রচনাধর্মী ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য :-

by - December 27, 2021

রচনাধর্মী এবং নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য লেখ। 

রচনাধর্মী ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ( বস্তুগত অভীক্ষা ) মধ্যে পার্থক্য :- 


১. পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় খুব সহজেই পাঠ্যবিষয় থেকে কয়েকটি রচনাত্মক প্রশ্ন নির্বাচন করে শিক্ষক খুব সহজেই শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ করতে পারেন। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার জন্য অপেক্ষাকৃত অনেক প্রশ্নের প্রয়োজন হয়। এটি পরিশ্রম সাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ। 

২. স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাশক্তি , মতামত  ও যুক্তি বুদ্ধির প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় অতিসংক্ষিপ্ত বা বিকল্প চয়ন ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীর কাছে স্বাধীনভাবে কোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকে না। 


৩. ভাষা দক্ষতার বিকাশের ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান ও তা প্রয়োগের দক্ষতার বিকাশ ঘটে ও তা পরিমাপ করা যায়। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সামনে এজাতীয় কোনো সুযোগ থাকে না। 

৪. ব্যয় সংক্রান্ত প্রশ্ন :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় প্রশ্নসংখ্যা খুব কম থাকে বলে এ জাতীয় প্রশ্নপত্র তৈরী করতে ব্যয় খুব কম হয়। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় বহুপ্রশ্ন সংযোজিত করতে হয় বলে এজাতীয় অভীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরী করতে ব্যয় খুব বেশি হয়। 

৫. অভীক্ষার প্রকৃতি :- রচনাধর্মী অভীক্ষা হল এক ধরণের গতানুগতিক অভীক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার ফল হিসেবে প্রায়োগিক একটি ব্যবস্থা। 

৬. শিক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাব :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর লেখা উত্তরপত্রের মান নির্ণয়ের জন্য কোনো আদর্শায়িত পদ্ধতি থাকে না। ফলে এ জাতীয় অভীক্ষায় উত্তরের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকের প্রভাব দেখা যেতে পারে। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় যেহেতু উত্তরের আদর্শমান পূর্ব হতেই নির্ধারিত থাকে তাই এজাতীয় অভীক্ষায় শিক্ষকের কোনোরূপ ব্যক্তিগত প্রভাব থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। 


৭. নির্ভরযোগ্যতা :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় উত্তর যাঁচাইয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ব্যক্তিগত ইচ্ছা - অনিচ্ছা প্রতিফলিত হয়। ফলে রচনাধর্মী অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় উত্তর যাঁচাইয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু শিক্ষকের ব্যক্তিগত ইচ্ছা - অনিচ্ছার কোনো ভূমিকা থাকে না , তাই নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। 

৮. পাঠ্যবিষয়ের জ্ঞান পরিমাপের ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় প্রশ্নের সংখ্যা কম থাকায় পাঠ্য বিষয়ের সমগ্র অংশ থেকে প্রশ্ন নির্বাচন করা সম্ভব হয়না। ফলে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর সামগ্রিক জ্ঞানের পরিমাপ করা সম্ভব হয়না। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় সমগ্র পাঠ্য বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয় বলে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মাধ্যমে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর সামগ্রিক জ্ঞানের পরিমাপ সম্ভব। 

৯. মুখস্থ - নির্ভরতার ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখস্থ নির্ভরতা প্রাধান্য পায়। মাত্র কয়েকটি সাজেশনভিত্তিক প্রশ্ন মুখস্থ করলেই অভীক্ষায় অংশগ্রহন করা যায়। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় সমগ্র পাঠ্য বিষয় থেকে প্রশ্ন তৈরির ফলে মুখস্থ বিদ্যার প্রবণতা এক্ষেত্রে গৌণ ভূমিকা পালন করে। 

১০. বিশ্লেষণ দক্ষতা ও বস্তুগত জ্ঞান :- রচনাধর্মী অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বা বিষয়বস্তু উপস্থাপন করার ক্ষমতার পরিমাপ করা হয়। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিষয় সংক্রান্ত বস্তুগত জ্ঞান সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়। 

১১. শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী স্বাধীনতা লাভ করে থাকে। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

১২. উত্তরপ্রদানে প্রাসঙ্গিকতার ক্ষেত্রে :- রচনাধর্মী অভীক্ষায় উত্তর প্রদানে স্বাধীনতা থাকার ফলে অনেকসময় শিক্ষার্থীরা বহু অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলিকেও উত্তরে সংযোজিত করে। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষায় অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সংযোজন সম্ভব নয়।     


 

You May Also Like

0 comments