Characteristics / features of the Manor system

by - December 26, 2021

Characteristics / features of the Manor system in medieval Europe: -

মধ্যযুগে ইউরোপে ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

মধ্যযুগে ইউরোপে ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট :- 


মধ্যযুগে নবম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপে সামন্ততন্ত্র পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল ম্যানর ব্যবস্থা। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সচল রাখতে ম্যানর প্রথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ম্যানর ব্যবস্থাকে সিনোরীয় ব্যবস্থাও ( Seigneurial system ) বলা হত। প্রতিটি সামন্ততান্ত্রিক গ্রামে ম্যানর ব্যবস্থা উৎপাদন , রাজনৈতিক , প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখত। ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলি হল - 


১. ম্যানর হাউসের অবস্থিতি :- ম্যানর হাউস ছিল প্রতিটি গ্রামের মূল প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখানে ম্যানর প্রভু তাঁর পরিবার সমেত বসবাস করতেন। শত্রুর হাত থেকে নিষ্কৃতিলাভের উদ্দেশ্যে ম্যানর হাউসগুলি উঁচু পরিখা দ্বারা বেষ্টিত থাকতো এবং প্রতিটি ম্যানর হাউসে নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন থাকত। ম্যানর হাউস থেকে ম্যানর প্রভু তাঁর গ্রাম শাসন করতেন এবং কৃষক ও প্রজাদের উপর আধিপত্য বজায় রাখতেন। 

২. রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ :- সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রামগুলি মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল এবং তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিল। ম্যানর ব্যবস্থার অধীনে প্রতিটি গ্রাম নিজেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদনে সক্ষম ছিল , ফলে ম্যানর গ্রামগুলিকে রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে। আর ম্যানর হাউস ছিল সম্পূর্ণ ব্যবস্থার পরিচালক। 

৩. ম্যানর গ্রামগুলির শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি :- প্রতিটি ম্যানর গ্রামে ম্যানর প্রভুর অধীনে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। সমস্ত গ্রামের প্রশাসন পরিচালনা করতে ম্যানর প্রভু বহুসংখ্যক কর্মচারী নিযুক্ত করতেন। প্রশাসন পরিচালনা , সৈন্য বাহিনী নিয়ন্ত্রণ , রাজস্ব সংগ্রহ , উন্নয়নমূলক প্রকল্প , জলসেচের ব্যবস্থা , বিচারকার্য , চিকিৎসা , যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন - ইত্যাদি সমস্ত কাজ ম্যানর প্রভুর নির্দেশে পরিচালিত হত। 

৪. বিভিন্ন কর্মচারী :- প্রশাসনিক নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে ম্যানর প্রভু বহু সংখ্যক কর্মচারী নিযুক্ত করতেন। তাদের মধ্যে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিযুক্ত হতেন। যেমন - (i) স্টেয়ার্ড নামক কর্মচারীদের মূল দায়িত্ব ছিল সামন্ত প্রভুর সম্পত্তি পরিচালনা করা ও ব্যবসা - বাণিজ্য তদারকি করা। (ii) বেইলিফ নামক কর্মচারীরা উৎপাদন ব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রভুকে সুপারিশ করতেন। (iii) এছাড়াও উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নের দায়িত্বে থাকতেন রিভি নামক কর্মচারীরা। 


৫. জমির প্রকৃতি :- ম্যানরগুলিতে কয়েকটি ভাগে জমিকে বিভক্ত করা হত , যেমন - সামন্ত প্রভুর খাসজমি , চাষবাসের জন্য জমি , প্রজাদের বসবাসের জমি এবং সাধারণের জন্য জমি। সামন্তপ্রভুর খাসজমিতে কৃষক ও ভূমিদাসরা বেগার শ্রম প্রদানে বাধ্য থাকতেন। এগুলো ছাড়াও যেসকল অতিরিক্ত জমি থাকতো সেগুলিতেও উৎপাদন প্রক্রিয়া চলতো। 

৬. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : - ম্যানর ব্যবস্থা ছিল মূলতঃ সামন্ততন্ত্রের অর্থনৈতিক কাঠামো। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈচিত্র ছিল না বললেই চলে এবং কৃষিই ছিল অর্থনীতির একমাত্র ভিত্তি। মূলতঃ দুই ধরণের কৃষক ছিল - স্বাধীন কৃষক ও ভূমিদাস। প্রভুর জমিতে উভয়কেই বেগার শ্রম প্রদান করতে হত। অর্থনীতি ছিল পশ্চাদমুখী এবং বিপুল করের বোঝার কারণে কৃষকদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। 

৭. ম্যানরের সামাজিক প্রকৃতি :- ম্যানর হাউসগুলিতে ম্যানর প্রভুরা বসবাস করতেন। ম্যানর হাউসগুলি ছিল বিলাস - বৈভব ও আভিজাত্যের প্রতীক। পক্ষান্তরে সমাজের কৃষক ও ভূমিদাসদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত হীন। তারা ভগ্নপ্রায় কুটিরে বসবাস করতেন এবং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তারা জোগাড় করতে পারতেন না। শোষণের মাত্রা অত্যধিক থাকায় সাধারণ কৃষক ও ভূমিদাসদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। 

৮. ম্যানর প্রভু - সর্বময় কর্তা :- ম্যানর ব্যবস্থায় ম্যানর প্রভু ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যবস্থার একমাত্র সর্বময় কর্তা। তাঁর নির্দেশই সমস্ত ব্যবস্থা পরিচালিত হত। তারা একদিকে যেমন শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন তেমন অন্যদিকে মাত্রারিক্ত শোষণ করে প্রজাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলতেন। তাদের কাছে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রস্তুত থাকতো। ফলে সহজে অত্যাচারিত মানুষ কোনো অভিযোগ জানাতে পারতেন না। 

৯. স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামসমাজ : - ম্যানর ব্যবস্থায় গ্রামগুলি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। ম্যানরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চাহিদা ছিল সীমিত। ফলে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারতেন। ফলে প্রতিটি গ্রাম অপর গ্রামগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে বাণিজ্যের বিকাশের ফলে মানুষের চাহিদা বেড়ে যায় এবং এই স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিনষ্ট হয়। 

১০. নিরাপত্তা বাহিনী :- প্রতিটি ম্যানর প্রভু এক সুদক্ষ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতেন। এর মূলতঃ তিনটি উদ্দেশ্য ছিল - (ক ) বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে ম্যানর গ্রামকে রক্ষা করা , (খ ) অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করা ও বলপূর্বক রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া বজায় রাখা এবং (গ ) যুদ্ধের সময় রাজাকে সৈন্য সরবরাহ করা। 

     

You May Also Like

0 comments