিময় মাধমের সঞ্চালন , বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থার অবাধ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ , বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রযুক্তির আদান প্রদান , আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্য মাধমের বিস্তার ইত্যাদি। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ মোগেনস বুখ হানসেন '' The WTO Agreements on Agriculture and its impact on Developing Countries শীর্ষক রচনায় বিশ্বায়নের আর্থিক দিকটি পর্যালোচনা করে বলেছেন , বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা নির্দেশিত উদার অর্থনীতির পথে চলতে গিয়ে ধনী বিশ্ব আরও ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্র বিশ্ব দরিদ্রতর হচ্ছে। 

২. রাজনৈতিক দিক :- 
রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে মনে করেন। বিশ্বায়ন জাতি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করে রাষ্ট্রকে একটি বাজার কেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত করেছে। অধ্যাপক হলটন তাঁর '' Globalization and The Nation State '' শীর্ষক রচনায় জাতি - রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব  আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন - জাতি রাষ্ট্রগুলি যে পৃথিবীতে  বাস করে তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্বায়ন হল এই পরিবর্তনের একটি প্রধান উৎস। 

Governance as a Globalizing World শীর্ষক গ্রন্থে জন ডি জোনাহিউ বলেছেন , বিশ্বায়নের যুগে মূলধনের সচলতা , এক দেশ থেকে অন্য দেশে দক্ষ শ্রমিকের নির্গমন , তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ ও শেয়ার হস্তান্তর - ইত্যাদি বিষয়গুলি সরকারের কর আরোপ করার চিরাচরিত ক্ষমতাকে ব্যাহত করেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সাংস্কৃতিক দিক :- 
সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের প্রধান লক্ষ্য হল সারা বিশ্বে এক সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ইন্টারনেটসহ অত্যাধুনিক গণমাধ্যমের সহায়তায় এক পণ্যমুগ্ধ ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রচার শুরু করেছে , এর ফলে আঞ্চলিক ও জাতীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ণ হতে বসেছে। বিশ্বায়ন বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমূহকে এক ছাঁচে ঢেলে যে সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায় তাকে অনেকে মার্কিনি ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি বলে আখ্যা দিয়েছেন।      

কে এম পানিক্কর বিশ্বায়ন , সংস্কৃতি ও পণ্য সংক্রান্ত তাঁর এক প্রবন্ধে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন , সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংগঠনগুলি বিশেষভাবে সক্রিয়। আজ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে যে সাংস্কৃতিক আক্রমণ চলছে সেটি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার  এক প্রচেষ্টা। অবশ্য  এর ফলে বিশ্বের জাতি - রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটাতে বিশ্বায়ন বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। 

৪. পরিবেশগত দিক :- 
পরিবেশবিদদের মতে , বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বিশ্বের পরিবেশগত ক্ষেত্রে এক সংকট সৃষ্টি করেছে। কর্পোরেট বিশ্বের আধিপত্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে শুধু যে বিনষ্ট করে চলেছে তাই নয় , তাকে পণ্যায়িত করেছে। পরিবেশবিদ বন্দনা শিবা তাঁর '' Globalization and Environment '' শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন - পৃথিবীর মূল সম্পদগুলি হল স্থল , জল এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে এই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক উপাদানগুলি পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। নতুন ধরণের  সম্পদ হিসেবে এই উপাদানগুলি উপজাতি ও কৃষক সম্প্রদায়ের অধিকার থেকে নিষ্ক্রান্ত করে বিশ্বায়িত কর্পোরেশনগুলির নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। বিশ্বায়িত বাণিজ্যের চুক্তিগুলি জাতীয় সংবিধানকে অবনমিত করে , যার অর্থ নাগরিকদের জীবনের প্রতি অধিকার , স্থল , জল এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্যের প্রতি অধিকারের অবলুপ্তি।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট আলোচনা করো। 




বিশ্বায়নের সংজ্ঞা :- 


বিশ্বায়ন বা Globalisation শব্দটি সাম্প্রতিককালে বহু ব্যবহৃত হলেও বিশ্বায়নের কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। জোসেফ স্টিগলিট্স - এর মতে , বিশ্বায়ন হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সংহতিসাধন যা পরিবহণ ও যোগাযোগের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস করেছে এবং দ্রব্যসামগ্রী , পরিষেবা , পুঁজি , জ্ঞান এমনকি পৃথিবী জুড়ে মানুষের অবাধ  যাতায়াতের অধিকারের ওপর আরোপিত কৃত্রিম বাধানিষেধকেও অতিক্রম করেছে।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

