Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

শিশু শ্রমিক সমস্যার কারণগুলি লেখ।  

ভারতে শিশু শ্রমিক প্রথার কারণগুলি আলোচনা কর। 

Causes of Child Labour in India. ( In Bengali ). 




ভারতে শিশু শ্রমিক সমস্যার কারণ :- 


ভারতের প্রায় ২৬ % মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন। যদিও সরকার প্রদত্ত এই তথ্য সঠিক নয় বলে অনেকে মনে করেন। ভারতে শিশু শ্রমিক বৃদ্ধির মূলে আছে এই দারিদ্রতা। বিশ্বের মোট শিশু শ্রমিকের ৩৩% বা এক - তৃতীয়াংশ ভারতে বাস করে এবং এই সংখ্যা প্রায় ১২৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে ৭৯% গ্রামীণ এবং ২১% শহর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। শিশু শ্রমিকের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা যায় , যেসকল ঝুঁকিপূর্ণ , বিরক্তিকর কাজ বয়স্ক ব্যক্তিরা করতে চান না , সেই সকল কাজকে শিশুদেরকে দিয়ে অত্যন্ত সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করিয়ে নেওয়া হয়। সাধারণতঃ ৬ - ১৪ বছর বয়স্ক শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের শিশু শ্রমিক বলা হয়। শিশু শ্রমিকেরা সাধারণত যে সকল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে সেগুলি হল - গৃহস্থালির কাজ , ইঁট ভাটা ও পাথর ভাঙার কাজ , চায়ের দোকান - হোটেল - রেস্তোরা - ইত্যাদির শ্রমসাধ্য কাজ , রাস্তায় খাবারের দোকানে কাজ , কুলি - হকার ইত্যাদির কাজ , বাজি তৈরী , কাঁচের ফ্যাক্টরিতে কাজ , মাদক - বাহক - ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা হয়। ভারতে শিশু শ্রমিকের বৃদ্ধি পাওয়ার বিভিন্ন কারণগুলি নীচে উল্লেখ করা হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. দারিদ্রতা :- 
ভারতে শিশু শ্রমিক বৃদ্ধির সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কারণ হল দারিদ্রতা। দারিদ্রতার অসহায়তা থেকে মুক্তি পেতে কেউ কেউ শিশু শ্রমিকের জীবন বেছে নেয় আবার অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্রতার তাড়নায় অভিভাবকরাই তাঁদের সন্তানদেরকে শিশু শ্রমিক হতে বাধ্য করেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে শিশুরা শ্রমের পথ বেছে নিলেও তাদের অবস্থার উন্নতি হয়না ; এবং তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হয়। 

২. নিরক্ষরতা :- 
ভারতে নিরক্ষরতা দূর করতে বহু কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও ভারতের বহু মানুষ আজও নিরক্ষরতার অন্ধকারে তলিয়ে আছেন। দেখা যায় যে , যেসকল শিশুরা শ্রমের সঙ্গে যুক্ত , তাদের অভিভাবকেরা সাধারণত নিরক্ষর হন। ফলে , নিরক্ষর অভিভাবকেরা শিক্ষালাভের তুলনায় আর্থিক রোজগারকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। তাই তাঁরা নিজেদের সন্তানকে শিক্ষালাভের পরিবর্তে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি :- 
ভারতে অত্যন্ত দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে দরিদ্র পরিবারগুলিতে একাধিক শিশু জন্ম নিলে সেই সকল শিশুর লালন - পালন অভিভাবকদের পক্ষে সম্ভব হয়না। তখন এই সমস্ত পরিবারের শিশুরা একটু বড় হলেই বা ৫/৬ বছর বয়স হলেই নিজেদের জীবিকার সাথে যুক্ত করছে বা অন্যান্য উপার্জনমুখী কর্মে নিযুক্ত করছে। 

৪. সরকারের দায়িত্ব :- 
সরকার দেশে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচী গ্রহণ করেন ;কিন্তু বলা বাহুল্য যে এই সকল শিক্ষা পরিকল্পনাগুলি আশানুরূপ সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। সরকার তার বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও রিপোর্টে শিক্ষার প্রসারের কথা বললেও বাস্তব অন্য কথা বলে। আজও ভারতে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তাদের মধ্যে ৫০% শিশু প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার করতে পারেনা। 

৫. শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ আইনের ব্যর্থতা :- 
ভারতীয় সংবিধানের ৪৫ নং ধারায় বলা হয়েছে ৬ - ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি আইন প্রবর্তিত হয় এবং তাতে বলা হয় ১৪ বছর বয়সের বা তার নীচের শিশুদের কর্মে নিয়োগ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বাধ্যতামূলক শিক্ষার আইন কিছুটা কার্যকরী হলেও শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ আইন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রধান কারণ হল সরকারি উদাসীনতা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. অভিভাবকদের মানসিকতা  :- 
শিশু শ্রমিক সমস্যা দূর করতে সরকার যেসকল নীতি ও কর্মসূচী গ্রহণ করেন তার ব্যর্থতার একটি অন্যতম কারণ হল অভিভাবকদের মানসিকতা। যেসকল পরিবারগুলোতে মাথা পিছু গড় আয় কম সেই সকল পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কর্মে নিযুক্ত থাকাকেই লাভজনক বলে মনে করেন। বাধ্যতামূলক শিক্ষা বা অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি সম্পর্কে তারা ততটা আগ্রহ দেখান না। 

৭. সরকারি নীতি ও প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা :- 
শিশু শ্রমিক সমস্যা দূর করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পগুলি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এইসকল প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়ন করতে যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন হয় , তা'ও সঠিকভাবে বরাদ্দ হয়না। এছাড়া এইসকল কর্মূসূচিগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরীক্ষামূলক ; সেগুলির কোনো বিজ্ঞান সম্মত ভিত্তি নেই। আবার রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলিকে সফল ভাবে বাস্তবায়ন করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। 

৮. প্রভাবশালী দুষ্টচক্র :- 
শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ ও তাদের কর্মে লিপ্ত রাখার তাগিদে এক শ্রেণীর অসাধু দুষ্টচক্র সর্বদা ক্রিয়াশীল। নিজেদের স্বার্থে এই দুষ্টচক্র শিশুদেরকে সমস্তরকম ঝুঁকিপূর্ণ নিযুক্ত করতে পিছপা হননা। তাই অনেক সময় শিশুশ্রমিকেরা এই অতল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও - তা সম্ভব হয়না। এই দুষ্টচক্র - রাজনৈতিক নেতা , পুলিশ , আধিকারিক ও অন্যান্য সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অশুভ সম্পর্ক তৈরী করে শিশু শ্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। 

পরিশেষে বলা যায় , ভারতে শিশু শ্রমিক সমস্যাটি আর্থ - সামাজিক পরিকাঠামোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তাই এই সমস্যাটি ভারতীয় জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। সরকার ও চিন্তাশীল সমাজ শিশু শ্রমিকের সমস্যা দূর করতে চাইলেও , শিশু শ্রমিক ও তার পরিবার সমস্যাটি নিয়ে আদৌ ততটা চিন্তিত নন। তাই শিক্ষার বিস্তার ও সচেতনতার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সমস্যাটির সমাধান সম্ভব।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো               
       
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

C.U. 4th Semester Political Science Suggestion. ( Pass ) 

Calcutta University 4th Semester Political Science Suggestion. ( Pass ) 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 4th Semester রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। 



কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের ( 4th semester ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী / সাজেশন। ( Pass ) 

১. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা কর। 

২. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়া উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা কর। 

৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তা হিসেবে রবার্ট কোহেন এবং জোসেফ নাই - এর তত্ত্ব আলোচনা কর। 

অথবা , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিল পারস্পরিক নির্ভরশীলতার তত্ত্ব আলোচনা কর। 

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার তত্ত্ব আলোচনা কর। 

অথবা , ফ্রাঙ্কের পরনির্ভরতাবাদী তত্ত্ব আলোচনা কর। 

৫. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলতে কী বোঝ ? আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর। 

৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা কর। 

৭. ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার বা বিভিন্ন পর্যায়গুলো আলোচনা কর। 

৮. প্রথম ঠান্ডা লড়াইয়ের উত্থান এবং অবসানের ক্ষেত্রে দাঁতাত - এর ভূমিকা আলোচনা কর। 

৯. ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের পর নতুন বিশ্ব - ব্যবস্থা বর্ণনা কর। 

১০. বিশ্ব রাজনীতিতে বৃহত্তর শক্তি হিসাবে রাশিয়ার উত্থান পর্যালোচনা কর। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১১. ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝ ? এর উৎপত্তির কারণগুলি আলোচনা কর। 

১২. ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে কীভাবে সূচিত করেছে - আলোচনা কর। 

১৩. ভারতের বিদেশনীতির মূল বৈশিষ্ট বা নীতিগুলি আলোচনা কর। 

১৪. ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আলোচনা কর। 

১৫. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন কী ? ভারতের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের বৈশিষ্ট বা নীতিগুলি আলোচনা কর। 

১৬. বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম শক্তি হিসাবে ভারতের উত্থান আলোচনা কর। 

১৭. পশ্চিম ইউরোপের সংহতিসাধন প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা বা কার্যাবলী পর্যালোচনা কর। 

১৮. বিশ্ব রাজনীতিতে একমেরুতা বলতে কী বোঝ ? একমেরুতার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

১৯. পররাষ্ট্রনীতি বলতে কী বোঝ ? পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারকগুলি আলোচনা কর। 

২০. বিশ্ব রাজনীতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা কর।

To be continued..............

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক সমস্যা কাকে বলে ? সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 

Definition and features of social problems. ( In Bengali ). 




সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা / ধারণা :- 


Walsh এবং Furfuy - এর মতে , সমাজের প্রচলিত আদর্শ এবং মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত কার্যাবলী বা ঘটনাসমূহ হল সামাজিক সমস্যা। 

Wenberg মনে করেন , সামাজিক সমস্যা হল সামাজিক পদ্ধতিসমূহ থেকে উদ্ভব হওয়া বহুসংখ্যক সদস্যদের আপত্তিকর আচরণবিধি , যেগুলি থেকে মুক্তি পেতে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। 

R.K. Marton সামাজিক সমস্যাকে একপ্রকার বিচ্যুত আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। 

Horton ও Leslie - র মতে , সমাজের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অসামাজিক আচরণ যার দ্বারা সমাজের বৃহত্তর অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

ই রাব এবং জি জে সেলজনিক বলেছেন , সামাজিক সমস্যা হল এমন এক ধরণের পরিস্থিতি যা মানুষকে বিপথগামী করে। এই ধরণের আচরণ সমাজকে শৃঙ্খলিত করার পক্ষে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

