পাঠক্রমের বিভিন্ন উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

by - March 20, 2024

পাঠক্রমের বিভিন্ন উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

অথবা , পাঠক্রম গঠনের প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলি কী কী ? 




পাঠক্রমের বিভিন্ন উপাদান / পাঠক্রম গঠনের প্রধান বিবেচ্য বিষয় :- 


১. শিক্ষার উদ্দেশ্য :- 
শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে পাঠক্রমের মাধ্যমে। তাই পাঠক্রমের প্রধান উপাদান হল শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে সার্থক করে তুলতে যা কিছু পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন সেগুলিকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে পাঠক্রমকে শিক্ষার্থীর পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত করে তোলা হয়। 

২. বিষয়বস্তুর প্রকৃতি ও পরিধি :- 
ভাষা জ্ঞান , যুক্তি নির্ণয় , সামাজিক জ্ঞান , প্রযুক্তিগত বোধ , বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের বিকাশ যাতে শিশুর মধ্যে গড়ে ওঠে সেজন্য পাঠক্রমে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন - সাহিত্য , গণিত , ইতিহাস , ভূগোল , প্রকৃতি বিজ্ঞান - ইত্যাদি। এই সকল বিষয়গুলি পঠন পাঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার পরিচিত জগৎ সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। 

৩. বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশ :- 
আধুনিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। তাই সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে শিশুর মধ্যে - দৈহিক , শারীরিক , প্রাক্ষোভিক , নৈতিক , কৃষ্টিমূলক , নান্দনিক , জ্ঞান মূলক ও বৌদ্ধিক , মানসিক , সামাজিক - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটা প্রয়োজন। তাই পাঠক্রম সংগঠনের সময় প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়। 


৪. শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয় :- 
শিক্ষার একটি প্রধান উপাদান হলেন শিক্ষক। শিক্ষার্থী ও পাঠক্রমের মাঝে শিক্ষক সেতুবন্ধনের কাজ করেন। পাঠক্রম পরিচালনা করা , শিক্ষা সঞ্চালন ও নির্দেশনা , অভীক্ষা পরিচালনা - ইত্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে অভিজ্ঞ ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজন। তাই পাঠক্রম নির্ধারণের সময় শিক্ষকের যোগ্যতা , দায়িত্ব ও কর্তব্য , দৈনন্দিন পঠন পাঠন পরিচালনা - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে পাঠক্রমে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। 

৫. সামাজিক বিষয় :- 
শিক্ষা একটি সামাজিক বিষয়। সমাজের মধ্যেই এবং সমাজের দ্বারাই শিক্ষা পরিচালিত হয়। শিক্ষা ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটিকে সরল ও যথার্থ করে তোলে। উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়নের মাধ্যমে সামাজিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হয় , শিক্ষার যথার্থ সঞ্চালন ঘটানো হয় , শিক্ষার্থী সমাজ স্বীকৃত আচার - আচরণগুলিকে আয়ত্ত্ব করতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে অনুভব করতে পারে। তাই সামাজিক বিষয়গুলি পাঠক্রমের অন্যতম অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। 

৬. পরিবেশগত বিষয় :- 
প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমেই মানব সভ্যতা বিকাশ নির্ভর করে। এছাড়াও প্রকৃতির যথাযথ সংরক্ষণ , প্রাকৃতিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও সেই সমস্যাগুলি দূরীকরণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন , আধুনিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি কীভাবে পরিবেশে প্রভাব বিস্তার করেছে , বিশ্ব উষ্ণায়ন ও শিক্ষার্থীদের কর্তব্য সম্পর্কে ধারণা অর্জন - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীকে সচেতন করতে পাঠক্রমে পরিবেশগত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

৭. আর্থিক বিষয় :- 
সাধারণতঃ শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় রাষ্ট্রের দ্বারা। প্রতিটি রাষ্ট্রের শিক্ষা খাতে ব্যয় করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে। তাই পাঠক্রম প্রণয়নের সময় যুক্তিপূর্ণভাবে খেয়াল রাখা হয় পাঠক্রম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ব্যয় রাষ্ট্রের পক্ষে বহন করা সম্ভব কি'না। যেমন এই মুহূর্তে যদি পাঠক্রমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে কমপিউটার নির্দিষ্ট করার কথা বলা হয় , তাহলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির পক্ষে তা সম্ভব না'ও হতে পারে। তাই পাঠক্রম প্রণয়নের সময় আর্থিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 


৮. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত মনোভাবের বিকাশ :- 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরেই মানব সভ্যতার বিকাশ সম্ভব হয়েছে। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিক জ্ঞানগুলি সম্পর্কে অবগত হতে পারে , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উৎসাহিত হতে পারে - পাঠক্রম প্রণয়নের সময় সেই বিষয়গুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করা হয়। 

৯. প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় :- 
শিক্ষা একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেমন হওয়া উচিত , প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত - সেই সকল বিষয়গুলিকে পাঠক্রম প্রণয়নের সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

১০. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয় :- 
শিক্ষর্থীর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটলে শিক্ষার সর্বপ্রকার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই পাঠক্রম এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় , যাতে শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিকাশ সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিকাশ শিক্ষার উদ্দেশ্যকে যথাযথভাবে সফল করে তোলে। 

১১. আন্তর্জাতিক বিষয় :- 
আধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক স্তরে শিক্ষা সম্পর্কে কিছু মূল্যবান নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং জাতীয় স্তরে প্রতিটি রাষ্ট্র সেই নীতিগুলিকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু সংস্থা - UNESCO , UNICEF - ইত্যাদি , মানব সভ্যতার সামগ্রিক সমস্যাগুলিকে দূর করে দেশ - কালের সীমানা অতিক্রম করে মানবের জয়গান গাইছে। তাই পাঠক্রমের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ , তাদের প্রকৃতি ও অর্থনীতি , তাদের সমস্যা - ইত্যাদি বিষয়গুলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কর্মকান্ড - ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করার চেষ্টা করা হয়। 

১২. বৃত্তি সম্পর্কিত বিষয় :- 
শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অর্জনে উপযুক্ত করে তোলা ও তাদের উৎপাদনশীল করে তোলা। শিক্ষার মাধ্যমে জীবিকার বিকাশ ঘটলে শিক্ষা শিক্ষার্থীর নিকট আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই বৃত্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলিকেও পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।       


You May Also Like

0 comments