জন বেইলিস , প্যাট্রিসিয়া , স্টিভ স্মিথ সম্পাদিত The Globalisation of World Politics গ্রন্থে বলা হয়েছে সারা পৃথিবীতে সাধারণতঃ পাঁচটি অর্থে বিশ্বায়নকে বোঝানো হয়। এগুলি হল -
(A) আন্তর্জাতিকীকরণ - যা দেশের গন্ডি মুছে দিয়ে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে বাড়িয়ে তোলে। 
(B) উদারীকরণ - দেশের সকল বৈষয়িক বিষয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে একটা খোলামেলা , সুসংহত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলা। 
(C) সর্বজনীন - বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের ওপর এর প্রভাব সর্বব্যাপী ও সর্বজনীন। 
(D) পশ্চিমিকরণ -  উন্নত দেশগুলির বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রভাবিত করে। 
(E) সীমান্তলোপকরণ - রাষ্ট্রীয় সীমান্ত সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা হ্রাস করে সর্বক্ষেত্রে যাতায়াত সহজ করে তোলা। 

সুতরাং , বিশ্বের বিভিন্ন দেশের , বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে অন্যান্য প্রান্তের মানুষের অবাধ বাণিজ্যিক , সাংস্কৃতিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ , পারস্পরিক আদান প্রদান , বাজার অর্থনীতি প্রভৃতির প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াই হল বিশ্বায়ন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট :- 


বিশ্বায়নের কতকগুলি অপরিহার্য  ও মৌলিক বৈশিষ্ট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল - 

১. বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতি স্থাপন :- 
বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সংহতি গড়ে তুলতে চায়। আধুনিক বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একাকী  বিচ্ছিন্নভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বিশ্বায়ন এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র গড়ে তুলতে চায়। 

২. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা :- 
বিশ্বায়ন অত্যন্ত সচেতনভাবে সমগ্র বিশ্বে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ নির্বিশেষে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে একটি পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলার পক্ষপাতী। নোয়াম চমস্কির মতে , বিশ্বায়নের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা স্থাপন করে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে দৃঢ়তর করে তোলা। 

৩. বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা :- 
বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল , আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থা বা কর্পোরেট দুনিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে সুনিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষকরা মনে করেন , বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পাশাপাশি কর্পোরেট সংস্থাগুলির ভূমিকাও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। 

৪. পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচল :- 
বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হিসেবে আধুনিক বিশ্বে পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচলের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বিশ্বায়নের যুগে পুঁজি , প্রযুক্তি ও কারিগরি কৌশল কোনো একটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমায়িত হয়ে থাকেনি। বিশ্ব বাণিজ্যের অবাধ গতি এই বিষয়টিকে আরো সহজ করে তুলেছে। 

৫. মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা :- 
বিশ্বায়নের একটি প্রধান বৈশিষ্ট হল মুক্ত বাজার অর্থনীতি। বিশ্বায়ন সারা বিশ্বের বাজারকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে চায়। বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হয় যে , বাণিজ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্চিত। 

৬. রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌমত্বের পরিবর্তন :- 
রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌম ক্ষমতার পরিবর্তনকে বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট বলে মনে করা হয়। সাবেকি সর্বভৌমিকতায় মনে করা হয় , বাহ্যিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের যে অসীম বা চরম ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বিশ্বায়ন তাকে অস্বীকার করে। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে বাহ্যিক ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রই চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই আধুনিক বিশ্বে , নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার সদস্য হিসেবে ছোট - বড় সকল রাষ্ট্রকেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ( WTO ) - র মত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নীতি ও নির্দেশ মেনে চলতে হয়। 

৭. তথ্য - প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি :- 
বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল তথ্য - প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি। বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট সহ তথ্য প্রযুক্তির অবাধ বিচরণে জাতি রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারেনা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়ে ইন্টারনেট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি রাষ্ট্রের সীমারেখাকে নিশ্চিহ্ন করে বিশ্বায়ন এক জাতি এক বিশ্বের এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates