Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা :- 

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণাটি মার্কিন সমাজতত্ত্ববিদ চার্লস হর্টন কুলির চিন্তাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে দেখা যায়। প্রত্যেক সমাজেই প্রাথমিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব দেখা যায়।  প্রাথমিক গোষ্ঠীকে সমস্ত সংগঠনের নিউক্লিয়াস হিসাবে কল্পনা করা হয়ে থাকে। অধ্যাপক কুলি সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে এই প্রাথমিক গোষ্ঠী কথাটি ব্যবহার করেন।  তিনি তাঁর Social Organisation গ্রন্থে এটি ব্যবহার করেছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

প্রাথমিক গোষ্ঠী হল এমন একটি গোষ্ঠী যা তার সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক , পারস্পরিক সহযোগিতা ও সাহচর্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে মিশে থাকে ঘনিষ্ঠতা - অন্তরঙ্গতা।  এই অন্তরঙ্গতা তার সদস্যদের মধ্যে গভীর '' আমরা বোধ ''  সঞ্চারিত করে। এই আমরা বোধ - ই  হলো প্রাথমিক গোষ্ঠীর এক ও অখন্ড বৈশিষ্ট্যের পরিচয়বাহী। 

অর্থাৎ, প্রাথমিক গোষ্ঠী হল মুখোমুখি পরিচয়যুক্ত সদস্যদের সমষ্টি। সদস্যদের এই মুখোমুখি সম্পর্ক ( Face to face relation ) থাকে বলেই একে মুখোমুখি গোষ্ঠী ( Face to face group ) বলে .সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আন্তরিক , ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। 

কুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীর প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তিনটি মুখ্য বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।  এগুলি হল - 
১. সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক , 
২. সহযোগিতার সম্পর্ক ও 
৩. আমরা বোধ। 
এছাড়াও তিনি আনুগত্যের আবেগ , পরিচয় নির্ধারণ , বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক - প্রভৃতির কথাও  বলেছেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , বটোমরের '' মুখ্য গোষ্টি '' কথাটি প্রাথমিক গোষ্ঠীরই সমার্থক। প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী হল সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত , যার মধ্যে সদস্যরা একে অন্যের সাথে প্রত্যক্ষ আচার ব্যবহার করে থাকে। তিনি আরো বলেছেন , প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী , তা স্বল্পস্থায়ী বা স্থায়ী হোক , সামাজিকীকরণের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনের মৌল উপাদান হলো প্রাথমিক গোষ্ঠী। পরিবার , খেলার সঙ্গী , খেলার গোষ্ঠী , অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী - এই জাতীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রাথমিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য :- 


১. প্রাথমিক সম্পর্ক :-  প্রাথমিক গোষ্ঠীর অপরিহার্য বিষয়ই হলো তার সদস্যদের প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সম্পর্ক। প্রত্যক্ষ যোগাযোগই প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। এই সম্পর্ক সাধারণত এক ও অভিন্ন। 

২. উদ্দেশ্যের অভিন্নতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্দেশ্য ও মনোভাব কমবেশি অভিন্ন ও সমজাতীয় হয়ে থাকে। সদস্যরা তাদের এই অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সমবেতভাবে সচেষ্ট হয়। অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস - এর মতে , প্রাথমিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের উদ্দেশ্যগত অভিন্নতা গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের এক মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য সৃষ্টি করে। 

৩. সম্পর্কের স্বকীয়তা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনরূপ স্বার্থচিন্তা থাকেনা। এই সম্পর্ক কোনরূপ আর্থিক লাভ-ক্ষতির উপরে নির্ভর করে গড়ে ওঠেনা।   ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা বা শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্য পূরণের চিন্তা এই জাতীয় সম্পর্কের মধ্যে থাকে না। স্বামী স্ত্রীর প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্ক এই প্রাথমিক সম্পর্কের অন্যতম উদাহরণ। 

৪. ব্যক্তিগত সম্পর্ক :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যগনের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রকৃতির। কোনো বিধিবদ্ধতার বেড়াজালে এই সম্পর্ক আবদ্ধ নয়। এই সম্পর্কের মধ্যে আন্ত মানবিক কোমল হৃদয়বৃত্তির উন্মোচিত হওয়ার প্রয়োজনীয় উপাদান বর্তমান থাকে। 

৫. সম্পর্কের গভীরতা :-  প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। যেহেতু এই সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরতা প্রাপ্ত হয় , সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিশে থাকে প্রেম - ভালোবাসা , শ্রদ্ধা - সহানুভূতি , সহযোগিতা - পরার্থচিন্তা প্রভৃতি মানবিক বিষয়াদি। 

৬. স্বতস্ফূর্ততা :- প্রাথমিক সম্পর্ক হল সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। ব্যক্তি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি অন্যের সাথে প্রাথমিক সম্পর্ক তৈরি করে না। তাছাড়া এই সম্পর্ক পরিকল্পনামাফিকও হয়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৭. আয়তনে ক্ষুদ্রতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠী মূলত ক্ষুদ্র আকৃতির হয়। গোষ্ঠীর আয়তন যত ক্ষুদ্র হয় প্রাথমিক সম্পর্কও তত গভীর হয়ে থাকে। আসলে , যেহেতু প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি জরুরি , এই দৈহিক নৈকট্য তখনই সম্ভব হয় যখন সদস্যরা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। 

৮. দৈহিক নৈকট্য :- প্রাথমিক গোষ্ঠীকে Face to face group বা মুখোমুখি গোষ্ঠীও বলা হয়।  ''মুখোমুখি'' বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তিদের দৈহিকভাবে কাছাকাছি অবস্থানকে। প্রাথমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্টটি অবধারিতভাবে বর্তমান। 

৯. স্থায়িত্ব :- প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি মোটামুটিভাবে স্থায়ী হয়। প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন হয়। এই অনেকটা সময় গোষ্ঠী স্থায়িত্ব প্রমাণে যথেষ্ট। 

১০. সদস্যদের অভিন্নতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে মিল দেখা যায়।  এদের সামাজিক পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ড কমবেশি একই প্রকার হয়ে থাকে। তাদের সংস্কৃতি , বুদ্ধিবৃত্তি ,  চিন্তা-চেতনা , সামাজিক মান - মর্যাদা , মানসিকতা , জীবনযাত্রা প্রভৃতি একই জাতীয় হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে সহজে ঐক্যবোধ , আন্তরিকতা , একাত্মতা , সহযোগিতা প্রভৃতি সহজেই গড়ে উঠতে পারে। 

১১. ব্যক্তিস্বার্থের সীমাবদ্ধতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিতে সদস্যদের ব্যক্তিস্বার্থ গোষ্ঠীর স্বার্থের  তুলনায় কম গুরুত্ব পায়। এখানে ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কের খাতিরে অনেক সময় নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে থাকে। পারষ্পরিক আন্তরিকতা , আনুগত্যের জন্য গোষ্ঠীভুক্ত সদস্যগণ নিজেকে গোষ্ঠীর সাধারণ স্বার্থের অংশীদার বলে মনে করে থাকে , তাই তারা নিজ নিজ স্বার্থ চিন্তার  ঊর্ধ্বে উঠে গোষ্ঠীর সাধারণ স্বার্থ পূরণে একযোগে সমর্থন ও সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে। 

১২.  বিশেষ উদ্দেশ্যহীনতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠী কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় না। বরং বলা যায় এর উদ্দেশ্য হলো সাধারণ ( Common ) । ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রায় বেশিরভাগ প্রয়োজনগুলি এই জাতীয় গোষ্ঠী পূরণ করে থাকে। 

১৩. প্রত্যক্ষ সহযোগিতা :- প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বলতে বোঝায় ব্যক্তি যে সকল সহযোগিতা অন্যকে সরাসরি প্রদান করে থাকে। প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যে সহযোগিতার  প্রবণতা দেখা যায় তা মূলত প্রত্যক্ষ প্রকৃতির। 

১৪. সম্মিলিত স্বার্থের প্রাধান্য :-  একই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের স্বার্থ পূরণের জন্য একযোগে সচেষ্ট হয়। তারা এ ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ গৌণ প্রকৃতির হয়। 

১৫. যোগাযোগ :- যে কোনো সম্পর্ক মূলতঃ দুইভাবে তৈরি হয় - সংস্পর্শ ও যোগাযোগ। দৈহিক নৈকট্য - র মত এই গোষ্ঠীর সদস্যদের যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  পরস্পরের মুখোমুখি সম্পর্ক , পরস্পরের মধ্যে একাত্মতা হৃদ্যতা গড়ে ওঠে যোগাযোগের মাধ্যমেই। 

১৬. বিশ্বজনীনতা :- প্রায় প্রত্যেকটি মানবসমাজে প্রাথমিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব চোখে পড়ে। এটি একটি বিশ্বজনীনরূপ। কুলি তাঁর Social Organisation গ্রন্থে বলেছেন , ক্রমবর্ধিষ্ণু যোগাযোগের ফলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরস্পর সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে বিদ্বেষ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মানব জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠী বিষয়ক আবেগ ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে , কিন্তু আজকের এই বাস্তব সমাজের নিরিখে কুলির এইরূপ আশাবাদিতাকে অতিকথন বা Myth বলে মনে করা হয় .

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রাথমিক গোষ্ঠীর গুরুত্ব :- 


১. প্রাথমিক গোষ্ঠী হল সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মানুষের সামাজিক প্রকৃতির উন্মেষ ঘটায় প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিই। প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির তত্ত্বাবধানে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মানুষ সামাজিক জীব হয়ে ওঠে। ম্যাকাইভারের ভাষায় , " Primary groups are the nursery of human nature .'' 

২. মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুলির মতানুসারে , প্রাথমিক গোষ্ঠী হল ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মুখ্য রূপকার। তার বক্তব্য অনুযায়ী ,  মানুষের সামাজিক প্রকৃতি ও আদর্শের নিরূপণে প্রাথমিক গোষ্ঠীর মৌলিক ভূমিকা বর্তমান।  বস্তুতঃ ব্যক্তিমানুষের প্রেম-প্রীতি , ন্যায়-নীতি , মূল্যবোধ প্রভৃতি ব্যক্তিত্বের উপাদানগুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমেই উন্মোচিত ও বিকশিত হয়। এটিকে অনেকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের মুক্তাঙ্গণ হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। 

৩. আমাদের মানসিক চাহিদাগুলির পরিতৃপ্তি ঘটায় প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিই। প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবেই ব্যক্তি তার আনন্দ , নিরাপত্তা , সাহচর্য প্রভৃতি মানসিক অনুভূতি গুলি পেয়ে থাকে। তাছাড়া আবেগ , দুঃখ , যন্ত্রণা , মনের ভাব ইত্যাদি সে তার সদস্যদের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ পায়। এ বিষয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশ পায় প্রাথমিক গোষ্ঠীর মধ্যেই। এর দ্বারাই মানুষের স্নেহ , প্রেম , শ্রদ্ধা , ভালোবাসা , সহানুভূতি , সহমর্মিতা প্রভৃতি সুকুমারবৃত্তি গুলি উন্মোচিত - চর্চিত ও পরিশীলিত হয়ে থাকে। 

৪. প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা গভীরভাবে '' আমরা বোধ ''- এ উদ্বুদ্ধ। এই আমরা বোধই তাকে অন্যের ভালো-মন্দ বুঝতে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রণোদিত করে।  এইভাবে প্রাথমিক গোষ্ঠীর সাহায্যেই ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা থাকলে তা সংশোধিত হয়। 

৫. প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা যৌথভাবে বহুবিধ ও উদ্দেশ্য পূরণে সচেষ্ট হয়। এই যূথবদ্ধতা ব্যক্তিকে গোষ্ঠীর স্বার্থ পূরণের ব্যাপারে প্রেরণা , উৎসাহ - উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে। 

৬. প্রাথমিক গোষ্ঠী তার সদস্যদের মধ্যে দলীয় মনোভাব জাগ্রত করে। 

৭. প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই ব্যক্তিমানুষের হৃদয়ের কোমল প্রবৃত্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে।

 এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৮. প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই মানুষের নানাবিধ শারীরিক , সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। ব্যক্তিমানুষের নানাবিধ সমস্যা সে খোলামনে ওই গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের কাছে বলতে পারে। যেহেতু সদস্যরা একে অপরের সম্পর্কে গভীরভাবে সহানুভূতিশীল ও সহযোগি , তাই এসব সমস্যা সমাধানে অন্যান্যরাও সহযোগিতা করে থাকে।  এইভাবে ব্যক্তির নানাবিধ সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

৯. প্রাথমিক সদস্য হিসাবে ব্যক্তির মনে এই ধারণা জন্মায় যে , সে সমাজে একা বা  অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সে অনুভব করে সে তার বিপদে , দুঃখে অন্যের সহযোগিতা পাবে।  প্রাথমিক গোষ্ঠী এভাবেই তার কোনো সদস্যকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। 

১০. প্রাথমিক গোষ্ঠীর বেশ কিছু নিয়মকানুন থাকে। এগুলো তার সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেমন মেনে চলে , তেমনি কোনো না কোনো নিয়ম তার সদস্যদের মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। এই নিয়ম বিধি দ্বারা প্রাথমিক গোষ্ঠী একদিকে যেমন সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তি মানুষের আচার-আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে ; তেমনি অন্যদিকে ব্যক্তি মানুষকে নিয়মানুবর্তী হতে শেখায়। 

১১. প্রাথমিক গোষ্ঠীর অভ্যন্তরে ব্যক্তির সামাজিক রীতি নীতি গুলিকে মেনে চলার প্রবণতা অনুভূত হয়। সংঘবদ্ধ জীবনধারার শরিক হিসেবে ব্যক্তি সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রভাবে এই সকল বিষয়ের চর্চা বা অনুশীলন করে থাকে। এভাবে প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি সামাজিক প্রথা , লোকাচার , লোকনীতির অন্যতম বাহক হয়ে ওঠে। 

১২. সামাজিক জীব হিসাবে ব্যক্তিমানুষকে তার পরিচয় প্রদান করে থাকে প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিই।  উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , পরিবার একটি প্রাথমিক গোষ্ঠী , আমরা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। সমাজজীবনে আমাদের পরিচয় নির্ধারিত হয় পরিবারের সূত্র ধরেই। 

১৩. প্রাথমিক গোষ্ঠী সামাজিক ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার ব্যাপারে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments


সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীভাগ ( Classification of Social Groups )

 
সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীভাগ কয়েকটি মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। অধ্যাপক বটোমর তাঁর Sociology গ্রন্থে বলেছেন , সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় মানদন্ড বেশ কয়েকটি ; যেমন - গোষ্ঠীর লক্ষ্য , গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের আবেগপ্রবণতা ও বৌদ্ধিক চরিত্র , সম্পর্কের ব্যক্তিগত প্রকৃতি , গোষ্ঠীর আয়তন ও স্থায়িত্ব। 
মরিস জিনসবার্গ সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর আয়তন , স্থায়িত্ব , আঞ্চলিক বন্টন , গঠন প্রক্রিয়া , সাংগঠনিক প্রকৃতি - প্রভৃতি বিষয়গুলিকে উল্লেখ করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগগুলি নিম্নরূপ :- 

১. অন্তর্গোষ্ঠী ও বহির্গোষ্ঠী ( In - group and Out - group ) :- 
অধ্যাপক সামনার ( W.G. Sumner ) তাঁর Folkways গ্রন্থে এই শ্রেণীবিভাজনটি করেছেন। গোষ্ঠীর প্রতি তার সদস্যদের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাগ করা হয়েছে। 
নিজের গোষ্ঠীর সাথে তার সদস্যদের নিবিড় সম্পর্ক থাকে। নিজের গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি আন্তরিকতার গভীর বন্ধনে সংযুক্ত। তাদের মধ্যে গভীর '' আমরা বোধ '' বর্তমান। নিজেদের ক্লাব , নিজেদের পাড়া - এগুলি অন্তর্গোষ্ঠীর উদাহরণ। 
অন্যদিকে , ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর সদস্য নয় , তার প্রতি তার মনোভাব ঔদাসীন্যের , কখনো বা শত্রুতার - ওই ব্যক্তির কাছে উক্ত গোষ্ঠীটি হল বহির্গোষ্ঠী। যেমন - অন্যের ক্লাব। 

২. (ক ) ঐচ্ছিক গোষ্ঠী ও অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী  , (খ ) প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী , ( গ ) স্বল্পস্থায়ী গোষ্ঠী ও স্থায়ী গোষ্ঠী। 
Charles A. Ellwood তাঁর Psychology of Human Society গ্রন্থে এই তিন ধরণের শ্রেণীবিভাগের উল্লেখ করেছেন। 

(ক ) ঐচ্ছিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছা - অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যেমন ক্লাব , রাজনৈতিক দল - ইত্যাদি। আবার অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী হল এমন ধরণের গোষ্ঠী যার সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল নয়। সাধারণত , জন্মসূত্রে ব্যক্তির সদস্যপদ এক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়। যেমন - পরিবার।  

(খ ) প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী হল এমন ধরণের গোষ্ঠী যার বেশকিছু নিয়মনীতি , রীতিনীতি বা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন - বিদ্যালয় , জাতিব্যবস্থা - ইত্যাদি। 
অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীগুলিতে এজাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট অনুপস্থিত। যেমন - ক্ষিপ্ত জনগণ , বিদ্যালয়ের কমন রুমের গোষ্ঠী। 

(গ ) স্থায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে তৃতীয় শ্রেণীবিভাগটি করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে , স্থায়ী গোষ্ঠী দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় কিন্তু অস্থায়ী গোষ্ঠী বেশিদিন স্থায়ী হয়না। 

৩. প্রাথমিক গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠী :- ( Primary and Secondary Group ) :- 
গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও গুনাগুনের ওপর ভিত্তি করে এই বিভাজনটি করা হয়েছে। মার্কিন সমাজতত্ববিদ অধ্যাপক কুলি তাঁর Social Organisation গ্রন্থে উক্ত শ্রেণীভাগটি করেছেন। 
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ , মুখোমুখি ও আন্তরিক সম্পর্ক থাকে। প্রাথমিক সবচেয়ে প্রধান উদাহরণ হল পরিবার।     আবার , অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরোক্ষ ও গৌণ প্রকৃতির। যেমন - রাষ্ট্র। 

৪. বিধিবদ্ধ ও অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী ( Formal and Informal Group ) :-   
এটি মূলতঃ এলউড কৃত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীরই সমরূপ। বিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার - আচরণ ও কাজকর্ম সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমন - সেনাবাহিনী , শ্রেণীকক্ষের ছাত্র - ছাত্রী - ইত্যাদি। 
অন্যদিকে , অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সদস্যদের আচার আচরণের ওপর গোষ্ঠীর নিয়মবিধির ততটা কড়াকড়ি থাকে না। অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা এক্ষত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা উপভোগ করে থাকেন। যেমন , পর্যটক দল , পিকনিকের দল - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৫. সমাজতত্ববিদ Lowry  ও Rankin  মানব সমাজের পাঁচ প্রকার মৌলিক গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল - 
(ক ) জনসমষ্টি।  যেমন - জনসংখ্যা , ভিড় , জমায়েত , দর্শক , শ্রোতা ইত্যাদি। 
(খ ) সম্প্রদায়। যেমন - গ্রাম , শহর , শহরতলি , মহানগর - ইত্যাদি। 
(গ ) সংঘ। যেমন - ক্লাব , চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী , পরিষেবা সংস্থা - ইত্যাদি। 
(ঘ ) প্রতিষ্ঠান। যেমন - বিদ্যালয় , চার্চ , রাষ্ট্র - ইত্যাদি। 
(ঙ ) মর্যাদা গোষ্ঠী। যেমন - জাতি , শ্রেণী - ইত্যাদি। 

৬. জনসম্প্রদায় ও সংঘ :-  ( Community and Association ) 
জার্মান অধ্যাপক ফার্ডিনান্ড টোনিজ সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে এই শ্রেণীবিভাজনটি করেছেন। তিনি তাঁর Community and Association গ্রন্থে জনসম্প্রদায় বা Community কে Gemeinschaft এবং সংঘ বা Association কে Gesellschaft রূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতানুসারে , জনসম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ আন্তরিক ও ব্যক্তিগত বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একত্রে বসবাস করে। অন্যদিকে সংঘ হল মূলতঃ অর্থনৈতিক স্বার্থ পূরণকে লক্ষ্য করে সচেতন ও সুচিন্তিতভাবে গড়ে ওঠা সামাজিক সংগঠন। গ্রাম হল জনসম্প্রদায়ের উদাহরণ ও বিভিন্ন সংস্থা হল সংঘের উদাহরণ। 

৭. নির্দেশক গোষ্ঠী : 
মুজাফের শেরিফ ১৯৪৮ সালে সমাজতত্ত্বের আলোচনায় তাঁর An outline of social Psychology গ্রন্থে নির্দেশক গোষ্ঠী বা নজিরস্থাপক গোষ্ঠী বা Reference Group কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মার্টন , টার্নার - প্রমুখ এই গোষ্ঠীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আলোকপাত করেন। মানুষ সর্বদা উচ্চ গোষ্ঠীর আচার - আচরণ , জীবনযাত্রা , আদর্শমূলক রীতিনীতি , প্রভৃতির অনুসরণ ও অনুকরণ করে। এ জাতীয় আচরণকে বলা হয় Reference Behavior বা নির্দেশক আচরণ। 
গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও কোনো গোষ্ঠীর সদস্যগণ তাদের গোষ্ঠীর চেয়ে উন্নত যে সকল গোষ্ঠীর রীতিনীতি , নিয়মকানুন এবং সেই গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার আচরণ অনুসরণ ও অনুকরণ করে এবং সেই গোষ্ঠীর সমকক্ষ বা মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার চেষ্টা করে ,সেই আদর্শ গোষ্ঠীকে বলা হয় নজির স্থাপক গোষ্ঠী। 

৮. বংশগতিক গোষ্ঠী ও সমাবিষ্ট গোষ্ঠী ( Genetic and Congregate Group ) :- 
অধ্যাপক গিডিংস তাঁর Principles of Sociology গ্রন্থে মূলতঃ সদস্যদের গোষ্ঠীতে প্রবেশাধিকারের প্রকৃতির ভিত্তিতে এই বিভাজনটি করেছেন। বংশগতিক গোষ্ঠী একটি অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী। এর সদস্যপদ জন্মসূত্রেই নির্ধারিত হয়। উদাহরণ হিসেবে জাতি , পরিবার - ইত্যাদির কথা বলা যায়। অন্যদিকে সমাবিষ্ট গোষ্ঠী হল একটি ঐচ্ছিক গোষ্ঠী। ব্যক্তি তার নিজস্ব ইচ্ছা ও প্রয়োজন অনুসারে এর সদস্য হয়ে থাকে। যেমন - ক্লাব , রাজনৈতিক দল। 

৯. অনুভূমিক গোষ্ঠী ও উল্লম্ব গোষ্ঠী :-  ( Horizontal and Vertical Group ) :- 
সরোকিন এই শ্রেণীবিভাজনটি করেছেন। এক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে উচ্চ - নীচ পার্থক্যের বিষয়টি বিভাজনের ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়। 
অনুভূমিক গোষ্ঠী হল বৃহত্তর , এখানে সকল সদস্য সমপর্যায়ভুক্ত। এদের মধ্যে মর্যাদাগত কোনো উচ্চ নীচ ভেদাভেদ থাকে না। যেমন রাষ্ট্রের নাগরিক। 
কিন্তু উল্লম্ব গোষ্ঠীতে সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মর্যাদার ভিত্তিতে উচ্চ নীচ ভেদাভেদ দেখা যায়। যেমন - জাতিভেদ , মন্ত্রিসভা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


১০. আঞ্চলিক গোষ্ঠী ও অঞ্চলবর্জিত গোষ্ঠী :- 
পার্ক ও বার্জেস এই শ্রেণীবিভাজনটি করেছেন। আঞ্চলিক গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট অঞ্চল আছে। জনসম্প্রদায় , রাষ্ট্র - প্রভৃতি আঞ্চলিক গোষ্ঠীর উদাহরণ।  
অন্যদিকে অঞ্চলবর্জিত গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল নেই। যেমন - জাতিভেদ , শ্রেণিব্যবস্থা। 

এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার গোষ্ঠীগত শ্রেণীবিভাজন বর্তমান। যেমন :- 
১১. ভিড় ও বিমূর্ত গোষ্ঠী। 
১২. ছোট ও বড় গোষ্ঠী। 
১৩. সামাজিক বর্গ ও সামাজিক সমাবেশ। 
১৪. ক্ষণস্থায়ী গোষ্ঠী। 
১৫. অন্তর্বর্তী গোষ্ঠী। 
১৬. সংগঠিত ও অসংগঠিত গোষ্ঠী। 
১৭. মুক্ত ও বদ্ধ গোষ্ঠী। 
১৮. স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় - এরকম গোষ্ঠী। ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

               
          















       
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক গোষ্ঠীর ভূমিকা :- 

কোনো ব্যক্তিই সমাজ বহির্ভুত নয় , ব্যক্তি ও সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে সমাজ পরিচালিত ও বিবর্তিত হয়। ব্যক্তিজীবনের সাথে জড়িত প্রতিটি উপাদানকে সমাজ ও তার মধ্যস্থ গোষ্ঠীগুলি প্রভাবিত করে। ব্যক্তিজীবনের এইরূপ একটি সামাজিক প্রক্রিয়া হল শিক্ষা। সমাজ যেহেতু গতিশীল , তাই সেই সূত্র ধরে শিক্ষা ধারাও গতিশীল। আবার সামাজিক গোষ্ঠীগুলি দুই ভাগে বিভক্তি - প্রাথমিক গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠী। শিক্ষা ও বিবর্তনের ক্ষেত্রে সামাজিক গোষ্ঠীগুলির ভূমিকা নিচে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা :- 


১. প্রাথমিক গোষ্ঠীকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের মুক্তাঙ্গন হিসাবে গণ্য করা হয়। পরিবার , বন্ধুগোষ্ঠী প্রভৃতি সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় , ব্যক্তিত্ব গঠনে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

২. প্রাথমিক গোষ্ঠীর অভ্যন্তরেই ব্যক্তির আপন সত্তা প্রকাশিত হয়। ব্যক্তি সম্পর্কভিত্তিক এই প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিতে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির বিকাশ ও প্রকাশ ঘটে। 

৩. প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি সমাজের অপরিহার্য বুনিয়াদ। পরিবার বা প্রাথমিক গোষ্ঠীর মধ্যে শিশু প্রথম জন্মগ্রহণ করে। পরিবারের মধ্যেই শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে শুরু করে। পরিবার খেলাধুলার সংস্থা বা ক্লাব , বন্ধুগোষ্ঠী ইত্যাদি প্রাথমিক গোষ্ঠীরূপে সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৪. প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।  এই গোষ্ঠীগুলি সংস্কৃতির সঞ্চালনায় ও অন্যান্য ভূমিকা পালন করতে থাকে। ব্যক্তির জন্মের পর সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সমাজস্বীকৃত আচার-আচরণ , আদব-কায়দা , মূল্যবোধ , ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা প্রাথমিক গোষ্ঠী থেকেই আয়ত্ত করে থাকে। 

৫. ম্যাকাইভার ও পেজ - এর মতে প্রাথমিক গোষ্ঠী হিসেবে পরিবার শিশুকে সমাজের জটিল রহস্যের সন্ধান দেয় এবং সমবয়সীদের নিয়ে গঠিত গোষ্ঠীগুলি শিশুর সামাজিক আবেগকে সৃষ্টিশীল প্রকাশে সাহায্য করে। 

৬. শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা , বাসনা , নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রবণতা ইত্যাদি চরিতার্থ করতে প্রাথমিক গোষ্ঠী বিশেষভাবে সহায়তা করে। 

৭. প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই শিশুর মধ্যেকার প্রেম - প্রীতি , ভালোবাসা , মমতা প্রভৃতি আবেগময় ও কোমল বৃত্তিগুলি বিকশিত হয়ে ওঠে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এই কোমল বৃত্তিগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ। 

৮. প্রাথমিক গোষ্ঠীর আন্তরিক মমত্ববোধ ও প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ শিশুদের স্বার্থপরতার মনোভাব পরিবর্তনে সহায়তা করে। শিশুরা ''আমি'' সর্বস্ব চিন্তা-চেতনা প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে ''আমরা'' মনোভাবে রূপান্তরিত হয়। 

৯. বর্তমান সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি এবং বিশ্বায়নের ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা , জীবনধারা সমস্তই পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির উপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক কমেছে। তবু পরিবার , বন্ধু গোষ্ঠী ইত্যাদি প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি আজও শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে ও সমাজ জীবনের প্রস্তুতিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। 

১০. অন্যান্য সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি , যেমন সহযোগিতা , প্রতিযোগিতা , দ্বন্দ্ব প্রভৃতি প্রাথমিক গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ও ব্যক্তি পরিচিতি লাভ করে থাকে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



শিক্ষা ক্ষেত্রে গৌণ গোষ্ঠীর ভূমিকা :- 


মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে মানুষের স্বার্থে বহুরূপে প্রকাশিত হচ্ছে।  নানা ধরনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গৌণগোষ্ঠীসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানকালে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিবিদ্যার বিস্ফোরণের ফলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাই শিক্ষা ও সমাজ জীবনের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে নানা ধরনের বড় বড় পরামর্শদাতা গৌণ গোষ্ঠী।  শিক্ষা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশাগত গৌণ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে যার ফলে ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দরজা খুলে দিয়েছে। এই সকল সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। 

অধ্যাপক বিদ্যাভূষণ ও সচদেব বলেছেন - '' The secondary groups have opened channels of opportunity . They provide a greater chance to develop individual talents .''  

বর্তমানে শিক্ষার লক্ষ্যরূপে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ কে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিশুর অনন্ত সম্ভাবনার  আধার। তাকে পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশিত করে তোলার জন্য গৌণ গোষ্ঠীগুলি অপরিহার্য।  পঠন পাঠনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পকলা , সংগীত , নাটক , কারিগরিবিদ্যা - ইত্যাদি বিকাশের জন্য প্রয়োজন গৌণ গোষ্ঠীর। যেমন - সাহিত্যসভা , নাট্য সংগীত সংস্থা ,  শিল্পকলা মঞ্চ - ইত্যাদি। এরূপ বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মধ্যে দিয়ে শিশুর সুপ্ত গুণাবলী পূর্ণরূপে প্রকাশিত ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। 

গৌণ গোষ্ঠীগুলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধীন। এখানে সকলকেই সমান ভাবে গ্রহণীয় বলে মনে করা হয়। গৌণ গোষ্ঠীর এই প্রকার ভূমিকার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিকতার বোধ জাগ্রত হয়।  

গৌণ গোষ্ঠীগুলি বৃহৎ আকৃতির হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক স্বার্থগুলি একযোগে অধিক পরিমাণে সম্পন্ন হতে পারে। তাছাড়া এই সকল গৌণ গোষ্ঠীর দায়-দায়িত্ব গুলি ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদন করতে গেলে তা যেমন সময় সাপেক্ষ হয় আবার ব্যয়সাপেক্ষ হয়। তাই বাধ্যতামূলকভাবে সকলেই কোন না কোন গৌণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। 

এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে , মৌলিক বিষয় পাঠের চাহিদা আজ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এর পরিবর্তে ব্যবহারিক জ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। এই পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী শিক্ষা ও শিল্পকে সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য গৌণ গোষ্ঠীগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়েই শিক্ষা ক্ষেত্রে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সমাজে একদিকে যেমন প্রাথমিক গোষ্ঠীর প্রয়োজন তেমনি বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত গৌণ গোষ্ঠীর প্রয়োজনও বর্তমান সমাজে গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে।

 এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট আলোচনা কর। 


সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা : - 


সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে অধ্যাপক বটোমর বলেছেন - 
'' সামাজিক গোষ্ঠী এমন কিছু ব্যক্তির সমষ্টি - ১. যাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে এবং ২. যারা প্রত্যেকে গোষ্ঠীজীবন ও তার প্রতীকী রূপগুলি সম্পর্কে সচেতন। 

ম্যাকাইভার ও পেজ - এর মতে , 
গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি পারস্পরিক নির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তির সমষ্টিকে। এখানে গোষ্ঠী হল ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্বন্ধ। 

জিসবার্ট - এর মতে , 
সামাজিক গোষ্ঠী হল পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়াশীল ও একটি স্বীকৃত সংগঠন সম্বলিত মনুষ্য সমষ্টি। 

বোগারদাসের মতে , 
যখন একাধিক ব্যক্তি একই প্রকার উদ্দেশ্যযুক্ত হয় ও একে অন্যের ওপর প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে সাধারণ একটি দায়বদ্ধতা থেকে একই প্রকার কাজকর্ম করে থাকে , তাকে সামাজিক গোষ্ঠী বলে।  

অর্থাৎ , সামাজিক গোষ্ঠী হতে হলে - ১. একের অধিক জনসংখ্যা থাকতে হবে , ২. জনসংখ্যার মধ্যে একটি লক্ষ্যের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকতে হবে। 
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে , পরস্পরের প্রতি পরস্পর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে ক্রিয়াশীল দুই বা ততোধিক মানুষ সংঘবদ্ধ হলে তাকে গোষ্ঠী বা দল বলে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সামাজিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট :- 


১. ব্যক্তি সমষ্টি বা জনসমষ্টি :- সামাজিক গোষ্ঠী হল ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে গোষ্ঠী তৈরী হতে পারে না। ব্যক্তি গোষ্ঠীর একক। গোষ্ঠী গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ , ব্যক্তি সমষ্টিগতভাবে পারস্পরিক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলে তাকেই গোষ্ঠী হিসাবে গণ্য করা হয়। 

২. ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্পর্ক :- শুধুমাত্র যে কোনো ব্যক্তি সমষ্টিকে গোষ্ঠী বলা হয় না। গোষ্ঠীর সদস্যগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গোষ্ঠী সৃষ্টির অপরিহার্য বিষয়। এটি গোষ্ঠীর ভিত্তি স্বরূপ। সমাজতাত্ত্বিকগণের মতে , এই সম্পর্ক সবসময় দৈহিক হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই , তা মানসিকও হতে পারে। 

৩. পারস্পরিক বোঝাপড়া :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতা , সহচর্য ও ভাবের আদান প্রদান লক্ষ্য করা যায়। 

৪. গোষ্ঠী চেতনা :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মনে একপ্রকার চেতনা জাগ্রত হয় , যার দ্বারা সে তার গোষ্ঠীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে খুঁজে পায়। সে উপলব্ধি করে যে , সে বিচ্ছিন্ন নয় ; সে এক বৃহৎ সমগ্রতার অংশ। এই গোষ্ঠীচেতনা ব্যক্তিকে অন্যের প্রতি সহযোগী ও সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করে। এই গোষ্ঠী চেতনা ব্যক্তির সদস্যদের মধ্যে দলীয় মনোভাব বা Team Spirit জাগ্রত করে এবং এই মনোভাব ব্যক্তি স্বার্থের তুলনায় গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। 

৫. আমরা - বোধ :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আমরা একই গোষ্ঠীর বা একই সাধারণ জীবনের অংশীদার -  এরকম এই বোধ কাজ করে। এই বোধ গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্য গোষ্ঠীর সদস্যদের থেকে আলাদা করে রাখে। স্বভাবতই আমরা বোধ বা We feeling  থেকেই গোষ্ঠীর নিজস্বতা বা স্বতন্ত্রতা তৈরি হয়। আমরা সকলে মিলে একটি একক , আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য - গোষ্ঠীবদ্ধ সদস্যদের এরূপ মানসিকতা গোষ্ঠী গঠনে ও সংরক্ষণে অত্যন্ত সহায়ক। এরূপ মনোভাব থাকলে অনেক সময় দৈহিক সান্নিধ্যের বিষয়টিও গৌণ হয়ে পড়ে। 

৬. ঐক্য ও সংহতি :-  গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ।  এই ঐক্য থেকেই জন্ম হয় গোষ্ঠী সংহতি বা group solidarity - র।  এই একাত্মতা বা ঐক্যবোধ সদস্যদের পরস্পরের আবেদনে সাড়া দিতে শেখায় ও অনুপ্রাণিত করে। গোষ্ঠীর মধ্যেকার এই ঐক্য ও সংহতি সদস্যদের একই বন্ধনে বেঁধে রাখে। 

৭. সাধারণ উদ্দেশ্য :- গোষ্ঠীর সদস্যদের স্বার্থ ও আদর্শ সমজাতীয় হয়। মানুষ তখনই কোন গোষ্ঠীভুক্ত হয় , যেখানে তার স্বার্থ সেই গোষ্ঠীর অন্যান্যদের সাথে সমগোত্রীয় বা অভিন্ন হয়ে থাকে। এইভাবে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি সাধারণ সাধারণ উদ্দেশ্য দেখা যায়। 

৮.অভিন্ন আচার-আচরণ ও জীবনযাত্রা :- গোষ্ঠীর সদস্যদের স্বার্থ বা প্রয়োজন অভিন্ন ও তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকায় তারা সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য যৌথভাবে সচেষ্ট হয়। এইভাবে দেখা যায় , তাদের আচার-আচরণও অভিন্ন হয়ে থাকে। এই আচরণগত অভিন্নতা থেকেই তারা অভিন্ন জীবনযাত্রার অংশীদার হয়ে পড়ে। 

৯. নিয়মকানুন :- প্রত্যেক গোষ্ঠীরই কোনো না কোনো নিয়ম-কানুন থাকে। গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত এগুলিকে মেনে চলে বা কোনো কোনো সময় মেনে চলতে বাধ্য থাকে। গোষ্ঠীর তার সদস্যদের এগুলোকে মান্য করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। ব্যক্তি তা স্বত্তেও এগুলি না মানলে তাকে গোষ্ঠী থেকে খারিজ করা হয়। 

১০. গোষ্ঠীর আকার :- ক্ষুদ্রাকৃতি ও বৃহদাকৃতির উভয়ই হতে পারে। মাত্র দুইজন ব্যক্তিকে নিয়েও গোষ্ঠী তৈরি হতে পারে , আবার লাখ লাখ লোক জন নিয়েও একটিমাত্র গোষ্ঠী তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ,  স্বামী-স্ত্রী এই দুজন কে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয় যার নাম পরিবার।  আবার কোনো রাজনৈতিক দলও একটি গোষ্ঠী যাতে লাখ লাখ সদস্য থাকতে পারে। 

১১. গোষ্ঠী গতিশীল :- গোষ্ঠী স্থিতিশীল নয়। এর আকার , আকৃতি , সদস্যসংখ্যা , উদ্দেশ্য , কার্যাবলী প্রভৃতির পরিবর্তন হয়। গোষ্ঠীর সদস্যদের একদিকে যেমন মৃত্যু হয় , আবার অন্যদিকে নতুন সদস্য জন্মায়। আবার বাইরের কোনো শক্তির প্রভাবে এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। 

১২. স্থায়িত্ব :-  গোষ্ঠী মোটামুটি একটি স্থায়ী সংগঠন। তবে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে যাদের উদ্দেশ্য সীমিত , সেগুলি অল্প সময়ের মধ্যে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলেই বিলুপ্ত হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় , সমষ্টিগত জীবনধারণের জন্য কিছুটা দীর্ঘসময়ের স্থায়িত্ব বা অবিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন হয়। তা না হলে গোষ্ঠী গড়ে ওঠে না। 

১৩.  সম্পত্তি :-  প্রত্যেক গোষ্ঠীরই কোনো না কোনো সম্পত্তি থাকে। তবে সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত বিষয়াদিকে বোঝায় না।  এগুলি ভাবমূলক এবং আধ্যাত্মিক প্রভৃতিও হতে পারে। অট্টালিকা ,অর্থ,  পতাকা ,  বিশেষ ভাবাদর্শ প্রভৃতি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। 

১৪. ব্যক্তিত্বের প্রভাবক :- গোষ্ঠীর মধ্যেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে।  অর্থাৎ গোষ্ঠীই  ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে থাকে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



সামাজিক গোষ্ঠীর গুরুত্ব :- 


মানবসমাজধারার অন্যতম ভিত্তি হলো গোষ্ঠী জীবন। সমাজের অবস্থান , কাঠামো , ধারাবাহিকতা ,  পরিবর্তন এসব কিছুই গোষ্ঠীগুলির ক্রিয়াশীলতার ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু অর্থাৎ তার সামগ্রিক জীবনধারা প্রবাহিত হয় গোষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে। এখানেই সে খুঁজে পায় ''সামাজিক জীব'' হিসেবে পরিচিতি ও পরিব্যাপ্তি। গোষ্ঠীজীবনে অন্তর্ভুক্তি ছাড়া ব্যক্তি দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি মিটিয়ে নিতে পারে না ,  আবার সামাজিকতা থেকেও সরে থাকতে পারেনা। তাই তাকে পরিবার থেকে শুরু করে ক্লাব , সংগঠন,  বন্ধুগোষ্ঠী , পেশাগত সংস্থা প্রভৃতি একাধিক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে থাকতে হয়। এগুলির হাত ধরেই ব্যক্তি খুঁজে পায় তার সামাজিক সম্পূর্ণতা। যাইহোক , সামাজিক গোষ্ঠীর গুরুত্বসমূহকে  নিন্মলিখিতভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। 

১. গোষ্ঠী ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কষ্টকর। কারণ , মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার , নানারকম স্বার্থ চরিতার্থ করার এবং উদ্দেশ্য পূরণের সুযোগ লাভ করে গোষ্ঠীর মাধ্যমেই। 

২. সামাজিক পরিবেশ বাদ দিয়ে মানুষ একটি প্রাণী থেকে সামাজিক জীব হয়ে উঠতে পারে না। সে সামাজিক হয়ে ওঠে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এবং এই সামাজিকীকরণ হয়ে থাকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহায়তায়। অর্থাৎ গোষ্ঠীগুলিই ব্যক্তিকে ''মানুষে'' পরিণত করে এবং তার সামাজিক চরিত্রের বিকাশ ঘটায়।  তাই বলা হয় Man only becomes man among men  । 

৩. গোষ্ঠীজীবন হলো সমাজ জীবনের অংশবিশেষ। এটি সমাজজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে , আবার এই পারস্পরিক সম্পর্কের জটাজালই হল সমাজ। তাই শুধুমাত্র ব্যক্তির অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নয় , সমাজের অস্তিত্বও গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল। 

৪. গোষ্ঠী তার সদস্যদের মধ্যে এক প্রকার গোষ্ঠী চেতনার উন্মেষ ঘটায় , যার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে এই উপলব্ধি কাজ করে যে , সে পৃথিবীতে একা নয় , সে সমগ্রতার অংশবিশেষ। এইভাবে গোষ্ঠী ব্যক্তির  মনে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করে। 

৫. গোষ্ঠীর নিয়মকানুন বর্তমান। গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত এগুলো মেনে চলে। ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে না মানতে চাইলে গোষ্ঠী তার সদস্যদের এগুলি মানতে বাধ্য বাধ্য করে। এভাবে গোষ্ঠী জীবনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যক্তি নিয়মানুবর্তী হতে শেখে। 

৬. গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি গোষ্ঠীগত মনোভাব কাজ করে। এই মনোভাব ব্যক্তির মধ্যে শ্রদ্ধা , সহানুভূতি , প্রেম-ভালোবাসা , দয়া-মায়া , মমতা প্রভৃতি জাগ্রত করে। অন্যভাবে বলা যায় , এই জাতীয় মানব গুণাবলী ও আবেগ অনুভূতির প্রকাশ গোষ্ঠী জীবনেরই ফসল। 

৭. গোষ্ঠী তার উদ্দেশ্যসমূহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা পূরণ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি নানা প্রকারের হয়ে থাকে। তাই বলা হয় , সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো গোষ্ঠীই তৈরি করে থাকে। 

৮. ব্যক্তিত্ব গঠনে গোষ্ঠী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিত্ব বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলির এক সমন্বিত রূপকে। গোষ্ঠীর মধ্যেই কোনো ব্যক্তির এই বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্যক্তিত্ব গঠিত ও বিকশিত হয়। 

৯. গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তি তার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে অধিগত করে ও প্রয়োগ করে। আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হল আমাদের গোষ্ঠী। 

১০. পরিশেষে বলা যায় , ব্যক্তির সামগ্রিক পরিচয় বহন করে তার গোষ্ঠী। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

   














        
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের সম্পর্ক :-  


সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্য শিক্ষা বিজ্ঞানের বিভিন্ন উপাদানের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে এবং আধুনিক শিক্ষাপ্রণালী ও সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এক উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।বস্তুত সমাজ জীবনের পরিবর্তন , পরিবর্ধন রূপান্তরের সাথে সার্থক অভিযোজন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের প্রগতিই অসম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষায় ব্যক্তি , সমাজ ও সমাজবিজ্ঞান :- 
ব্যক্তির সার্থক অভিযোজন দক্ষতা জীববিদ্যার ফল হলেও সামাজিক সম্পর্কের নীতিগুলোর অবমাননার মাধ্যমে সেই অভিযোজন দক্ষতাকে সমাজ উপযোগী করা যায় না। তাই শিক্ষায় সামাজিক সম্পর্কের অনুশীলনকারী বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতিগুলি মূল্যবান প্রভাবকে কখনোই অবহেলা করা সঙ্গত নয়। আধুনিক সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করায় শিক্ষার সাথে এর এক নিবিড় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 
শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক পটভূমিকায় শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনকে চরম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ককে অর্থপূর্ণ ও মূল্যবান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 

শিক্ষার সমন্বিত রূপ এবং সমাজবিজ্ঞান :-
আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল রকম পরস্পরবিরোধী চিন্তাধারার সমন্বয়সাধনকে বাস্তবে মূর্ত করে তোলা হয়েছে। এই বিংশ শতাব্দীর সমন্বয়ধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থায় মনোবিদ্যা , জীববিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের মত সমাজবিজ্ঞানের অবদানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন যুগধর্মের প্রভাবে মানুষের চিন্তার রাজ্যে পরিবর্তন এলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও যে পরিবর্তন ঘটে তা অনস্বীকার্য এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শিক্ষার সীমানায় সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। 
অনুরূপে বিংশ শতাব্দীর পরস্পরবিরোধী চিন্তার সংঘাত শিক্ষাক্ষেত্রে যে সংঘাতএনেছে তারই পরিণতিতে এসেছে সমন্বয়ধর্মী শিক্ষার রূপ এবং এই শিক্ষার রূপে অন্যান্য সমাজ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানের মতো সামাজিক সম্পর্কের অনুশীলনকারী সমাজ বিজ্ঞানের অবদানও কম নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষার অর্থ , তাৎপর্য এবং সমাজ :- 
শিক্ষার বিভিন্ন দিকে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাবকে আরো স্পষ্টভাবে নির্ণয় করতে পারলে শিক্ষার সঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে উদঘাটন করা সম্ভব হবে। আমরা বর্তমানে শিক্ষা বলতে বয়স্ক ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষার্থীর উপর জ্ঞানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়াকে বুঝি না। আধুনিক অর্থে মানুষ জীবনব্যাপী প্রক্রিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তাই হলো শিক্ষা। 
এই অভিজ্ঞতা লাভের আধুনিক শিক্ষায় মানুষ কখনোই পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের রীতিনীতিকে অবহেলা করতে পারে না। আর এখানেই শিক্ষা হচ্ছে এক সামাজিক প্রক্রিয়া এবং সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যুক্ত এক বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতেই শিক্ষা সমাজ সংরক্ষণের কাজ করে , সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশের যুগান্তরে পরিবাহনের কাজ করে এবং সমাজ প্রগতির উল্লেখযোগ্য উপায় হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত রাখে। সুতরাং আধুনিক শিক্ষার অর্থ ও তাৎপর্য সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত। 

শিক্ষার লক্ষ্য ও সমাজবিজ্ঞান :- 
শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণেও সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব সুস্পষ্ট। খুব সংক্ষেপে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে , শিক্ষাকে ব্যক্তিত্বমন্ডিত এবং শিক্ষার্থীকে সমাজমন্ডিত করে তোলা। আধুনিক শিক্ষার এই লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের চাহিদাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যের এক সুসংহত ও সমন্বিত রূপ। 
যে সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষার এই সমন্বয় সম্ভব শিক্ষাবিদ ডিউই এর ভাষায় তাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। এই সমাজ ব্যবস্থায় যে বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রবর্তিত হয় তা প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে সকল সমাজ সম্পর্ক ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব আগ্রহবোধ বিকাশে সহায়তা করে এবং প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা প্রদান করে। মুদালিয়র কমিশনে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণেও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন স্পষ্ট। 

পাঠক্রম রচনার ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান :- 
কেবল শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য নয় , আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম রচনাতেও সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব সমানভাবে সুস্পষ্ট।  এই পাঠক্রম রচনার নীতি গুলিতে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন এত প্রকট যে , আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম রচনায় পাঠক্রমকে কেবল বিষয়ের সমষ্টি হিসাবে দেখা হয় না -  দেখা হয় বিদ্যালয় প্রদত্ত সকল রকম অভিজ্ঞতার সমষ্টি হিসেবে। এখানে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদা ও তার বিভিন্ন সামাজিক চাহিদার সমন্বিত রূপকে লক্ষ্য করা যায় ,
বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠক্রমকে এমন ভাবে রচনা করা হচ্ছে যাতে তার পশ্চাতে দুটি উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে - একটি উপাদান হলো শিশুর স্বভাব বা স্বাভাবিক আগ্রহ এবং অপর উপাদানটি হল সামাজিক প্রয়োজনীয়তা। আর পাঠক্রম রচনার কাজে সামাজিক চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার মূলে রয়েছে সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব। সুতরাং আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম পরিকল্পনা সমাজবিজ্ঞানের নীতি ও তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। 

শিক্ষণপদ্ধতি ও সমাজবিজ্ঞান :- 
পাঠক্রম পরিকল্পনায় সমাজবিজ্ঞানের প্রভাব যেমন গুরুত্বপূর্ণ ; আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সামাজবিজ্ঞানের প্রভাব তেমনি উপেক্ষা করা যায় না। বর্তমানে শিক্ষাপদ্ধতির মূল কথা হচ্ছে শিক্ষার্থী আত্মসক্রিয়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা গ্রহণে সহায়তা করা। এই আত্মসক্রিয়তার নীতির পরিপূরক হিসাবেই বর্তমানে শিক্ষায় কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার নীতি কে গ্রহণ করা হয়েছে। এমন শিক্ষাপদ্ধতিকে বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মত ও গতিশীল বলা হচ্ছে যে কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদান করতে সক্ষম। 
এই সকল কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতির পশ্চাতে যে তত্ত্ব ও নীতি সুস্পষ্ট তা মানুষকে যৌথ কাজের প্রেরণা দেয় , তার সহযোগিতার মানসিকতা বৃদ্ধি করে এবং সামাজিক দক্ষতা , যোগ্যতা এবং অন্যান্য পারস্পরিক সম্পর্কের গুণরাজি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং আধুনিক কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতির নীতি সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও নীতিগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


বিদ্যালয় সংগঠন , পরিচালনা ও সমাজবিজ্ঞান :- 
আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যালয় সংগঠন ব্যবস্থায় সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব খুবই স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ।  বিদ্যালয় সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে বিবেচিত এবং শিক্ষাবিদ ডিউই এর মতে , এটা হচ্ছে প্রকৃত সরলীকৃত এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ। 
কেবল সংগঠনের দিক থেকে নয় , সামাজিক দায়িত্ব পালনেও বিদ্যালয়ের কাজ তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুতঃ শিক্ষার্থীর সামাজিকীকরণের কাজে বিদ্যালয়ের অবদান সমাজবিজ্ঞানের প্রভাবকে মূর্ত করে তোলে।  সমাজ সংরক্ষণ ,  সমাজ-সংস্কৃতির পরিবাহন এবং সমাজ প্রগতির উন্মেষনে বিদ্যালয়ের সামাজিক দায়িত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। 
তাছাড়া বিদ্যালয় ভিন্ন অন্যান্য বিভিন্ন অন্যান্য সামাজিক সংস্থাও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে এবং বিদ্যালয়কে এদের সাথে পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিজের দায়িত্ব পালনে ব্রতী হতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আধুনিক শিক্ষায় বিদ্যালয় সংগঠনে ,  বিদ্যালয়ের কর্তব্য নির্ধারণে  এবং বিদ্যালয়ের সাথে অন্যান্য সামাজিক শিক্ষা সংস্থার সম্পর্ক নিরূপণে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাব বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। 

আধুনিক শিক্ষকের কর্তব্য , দায়িত্ব এবং সমাজ বিজ্ঞান :- 
আধুনিক শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যে পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে তাও কমবেশি সমাজবিজ্ঞানের নীতি ও তত্ত্বকেন্দ্রিক। আধুনিক শিক্ষায় একজন শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার্থীর বন্ধু , দার্শনিক ও নির্দেশক। এই কাজে শিক্ষককে সুষ্ঠভাবে ব্রতী হতে হলে পারস্পরিক সুসম্পর্কের নীতি গুলিকে বিজ্ঞানসম্মত পথে অনুধাবন করতে হয়। 

ব্রাউন বলেছেন যে , শিক্ষক নিজে শিক্ষার্থীদের কৃষ্টিগত উত্তরাধিকার সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করবেন এবং তাদের সামাজিক সম্পর্কের প্রক্রিয়াজনিত ব্যবহারে পরিচালকের ভূমিকা গ্রহণ করবেন। শিক্ষকের এই পরিবর্তিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতায় সমাজবিজ্ঞানের প্রভাব সুস্পষ্ট। 

শিক্ষায় মানবীয় সম্পর্ক ও সমাজবিজ্ঞান :- 
পরিশেষে , আধুনিক শিক্ষায় মানবীয় সম্পর্কের বিকাশ ও বৃদ্ধিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী - শিক্ষক ,  শিক্ষার্থী - শিক্ষার্থী ,  শিক্ষক - শিক্ষক , প্রধান শিক্ষক - শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক - অভিভাবক প্রভৃতির সামাজিক পারস্পরিক সম্পর্কেকে খুবই মূল্যবান মনে করা হয়েছে। এখানেও সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাব বিদ্যমান। শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে উপরোক্ত মানবীয় সম্পর্ক নির্ধারণ ব্যবস্থা সমাজবিজ্ঞানের প্রভাবকেই মূর্ত করে তুলেছে। 

উপসংহারে বলা যায় যে , সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি ও তত্ত্ব শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানের উপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাই সামাজিক বিজ্ঞানের নীতি ও তত্ত্বের বিবেচনা ব্যতিরেকে আধুনিক শিক্ষা প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ অসম্ভব এবং এরকম কোন প্রচেষ্টা অলীক প্রচেষ্টার  নামান্তর। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান সমূহ :- 

Factors of Social Change ( In Bengali ). 



সামাজিক পরিবর্তন একটি জটিল সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজে এই পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে দিয়ে। তাই সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন একটি নির্দিষ্ট কারণ বা  উপাদান দায়ী নয়। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের উপাদান এ ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। আবার দেশ-কালের পরিপ্রেক্ষিতে উপাদানের পরিবর্তন ঘটতে পারে ; ফলে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও নানাবিধ বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং কোন কোন উপাদানের মধ্যে দিয়ে সামাজিক পরিবর্তন বাস্তবায়িত হবে তা এককথায় বলা না গেলেও সমাজতাত্ত্বিকগণ  কতগুলি নির্দিষ্ট উপাদান অন্বেষণে নিয়োজিত হয়েছেন। তাই সমাজবিজ্ঞানীদের পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট উপাদান চিহ্নিত করতে পারি যেমন :- 
১. জৈব উপাদান 
২. প্রযুক্তিগত উপাদান 
৩. সাংস্কৃতিক উপাদান 
৪. মনস্তাত্ত্বিক উপাদান 
৫. অর্থনৈতিক উপাদান 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


১. জৈব উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের একটি অন্যতম উপাদান হিসাবে জৈব উপাদানের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জৈব উপাদান বলতে কতগুলি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি হল জন্ম-মৃত্যুর ফলে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি এবং তার সামাজিক ফলাফল , জন্ম-মৃত্যুর ফলে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধির জৈব সামাজিক কারণসমূহের কার্যপ্রক্রিয়া এবং যৌন নির্বাচনের রীতিনীতি প্রভৃতি। 

সমাজতাত্ত্বিকদের বিচারে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সামাজিক পরিবর্তনের পর্যালোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। জনসংখ্যার আয়তনের পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের ওপর নানাবিধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষ করে প্রচলিত অর্থব্যবস্থা ,  সামাজিক আচার আচরণ , মূল্যবোধ , প্রথা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই প্রভাব স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়। তবে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি শেষ কথা নয়। 

জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে সকল সামাজিক বিষয় সমূহ প্রভাব বিস্তার করে তার মধ্যে বহুবিবাহ , বাল্যবিবাহ , বিধবা বিবাহ প্রভৃতি সামাজিক প্রথা এবং জরা , ব্যাধি ,  মহামারী প্রভৃতি নিরাময় সংক্রান্ত সামাজিক কার্যকলাপ।  

আধুনিক সমাজের মূল লক্ষ্য হলো জন্ম এবং মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণ। ফলে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে , সেই সঙ্গে জন্মহার নিয়ন্ত্রণেরও নানাবিধ সচেতনতামূলক কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। 

২. প্রযুক্তিগত উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উপাদানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস ( K. Devis ) বলেছেন , বিজ্ঞান বলতে মানুষের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অংশবিশেষকে বোঝায়। এর দ্বারা প্রকৃতি সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞানের বিকাশ ঘটে এবং প্রযুক্তি হল এই বিকশিত জ্ঞানের প্রায়োগিক দিক। সমাজতত্ত্বে প্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাকে ব্যাপক অর্থে গৃহীত হয়েছে। এখানে সমাজ জীবনে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রত্যাশিত সাফল্যের সাথে সহায়ক ও পরিবর্তিত মানসিক গঠন বিন্যাস ও সামাজিক কাঠামোর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। সমাজতাত্ত্বিক ফস্টার বলেন , প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি বলতে  কেবলমাত্র পার্থিব ও প্রযুক্তিমূলক উন্নয়নকে বোঝায় না - এ হলো এক বিশেষ ধরনের সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি। 

প্রযুক্তিবিদ্যার ফলে সামাজিক পরিবর্তন কিভাবে ঘটে সে সম্পর্কে বিধিবদ্ধ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে - 
(ক ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। উৎপাদনের গুণগত এবং পরিমাণগত মানেরও  শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। 
(খ ) শিল্পক্ষেত্রের পাশাপাশি কৃষিজ উৎপাদনও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে প্রভাবিত হয়। যে দেশে কৃষি এবং শিল্পের সমান্তরাল অগ্রগতি ঘটে সে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও যে পরিবর্তন ঘটবে - সে কথা নিশ্চিত। 
(গ ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সহজলভ্য হয়। প্রাত্যহিক জীবনে নানাবিধ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের কায়িক শ্রম হ্রাস পায় , সুখ- স্বাচ্ছন্দ বৃদ্ধি পায়। 
(ঘ ) বহুমুখী উৎপাদন ব্যবস্থার বৃদ্ধি ঘটলে মানুষ তাতে জড়িয়ে পড়ে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লাভবান হয়। 
(ঙ ) প্রযুক্তি বিদ্যার প্রসার নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেও পরিবর্তন আনে।  সাম্প্রতিক কালে নারী শিক্ষার প্রসার , নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদির পাশাপাশি বৈবাহিক সম্পর্কেও নানাবিধ শিক্ষার প্রসার ও পরিবর্তন ঘটেছে। 
(চ ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রসার মানুষের মানসিকতার মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। এর দ্বারা মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠেছে এবং পেশাভিত্তিক মানসিকতা গড়ে তুলেছে। 
(ছ ) প্রযুক্তিবিদ্যা সামাজিক কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটায় এবং এর ফলে সমাজজীবন প্রায় কুসংস্কারমুক্ত হয়ে উঠেছে।  শ্রেণি কাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।
( জ )  প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব রাষ্ট্রের কার্যাবলীকেও  প্রভাবিত করছে। এর দ্বারা রাষ্ট্রের কার্যাবলী শুধু পরিবর্তন হয়েছে তা নয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