সমস্যা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Problem শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Problema থেকে যার অর্থ এমন এক নিক্ষেপিত ঘটনা যা মানুষের চিন্তা - ভাবনা ও কাজকর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং সামাজিক সমস্যা হল এমন এক ধরণের পরিস্থিতি যাকে বাঞ্ছিত বলে মনে করা হয়না , যা সমাজের প্রচলিত স্বাভাবিক নিয়মগুলিকে বিনষ্ট করে , যা সমাজে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দেয় এবং যার মিলিত প্রতিকার সম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট : - 


১. সামাজিক সমস্যাগুলি বিশ্বজনীন। সারা বিশ্বের প্রতিটি সমাজে সামাজিক সমস্যা বর্তমান। তাই সমস্যা বহির্ভুত সমাজের কথা কল্পনা করা যায়না। দেশ - কাল ভেদে সমস্যাগুলির প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও , তাদের মৌলিক চরিত্র একই থাকে। 

২. সামাজিক সমস্যাগুলি আপেক্ষিক ; অর্থাৎ আজ যা সমস্যা হিসাবে পরিচিত , কাল তাকে সমস্যা বলে মনে না'ও হতে পারে। সমাজ পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক কিছু ঘটনাকে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা বলে মনে হলেও , কিছু সময় পর দেখা যায় সেগুলি মোটেও সমস্যা নয়। যেমন ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে তৎকালীন শিক্ষিত সমাজ সমস্যা হিসাবে দেখলেও আজ তা প্রমাণিত যে মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম। 

৩. প্রতিটি সামাজিক সমস্যার কিছু উৎসগত ভিত্তি থাকে। নির্দিষ্ট কারণ , ঘটনা বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়। বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও উশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রতিটি সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয় এবং কালক্রমে তা বিস্তার লাভ করে। 

৪. সামাজিক সমস্যা হল সমাজের আদর্শ অবস্থা থেকে বিচ্যুত আচরণ। বস্তুগত লাভের আশায় মানুষ বা গোষ্ঠী বিচ্যুত আচরণ করে যা সমাজের অন্যান্য গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই ধরণের বিচ্যুত আচরণকে কোনো সমাজেই কাম্য বলে মনে করা হয়না। 

৫. বিভিন্ন সমাজে সামাজিক সমস্যাগুলির প্রকতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন , ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বার্ধক্যের সমস্যা একটি অন্যতম সমস্যা। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে বার্ধক্য এখনো খুব বড় সমস্যা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। বাল্য বিবাহ , ডাইনি প্রথা - এগুলি ভারতীয় সমাজের অন্যতম সমস্যা হলেও পাশ্চাত্য আধুনিক সভ্যতাগুলিতে ততটা প্রবল নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. সামাজিক সমস্যাগুলি সকল সমাজেই ক্ষতিকারক ফল প্রদান করে। এক শ্রেণির মানুষের বিচ্যুত আচরণ তাদের স্বার্থ পূরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হলেও তা অন্যান্য সকল মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত করে। তাই , যেকোনো ধরণের সামাজিক সমস্যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। 

৭. সামাজিক সমস্যাগুলি পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন , ধরা যাক একজন অযোগ্য ব্যক্তি উৎকোচ প্রদান করে শিক্ষকতার চাকুরী লাভ করলেন। ফলে , তিনি যেহেতু অযোগ্য , তাই তার দ্বারা যথার্থভাবে শিক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব হবেনা ; ফলে ব্যাহত হবে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। এইভাবে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। 

৮. সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান সম্ভব। সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান করতে ঐক্যবদ্ধ ও সমষ্টিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। নির্দিষ্ট নীতি , ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি , সমবেত প্রয়াস , রাজনৈতিক সদিচ্ছা - ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান করা যায়। 

৯. প্রতিটি সামাজিক সমস্যা একটি বিশেষ সামাজিক অবস্থার ফলে সৃষ্ট হয়। এই বিশেষ সামাজিক অবস্থাকে বলা হয় - Pathological Social Condition ; এই শব্দের অর্থ হল - এমন এক পরিস্থিতি যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল। এই ধরণের পরিস্থিতি সমাজের আদর্শ অবস্থা থেকে বিচ্যুত আচরণ করার জন্য গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গকে অনুপ্রাণিত করে। 

পরিশেষে বলা যায় , বর্তমান পৃথিবীতে সমাজ ও সামাজিক সমস্যার আদর্শ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ধরণের সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি সামাজিক সমস্যাগুলির জন্ম দেয় ; যেমন - সমাজের অসম বিকাশ , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি , অসম অর্থনৈতিক বিকাশ , রাজনৈতিক ও সরকারি কাজকর্মে দুর্নীতি , মুক্ত যৌনাচার , যৌথ পরিবারের ভাঙন - ইত্যাদি বহুবিধ বিষয় সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরী করে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                               

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে বয়স্কদের সমস্যাগুলি আলোচনা কর। 

ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত কর। 

Discuss the problems of the elderly in India. ( In Bengali ). 




ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সমস্যা :- 


বিভিন্ন দেশে বার্ধক্যের সময়সীমা বিভিন্ন ধরা হয়। যেমন আমেরিকায় ৬৫ + বছরকে , অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ - ৬৫ বছর ইত্যাদি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৬৫ + বছরকে ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ৬০ + বছর বয়সকে বার্ধক্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভারতে ৬০ + বছর বয়সকে বার্ধক্যের সূচক হিসাবে মনে করা হয়। 

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি , স্বাস্থ্য সচেতনতা - ইত্যাদির কারণে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। মনে করা হয় ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৬ কোটি। 

যাইহোক , ভারতে বয়স্ক নাগরিকেরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। একদিকে তাঁরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করেন , অন্যদিকে তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। ভারতে বয়স্কদের বিভিন্ন সমস্যাগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. জৈবিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা :- 
বয়সের কারণে বয়স্কদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরী হয়। তাঁদের বিভিন্ন অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় , শারীরিক ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। শ্বাসপ্রস্বাস সংক্রান্ত সমস্যা , হজমের সমস্যা , দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া , অনিদ্রা , মধুমেহ , হৃদযন্ত্রের সমস্যা - ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা বেশিরভাগ বয়স্কদের অবধারিতভাবে প্রভাবিত করে। 
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রোগে খুব সহজেই তাঁরা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সমস্যা তখনই জটিল আকার ধারণ করে , যখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বয়স্কদের শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। 

২. সামাজিক সমস্যা :- 
প্রতিটি বয়স্ক নাগরিক বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন - তা দেশ ও কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। শারীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভূমিকা পালন ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ - ইত্যাদি সমস্ত কিছু সামাজিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে।সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং তাঁরা অপরের সহানুভূতি ও সমহমর্মিতার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. পারিবারিক সমস্যা :- 
সাধারণতঃ বয়স্ক ব্যক্তিরা এই সময় থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ব্যক্তিরা পরিবারের নিয়ন্ত্রক থেকে ধীরে ধীরে পরিবারের বোঝা হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ বয়স্ক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর নির্ভর করতে হয়। পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যরা নিজেদের কাজকর্মে এতটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েন যে বয়স্ক ব্যক্তিদের সুবিধা - অসুবিধার প্রতি নজর দেওয়ার কারো সময় থাকেনা। 

৪. অর্থনৈতিক সমস্যা :- 
ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। একদিকে অর্থনৈতিক রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্যদিকে সঞ্চিত পুঁজিতে টান পড়ে। যাদের কোনোরকম আর্থিক উপায় থাকেনা তাদের অবস্থা হয় ভয়ঙ্কর। এমনকী , যাদের আর্থিক উপায়ের পথ আছে ; যেমন পেনশন , বাড়িভাড়ার টাকা , জমানো টাকা থেকে আয় - ইত্যাদি ; তাঁদের অর্থের উপরেও তাঁদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকেনা - পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেই অর্থের উপর নিজের নিজের অধিকার দাবী করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. মানসিক সমস্যা :- 
বয়স জনিত কারণেই বয়স্করা স্মৃতি বিভ্রমের শিকার হন বা অতিরিক্ত স্মৃতি রোমন্থন করেন , মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় , কর্মে প্রবণতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় , নতুন কিছু শিখে নেওয়ার মানসিকতা হ্রাস পায়। স্বামী - স্ত্রী - র মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। শারীরিক চিন্তা , মৃত্যুভয় - ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়গুলি বয়স্কদের কুরে কুরে খায়। 

৬. নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব :- 
বেশিরভাগ অল্পবয়স্ক মানুষেরা বয়স্কদের সঙ্গ পছন্দ করেন না। অন্যদিকে বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষ পরিবার ও সমাজের বিবর্তন জনিত পরিবর্তনগুলি মেনে নিতে পারেন না। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন মারা গেলে অপরজন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে পরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি শোনার মত সময় পরিবারের অল্প বয়স্ক সদস্যদের থাকেনা। কিছু ক্ষেত্রে বয়স্কদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও পরিবারের সাথে একত্রে বাস করার আকুল আকুতি শোনার মত কান কারো থাকেনা। তাই বয়সের এক প্রান্তে এসে নিজের সাজানো জগতে নিজেরাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। 

৭. ভূমিকার পরিবর্তন :- 
যৌবনকালে প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষা , কর্মের প্রচেষ্টা , কর্মজীবন , বিবাহ , পরিবার প্রতিপালন - ইত্যাদি ঘটনাবহুল জীবনের সাক্ষী ও অংশ হয়ে থাকেন প্রতিটি ব্যক্তি। আবার সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রগতিমূলক ক্রিয়াকলাপে তাঁরা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বয়স হলে বসয়স্কদের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্করা ইচ্ছা থাকলেও সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে পারেন না। এতে বয়স্কদের মানসিক সমস্যা তৈরী হয়।        

পরিশেষে বলা যায় , ভারতে পরিবার ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে বয়স্কদের সমস্যাগুলি আরো তীব্র হয়ে পড়েছে। ভারতে নগর জীবনের তুলনায় গ্রামীণ জীবনে পরিবার ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছে কম। তাই , গ্রামীণ জীবনে বয়স্কদের সমস্যাগুলি তুলনামূলকভাবে কম। গ্রামীণ ভারতে সম্পূর্ণরূপে একক পরিবার গঠনের প্রক্রিয়া ততটা দ্রুত নয়। কিন্তু নগরের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিক শিল্প সমাজে , একক পরিবারের কাঠামোতে বয়স্কদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                                

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে যুব সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলি আলোচনা কর। 

ভারতের যুব সম্প্রদায় বর্তমানে কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ? 

যুব সম্প্রদায়ের ১০ টি প্রধান সমস্যা। 

Discuss the problems of Youth in India . ( In Bengali ). 




ভারতে যুব সম্প্রদায়ের সমস্যা :- 


ভারতের জনসংখ্যাগত বিচারে যুবদের সংখ্যা সর্বাধিক। সুতরাং , ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে যুবদের ভূমিকাই সর্বাধিক। কিন্তু যুব সম্প্রদায় একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যাগুলি ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় প্রকারের হয়ে থাকে। যুব সমাজ যেহেতু বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন তাই পক্ষান্তরে , এই সমস্যা জাতির উন্নয়নের পক্ষে একটি নেতিবাচক দিক। একটি দেশের যুবসমাজ যতটা সমস্যার মধ্যে থাকবে , সেই দেশের ভবিষ্যৎ ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্তমানে যুব সমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. বেকারত্বের সমস্যা :- 
ভারতে যুবসমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলির মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। ভারতের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ; কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্রুত কমে আসছে। কর্মসংস্থানের সংকোচনের একটি বড় কারণ হল দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ফলে , ভারতে দ্রুত হারে বেকারত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে বেকারত্বের হার ১০.১ শতাংশ। শতকরা হারের বিচারে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব দেখা যায় সিকিমে। 

২. মূল্যবোধের অবক্ষয় :- 
বর্তমানে যুবক - যুবতীদের উপর থেকে তাঁদের মাতা - পিতার কর্তৃত্ব ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। এই কর্তৃত্ববিহীন জীবনযাত্রা যুবসমাজের নিকট অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং বহির্মুখী জীবনযাত্রার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাইট ক্লাব , ডিস্ক - থেক , অবৈধ সম্পর্ক , উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা - ইত্যাদিতে যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে সনাতন ভারতীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। 

৩. শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা :- 
তীব্রভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বেকারত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে না। প্রচলিত শিক্ষা যুবসমাজের কর্মপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে না। বিশেষ ধরণের বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হলেও তা আশানুরূপ নয়। এছাড়াও অন্যান্য পেশাগত কোর্সগুলিতে প্রচুর পরিমান ফি প্রদান করতে হয় - ফলে সেখানেও যুবসমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ খুব কম। উচ্চশিক্ষা লাভ করেও প্রচুর ছাত্র ছাত্রী বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত।  

৪. মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্তি :- 
বর্তমানে যুবসমাজ মাদক দ্রব্যের প্রতি তীব্রভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটি একটি চিন্তার বিষয়। পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যেও মাদক দ্রব্যের ব্যবহার তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনো বা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে আবার কখনো বা উচ্ছৃঙ্খলতার স্বাদ পেতে মাদকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। যাদের হাতে জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে , তাদের মাদকের প্রতি আকর্ষণ , জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. রাজনৈতিক নেতৃবর্গের ভূমিকা :- 
বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলি যুবসমাজকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যুবসমাজের সমস্যাগুলিকে সমাধান না করে তরুণ যুবসমাজকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বিপথে পরিচালিত করছে। নেতাদের প্রশ্রয় পেয়ে তরুণ যুবসমাজ অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ যুবসমাজকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে ও আদর্শের মগজ ধোলাই করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। 

৬. ভোগবাদের বিস্তার :- 
ভারতে বিশ্বায়ন ধারণার সূচনা হয় ১৯৯০ এর দশকে। বিশ্বায়নের হাত ধরে সমাজে প্রবেশ করেছে ভোগবাদ। সমাজে ভোগবাদের বিকাশের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যুবসমাজ। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ইলেক্ট্রনিক গেজেট ব্যবহার , বিলাস বহুল জীবনযাত্রার হাতছানি , সহজ ই এম আই - য়ের চোরাবালির আকর্ষণ - ইত্যাদি বিষয়গুলি যুবসমাজকে ভোগবাদের দাসে পরিণত করেছে। 

৭. আত্মকেন্দ্রিকতা :- 
আধুনিকতা , পাশ্চাত্যের প্রভাব , ভোগবাদের বিস্তার - ইত্যাদি মানুষকে ক্রমশঃ স্বার্থকেন্দ্রিক ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা , জাতীয় জীবনের সমস্যা , মানবিক স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন - ইত্যাদির পরিবর্তে যুবসমাজ আত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় অধিক মগ্ন হয়ে পড়ছে। ফলে একদিকে যেমন , ভারতীয় যুবসমাজ জাতীয় জীবনের গঠনের কাজে নিজেদের বিরত রাখছে , অন্যদিকে দেশের প্রধান শক্তি যুবসমাজ আত্মকেন্দ্রিক নেশায় বুঁদ হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। 

৮. বংশধারাগত শুন্যতার সৃষ্টি :- 
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যুবসমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশ না ঘটিয়ে তাদেরকে কেবল চাকুরিমুখী করে তুলেছে। ফলে , সামাজিকতা , ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা , সাংস্কৃতিক ধারক ও বাহক হিসাবে ভূমিকা গ্রহণ - ইত্যাদি মহৎ বিষয়গুলি গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা , প্রচলিত সমাজের প্রতি নেতিবাচক বিরূপতা - এইরূপ মানসিকতা যুবসমাজের মধ্যে প্রধান হয়ে উঠেছে। সমাজের ভিত্তি মজবুত না করে নীতি নির্ধারকেরা উপরিকাঠামোর পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। ফলে যুবসমাজের মৌলিক জীবনধারা কলুষিত হয়ে পড়েছে। 

৯. সামাজিক অবক্ষয় :- 
বর্তমানে সমাজের সবক্ষেত্রে অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক অসাধুতা , স্বজন - পোষণ , উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি ও উৎকোচ সংস্কৃতি , জাতি ও রাজনীতির অশুভ আঁতাঁত - ইত্যাদি বিষয়গুলি যুবসমাজের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং যুবসমাজের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি নেতিবাচক বিরোধিতা ও হীনমন্যতাবোধের জন্ম দিয়েছে। 

১০. অপসংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ :- 
বর্তমান সমাজে বিশ্বায়নের হাত ধরে সারা পৃথিবী যেমন একাত্ম হয়ে '' ভুবন গ্রাম '' তৈরী করেছে তেমনি অন্যদিকে বিভিন্ন ধরণের অপসংস্কৃতি যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। রুচিহীন পোশাক পরিধান , মাদকের প্রতি আকর্ষণ , প্রকাশ্যে ধূমপান , অবাধ যৌনাচার , সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি - ইত্যাদি বিষয়গুলি ভারতীয় সমাজের মৌলিক বৈশিষ্টগুলির মূলে কুঠারাঘাত করেছে। 

পরিশেষে বলা যায় , ভারতীয় যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজ সঙ্কটের সম্মুখীন। এই সমস্যা দূর করতে , সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা , শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী পরিকাঠামো গঠন , কর্মসংস্থান সৃষ্টি - ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো             


Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

ভারতে জাতিভেদ প্রথায় পরিবর্তনের কারণ। 

Factors responsible for change caste system in India . ( In Bengali ) 



ভারতে জাতিভেদ প্রথায় পরিবর্তনের কারণ। 

ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের হাত ধরে ভারতে জাতি ব্যবস্থায় পরিবর্তন দ্রুত হতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে পূর্বতন জাতি ব্যবস্থার সাথে বর্তমান জাতি ব্যবস্থার ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতে জাতিভেদ প্রথায় পরিবর্তনের কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 

১. আধুনিক শিক্ষার ভূমিকা :- 
ভারতে ইংরেজরা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন করে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে ব্যাপকভাবে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো হয়। তথাকথিত নীচু জাতের মানুষেরা , যারা চিরকাল শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল , তারা শিক্ষালাভ করতে শুরু করে। ভারতে আধুনিক শিক্ষা জাত - ব্যবস্থার প্রাধান্যকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। আধুনিক শিক্ষালাভের মাধ্যমে মানুষের আরোপিত মর্যাদার তুলনায় অর্জিত মর্যাদার গুরুত্ব সমাজে অধিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।     

২. সাংবিধানিক ব্যবস্থা :- 
ভারতীয় সংবিধানে ১৪ - ১৮ নং ধারায় সাম্যের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সাম্যের অধিকারে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার পাবে। এছাড়াও , তফসিলি জাতি , উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা স্বীকৃত হয়েছে। এইসকল সাংবিধানিক ব্যবস্থা জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্যকে দূর করে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. বিভিন্ন সাংবিধানিক আইন :- 
ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ কিছু আইন জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্যকে দূর করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন - 
হিন্দু বিবাহ আইন ( ১৯৫৫ ) , অস্পৃশ্যতা বিরোধী আইন ( ১৯৫৬ ) ,  The Caste Disabilities Removal Act ( ১৮৫০ ) , বিশেষ বিবাহ আইন ( ১৮৭২ ) - ইত্যাদি। বর্তমানে ভারতে অস্পৃশ্যতামূলক আচরণ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। 

৪. ব্রাহ্মণদের প্রভুত্ব বিরোধী আন্দোলন :- 
ভারতে স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণদের প্রভুত্ব বিরোধী বহু আন্দোলন সংগঠিত হয়। এইসকল আন্দোলনগুলি সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রভুত্ব ও বিশেষ সুযোগ সুবিধার অধিকারকে নাকচ করার দাবী জানায়। এর ফলে সমাজে ব্রাহ্মণদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা ও প্রতিপত্তি বহুলাংশে কমে যায়। এই সকল আন্দোলনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - জ্যোতিরাও ফুলে -র '' সত্যশোধক সমাজ '' আন্দোলন , ডক্টর বি আর আম্বেদকরের '' চৌদার পুকুর আন্দোলন '' , এছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে প্রবেশের দাবীতে আন্দোলন - ইত্যাদি। 

৫. বিভিন্ন সমাজ সংস্কার আন্দোলন :- 
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে বাংলার নবজাগরণের যুগ বলা হয়। এই সময়ে বিভিন্ন সমাজ সংস্কার আন্দোলন সমাজে সকলের শিক্ষা , কুসংস্কার দূরীকরণ , নারী শিক্ষার বিস্তার - ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এই সকল আন্দোলনগুলির মধ্যে দিয়ে পক্ষান্তরে ভারতে জাতিভেদ প্রথার পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্রাহ্মসমাজ , আর্যসমাজ , রামকৃষ্ণমিশন , সত্যসাধক সমাজ - ইত্যাদি সংগঠনের আন্দোলন মূলত ছিল সমাজের অসাম্যগুলিকে দূর করে মুক্ত সমাজের প্রতিষ্ঠা। 

৬. ভারতে গণতন্ত্রের বিকাশ :- 
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে সামাজিক ও জাতিগত অসাম্যের মূল উপাদানগুলি বিলুপ্ত হতে থাকে। গণতন্ত্রে জাতি - গোষ্ঠী - ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. নারীদের মর্যাদাগত বিবর্তন :- 
স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বে এবং পরবর্তী সময়ে বহু আন্দোলন , শিক্ষার বিস্তার , সাংবিধানিক ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে ভারতীয় নারীদের মর্যাদাগত বিবর্তন ঘটে। এর সাথে সাথে নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি যুক্ত হলে , দুর্বল জাতি হিসাবে নারীদের দমন ও বঞ্চিত করে রাখার প্রক্রিয়া বহুলাংশে হ্রাস পায়। 

৮. শিল্পায়নের প্রভাব :- 
স্বাধীনতার  পরবর্তীকালে ভারতে ভারী শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এর ফলে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে ভারতে চিরাচরিতভাবে চলে আসা জাতের ভিত্তিতে কর্ম - এই ধারণার বিলুপ্তি ঘটে। এই সময়কাল থেকেই জাত ও বর্ণের ভেদাভেদের উর্ধে উঠে মানুষ বিভিন্ন পেশায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। ফলে জাতিপ্রথার প্রাধান্য ম্লান হয়ে পড়ে। 

৯. নগরায়ণের প্রভাব :- 
শিল্পায়ন ও নগরায়ণ পরস্পর সম্পর্কিত। শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে দ্রুত নগরায়ণের বিস্তার ঘটতে থাকে। নগরের মানুষের আধুনিক ও ব্যাস্ত জীবনযাত্রায় জাতি প্রথার কোনো গুরুত্ব থাকেনা। জাতিভেদের বিভিন্ন বাধানিষেধ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। 

১০. আধুনিকীকরণ ও পাশ্চ্যত্যের প্রভাব :- 
ভারতে ব্রিটিশদের হাত ধরে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন উপাদান ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রবেশ করতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বায়নের ফলে ভারতীয় সমাজ আন্তর্জাতিক সমাজে পরিণত হয়েছে ও সারা বিশ্বের সকল আধুনিক উপাদানগুলোকে গ্রহণ করেছে। এই সকল আধুনিক সামাজিক উপাদান জাতিপ্রথাকে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। 

১১. বিভিন্ন মনিষীদের ভূমিকা :- 
ভারতের বিভিন্ন মনীষীগণ জাতপাতের বিরুদ্ধে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেমন রাজা রামমোহন রায় , স্বামী বিবেকানন্দ , শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস , মহাত্মা গান্ধী , ডক্টর বি আর আম্বেদকর , জ্যোতিরাও ফুলে - প্রমুখ। মনিষীগণ তাঁদের আদর্শের মাধ্যমে মানবধর্মকে তুলে ধরেছিলেন। জাতপাতের উর্ধে উঠে তারা শিক্ষা , মানুষের অধিকার ও প্রকৃত মানবধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

১২. নতুন সামাজিক শ্রেণীর উদ্ভব :- 
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির উদ্ভব হয়। এর পেছনে কিছু সামাজিক ও সাংবিধানিক কারণ দায়ী ছিল। যেমন স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে ভারতে রাজতন্ত্রের অবলুপ্তি ঘটে ও বিভিন্ন সময়ে জমিদারি প্রথার অবলুপ্তি ঘটে। এছাড়াও স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে পুঁজিপতি , মধ্যবিত্ত - ইত্যাদি শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এই নতুন সামাজিক শ্রেণীগুলি মূলত শ্রম - বিভাজন দ্বারা গঠিত হয় ; জাতের ভিত্তিতে নয়। 

পরিশেষে বলা যায় , ভারতে জাত ব্যবস্থার পরিবর্তন হঠাৎ করে সংগঠিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক প্রক্রিয়ার দ্বারা তা প্রভাবিত হয়েছে এবং এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বর্তমানেও সমানভাবে ত্বরান্বিত হচ্ছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক স্তরবিন্যাসের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট :- 

Social Stratification : Definition and features . ( In Bengali ). 




সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণা ও সংজ্ঞা :- 


জিসবার্ট বলেছেন , সামাজিক স্তরবিন্যাস হল প্রাধান্য ও বশ্যতার সূত্রে পরস্পর সম্পর্কিত স্থায়ী গোষ্ঠী বা শ্রেণীর ভিত্তিতে সমাজের স্তরবিভাগ। 

সরোকিনের মতে , জনগণকে পর্যায়ক্রমে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া হল সামাজিক স্তরবিন্যাস। 

বটোমোর বলেছেন , মর্যাদা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে বিভক্ত কতকগুলি শ্রেণী বা স্তরের উর্দ্ধক্রমে অবস্থিতিকে সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে। 

মেলভিন ও টিউমিন বলেছেন , ক্ষমতা , সম্পত্তি , সামাজিক অবস্থান - ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বৈষম্য দেখা যায় , তার ভিত্তিতে গঠিত সমাজের ক্রমোচ্চ বিভাজন হল সামাজিক স্তরবিন্যাস। 

অগবার্ন ও নিমকফ বলেছেন , সামাজিক স্তরবিন্যাস হল একটি প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক ব্যক্তিবর্গকে মর্যাদার ক্রমানুসারে সাজানো হয়। 

সুতরাং  , সামাজিক স্তরবিন্যাস হল এমন একটি চিরন্তন , সার্বজনীন এবং আবশ্যিক সামাজিক পরিস্থিতি , যার মধ্যে দিয়ে মানুষের সম্পত্তি , মর্যাদা ও ক্ষমতার পার্থক্য চিহ্নিত হয় এবং মানবিক সম্পর্কের গতি - প্রকৃতি নির্ধারিত হয় ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট :- 


১. সামাজিক স্তরবিন্যাস মূলত সামাজিক প্রকৃতির। দৈহিক পার্থ্যক্যগুলির তুলনায় মানুষের সম্পত্তি , মর্যাদা , ক্ষমতা - ইত্যাদির পার্থ্যক্যের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস গড়ে ওঠে। 

২. সামাজিক স্তরবিন্যাস হল একটি চিরন্তন ও সার্বজনীন ঘটনা। সমাজের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সময়ে , প্রতিটি সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। 

৩. সামাজিক স্তরবিন্যাস সামাজিক মান - মর্যাদা প্রভৃতির নিয়ামক। সামাজিক মর্যাদা সিঁড়িতে যে ব্যক্তি বা শ্রেণী উপরের দিকে থাকেন - তারা অধিক ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। পক্ষান্তরে মর্যাদা সিঁড়ির নীচের দিকে থাকা ব্যক্তি বা শ্রেণী কম সুযোগ - সুবিধা ভোগ করেন বা অধিকারহীন শ্রেণীতে পরিণত হন। 

৪. সামাজিক স্তরবিন্যাসের কোনো জৈব তাৎপর্য নেই। মানুষের সামাজিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস রচিত হয়। 

৫. সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজে বসবাসকারী সকল ব্যক্তিবর্গকে প্রভাবিত করে। সমাজে অবস্থানকারী প্রতিটি ব্যক্তি কোনো না কোনো মর্যাদা সিঁড়িতে অবস্থান করছেন। এই মর্যাদা সিঁড়িতে অবস্থানের পার্থ্যক্যের ভিত্তিতেই সামাজিক মর্যাদা স্থির হয়। 

৬. সামাজিক স্তরবিন্যাসের সাথে সামাজিকীকরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সামাজিক মর্যাদা সিঁড়িতে বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি বা শ্রেণী সমাজকে প্রভাবিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয় এবং তা সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। 

৭. সামাজিক স্তরবিন্যাস সামাজিক মিথষ্ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই মিথস্ক্রিয়া কেবলমাত্র অভিন্ন স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংগঠিত হয় যেমন - বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন অথবা , সামাজিক লৌকিকতা পালনের বিশেষ বিশেষ রীতি - পদ্ধতি। এই সকল ক্ষেত্রেই সামাজিক স্তরবিন্যাস নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৮. সামাজিক স্তরবিন্যাসের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সহযোগিতা , সহাবস্থান ও প্রতিযোগিতার সম্পর্ক তৈরী হয়। বিভিন্ন সামাজিক মর্যাদায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের উন্নততর স্তরে উত্তরণের স্পৃহা থেকে সমাজ পরিবর্তন , সমাজ উন্নয়ন ইত্যাদি প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় সহাবস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের ভিত্তিতে। 

৯. বিভিন্ন সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের চরিত্র অভিন্ন হয়না। দেশ - কাল ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটলেও সামাজিক স্তরবিন্যাসের মৌলিক চরিত্র অপরিবর্তিত থাকে। 

১০. সামাজিক স্তরবিন্যাসের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যায়ন সম্ভব। সমাজে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ মর্যাদা সিঁড়ির বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন এবং সমাজে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করেন ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করেন। এই সকল ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়াগুলির ভিত্তিতে সমাজে তাদের মূল্যায়ন সম্ভব হয়। 

১১. সামাজিক স্তরবিন্যাসের ফলে সমাজে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পায়। প্রতিটি সমাজে , প্রতিটি শ্রেণীর মধ্যে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা উভয়ই বর্তমান। এই পরস্পর বিপরীতমুখী সামাজিক প্রক্রিয়া ব্যক্তিবর্গকে মর্যাদা সিঁড়িতে উচ্চস্তরে অবস্থানের প্রেষণা যোগায় এবং এর ফলেই সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। 

১২. সামাজিক স্তরবিন্যাস আরোপিত ও অর্জিত উভয়ই হতে পারে। কোনো ব্যক্তি বংশানুক্রমে মর্যাদা সিঁড়িতে অবস্থান করে। আবার কেউ নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক মর্যাদার একটি নির্দিষ্ট সিঁড়ি অর্জন করে। 

১৩. মৌলিক চরিত্র অপরিবর্তিত থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সামাজিক স্তরবিন্যাসের ভিন্নরুপতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন - ভারতীয় সমাজ মূলত ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য , শুদ্র - এই চারভাগে বিভক্ত ছিল। আবার আফ্রিকায় পশুপালক ও কৃষকেরা বাহিমা ও বাইরু - এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। 

১৪. সামাজিক স্তরবিন্যাস ফলপ্রদায়ী বা অনুবন্ধী প্রকৃতির। সামাজিক মর্যাদা সিঁড়িতে অবস্থানকারী প্রতিটি ব্যক্তি সামাজিক ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা লাভ করে। মর্যাদা সিঁড়ির উপরের দিকে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা অধিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় , ভারতীয় হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণরা অধিক সামাজিক মর্যাদা লাভ করেন। 

১৫. সামাজিক স্তরবিন্যাস স্থিতিশীল নয় ; এটি চলমান ও গতিশীল প্রক্রিয়া। সামাজিক মর্যাদা সিঁড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তি নিজের দক্ষতা , যোগ্যতা , শিক্ষা - ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে মর্যাদা সিঁড়িতে নিজের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো         

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates