Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

ফরাসি বিপ্লবের ( ১৭৮৯ ) সংগঠনে ফরাসি রাজতন্ত্র বা বুরবোঁ রাজবংশ কতটা দায়ী ছিল ? 



ভূমিকা :- 
ফরাসি বিপ্লব সংঘঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজবংশ সবচেয়ে বেশি দায়ী ছিল। ফ্রান্সের সবচেয়ে শক্তিশালী বুরবোঁ রাজা চতুর্দশ লুই এর আমল থেকে যে স্বৈরাচার শুরু হয় - তার ফলেই ফরাসিরা বিপ্লবের রাস্তায় যেতে বাধ্য হয়। আসলে যুগের প্রয়োজনে নিজেদেরকে পরিবর্তিত না করায় ইতিহাস ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরবোঁ রাজতন্ত্রকেই দায়ী করেছে। ঐতিহাসিক মাদেলা ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরবোঁ রাজতন্ত্রকে দায়ী করে বলেছেন - ফরাসি রাজতন্ত্রই বিপ্লব ঘটিয়েছে - '' The French monarchy , which made the revolution ''  । 

ফরাসি রাজতন্ত্র এক নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রেরই নামান্তর ছিল। স্টেটস জেনারেল নামক প্রতিনিধি সভার নামমাত্র অস্তিত্ব থাকলেও ১৭৫ বছর তার কোন অধিবেশন না বসায় রাজা চরম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ফরাসি রাজা নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করেন। চরম ক্ষমতাশীল শাসক , সর্বোচ্চ বিচারক ও আইন প্রণেতারূপে রাজা রাষ্ট্রের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। চতুর্দশ লুই বলেন - আমিই রাষ্ট্র - I am the state  ।  ফরাসি বিপ্লবের সংগঠনের যে সকল কারণের জন্য বুরবোঁ রাজবংশকে দায়ী করা হয় সেগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. স্বৈরাচারী রাজাদর্শ :- 
ফরাসি রাজ চতুর্দশ লুই নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করেন। নিজেদের ক্ষমতাকে ঈশ্বরপ্রদত্ত রূপ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন। ষোড়শ লুই বলেন - আমার ইচ্ছাই আইন - What I desire is decree  । ফরাসি জাতিও রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধিরূপে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এই স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক আদর্শ জনগণের কাছে বিভীষিকা ও আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। লা মার্টিনের মতে -  ফরাসি জাতির কাছে রাজা ঈশ্বর , তাঁকে মেনে চলাই ধর্ম। 

২. রাজন্যবর্গের দুর্বলতা :- 
ফরাসিরা রাজারা অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে যতটা সজাগ ছিলেন , কর্তব্য পালনের ব্যাপারে ঠিক ততটাই উদাসীন ছিলেন। অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্স অকর্মণ্য রাজা পঞ্চদশ লুই , অপদার্থ রাজপ্রতিনিধি ডিউক অব অর্লিয়েন্স , দুর্বলচেতা ষোড়শ লুই প্রমুখের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের রূপ নেয়। অর্থনীতি , রাজনীতি , সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে ফরাসি রাজতন্ত্র সংকটের মুখে ঠেলে দেয়।  প্রজাপতি রাজারূপে পরিচিত পঞ্চদশ লুই সম্পূর্ণরূপে তার উপপত্নী মাদাম দ্য পম্পাদুর মোহে আচ্ছন্ন ছিলেন। তার দুর্বলতার জন্যই যে ফ্রান্স পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তিনি মৃত্যুর আগে অনুভব করেন। তিনি বলেছিলেন - আমার পরেই মহাপ্রলয় আসছে - After me deluge  । 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. অভিজাতদের উশৃঙ্খলতা এবং অত্যাচার :- 
ফরাসি রাজাদের চারিত্রিক দুর্বলতা , নৈতিকতা অবক্ষয় ও অকর্মণ্যতার সুযোগ নিয়ে অভিজাতরা  শাসনকার্য পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। ইনটেনডেন্ট নামক কর্মচারীরা শাসনব্যবস্থাতে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফরাসি অভিজাতরা এমন দাবিও করেন যে , তারা রাজার সমশ্রেণীভূক্ত।  অভিজাতরা তাদের ব্যক্তিগত শত্রুদের শায়েস্তা করার জন্য রাজাকে দিয়ে লেতর দ্য ক্যাশে বা রাজকীয় পরোয়ানা তে সাক্ষর করিয়ে নেয়। ফরাসি রাজারাও শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজাতদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল ছিলেন যে , অভিজাতদের প্রভাব - প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা হ্রাস করতে তারা ব্যর্থ হন।  অভিজাতদের উশৃঙ্খলতা ও অত্যাচারে সাধারণ ফরাসিবাসীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। হ্যাম্পসন -  এর মতে , শাসনব্যবস্থাতে অভিজাতদের প্রভাব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি করে - The aristocratic infiltration produced unsavoury results  । 

৪. দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা :- 
ফরাসি বিচারব্যবস্থা ছিল দুর্নীতিতে ভরা। বিচারের নামে এখানে প্রহসন চলত। দোষী সাব্যস্তদের বাস্তিল দুর্গে আটক রাখা হত , যা ছিল নিরাপরাধ বন্দিশালা। বিচারকের পদ সরকারের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কেনা যেত। বিচারকদের সরকার বেতন দিত না। তারা জরিমানা থেকে প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই ভোগ করত। বিচারকের পদ ছিল বংশানুক্রমিক। রাজা নাগরিকদের বিচারের ক্ষেত্রে লেতর দ্য গ্রেস  ক্ষমতার প্রয়োগ করে অপরাধীদের শাস্তির মেয়াদ হ্রাস বা মুকুব করতে পারতেন। আর লেতর দ্য ক্যাশে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যে কোনো নাগরিককে কারাগারে আটকে রাখতে পারতেন। আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমান অধিকার স্বীকৃত ছিল না। অপরাধীদের শাস্তি অপরাধের গুরুত্ব অনুপাতে অনেক বেশি কঠোর ছিল। 

৫. বিশৃঙ্খল আইনবিধি :- 
তৎকালীন ফ্রান্সের আইনবিধি ছিল অবোধ্য ও বিশৃঙ্খল। সমগ্র দেশে সার্বজনীন আইন - কানুন বলে কিছুই ছিল না। দেশের এক - এক অঞ্চলে একেক ধরণের আইন প্রচলিত ছিল। কোথাও জার্মান আইন , কোথাও বা রোমান আইন। এক হিসাবে সেই সময় সমগ্র ফ্রান্সে চারশত বিভিন্ন ধরণের আইন - ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। আইনগুলি ছিল ল্যাটিন ভাষায় রচিত। সেই কারণে সেগুলি ছিল ফরাসি সাধারণ জনসাধারণের নিকট দুর্বোধ্য। দন্ডবিধি সুনির্দিষ্ট ছিল না এবং তা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। 

৬. রাজপরিবারের বিলাসিতা :- 
ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই এর রাজত্বকাল থেকেই ভার্সাই রাজপ্রসাদ হয়ে ওঠে ঐশ্বর্যের ইন্দ্রপুরী।  রাজ পরিবারের বিলাসব্যসন ও অমিতব্যয়িতা ছিল অকল্পনীয়। রানী মেরী আঁতোয়ানেত ভার্সাইয়ের টুইলারিশ প্রাসাদের কাঁচের ঘরে বাস করতেন। রাজপরিবারের সদস্যরা নিত্যনতুন পোশাক ব্যবহার করতেন। ভোজসভাতে প্রয়োজনের বেশি অর্থ খরচ করা হত। ঐতিহাসিক গুডউইন -এর মতে , ভার্সাই  রাজসভার ১৮ হাজার কর্মচারীর মধ্যে ১৬ হাজার জনই রাজপ্রাসাদের কাজ করত। এর মধ্যে রানীর ব্যক্তিগত ভৃত্যের সংখ্যা ছিল ৫০০ জন। একদিকে যখন রাজপরিবারের এই বিলাসিতা চলছে অপরদিকে তখন সাধারণ ফরাসিরা জীবন ধারণের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে। জীবনযাপনের এই বৈষম্য ফরাসিবাসীকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. ফরাসি বিদেশনীতির ব্যর্থতা :- 
ফরাসি রাজতন্ত্রের ব্যর্থ বিদেশনীতি বা পররাষ্ট্রনীতিও ফরাসি বিপ্লবের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল।  পঞ্চদশ লুই অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে ( ১৭৫৫ - ৬৩ ) এবং সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ( ১৭৫৬ - ৬৩ ) হেরে গেলে আমেরিকা ও ভারতের ফরাসি উপনিবেশগুলি হাতছাড়া হয়। এছাড়া ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্সকে জড়িয়ে দিয়ে ফ্রান্সের অর্থনীতিকে শোচনীয় করে তোলেন। বিদেশনীতির ক্রমাগত ব্যর্থতা ফরাসিবাসীর কাছে বুরবোঁ রাজতন্ত্রের মর্যাদা ও ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করে। 

৮. রাজস্বনীতির কুফল :- 
বুরবোঁ রাজতন্ত্রের রাজস্বনীতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। অভিজাত ও উচ্চ যাজকদের কর দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তাদেরকে করদাতার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনিক আয়ব্যয়ের মধ্যে ফারাক  ছিল যথেষ্ট। সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনীতির অভাবে রাজতন্ত্র আর্থিক সংকটে পড়েছিল। রাজস্ব ব্যবস্থার বৈষম্য ফরাসিবাসীকে ক্ষুব্ধ করে। 

৯. ষোড়শ লুইয়ের দায়িত্ব :- 
ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ফরাসি বিপ্লবের জন্য সর্বাধিক দায়ী ছিলেন। তিনিও তাঁর পূর্ববর্তী শাসকদের ন্যায় স্বৈরাচারের নীতিকে অনুসরণ করেন। কিন্তু পতন্মুখ প্রশাসনকে চাঙ্গা করে তোলার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনোটিই ষোড়শ লুইয়ের ছিল না। তিনি অর্থসংকট মেটানোর জন্য তার চার মন্ত্রী তুর্গো , নেকার , ক্যালোন ও ব্রিয়াকে নিয়োগ করে প্রশাসনিক  জটিলতা সৃষ্টি করেন। প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করলেও যাজক ও অভিজাতদের  বিরোধিতার জন্য তার বেশিরভাগই রূপায়ণ করতে পারেননি। 

উপসংহার :- 
ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের দায়িত্ব সম্পর্কে Comte de Marcy বলেছেন , At Court , there is nothing but confusion , scandals and injustice . No attempt has been made to carry out good principles of government , everything has been left to chance ''   ।  
অষ্টাদশ শতকে ফরাসি রাজশক্তির সার্বিক ভূমিকা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে ফরাসি বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ফিশারের মতে - ফরাসি রাজতন্ত্র অভিজাতদের অধিকারগুলি লোপ করতে অসমর্থ হলে বিপ্লব ঘটে - The Revolution came because the king failed to solve the question of privilege  ।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো। 



ভূমিকা : - সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইংল্যান্ডের Stuart রাজবংশের ধর্মীয় অনাচারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে বহু ইংরেজ আমেরিকা মহাদেশের ১৩ টি উপনিবেশে বসতি গড়ে তোলে। উপনিবেশগুলির আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের পাশাপাশি থেকে উপনিবেশবাসীরা এক গভর্নরের পরিচালনায় স্বায়ত্তশাসনের অধীনস্থ ছিল। কিন্তু ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ Declaratory Act জারি করে বলে - এখন থেকে উপনিবেশবাসীদের অধিকার ঠিক করবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এই ঘোষণা অনুযায়ী উপনিবেশবাসীদের উপর বিভিন্ন কর চাপানো হতে থাকে। এর বিরুদ্ধে উপনিবেশবাসীরা ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করে যা লর্ড অ্যাকটন এর মতে ছিল '' আমেরিকার বিপ্লব। '' এই বিপ্লবের কারণগুলি নিম্নরূপ :- 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. ধর্মীয় বিদ্বেষ :- 
ইংল্যান্ডের Stuart রাজাদের ধর্মীয় অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে যে ইংরেজরা মাতৃভূমি ছেড়ে আমেরিকার উপনিবেশগুলোতে এসেছিল , তাদের মধ্যে অনেকেই পিউরিটান ধর্মাবলম্বী ইংরেজের বংশধর। বংশপরম্পরায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই পিউরিটানদের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত ছিল। তারা কোনোমতেই ব্রিটেনের রাজার সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে রাজি ছিল না। 

২. জাতীয়তাবোধের উন্মেষ :- 
কয়েক প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পাশাপাশি বসবাস করে , একই গির্জায় উপাসনা করে উপনিবেশবাদের মধ্যে এক ঐক্যবোধ গড়ে উঠেছিল। তারা অনুভব করেছিল ব্রিটিশদের থেকে তাদের অস্তিত্ব আলাদা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা এবং আমেরিকাতে নিজেদের অস্তিত্ব সুরক্ষিত থাকায় তারা আমেরিকার জাতীয় চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ে। এছাড়াও টম পেইন , টমাস জেফারসন , মিল্টন , মন্তেস্কু - প্রমুখের দার্শনিক ভাবনায় প্রভাবিত হওয়ায় উপনিবেশবাদের মনে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ সহজ হয়েছিল।  

৩. সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের প্রভাব :- 
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ( ১৭৫৬ - ৬৩ খ্রিস্টাব্দ ) ফ্রান্সে পরাজিত হওয়ায় উত্তর আমেরিকার ফরাসি উপনিবেশ কানাডা ইংল্যান্ডের দখলে আসে। ফলে উপনিবেশবাদীদের মন থেকে ফরাসি ভীতি দূর হয়।  তারা একজোট হয়ে স্বাধীনতা লাভের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক এডমন্ড রাইটের মতে , ফরাসি ভীতি দূর হওয়ায় আমেরিকার বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪. নেভিগেশন আইন :- 
Stuart রাজা দ্বিতীয় চার্লসের আমলে পাস করানো এ আইনে ( ১৬৬০ ) বলা হয় - 
(i) আমেরিকাতে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা গড়ে তোলা যাবেনা। 
(ii) আমেরিকার তেরোটি উপনিবেশে উৎপাদিত সামগ্রী - যথা - নীল , চিনি , তুলো ,তামাক ইত্যাদি ইংল্যান্ডের জাহাজের মাধ্যমে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই রপ্তানি করা যাবে। 
(iii) ইংল্যান্ডজাত সমস্ত পণ্য সামগ্রীও ইংল্যান্ডের জাহাজের মাধ্যমে আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশে আসবে। 
(iv) উপনিবেশগুলিতে তুলোজাত কোনো দ্রব্যাদি প্রস্তুত করা চলবেনা। 

৫. সহায়তার পরোয়ানা :- 
সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় জাতীয় ঋণ অত্যধিক বেড়ে যায়। এই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় উপনিবেশবাসীদের কাছ থেকেই আদায় করার নীতি নেয় ব্রিটিশরা। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রেনভিল চোরাচালান বন্ধের জন্য ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তার পরোয়ানা নামক এক আইন পাশ করেন ( ১৭৬৩ ) ।  এই আইনের বলে কোনোরকম আগাম সতর্ক না করে উপনিবেশবাসীদের ঘর বাড়ি তল্লাশি চালানো হত। 

৬. চিনি আইন ( ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ ) :- 
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গ্রেনভিল সুগার অ্যাক্ট বা চিনি আইন জারি করেন। এতদিন ধরে উপনিবেশবাসীরা সস্তায় ফরাসি উপনিবেশ কানাডা থেকে যে চিনি ও ঝোলাগুড় আমদানি করত , সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ জয়ের ফলে কানাডা ব্রিটিশদের দখলে আসায় এই আমদানি দ্রব্যের ওপর করের হার ২.৫ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এর পরোক্ষ প্রভাবে আমেরিকায় মদের দাম বেড়ে যায় , ফলে উপনিবেশবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

৭. স্ট্যাম্প অ্যাক্ট  ( ১৭৬৫ ) :- 
উপনিবেশগুলোতে মোতায়ন করা ১০ হাজার ব্রিটিশ সেনার মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ তোলার লক্ষ্যে গ্রেনভিল মন্ত্রিসভা স্ট্যাম্প অ্যাক্ট জারি করে। এই আইনে বলা হয় - আমেরিকার সমস্ত দলিলপত্র ও  লাইসেন্স - এ ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কেনা স্ট্যাম্প লাগাতে হবে , নতুবা তা আইনানুগ হবেনা।  এই কালা আইনের বিরুদ্ধে বোস্টনের আইনজীবী জেমস ওটিস বলেন - যেহেতু ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আমেরিকার কোনো প্রতিনিধি নেই , তাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ধার্য করা কোনো কর দিতে আমেরিকানরা বাধ্য নয়। 

৮. ঘোষণার আইন ( ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ ) :- 
পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রকিংহ্যাম স্ট্যাম্প আইন প্রত্যাহার করে নেন। রকিংহ্যাম মন্ত্রিসভার রাজস্ব মন্ত্রী চার্লস টাউনসেন্ট জারি করেন ঘোষণা আইন। এই আইনে বলা হয় উপনিবেশবাসীদের উপর কর ধার্যের অধিকার রয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের। এই আইন অনুসারে আমেরিকার উপনিবেশগুলিতে  আমদানি করা চা , চিনি ও কাঁচের উপর কর চাপানো হয়। এই ঘোষণার আইনের বিরুদ্ধে উপনিবেশবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 

৯. বোস্টন টি পার্টি :- 
আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশ জুড়ে বিভিন্ন করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সমস্ত কর প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু উপনিবেশবাসীদের ওপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যে কর চাপানোর অধিকার রয়েছে তা বোঝানোর জন্যই তিনি শুধুমাত্র চায়ের ওপর পাউন্ড প্রতি ৩ পেনি কর বহাল রাখেন। এর প্রতিবাদস্বরুপ স্যামুয়েল অ্যাডামসের নির্দেশে বেশ কিছু উপনিবেশবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ছদ্মবেশে একরাতে ( ১৬ ই ডিসেম্বর ১৭৭৩ ) ডার্টমাউথ নামক জাহাজে উঠে ৩৪২ পেটি চা সমুদ্রের জলে ফেলে দেয়। এই ঘটনা বোস্টন টি পার্টি নামে পরিচিত। এই ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার বোস্টন বন্দর বন্ধ করে দেয় ও বিভিন্ন দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে যা স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি গড়ে দেয়। 

১০. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র :- 
ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার উপনিবেশগুলি ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। জর্জিয়া ছাড়া আমেরিকার ১২ টি উপনিবেশের ৫১ জন প্রতিনিধি ফিলাডেলফিয়া শহরে এক অধিবেশনে মিলিত হন ( ৫ ই সেপ্টেম্বর , ১৭৭৪ ) । এই অধিবেশনেই ইংল্যান্ড রাজ তৃতীয় জর্জ - এর কাছে আমেরিকাবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকারের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু তৃতীয় জর্জের কাছে উপনিবেশবাসীদের সমস্ত আবেদন ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ সৈন্যরা বোস্টনের কাছে লেক্সিংটন ও কনকর্ড নামক জায়গায় গুলি চালানোর ফলে বিদ্রোহের আগুন তীব্রতর হয়ে ওঠে। উপনিবেশবাসীরা জর্জ ওয়াশিংটনকে তাদের সেনাপতি নির্বাচিত করে টমাস জেফারসন রচিত ঘোষনাপত্রের মাধ্যমে ৪ ই জুলাই ১৭৭৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করল। অবশেষে ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশ আমেরিকার উপনিবেশবাসীদের স্বাধীনতা মেনে নেয়। 

উপসংহার :- 
আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে উপনিবেশবাসীদের সঙ্গে হল্যান্ড , ফ্রান্স ও স্পেন যোগ দিয়েছিল। ব্রিটিশ সেনাপতি কর্নওয়ালিসের আত্মসমর্পণে ও টমাস জেফারসন , বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন , আলেকজান্ডার হ্যামিলটন , জন অ্যাডামস - প্রমুখের সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে আমেরিকাবাসী স্বাধীনতার সূর্যোদয়  প্রত্যক্ষ করল। স্বাধীন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন জাতির জনক ওয়াশিংটন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

Discuss Asoka's position in history .  

বিশ্ব ইতিহাসে অশোকের স্থান। 




সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় অশোকের নাম স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাঁকে কনস্টানটাইন , মার্কাস অরেলিয়াস , আলেকজান্ডার , মহান আলফ্রেড , জুলিয়াস সিজার , শার্লেম্যান , আকবর , নেপোলিয়ন - প্রমুখ উল্লেখযোগ্য প্রভাবশালী মহান নরপতিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন ; কিন্তু বাস্তব বিচারে অশোকের কাছে তাঁদের গৌরব ম্লান হয়ে যায়। 
ভিনসেন্ট স্মিথের মতে , সর্বদেশে সর্বকালে যে সকল নরপতি সিংহাসনে বসেছেন , ' দেবানাং প্রিয় প্রিয়দর্শী ' রাজা অশোক তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্কের ন্যায় বিরাজ করছেন। তাঁর শাসনকাল ' প্রপীড়িত মানব ইতিহাস '- এর এক চিরস্মরণীয় বিরতিকালে। 
পল ম্যালন অরল বলেন যে , কেবলমাত্র ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ নরপতি নয় - তিনি পৃথিবীর মহান দার্শনিক নৃপতিদের অন্যতম। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

যুদ্ধজয়ের পরিবর্তে ধর্মবিজয় :- 
অশোক যে একজন রণনিপুণ যোদ্ধা ছিলেন , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সিংহাসনে আরোহনের অল্পদিনের মধ্যেই চোল , পান্ড্য প্রভৃতি রাজ্যের মিত্র কলিঙ্গের মত একটি শক্তিশালী রাজ্যকে পরাজিত করে তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান করেন। যুগধর্মকে মেনে নিয়ে সামরিক জয়ের জয়ের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে তিনি অনায়াসে দক্ষিণ ভারত - এমনকী ভারতের বাইরেও সামরিক অভিযান পাঠিয়ে সমরবিজয়ী নেতা হিসেবে স্থায়ী কীর্তির অধিকারী হতে পারতেন। কিন্তু সম্রাট অশোক সে পথে অগ্রসর না হয়ে জীবনের প্রথম যুদ্ধ জয়ের পরই চিরতরে যুদ্ধনীতি ত্যাগ করে শান্তি , মৈত্রী ও বিশ্বভাতৃত্বের আদর্শ প্রচারে ব্রতী হন। সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় অশোকের মত এমন নরপতির সন্ধান আমাদের জানা নেই। দিগ্বিজয়ী অশোক ধর্মবিজয়ী রাজর্ষি অশোকে পরিণত হন এবং সমগ্র বিশ্বের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এক নবচেতনার সঞ্চার করেন। তাঁর রাজত্বকালে মগধের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূত্রপাত হয়। 

নতুন রাজাদর্শ :- 
বিশ্ব ইতিহাসে সম্রাট অশোকই প্রথম এক নতুন ধরণের রাজাদর্শ বা রাজ কর্তব্যের অভিনব আদর্শ তুলে ধরেন। তিনি রাজপদকে উপভোগ , বিলাস - ব্যসন বা স্বার্থসিদ্ধির উপায় বলে মনে করতেন না। তাঁর কাছে রাজপদ ছিল জনকল্যাণ ও মানবহিতৈষণার সুযোগ। প্রজাবর্গকে তিনি কখনোই রাজস্ব প্রদানের যন্ত্র বা শোষণের উপাদান বলে মনে করতেন না। প্রজাবর্গকে নিজ সন্তান বলে ঘোষণা করে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রজাকল্যানে নিয়োজিত করে তিনি জনকল্যাণের এক নতুন আদর্শ তুলে ধরেন। এইভাবে তিনি Welfare State বা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের আদর্শ তুলে ধরেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

অধ্যাপক কোশাম্বীর অভিমত :- 
তিনি ঘোষণা করেন যে , '' সব মুনিষে পজা মমা '' - অর্থাৎ , সব মানুষই আমার সন্তান এবং তাদের কল্যাণ সাধনই তাঁর জীবনের ব্রত। প্রজাদের ইহজগতে এবং পরজগতে সুখী করাই ছিল অশোকের রাজাদর্শের মূল লক্ষ্য। অশোকের মতে , এই কর্তব্য পালন করে তিনি জীবনের প্রতি তাঁর ঋণ শোধ করতে চান। অধ্যাপক কোশাম্বীর মতে , এই রাজকর্তব্যের মধ্যে Contract Theory বা চুক্তিতত্ত্বের বীজ নিহিত আছে। এই চুক্তিতত্ত্ব অনুসারে প্রজা মঙ্গলের শর্তেই রাজা তাঁর সিংহাসন লাভ করেছেন। 

প্রজাবৎসল শাসক :- 
পিতৃত্ববোধের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রজাকল্যানের জন্য তিনি রাজপথ নির্মাণ , রাস্তার দু'পাশে ছায়াপ্রদ বৃক্ষরোপন , কূপখনন , পান্থশালা নির্মাণ ও চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। কেবলমাত্র মানুষের জাগতিক কল্যাণ সাধনই নয় - তাদের পারত্রিক মঙ্গলসাধনে ব্রতী হয়ে তিনি যথার্থ পিতার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছিলেন। রাজুক , যুত , মহামাত্র , ধম্মমহামাত্র  - প্রভৃতি রাজকর্মচারীদের উপর তিনি প্রজাবর্গের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। স্ত্রীজাতির কল্যাণের জন্য তিনি ' স্ত্রী অধ্যক্ষ মহামাত্র ' নিয়োগ করেন। 

শান্তি , মৈত্রী ও প্রেমের আদর্শ :- 
তাঁর জনহিতৈষণা কেবলমাত্র নিজ রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না - বহির্বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন রাজ্যেও তা সম্প্রসারিত হয়েছিল। কেবলমাত্র মানুষই নয় - বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় তিনিই প্রথম নরপতি , যিনি পশু পক্ষীর চিকিৎসা ও মঙ্গলসাধনে ব্রতী হয়েছিলেন। পশুহত্যার পরিমাণ সীমায়িত করার জন্য তিনি কয়েকটি বিধি প্রবর্তন করেন , নিজে মাংসাহার ত্যাগ করেন , নানা স্থানে পশু চিকিৎসালয় স্থাপন এবং মানুষ ও পশুর উপকারে আসে এমন ওষধি বৃক্ষও রোপন করেন। প্রকৃত মানবপ্রেমিক ও রাজর্ষি অশোক শান্তি , মৈত্রী ও প্রেমের উপর ভিত্তি করে নতুন ধরণের পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তন করেন। ভারতে ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

অশোক কর্তৃক প্রচারিত বৌদ্ধধর্মের স্বরূপ  :- 
ভারতের এক ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মকে তিনি বিশ্বধর্মে রূপান্তরিত করেন। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে এশিয়া , ইউরোপ ও আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভগবান তথাগতের প্রেম , শান্তি ও সৌহার্দ্যের আদর্শ বিস্তার লাভ করে। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী অশোক ছিলেন যথার্থই পরধর্মসহিষ্ণু এবং তাঁর প্রচারিত বৌদ্ধধর্ম ছিল যথাযথ অর্থে উদার ও সর্বজনীন। ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্ধে তিনি মানবধর্মকেই স্থান দেন। তিনি বলতেন , '' নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ , এবং অপর ধর্মকে নিকৃষ্ট জ্ঞান করা অনুচিত। '' ব্রাহ্মণ , শ্রমণ , জৈন , আজিবক - সকলেই তাঁর কাছে সমান ছিলেন। 

সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও উদারতা :- 
ভারতীয় ভাষা , সাহিত্য , স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও তাঁর দান অতুলনীয়। তাঁর ধর্মপ্রচারের ফলে পালি ভাষা সর্বভারতীয় ভাষায় পরিণত হয় এবং এই ভাষায় গ্রন্থাদি রচিত হতে থাকে। তাঁর আমলে ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপি ভারতের সর্বত্র প্রচলিত হয়। এইভাবে তিনি ভাষা ও লিপির মাধ্যমে সর্বভারতীয় ঐক্যের আদর্শকে বলবতী করে তোলেন। তাঁর আমলে অসংখ্য স্তুপ , বিহার , চৈত্য নির্মিত হয়। এর ফলে ভারতীয় শিল্পের ক্ষেত্রেও এক পরিবর্তন আসে। 

ঐতিহাসিক স্মিথ - এর মতে , অশোক ছিলেন মানব জাতির প্রথম ধর্মগুরু। H.G. Wells এর মতে , ইতিহাসের পৃষ্ঠায় হাজার হাজার নরপতিদের মধ্যে অশোকই একমাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র। Dr. R.C. Majumder এর মতে , বিশ্বের ইতিহাসে অশোক অতুলনীয় এবং অশোকের আবির্ভাব ভারতকে মহিমান্বিত করেছে। ডক্টর রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় বলেন যে , সমগ্র বিশ্বের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে মানুষ ও শাসক হিসেবে অশোকের সঙ্গে কারো তুলনা চলে না। 

অশোক ছিলেন ভারতের প্রথম সম্রাট যিনি সমগ্র ভারতকে রাজনীতিগতভাবে এক ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করেছিলেন। এক আদর্শ ও এক ভাষা তিনি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। একটি দেশকে গড়ে তোলার পক্ষে এটি ছিল তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ দান। তবে , কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে , অশোকের অহিংস নীতির ফলে দেশ হীনবীর্য হয়ে পড়েছিল যা পরবর্তীকালে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। তবে এতে অশোকের শ্রেষ্ঠত্ব কোনোঅংশেই ম্লান হয় না। কেননা , অশোকের মত সর্বতোমুখী প্রতিভাবান সম্রাট সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসে আর দেখা যায়না। তাঁর রাজ আদর্শ বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করে। তাই বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে অশোক একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি ছিলেন এক মহান আদর্শস্থানীয় নরপতি।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

Causes of success of Magadhan Imperialism .


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধের উত্থানের কারণ। 


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে মগধের সফলতার কারণ। 




খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে আর্যাবর্ত সহ সমগ্র ভারত ১৬ টি মহাজনপদে বিভক্ত ছিল। এই ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল , তারা সর্বদা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকতো। ফলে এই ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে কাশী , কোশল , অবন্তী ও মগধ প্রধান হয়ে ওঠে। এই চারটি শক্তি আবার  সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয় এবং কালক্রমে মগধ প্রধান শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং মগধকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয়। 
আর্যাবর্তে রাজনৈতিক প্রাধান্য লাভের সংগ্রামে মগধের সাফল্য অর্জন কোনো আকস্মিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। বিভিন্ন কারণ যুগ্মভাবে বা পৃথকভাবে মগধের এই উত্থানকে সম্ভব করে তোলে। এ প্রসঙ্গে ডক্টর রামশরণ শর্মা ও ডক্টর রোমিলা থাপার কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন। কারণগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. নিরাপদ দূরত্ব :- 
অনিশ্চিত ও উপদ্রুত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বহুদূরে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় অবস্থিত মগধের অধিবাসীরা নিরাপদ জীবনযাপন করত। বহিরাগত কোনও শক্তির পক্ষে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এই অঞ্চলে পৌঁছানো সহজসাধ্য ছিল না। সিন্ধু উপত্যকা থেকে এই মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় বসতি স্থাপন করতে আর্যদের কমপক্ষে দুই হাজার বছর সময় লেগেছিল। পারসিক ও ম্যাসিডোনীয় বাহিনীর পক্ষে এত দূরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এই ভৌগোলিক দূরত্ব জনিত নিরাপত্তার ফলে মগধের উত্থানের ধারা খন্ডিত বা ব্যাহত হয়নি। 

২. যোগ্য নেতৃত্ব :- 
বিম্বিসার , অজাতশত্রু , শিশুনাগ , মহাপদ্ম নন্দ , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোকের মত সমরকুশলী , দক্ষ ও উদ্যমী নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে অজাতশত্রুর মন্ত্রী বাসসাকর , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মন্ত্রী কৌটিল্য এবং রাজর্ষি অশোকের মন্ত্রী রাধাগুপ্তের মতো ভারত বিখ্যাত কূটনীতিবিদ মন্ত্রীদের ভূমিকাকে কোনক্রমেই উপেক্ষা করা চলে না। বাসসাকরকে মেকিয়াভেলির সঙ্গে তুলনা করা হয় ; আর কৌটিল্য ছিলেন মৌর্য সাম্রাজ্যের নেপথ্য নায়ক। মন্ত্রীদের কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং রাজন্যবর্গের শৌর্য-বীর্যের সমন্বয় মগধকে অপ্রতিহত করে তোলে। 

৩. ভৌগোলিক অবস্থান :- 
রাজন্যবর্গের ব্যক্তিগত কুশলতা সর্বাংশে ব্যর্থ হত , যদি না মগধের ভোগলিক অবস্থান অনুকূল হত। গঙ্গা শোন্ ও চম্পা নদী বেষ্টিত মগধ ছিল অতি সুরক্ষিত। মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ পাঁচটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় খুবই নিরাপদ ছিল। গঙ্গা , শোন্ ও গন্ডক নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র কার্যত দুর্ভেদ্য ছিল। পাটলিপুত্র ছিল একটি জলদুর্গ বিশেষ এবং সে যুগে এই নগরটিকে অধিকার করা আদৌ সহজসাধ্য ছিল না। চতুর্দিকে নদী থাকায় শত্রুদ্বারা পাটলিপুত্রের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ছিল খুবই কম , তেমনি নদী পথ ধরে মগদের সেনাবাহিনী অবাধে চতুর্দিকে চলাফেরা করতে পারত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪. মগধের অরণ্য সম্পদ :- 
মগধের পূর্বাঞ্চল ছিল হস্তিসঙ্কুল ঘন অরণ্য। এই অরণ্য ভেদ করে শত্রুর পক্ষে আক্রমণ করা দুঃসাধ্য ছিল। কিন্তু ওই অরণ্য থেকেই হস্তী সংগ্রহ করে নন্দ রাজারা বিশাল রণহস্তি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।  মগধের সেনাবাহিনীর প্রধান অঙ্গই ছিল হস্তীবাহিনী। সুশিক্ষিত হস্তির মাধ্যমে বর্ষায় দুর্গম ও কর্দমাক্ত এলাকার মধ্যে দিয়ে সামরিক বাহিনীর রসদ পরিবহন করা , রণহস্তির সাহায্যে বিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যূহকে চূর্ণবিচূর্ণ করা এবং সর্বোপরি শত্রু বাহিনীর মধ্যে ত্রাস সঞ্চার করা মগধের পক্ষে সহজসাধ্য হয়। ধননন্দের বাহিনীর ভয়েই বোধহয় গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয়ী সেনাদল বিপাশার পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে অস্বীকৃত হয়।  

 ৫. উর্বর ভূমি :-
গঙ্গা নদী ছিল মগধের হৃদপিন্ড। গঙ্গা ও অন্যান্য নদীগুলি মগধকে উর্বরা এবং সুজলা সুফলা করে তুলেছিল। এই অঞ্চলে নানা জাতের ধান চাষ হত এবং বছরে দুবার জমিতে ফসল উৎপন্ন হত। অফুরন্ত কৃষি উৎপাদনের দ্বারা যেমন বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণ-পোষণ সহজতর হয় , তেমনি রাজকোষও স্ফীত হয়ে ওঠে। ডক্টর রোমিলা থাপার বলেন যে , কৃষির ওপর নির্ভর করেই মগধের প্রথম সাম্রাজ্য গঠনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। 

৬. বৈদেশিক বাণিজ্য :- 
এই নদীগুলির উপর একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মগধের পক্ষে সহজতর হয়েছিল এবং এই নদীর মাধ্যমেই বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। গঙ্গার পথ ধরে মগধের বণিকরা বঙ্গোপসাগর , দক্ষিণ ভারত ও দূরপ্রাচ্যে পাড়ি দিত। জলপথ ছাড়াও স্থলপথে মগদের বণিকরা কাশ্মীর ও গান্ধারে বাণিজ্য করত। জাতক গ্রন্থে সমুদ্রপথে ও স্থলপথে চলাচলকারী বাণিজ্যিক সম্ভার পূর্ণ বড় বড় শকটের মিছিলের উল্লেখ আছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. খনিজ সম্পদ :-
খনিজ সম্পদে পূর্ণ মগধের তামা ও লোহার খনিগুলি ছিল মগধের আর্থিক সমৃদ্ধি ও সামরিক শক্তির প্রধান সহায়। কেবলমাত্র দৈনন্দিন জীবনে নয় - কৃষি যন্ত্রপাতি এবং যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে লোহা ও তামার ব্যপক ব্যবহার তৎকালীন মগধে প্রচলিত ছিল। কৌটিল্যের মতে , মগধের লৌহখনিগুলি ছিল তার সামরিক শক্তির গর্ভগৃহ। 

৮. মিশ্র সংস্কৃতি :- 
মগধের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত করে। মগধের সীমানার দুই পাশে ছিল আর্য ও অনার্য - দুই পৃথক সংস্কৃতির আবাসস্থল। এর ফলে মগধে এক মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। মানুষের চিত্তবৃত্তি উদার ও উন্নত হয়। ব্রাহ্মণ্যধর্মের কঠোরতা এখানে অনেক শিথিল  হয়ে পড়ে এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উদারতা জনজীবনকে প্রভাবিত করে। আর্য মানসিকতা ও অনার্য  বাহুবলের মিলনে মগধ দুর্বার হয়ে ওঠে। 

৯. আদর্শবাদ :- 
যুগ যুগ ধরে ভারতীয় রাজন্যবর্গ এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁরা সম্রাট , একরাট , বিরাট ,  সার্বভৌম , রাজচক্রবর্তী প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতেন। মগধের রাজন্যবর্গ সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গঠনের  এই আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশোকের আমলে এই আদর্শ পূর্ণতা পায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার তুলনামূলক আলোচনা। 

হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার পার্থক্য। 

সিন্ধু সভ্যতা ও আর্য সভ্যতার পার্থক্য। 

সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার পার্থক্য। 




হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ - 

১. বিস্তারগত ক্ষেত্রে :-  হরপ্পা সভ্যতা মূলত ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীকালে তার প্রভাব গাঙ্গেয় সমভূমি ও দক্ষিণে কিছুটা বিস্তার লাভ করে। 
অপরদিকে আর্যাবর্তকে কেন্দ্র করে আর্য তথা বৈদিক সভ্যতার বিস্তার ঘটে সারা ভারত জুড়ে। 

২. প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে :- হরপ্পা সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক , কিন্তু আর্য সভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। আর্যদের ঘরবাড়ি ছিল বাঁশ ও খড়ের তৈরী। অপরপক্ষে হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা পোড়া ইঁটের তৈরী বহুতল গৃহে বসবাস করত। হরপ্পার প্রশস্ত রাজপথ , উন্নত পয়ঃপ্রণালী ও স্নানাগার সমৃদ্ধ নগর জীবনের সাক্ষ্য বহন করে। পক্ষান্তরে , আর্য সভ্যতা কৃষিকাজ , প্রশাসন , ব্যবসা বাণিজ্য , উৎপাদন - সবক্ষেত্রেই গ্রামীণ জীবনের পরিচয় বহন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. লৌহের ব্যবহারের ক্ষেত্রে :- হরপ্পা সভ্যতা ছিল তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা। এই যুগে লোহার ব্যবহার শুরু হয়নি। অপরপক্ষে , বৈদিক সভ্যতা ছিল লৌহ যুগের সভ্যতা। আর্যরা কৃষিকাজ , রাজনীতি তথা যুদ্ধ - বিগ্রহে লোহার ব্যাপক প্রচলন ঘটিয়েছিল। 

৪. অশ্বের ব্যবহারের ক্ষেত্রে :- হরপ্পা সভ্যতায় ঘোড়ার ব্যবহার অজ্ঞাত ছিল। হরপ্পা সভ্যতায় কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্রে এবং একেবারে উপরের স্তরে ঘোড়ার কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে। সুতরাং হরপ্পা সভ্যতায় ঘোড়া প্রায় অপরিচিত ছিল। অপরপক্ষে , ঘোড়া ছিল আর্যদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। আর্যরা যুদ্ধের সময় ঘোড়া ব্যবহার করত এবং ঘোড়ায় টানা রথ ব্যবহার করত। প্রকৃতপক্ষে অনার্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভের ক্ষেত্রে ঘোড়া ছিল আর্যদের অন্যতম হাতিয়ার। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. লিখনরীতির ক্ষেত্রে :- হরপ্পা সভ্যতায় লিখনরীতি সুপ্রচলিত ছিল। বিভিন্ন সিলের উপর সেই লিপি উৎকীর্ণ আছে। অন্যদিকে , বৈদিক সভ্যতায় লিখন প্রণালীর প্রচলন হয়নি। আর্যদের দ্বারা রচিত প্রাচীনতম সাহিত্য বেদ ছিল শ্রুতিভিত্তিক। 

৬. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে :- হরপ্পার অর্থনীতিতে কৃষি , শিল্প ও বাণিজ্য ছিল প্রধান। কিন্তু বৈদিক আর্যদের অর্থনীতি ছিল কৃষি ও পশুপালন নির্ভর। যা নগর ও গ্রাম সভ্যতার পার্থক্যকে আরও সুস্পষ্ট করে তোলে। 

৭. ধর্মীয় ক্ষেত্রে :- 
(ক ) উভয় সভ্যতার পূজা পদ্ধতিতে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। হরপ্পা সভ্যতায় মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সংশয় আছে। কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় মন্দির ছিল আর্যদের ধর্মীয় জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 
(খ ) হরপ্পা সভ্যতায় মূর্তিপূজা প্রচলিত ছিল , কিন্তু বৈদিক সংস্কৃতিতে মূর্তিপূজা অজ্ঞাত ছিল। বৈদিক সভ্যতায় মূলত অগ্নি , বৃক্ষ - ইত্যাদির পূজা প্রচলিত ছিল। বৈদিক আর্যরা মূলত ছিল প্রকৃতির পূজারী।
(গ ) হরপ্পা সভ্যতায় বৃষের পূজা প্রচলিত ছিল ; কিন্তু বৈদিক আর্যরা গাভীর পূজা করত। 
(ঘ ) হরপ্পাবাসী শিবলিঙ্গ ও মাতৃদেবীর উপাসনা করত। কিন্তু আর্য সভ্যতায় লিঙ্গপূজা নিন্দনীয় ছিল। 
(ঙ ) হরপ্পা সভ্যতায় স্ত্রী দেবীদের প্রাধান্য ছিল ; কিন্তু আর্য সভ্যতায় ছিল পুরুষ দেবতাদের প্রাধান্য। 

৮. মাতৃতান্ত্রিক ও পিতৃতান্ত্রিক :-  হরপ্পার সমাজ ছিল মাতৃকেন্দ্রিক ; কিন্তু বৈদিক সমাজ ছিল পিতৃকেন্দ্রিক। 

৯. সৎকার পদ্ধতির ক্ষেত্রে :- হরপ্পাবাসীরা মৃতদেহ সমাধিস্থ করত তথা কবর দিত। কিন্তু বৈদিক আর্যরা মৃতদেহ দাহ করত। 

১০. আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রের ক্ষেত্রে :-  হরপ্পা সভ্যতায় ঢাল , শিরস্ত্রাণ প্রভৃতি আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রের প্রচলনের প্রমান পাওয়া যায়। কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় এরূপ আত্মরক্ষামূলক কোনো অস্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১১. মৃৎপাত্রের ক্ষেত্রে :- মৃৎপাত্রের ক্ষেত্রেও উভয় সভ্যতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। হরপ্পা সভ্যতায় মৃৎপাত্রের রং ছিল লাল - কালো। অপরদিকে , আর্যদের মৃৎপাত্রের রং ছিল ধূসর ( Grey ware ) । 

১২. শ্রমের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণ বিভাজন :- হরপ্পায় শ্রেণী বৈষম্যের প্রভাব থাকলেও হরপ্পাবাসীদের জীবনে চতুরাশ্রম প্রথা প্রচলিত ছিল না। পক্ষান্তরে , আর্যদের সামাজিক জীবনে চতুরাশ্রম প্রথা প্রচলিত ছিল। 

১৩. সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে :- হরপ্পা সভ্যতায় সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্রপথে সিন্ধুবাসীরা পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করত। কিন্তু আর্যদের বাণিজ্য উপকূলরেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

১৪. গো - ধনের ক্ষেত্রে :- বৈদিক সংস্কৃতিতে গো - ধনের যথেচ্ছ উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু হরপ্পা সংস্কৃতিতে সেরকম কোনো উল্লেখ নেই। 

১৫. নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে :- সিন্ধু জনগণের মধ্যে রৌপ্যের সাধারণ প্রচলন ছিল এবং বাসন - পত্র ইত্যাদি প্রস্তর দ্বারা নির্মিত হত। কিন্তু বৈদিক আর্যদের যুগে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি রৌপ্য দ্বারা নির্মিত হত।   

হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল - সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। হরপ্পা সভ্যতা ছিল যথেষ্ট উন্নত মানের ; সে তুলনায় আর্য সভ্যতা ছিল পশ্চাদপদ। ঐতিহাসিকেরা তাই অনেকেই আর্যদের বর্বর জাতি বলে অভিহিত করেছেন। Dr. R.S. Sharma আর্যদের নগর বিনাশকারী হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। যদিও আর্যরা বর্বর ছিল - এ ধারণা সম্পূর্ণভাবে সঠিক নয়। প্রথমদিকে আর্যদের নাগরিক জীবনের উন্মেষ না হওয়ার কারণ হল তাদের পশুচারণবৃত্তির অগ্রাধিকার এবং এজন্য তারা একস্থানে বেশিদিন থাকত না। পরবর্তীকালের ভারতীয় সংস্কৃতির অগ্রগতিতে আর্যরাই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তবে , উভয় সভ্যতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও , ভারতীয় সভ্যতার বিকাশে উভয় সংস্কৃতির অবদান ছিল যথেষ্ট।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates