সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট।

by - April 17, 2022

সামাজিক সমস্যা কাকে বলে ? সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 

Definition and features of social problems. ( In Bengali ). 




সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা / ধারণা :- 


Walsh এবং Furfuy - এর মতে , সমাজের প্রচলিত আদর্শ এবং মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত কার্যাবলী বা ঘটনাসমূহ হল সামাজিক সমস্যা। 

Wenberg মনে করেন , সামাজিক সমস্যা হল সামাজিক পদ্ধতিসমূহ থেকে উদ্ভব হওয়া বহুসংখ্যক সদস্যদের আপত্তিকর আচরণবিধি , যেগুলি থেকে মুক্তি পেতে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। 

R.K. Marton সামাজিক সমস্যাকে একপ্রকার বিচ্যুত আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। 

Horton ও Leslie - র মতে , সমাজের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অসামাজিক আচরণ যার দ্বারা সমাজের বৃহত্তর অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

ই রাব এবং জি জে সেলজনিক বলেছেন , সামাজিক সমস্যা হল এমন এক ধরণের পরিস্থিতি যা মানুষকে বিপথগামী করে। এই ধরণের আচরণ সমাজকে শৃঙ্খলিত করার পক্ষে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

সমস্যা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Problem শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Problema থেকে যার অর্থ এমন এক নিক্ষেপিত ঘটনা যা মানুষের চিন্তা - ভাবনা ও কাজকর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং সামাজিক সমস্যা হল এমন এক ধরণের পরিস্থিতি যাকে বাঞ্ছিত বলে মনে করা হয়না , যা সমাজের প্রচলিত স্বাভাবিক নিয়মগুলিকে বিনষ্ট করে , যা সমাজে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দেয় এবং যার মিলিত প্রতিকার সম্ভব। 


সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট : - 


১. সামাজিক সমস্যাগুলি বিশ্বজনীন। সারা বিশ্বের প্রতিটি সমাজে সামাজিক সমস্যা বর্তমান। তাই সমস্যা বহির্ভুত সমাজের কথা কল্পনা করা যায়না। দেশ - কাল ভেদে সমস্যাগুলির প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও , তাদের মৌলিক চরিত্র একই থাকে। 

২. সামাজিক সমস্যাগুলি আপেক্ষিক ; অর্থাৎ আজ যা সমস্যা হিসাবে পরিচিত , কাল তাকে সমস্যা বলে মনে না'ও হতে পারে। সমাজ পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীল সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক কিছু ঘটনাকে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা বলে মনে হলেও , কিছু সময় পর দেখা যায় সেগুলি মোটেও সমস্যা নয়। যেমন ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে তৎকালীন শিক্ষিত সমাজ সমস্যা হিসাবে দেখলেও আজ তা প্রমাণিত যে মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম। 

৩. প্রতিটি সামাজিক সমস্যার কিছু উৎসগত ভিত্তি থাকে। নির্দিষ্ট কারণ , ঘটনা বা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়। বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও উশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রতিটি সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয় এবং কালক্রমে তা বিস্তার লাভ করে। 

৪. সামাজিক সমস্যা হল সমাজের আদর্শ অবস্থা থেকে বিচ্যুত আচরণ। বস্তুগত লাভের আশায় মানুষ বা গোষ্ঠী বিচ্যুত আচরণ করে যা সমাজের অন্যান্য গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই ধরণের বিচ্যুত আচরণকে কোনো সমাজেই কাম্য বলে মনে করা হয়না। 

৫. বিভিন্ন সমাজে সামাজিক সমস্যাগুলির প্রকতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন , ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বার্ধক্যের সমস্যা একটি অন্যতম সমস্যা। কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে বার্ধক্য এখনো খুব বড় সমস্যা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। বাল্য বিবাহ , ডাইনি প্রথা - এগুলি ভারতীয় সমাজের অন্যতম সমস্যা হলেও পাশ্চাত্য আধুনিক সভ্যতাগুলিতে ততটা প্রবল নয়। 


৬. সামাজিক সমস্যাগুলি সকল সমাজেই ক্ষতিকারক ফল প্রদান করে। এক শ্রেণির মানুষের বিচ্যুত আচরণ তাদের স্বার্থ পূরণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হলেও তা অন্যান্য সকল মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত করে। তাই , যেকোনো ধরণের সামাজিক সমস্যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। 

৭. সামাজিক সমস্যাগুলি পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন , ধরা যাক একজন অযোগ্য ব্যক্তি উৎকোচ প্রদান করে শিক্ষকতার চাকুরী লাভ করলেন। ফলে , তিনি যেহেতু অযোগ্য , তাই তার দ্বারা যথার্থভাবে শিক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব হবেনা ; ফলে ব্যাহত হবে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। এইভাবে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। 

৮. সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান সম্ভব। সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান করতে ঐক্যবদ্ধ ও সমষ্টিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। নির্দিষ্ট নীতি , ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি , সমবেত প্রয়াস , রাজনৈতিক সদিচ্ছা - ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান করা যায়। 

৯. প্রতিটি সামাজিক সমস্যা একটি বিশেষ সামাজিক অবস্থার ফলে সৃষ্ট হয়। এই বিশেষ সামাজিক অবস্থাকে বলা হয় - Pathological Social Condition ; এই শব্দের অর্থ হল - এমন এক পরিস্থিতি যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল। এই ধরণের পরিস্থিতি সমাজের আদর্শ অবস্থা থেকে বিচ্যুত আচরণ করার জন্য গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গকে অনুপ্রাণিত করে। 

পরিশেষে বলা যায় , বর্তমান পৃথিবীতে সমাজ ও সামাজিক সমস্যার আদর্শ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ধরণের সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি সামাজিক সমস্যাগুলির জন্ম দেয় ; যেমন - সমাজের অসম বিকাশ , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি , অসম অর্থনৈতিক বিকাশ , রাজনৈতিক ও সরকারি কাজকর্মে দুর্নীতি , মুক্ত যৌনাচার , যৌথ পরিবারের ভাঙন - ইত্যাদি বহুবিধ বিষয় সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরী করে।   


You May Also Like

0 comments