Factors of Social Change [ Sociological foundation of Education ]

by - May 18, 2021

সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান সমূহ :- 

Factors of Social Change ( In Bengali ). 



সামাজিক পরিবর্তন একটি জটিল সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজে এই পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে দিয়ে। তাই সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন একটি নির্দিষ্ট কারণ বা  উপাদান দায়ী নয়। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের উপাদান এ ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। আবার দেশ-কালের পরিপ্রেক্ষিতে উপাদানের পরিবর্তন ঘটতে পারে ; ফলে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও নানাবিধ বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং কোন কোন উপাদানের মধ্যে দিয়ে সামাজিক পরিবর্তন বাস্তবায়িত হবে তা এককথায় বলা না গেলেও সমাজতাত্ত্বিকগণ  কতগুলি নির্দিষ্ট উপাদান অন্বেষণে নিয়োজিত হয়েছেন। তাই সমাজবিজ্ঞানীদের পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট উপাদান চিহ্নিত করতে পারি যেমন :- 
১. জৈব উপাদান 
২. প্রযুক্তিগত উপাদান 
৩. সাংস্কৃতিক উপাদান 
৪. মনস্তাত্ত্বিক উপাদান 
৫. অর্থনৈতিক উপাদান 


১. জৈব উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের একটি অন্যতম উপাদান হিসাবে জৈব উপাদানের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জৈব উপাদান বলতে কতগুলি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি হল জন্ম-মৃত্যুর ফলে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি এবং তার সামাজিক ফলাফল , জন্ম-মৃত্যুর ফলে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধির জৈব সামাজিক কারণসমূহের কার্যপ্রক্রিয়া এবং যৌন নির্বাচনের রীতিনীতি প্রভৃতি। 

সমাজতাত্ত্বিকদের বিচারে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সামাজিক পরিবর্তনের পর্যালোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। জনসংখ্যার আয়তনের পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের ওপর নানাবিধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষ করে প্রচলিত অর্থব্যবস্থা ,  সামাজিক আচার আচরণ , মূল্যবোধ , প্রথা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই প্রভাব স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়। তবে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি শেষ কথা নয়। 

জনসংখ্যার হ্রাস - বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে সকল সামাজিক বিষয় সমূহ প্রভাব বিস্তার করে তার মধ্যে বহুবিবাহ , বাল্যবিবাহ , বিধবা বিবাহ প্রভৃতি সামাজিক প্রথা এবং জরা , ব্যাধি ,  মহামারী প্রভৃতি নিরাময় সংক্রান্ত সামাজিক কার্যকলাপ।  

আধুনিক সমাজের মূল লক্ষ্য হলো জন্ম এবং মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণ। ফলে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে , সেই সঙ্গে জন্মহার নিয়ন্ত্রণেরও নানাবিধ সচেতনতামূলক কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। 

২. প্রযুক্তিগত উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উপাদানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস ( K. Devis ) বলেছেন , বিজ্ঞান বলতে মানুষের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অংশবিশেষকে বোঝায়। এর দ্বারা প্রকৃতি সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞানের বিকাশ ঘটে এবং প্রযুক্তি হল এই বিকশিত জ্ঞানের প্রায়োগিক দিক। সমাজতত্ত্বে প্রযুক্তিবিদ্যার ধারণাকে ব্যাপক অর্থে গৃহীত হয়েছে। এখানে সমাজ জীবনে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রত্যাশিত সাফল্যের সাথে সহায়ক ও পরিবর্তিত মানসিক গঠন বিন্যাস ও সামাজিক কাঠামোর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। সমাজতাত্ত্বিক ফস্টার বলেন , প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি বলতে  কেবলমাত্র পার্থিব ও প্রযুক্তিমূলক উন্নয়নকে বোঝায় না - এ হলো এক বিশেষ ধরনের সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি। 

প্রযুক্তিবিদ্যার ফলে সামাজিক পরিবর্তন কিভাবে ঘটে সে সম্পর্কে বিধিবদ্ধ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে - 
(ক ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। উৎপাদনের গুণগত এবং পরিমাণগত মানেরও  শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। 
(খ ) শিল্পক্ষেত্রের পাশাপাশি কৃষিজ উৎপাদনও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে প্রভাবিত হয়। যে দেশে কৃষি এবং শিল্পের সমান্তরাল অগ্রগতি ঘটে সে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও যে পরিবর্তন ঘটবে - সে কথা নিশ্চিত। 
(গ ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সহজলভ্য হয়। প্রাত্যহিক জীবনে নানাবিধ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের কায়িক শ্রম হ্রাস পায় , সুখ- স্বাচ্ছন্দ বৃদ্ধি পায়। 
(ঘ ) বহুমুখী উৎপাদন ব্যবস্থার বৃদ্ধি ঘটলে মানুষ তাতে জড়িয়ে পড়ে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লাভবান হয়। 
(ঙ ) প্রযুক্তি বিদ্যার প্রসার নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেও পরিবর্তন আনে।  সাম্প্রতিক কালে নারী শিক্ষার প্রসার , নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদির পাশাপাশি বৈবাহিক সম্পর্কেও নানাবিধ শিক্ষার প্রসার ও পরিবর্তন ঘটেছে। 
(চ ) প্রযুক্তিবিদ্যার প্রসার মানুষের মানসিকতার মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। এর দ্বারা মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠেছে এবং পেশাভিত্তিক মানসিকতা গড়ে তুলেছে। 
(ছ ) প্রযুক্তিবিদ্যা সামাজিক কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটায় এবং এর ফলে সমাজজীবন প্রায় কুসংস্কারমুক্ত হয়ে উঠেছে।  শ্রেণি কাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।
( জ )  প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব রাষ্ট্রের কার্যাবলীকেও  প্রভাবিত করছে। এর দ্বারা রাষ্ট্রের কার্যাবলী শুধু পরিবর্তন হয়েছে তা নয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

৩. সাংস্কৃতিক উপাদান :- 
মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে সংস্কৃতি মানুষেরই তাত্ত্বিক সৃষ্টি। মানব সমাজের সামগ্রিক পরিচিতির ধারক হল সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে সামাজিক পরিবর্তনের অপর একটি অন্যতম অন্তর্নিহিত উপাদান বলে মনে করা হয়। প্রকৃতঅর্থে সংস্কৃতি স্থিতিশীল বিষয় নয় ,  তবে এটির পরিবর্তন ধীরগতিসম্পন্ন। মানুষের চিন্তা , চেতনা , ন্যায়-নীতি বোধ , আদর্শ  মূল্যবোধের মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতি বাস্তবায়িত হয়। এগুলির পরিবর্তন ঘটলে সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার প্রভাবে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ধারা দ্রুততর হয়।  আবার সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রভাবে প্রযুক্তিবিদ্যার পরিবর্তনেও প্রভাব পড়ে। 


৪.  মনস্তাত্ত্বিক উপাদান :- 
মানব সমাজকে একটি নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সংগঠন হিসেবেও ধার্য করা হয়। মানব সমাজে যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ঘটে তার অভ্যন্তরে মানুষের মনস্তত্ত্ব গভীরভাবে কাজ করে। প্রকৃত অর্থে কোন পরিবর্তনই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না , যতক্ষণ না মানুষ মনোজাগতিক দিক দিয়ে সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করে।  তাই সামাজিক পরিবর্তনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক উপাদান কে চিহ্নিত করা হয়। মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলি সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে কাজ করে থাকে যেমন :- 
(ক ) প্রকৃত অর্থে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক , এর ফলে সমাজে দ্বন্দ্ব , বৈষম্য ইত্যাদি গড়ে ওঠে।  সাম্প্রতিক একক পরিবারের গঠন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য দিক। 
(খ ) পারস্পরিক অনুকরণপ্রিয়তা সমাজের মধ্যে বিশেষ ধরনের মনোজাগতিক পরিবর্তন আনতে পারে। 
(গ ) সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে সামাজিক পরিবর্তন অনিবার্য হয়। 
(ঘ ) সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তাদের দেশভক্তি , আদর্শ , চিন্তাধারা প্রভৃতি সাধারণ মানুষের মনোজগতের যে প্রভাব বিস্তার করে তার ফলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়। 

৫. অর্থনৈতিক উপাদান :- 
সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উপাদানের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।  অর্থব্যবস্থা হলো সমাজ ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংগঠন। তাকে বাদ দিয়ে সমাজব্যবস্থার অবস্থান ভাবা হয় না। মানুষের আচার-আচরণ , রীতিনীতি প্রভৃতি প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থার উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সাংস্কৃতিক জীবনের ক্ষেত্রে এই উপাদানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী V. Pareto বলেছেন , অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মন্দা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আবার অর্থনৈতিক উপাদান সমাজে অবস্থিত অন্যান্য ক্রিয়াশীল উপাদানের উপরেও অনেকখানি নির্ভর করে। 

সুতরাং বলা যায় যে ,  সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন একটি সর্বজনীন ঘটনা। সমাজের কোন বিষয়ের পরিবর্তন ঘটবে , আর কোন কোন বিষয়ের পরিবর্তন ঘটবে না - এভাবে কিছু বলা যায় না। অর্থাৎ সমাজের সার্বিক বিষয়ই পরিবর্তনের অধীন। তবে কোনটি দ্রুত পরিবর্তিত হয় আর কোনটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। সমাজের নানাবিধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি পরস্পর সম্পর্কিত। সমাজের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক উপাদান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলিও পরস্পর সম্পর্কিত। 

You May Also Like

0 comments