৩. সাংস্কৃতিক উপাদান :- 
মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে সংস্কৃতি মানুষেরই তাত্ত্বিক সৃষ্টি। মানব সমাজের সামগ্রিক পরিচিতির ধারক হল সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে সামাজিক পরিবর্তনের অপর একটি অন্যতম অন্তর্নিহিত উপাদান বলে মনে করা হয়। প্রকৃতঅর্থে সংস্কৃতি স্থিতিশীল বিষয় নয় ,  তবে এটির পরিবর্তন ধীরগতিসম্পন্ন। মানুষের চিন্তা , চেতনা , ন্যায়-নীতি বোধ , আদর্শ  মূল্যবোধের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতি বাস্তবায়িত হয়। এগুলির পরিবর্তন ঘটলে সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার প্রভাবে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ধারা দ্রুততর হয়।  আবার সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রভাবে প্রযুক্তিবিদ্যার পরিবর্তনেও প্রভাব পড়ে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪.  মনস্তাত্ত্বিক উপাদান :- 
মানব সমাজকে একটি নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন হিসেবেও ধার্য করা হয়। মানব সমাজে যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটে তার অভ্যন্তরে মানুষের মনস্তত্ত্ব গভীরভাবে কাজ করে। প্রকৃত অর্থে কোন পরিবর্তনই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না , যতক্ষণ না মানুষ মনোজাগতিক দিক দিয়ে সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করে।  তাই সামাজিক পরিবর্তনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক উপাদান কে চিহ্নিত করা হয়। মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলি সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে কাজ করে থাকে যেমন :- 
(ক ) প্রকৃত অর্থে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক , এর ফলে সমাজে দ্বন্দ্ব , বৈষম্য ইত্যাদি গড়ে ওঠে।  সাম্প্রতিক একক পরিবারের গঠন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য দিক। 
(খ ) পারস্পরিক অনুকরণপ্রিয়তা সমাজের মধ্যে বিশেষ ধরনের মনোজাগতিক পরিবর্তন আনতে পারে। 
(গ ) সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে সামাজিক পরিবর্তন অনিবার্য হয়। 
(ঘ ) সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তাদের দেশভক্তি , আদর্শ , চিন্তাধারা প্রভৃতি সাধারণ মানুষের মনোজগতের যে প্রভাব বিস্তার করে তার ফলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়। 

৫. অর্থনৈতিক উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উপাদানের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।  অর্থব্যবস্থা হলো সমাজ ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংগঠন। তাকে বাদ দিয়ে সমাজব্যবস্থার অবস্থান ভাবা হয় না। মানুষের আচার-আচরণ , রীতিনীতি প্রভৃতি প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থার উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সাংস্কৃতিক জীবনের ক্ষেত্রে এই উপাদানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী V. Pareto বলেছেন , অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মন্দা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আবার অর্থনৈতিক উপাদান সমাজে অবস্থিত অন্যান্য ক্রিয়াশীল উপাদানের উপরেও অনেকখানি নির্ভর করে। 

সুতরাং বলা যায় যে ,  সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন একটি সর্বজনীন ঘটনা। সমাজের কোন বিষয়ের পরিবর্তন ঘটবে , আর কোন কোন বিষয়ের পরিবর্তন ঘটবে না - এভাবে কিছু বলা যায় না। অর্থাৎ সমাজের সার্বিক বিষয়ই পরিবর্তনের অধীন। তবে কোনটি দ্রুত পরিবর্তিত হয় আর কোনটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। সমাজের নানাবিধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি পরস্পর সম্পর্কিত। সমাজের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক উপাদান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলিও পরস্পর সম্পর্কিত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments


সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসাবে শিক্ষার ভূমিকা :- 


শিক্ষার প্রসার ব্যতীত দেশের আপামর জনসাধারণকে শিক্ষিত করার কোনো বিকল্প প্রক্রিয়া যেমন নেই ; তেমনই শিক্ষিত জনসাধারণ ব্যতীত গণতান্ত্রিক আদর্শের রূপায়ণ সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক আদর্শ লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিটি যথার্থ পদক্ষেপ সমাজব্যবস্থা এবং সমাজজীবনে পরিবর্তন ও প্রগতি নিশ্চিত করে থাকে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সমাজ ও মানবজীবন সদা গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। বিবর্তনের ধারায় মানবজীবন প্রতিটি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল। সেই ধারা অনুসরণ করে শিক্ষাও সর্বদা পরিবর্তনশীল , কেননা শিক্ষা , সমাজ ও মানবজীবন -প্রতিটি উপাদানই পরস্পর সম্পর্কিত। আমাদের অতীতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে বর্তমানের বীজ লুকিয়ে থাকে , এবং বর্তমানের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের পরিকাঠামো। এই ক্ষেত্রে শিক্ষা অতীতের ভিতের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সমাজের পরিবর্তন নিঃসন্দেহে একটি বিবর্তন প্রক্রিয়ার পরিণতি এবং শিক্ষা হল তার অন্যতম একটি মাধ্যম। 

বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিকতা প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রের আদর্শ এবং এই আদর্শের অন্যতম লক্ষ্য গুলি হল শ্রেণিবৈষম্যহীন , শোষণমুক্ত , আদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন। এই ধরণের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষা ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তিকে মানবিক গুণগুলি অর্জন করতে সহায়তা করে।   

জন ডিউই ও কোঠারি কমিশনের অভিমত : -  প্রতিটি ব্যক্তির সমাজ নির্দেশিত পথে বিকাশ - বৃদ্ধির প্রক্রিয়া হিসাবে শিক্ষাকে বিবেচনা করেছেন জন  ডিউই। তিনি মনে করেন , শিক্ষা হল প্রত্যেক ব্যক্তির Socially directed growth  ।  আমরা জানি , দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিকশিত করে তুলতে শিক্ষাকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বস্তুতঃ দেশের ও জাতির উন্নতিকে সুদৃঢ় করে তুলতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি , শিল্প , যানবাহন , বাজার ও লেনদেনের পরিবেশকে সুস্থ ও সমৃদ্ধ করা খুবই জরুরি। এই প্রেক্ষিতে দেশের সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে যোগ্যভাবে ব্যবহার করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাকে যেমন কাজে লাগাতে হবে ঠিক তেমনভাবেই শিক্ষা পরিকাঠামোকে উপযুক্তভাবে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই প্রসঙ্গে কোঠারি কমিশনের বক্তব্য হল - Changes in the knowledge , skill , interests and values of the people as a whole . 

সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষার পরিবর্তন ও পরিশীলন যে অবশ্যই প্রয়োজন তা অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আগামীদিনের সমাজ পরিবর্তনের চিত্রটুকু শিক্ষার মধ্যে দিয়ে যদি তুলে ধরা যায় তাহলে তাদের অধুনা গৃহীত শিক্ষা অবশ্যই আগামীদিনের পরিবর্তনে অনেকখানি ভূমিকা নিতে পারে। সমাজকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে তোলার জন্য তার পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রয়োজন , এবং এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

শিক্ষা যেভাবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে :- 
(ক ) নিরক্ষর মানুষদের সাক্ষর করে তোলার মধ্যে দিয়ে। 
(খ ) শিল্পায়ন ও নগরায়নের যথার্থ বোধের প্রসার ঘটানো।
(গ ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয় ও সে সম্পর্কিত সমস্যাদি যথার্থভাবে তুলে ধরে। 
(ঘ ) জনংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশ উপযোগী নীতির ধারণা প্রদান। 
(ঙ ) রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত মালিকানার পরিমিতি নির্ধারণ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে। 
(চ ) বিশ্বায়ন , অর্থনৈতিক উদারীকরণ , আধুনিকীকরণ - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে। 
(ছ ) সামাজিক বোধ , উপলব্ধি ও চেতনার বিকাশে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। 

ফলত , শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিকাঠামোগত ও অন্যান্য বিষয়গত নির্দেশ দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে শিক্ষাকেই তুলে ধরতে হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষাই মূর্ত প্রচেষ্টা করে থাকে। সাম্য , ন্যায়নীতি , গণতান্ত্রিকতাবোধ , সার্বজনীন শিক্ষা , কৃষি - শিল্পের প্রসারের জন্য শিক্ষা , অর্থনৈতিক উন্নয়ন উপযোগী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা , বিজ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতার বিকাশের জন্য গবেষণামুখী শিক্ষা , সমাজ পরিবর্তনের সাথে সংগতি বিধানের ও অভিযোজনের শিক্ষা - এই সকল বিষয়গুলি প্রসারের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। 

পরিশেষে বলা যায় যে , শিক্ষা সমাজ পরিবর্তনের এক মূল্যবান হাতিয়ার হিসাবে - 
(১) সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ আত্মস্থ করে এবং এভাবেই সংস্কৃতিকে সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে এবং সমাজকে স্থায়িত্ব দানে উদ্যোগ গ্রহণ করে। 
(২) নতুন সমাজের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। 
(৩) সামাজিক রীতিনীতি , বিধিনিষেধ ও অন্যান্য অনুশাসনের পরিবর্তনকে সুস্পষ্ট করে। 
(৪) আগামীদিনের ধর্মীয় বোধ ও উপলব্ধি অনুভূতিকে জনসমাজে সঞ্চারণ ও সঞ্চালন করে। (৫) ভবিষ্যৎ সমাজের আর্থ - সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন ধারাকে মূর্ত করে সমাজ পরিবর্তনের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। 

আবার , জনগণের উপযুক্ত জ্ঞান , দক্ষতা , আগ্রহ এবং মূল্যবোধকে পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ও সুযোগ্য মানব সম্পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে কেউই অস্বীকার করতে পারেন না। এজন্য কোঠারি কমিশনের সুপারিশে যথার্থই বলা হয়েছে যে , সমাজের যথার্থ ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে '' The development of human resources through a properly organised programme of education '' -  খুবই প্রয়োজন। 

Education and social change have a two way traffic . 
- Kothari Commission .

" Education is expected to change the attitude and values among people and create in them a desire for progress .'' 
- Kothari Commission .

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
            
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates