ভারতে যুব সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলি আলোচনা কর।

by - April 15, 2022

ভারতে যুব সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলি আলোচনা কর। 

ভারতের যুব সম্প্রদায় বর্তমানে কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ? 

যুব সম্প্রদায়ের ১০ টি প্রধান সমস্যা। 

Discuss the problems of Youth in India . ( In Bengali ). 




ভারতে যুব সম্প্রদায়ের সমস্যা :- 


ভারতের জনসংখ্যাগত বিচারে যুবদের সংখ্যা সর্বাধিক। সুতরাং , ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে যুবদের ভূমিকাই সর্বাধিক। কিন্তু যুব সম্প্রদায় একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যাগুলি ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় প্রকারের হয়ে থাকে। যুব সমাজ যেহেতু বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন তাই পক্ষান্তরে , এই সমস্যা জাতির উন্নয়নের পক্ষে একটি নেতিবাচক দিক। একটি দেশের যুবসমাজ যতটা সমস্যার মধ্যে থাকবে , সেই দেশের ভবিষ্যৎ ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্তমানে যুব সমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 


১. বেকারত্বের সমস্যা :- 
ভারতে যুবসমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলির মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। ভারতের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ; কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্রুত কমে আসছে। কর্মসংস্থানের সংকোচনের একটি বড় কারণ হল দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ফলে , ভারতে দ্রুত হারে বেকারত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে বেকারত্বের হার ১০.১ শতাংশ। শতকরা হারের বিচারে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব দেখা যায় সিকিমে। 

২. মূল্যবোধের অবক্ষয় :- 
বর্তমানে যুবক - যুবতীদের উপর থেকে তাঁদের মাতা - পিতার কর্তৃত্ব ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। এই কর্তৃত্ববিহীন জীবনযাত্রা যুবসমাজের নিকট অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং বহির্মুখী জীবনযাত্রার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাইট ক্লাব , ডিস্ক - থেক , অবৈধ সম্পর্ক , উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রা - ইত্যাদিতে যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে সনাতন ভারতীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। 

৩. শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা :- 
তীব্রভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বেকারত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে না। প্রচলিত শিক্ষা যুবসমাজের কর্মপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে না। বিশেষ ধরণের বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হলেও তা আশানুরূপ নয়। এছাড়াও অন্যান্য পেশাগত কোর্সগুলিতে প্রচুর পরিমান ফি প্রদান করতে হয় - ফলে সেখানেও যুবসমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ খুব কম। উচ্চশিক্ষা লাভ করেও প্রচুর ছাত্র ছাত্রী বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত।  

৪. মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্তি :- 
বর্তমানে যুবসমাজ মাদক দ্রব্যের প্রতি তীব্রভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটি একটি চিন্তার বিষয়। পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যেও মাদক দ্রব্যের ব্যবহার তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনো বা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে আবার কখনো বা উচ্ছৃঙ্খলতার স্বাদ পেতে মাদকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। যাদের হাতে জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে , তাদের মাদকের প্রতি আকর্ষণ , জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 


৫. রাজনৈতিক নেতৃবর্গের ভূমিকা :- 
বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলি যুবসমাজকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যুবসমাজের সমস্যাগুলিকে সমাধান না করে তরুণ যুবসমাজকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বিপথে পরিচালিত করছে। নেতাদের প্রশ্রয় পেয়ে তরুণ যুবসমাজ অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ যুবসমাজকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে ও আদর্শের মগজ ধোলাই করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। 

৬. ভোগবাদের বিস্তার :- 
ভারতে বিশ্বায়ন ধারণার সূচনা হয় ১৯৯০ এর দশকে। বিশ্বায়নের হাত ধরে সমাজে প্রবেশ করেছে ভোগবাদ। সমাজে ভোগবাদের বিকাশের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যুবসমাজ। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ইলেক্ট্রনিক গেজেট ব্যবহার , বিলাস বহুল জীবনযাত্রার হাতছানি , সহজ ই এম আই - য়ের চোরাবালির আকর্ষণ - ইত্যাদি বিষয়গুলি যুবসমাজকে ভোগবাদের দাসে পরিণত করেছে। 

৭. আত্মকেন্দ্রিকতা :- 
আধুনিকতা , পাশ্চাত্যের প্রভাব , ভোগবাদের বিস্তার - ইত্যাদি মানুষকে ক্রমশঃ স্বার্থকেন্দ্রিক ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা , জাতীয় জীবনের সমস্যা , মানবিক স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন - ইত্যাদির পরিবর্তে যুবসমাজ আত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় অধিক মগ্ন হয়ে পড়ছে। ফলে একদিকে যেমন , ভারতীয় যুবসমাজ জাতীয় জীবনের গঠনের কাজে নিজেদের বিরত রাখছে , অন্যদিকে দেশের প্রধান শক্তি যুবসমাজ আত্মকেন্দ্রিক নেশায় বুঁদ হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। 

৮. বংশধারাগত শুন্যতার সৃষ্টি :- 
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যুবসমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশ না ঘটিয়ে তাদেরকে কেবল চাকুরিমুখী করে তুলেছে। ফলে , সামাজিকতা , ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা , সাংস্কৃতিক ধারক ও বাহক হিসাবে ভূমিকা গ্রহণ - ইত্যাদি মহৎ বিষয়গুলি গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা , প্রচলিত সমাজের প্রতি নেতিবাচক বিরূপতা - এইরূপ মানসিকতা যুবসমাজের মধ্যে প্রধান হয়ে উঠেছে। সমাজের ভিত্তি মজবুত না করে নীতি নির্ধারকেরা উপরিকাঠামোর পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। ফলে যুবসমাজের মৌলিক জীবনধারা কলুষিত হয়ে পড়েছে। 

৯. সামাজিক অবক্ষয় :- 
বর্তমানে সমাজের সবক্ষেত্রে অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক অসাধুতা , স্বজন - পোষণ , উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি ও উৎকোচ সংস্কৃতি , জাতি ও রাজনীতির অশুভ আঁতাঁত - ইত্যাদি বিষয়গুলি যুবসমাজের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং যুবসমাজের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি নেতিবাচক বিরোধিতা ও হীনমন্যতাবোধের জন্ম দিয়েছে। 

১০. অপসংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ :- 
বর্তমান সমাজে বিশ্বায়নের হাত ধরে সারা পৃথিবী যেমন একাত্ম হয়ে '' ভুবন গ্রাম '' তৈরী করেছে তেমনি অন্যদিকে বিভিন্ন ধরণের অপসংস্কৃতি যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। রুচিহীন পোশাক পরিধান , মাদকের প্রতি আকর্ষণ , প্রকাশ্যে ধূমপান , অবাধ যৌনাচার , সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি - ইত্যাদি বিষয়গুলি ভারতীয় সমাজের মৌলিক বৈশিষ্টগুলির মূলে কুঠারাঘাত করেছে। 

পরিশেষে বলা যায় , ভারতীয় যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজ সঙ্কটের সম্মুখীন। এই সমস্যা দূর করতে , সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা , শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী পরিকাঠামো গঠন , কর্মসংস্থান সৃষ্টি - ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।   



You May Also Like

1 comments

  1. বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলি উল্লেখ কর। উত্তর চাই

    ReplyDelete