ভারতে বয়স্কদের সমস্যাগুলি আলোচনা কর।

by - April 16, 2022

ভারতে বয়স্কদের সমস্যাগুলি আলোচনা কর। 

ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত কর। 

Discuss the problems of the elderly in India. ( In Bengali ). 




ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সমস্যা :- 


বিভিন্ন দেশে বার্ধক্যের সময়সীমা বিভিন্ন ধরা হয়। যেমন আমেরিকায় ৬৫ + বছরকে , অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ - ৬৫ বছর ইত্যাদি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৬৫ + বছরকে ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ৬০ + বছর বয়সকে বার্ধক্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভারতে ৬০ + বছর বয়সকে বার্ধক্যের সূচক হিসাবে মনে করা হয়। 

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি , স্বাস্থ্য সচেতনতা - ইত্যাদির কারণে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। মনে করা হয় ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৬ কোটি। 

যাইহোক , ভারতে বয়স্ক নাগরিকেরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। একদিকে তাঁরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করেন , অন্যদিকে তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। ভারতে বয়স্কদের বিভিন্ন সমস্যাগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 


১. জৈবিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা :- 
বয়সের কারণে বয়স্কদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরী হয়। তাঁদের বিভিন্ন অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় , শারীরিক ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। শ্বাসপ্রস্বাস সংক্রান্ত সমস্যা , হজমের সমস্যা , দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া , অনিদ্রা , মধুমেহ , হৃদযন্ত্রের সমস্যা - ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা বেশিরভাগ বয়স্কদের অবধারিতভাবে প্রভাবিত করে। 
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রোগে খুব সহজেই তাঁরা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সমস্যা তখনই জটিল আকার ধারণ করে , যখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বয়স্কদের শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। 

২. সামাজিক সমস্যা :- 
প্রতিটি বয়স্ক নাগরিক বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন - তা দেশ ও কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। শারীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভূমিকা পালন ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ - ইত্যাদি সমস্ত কিছু সামাজিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে।সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং তাঁরা অপরের সহানুভূতি ও সমহমর্মিতার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। 


৩. পারিবারিক সমস্যা :- 
সাধারণতঃ বয়স্ক ব্যক্তিরা এই সময় থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ব্যক্তিরা পরিবারের নিয়ন্ত্রক থেকে ধীরে ধীরে পরিবারের বোঝা হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ বয়স্ক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর নির্ভর করতে হয়। পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যরা নিজেদের কাজকর্মে এতটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েন যে বয়স্ক ব্যক্তিদের সুবিধা - অসুবিধার প্রতি নজর দেওয়ার কারো সময় থাকেনা। 

৪. অর্থনৈতিক সমস্যা :- 
ভারতে বয়স্ক নাগরিকদের বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। একদিকে অর্থনৈতিক রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্যদিকে সঞ্চিত পুঁজিতে টান পড়ে। যাদের কোনোরকম আর্থিক উপায় থাকেনা তাদের অবস্থা হয় ভয়ঙ্কর। এমনকী , যাদের আর্থিক উপায়ের পথ আছে ; যেমন পেনশন , বাড়িভাড়ার টাকা , জমানো টাকা থেকে আয় - ইত্যাদি ; তাঁদের অর্থের উপরেও তাঁদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকেনা - পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেই অর্থের উপর নিজের নিজের অধিকার দাবী করে। 


৫. মানসিক সমস্যা :- 
বয়স জনিত কারণেই বয়স্করা স্মৃতি বিভ্রমের শিকার হন বা অতিরিক্ত স্মৃতি রোমন্থন করেন , মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় , কর্মে প্রবণতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় , নতুন কিছু শিখে নেওয়ার মানসিকতা হ্রাস পায়। স্বামী - স্ত্রী - র মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। শারীরিক চিন্তা , মৃত্যুভয় - ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়গুলি বয়স্কদের কুরে কুরে খায়। 

৬. নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব :- 
বেশিরভাগ অল্পবয়স্ক মানুষেরা বয়স্কদের সঙ্গ পছন্দ করেন না। অন্যদিকে বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষ পরিবার ও সমাজের বিবর্তন জনিত পরিবর্তনগুলি মেনে নিতে পারেন না। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন মারা গেলে অপরজন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে পরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি শোনার মত সময় পরিবারের অল্প বয়স্ক সদস্যদের থাকেনা। কিছু ক্ষেত্রে বয়স্কদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও পরিবারের সাথে একত্রে বাস করার আকুল আকুতি শোনার মত কান কারো থাকেনা। তাই বয়সের এক প্রান্তে এসে নিজের সাজানো জগতে নিজেরাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। 

৭. ভূমিকার পরিবর্তন :- 
যৌবনকালে প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষা , কর্মের প্রচেষ্টা , কর্মজীবন , বিবাহ , পরিবার প্রতিপালন - ইত্যাদি ঘটনাবহুল জীবনের সাক্ষী ও অংশ হয়ে থাকেন প্রতিটি ব্যক্তি। আবার সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রগতিমূলক ক্রিয়াকলাপে তাঁরা অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বয়স হলে বসয়স্কদের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্করা ইচ্ছা থাকলেও সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে পারেন না। এতে বয়স্কদের মানসিক সমস্যা তৈরী হয়।        

পরিশেষে বলা যায় , ভারতে পরিবার ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে বয়স্কদের সমস্যাগুলি আরো তীব্র হয়ে পড়েছে। ভারতে নগর জীবনের তুলনায় গ্রামীণ জীবনে পরিবার ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছে কম। তাই , গ্রামীণ জীবনে বয়স্কদের সমস্যাগুলি তুলনামূলকভাবে কম। গ্রামীণ ভারতে সম্পূর্ণরূপে একক পরিবার গঠনের প্রক্রিয়া ততটা দ্রুত নয়। কিন্তু নগরের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিক শিল্প সমাজে , একক পরিবারের কাঠামোতে বয়স্কদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।   


You May Also Like

0 comments