Causes of success of Magadhan Imperialism . ( খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধের উত্থানের কারণ। )

by - November 25, 2021

Causes of success of Magadhan Imperialism .


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধের উত্থানের কারণ। 


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে মগধের সফলতার কারণ। 




খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে আর্যাবর্ত সহ সমগ্র ভারত ১৬ টি মহাজনপদে বিভক্ত ছিল। এই ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল , তারা সর্বদা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকতো। ফলে এই ১৬ টি মহাজনপদের মধ্যে কাশী , কোশল , অবন্তী ও মগধ প্রধান হয়ে ওঠে। এই চারটি শক্তি আবার  সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয় এবং কালক্রমে মগধ প্রধান শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং মগধকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয়। 
আর্যাবর্তে রাজনৈতিক প্রাধান্য লাভের সংগ্রামে মগধের সাফল্য অর্জন কোনো আকস্মিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। বিভিন্ন কারণ যুগ্মভাবে বা পৃথকভাবে মগধের এই উত্থানকে সম্ভব করে তোলে। এ প্রসঙ্গে ডক্টর রামশরণ শর্মা ও ডক্টর রোমিলা থাপার কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন। কারণগুলি হল - 


১. নিরাপদ দূরত্ব :- 
অনিশ্চিত ও উপদ্রুত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বহুদূরে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় অবস্থিত মগধের অধিবাসীরা নিরাপদ জীবনযাপন করত। বহিরাগত কোনও শক্তির পক্ষে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এই অঞ্চলে পৌঁছানো সহজসাধ্য ছিল না। সিন্ধু উপত্যকা থেকে এই মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় বসতি স্থাপন করতে আর্যদের কমপক্ষে দুই হাজার বছর সময় লেগেছিল। পারসিক ও ম্যাসিডোনীয় বাহিনীর পক্ষে এত দূরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এই ভৌগোলিক দূরত্ব জনিত নিরাপত্তার ফলে মগধের উত্থানের ধারা খন্ডিত বা ব্যাহত হয়নি। 

২. যোগ্য নেতৃত্ব :- 
বিম্বিসার , অজাতশত্রু , শিশুনাগ , মহাপদ্ম নন্দ , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং অশোকের মত সমরকুশলী , দক্ষ ও উদ্যমী নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে অজাতশত্রুর মন্ত্রী বাসসাকর , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মন্ত্রী কৌটিল্য এবং রাজর্ষি অশোকের মন্ত্রী রাধাগুপ্তের মতো ভারত বিখ্যাত কূটনীতিবিদ মন্ত্রীদের ভূমিকাকে কোনক্রমেই উপেক্ষা করা চলে না। বাসসাকরকে মেকিয়াভেলির সঙ্গে তুলনা করা হয় ; আর কৌটিল্য ছিলেন মৌর্য সাম্রাজ্যের নেপথ্য নায়ক। মন্ত্রীদের কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং রাজন্যবর্গের শৌর্য-বীর্যের সমন্বয় মগধকে অপ্রতিহত করে তোলে। 

৩. ভৌগোলিক অবস্থান :- 
রাজন্যবর্গের ব্যক্তিগত কুশলতা সর্বাংশে ব্যর্থ হত , যদি না মগধের ভোগলিক অবস্থান অনুকূল হত। গঙ্গা শোন্ ও চম্পা নদী বেষ্টিত মগধ ছিল অতি সুরক্ষিত। মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ পাঁচটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় খুবই নিরাপদ ছিল। গঙ্গা , শোন্ ও গন্ডক নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র কার্যত দুর্ভেদ্য ছিল। পাটলিপুত্র ছিল একটি জলদুর্গ বিশেষ এবং সে যুগে এই নগরটিকে অধিকার করা আদৌ সহজসাধ্য ছিল না। চতুর্দিকে নদী থাকায় শত্রুদ্বারা পাটলিপুত্রের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ছিল খুবই কম , তেমনি নদী পথ ধরে মগদের সেনাবাহিনী অবাধে চতুর্দিকে চলাফেরা করতে পারত। 


৪. মগধের অরণ্য সম্পদ :- 
মগধের পূর্বাঞ্চল ছিল হস্তিসঙ্কুল ঘন অরণ্য। এই অরণ্য ভেদ করে শত্রুর পক্ষে আক্রমণ করা দুঃসাধ্য ছিল। কিন্তু ওই অরণ্য থেকেই হস্তী সংগ্রহ করে নন্দ রাজারা বিশাল রণহস্তি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।  মগধের সেনাবাহিনীর প্রধান অঙ্গই ছিল হস্তীবাহিনী। সুশিক্ষিত হস্তির মাধ্যমে বর্ষায় দুর্গম ও কর্দমাক্ত এলাকার মধ্যে দিয়ে সামরিক বাহিনীর রসদ পরিবহন করা , রণহস্তির সাহায্যে বিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যূহকে চূর্ণবিচূর্ণ করা এবং সর্বোপরি শত্রু বাহিনীর মধ্যে ত্রাস সঞ্চার করা মগধের পক্ষে সহজসাধ্য হয়। ধননন্দের বাহিনীর ভয়েই বোধহয় গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয়ী সেনাদল বিপাশার পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে অস্বীকৃত হয়।  

 ৫. উর্বর ভূমি :-
গঙ্গা নদী ছিল মগধের হৃদপিন্ড। গঙ্গা ও অন্যান্য নদীগুলি মগধকে উর্বরা এবং সুজলা সুফলা করে তুলেছিল। এই অঞ্চলে নানা জাতের ধান চাষ হত এবং বছরে দুবার জমিতে ফসল উৎপন্ন হত। অফুরন্ত কৃষি উৎপাদনের দ্বারা যেমন বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণ-পোষণ সহজতর হয় , তেমনি রাজকোষও স্ফীত হয়ে ওঠে। ডক্টর রোমিলা থাপার বলেন যে , কৃষির ওপর নির্ভর করেই মগধের প্রথম সাম্রাজ্য গঠনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। 

৬. বৈদেশিক বাণিজ্য :- 
এই নদীগুলির উপর একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মগধের পক্ষে সহজতর হয়েছিল এবং এই নদীর মাধ্যমেই বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। গঙ্গার পথ ধরে মগধের বণিকরা বঙ্গোপসাগর , দক্ষিণ ভারত ও দূরপ্রাচ্যে পাড়ি দিত। জলপথ ছাড়াও স্থলপথে মগদের বণিকরা কাশ্মীর ও গান্ধারে বাণিজ্য করত। জাতক গ্রন্থে সমুদ্রপথে ও স্থলপথে চলাচলকারী বাণিজ্যিক সম্ভার পূর্ণ বড় বড় শকটের মিছিলের উল্লেখ আছে। 


৭. খনিজ সম্পদ :-
খনিজ সম্পদে পূর্ণ মগধের তামা ও লোহার খনিগুলি ছিল মগধের আর্থিক সমৃদ্ধি ও সামরিক শক্তির প্রধান সহায়। কেবলমাত্র দৈনন্দিন জীবনে নয় - কৃষি যন্ত্রপাতি এবং যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে লোহা ও তামার ব্যপক ব্যবহার তৎকালীন মগধে প্রচলিত ছিল। কৌটিল্যের মতে , মগধের লৌহখনিগুলি ছিল তার সামরিক শক্তির গর্ভগৃহ। 

৮. মিশ্র সংস্কৃতি :- 
মগধের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত করে। মগধের সীমানার দুই পাশে ছিল আর্য ও অনার্য - দুই পৃথক সংস্কৃতির আবাসস্থল। এর ফলে মগধে এক মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। মানুষের চিত্তবৃত্তি উদার ও উন্নত হয়। ব্রাহ্মণ্যধর্মের কঠোরতা এখানে অনেক শিথিল  হয়ে পড়ে এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উদারতা জনজীবনকে প্রভাবিত করে। আর্য মানসিকতা ও অনার্য  বাহুবলের মিলনে মগধ দুর্বার হয়ে ওঠে। 

৯. আদর্শবাদ :- 
যুগ যুগ ধরে ভারতীয় রাজন্যবর্গ এক ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁরা সম্রাট , একরাট , বিরাট ,  সার্বভৌম , রাজচক্রবর্তী প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতেন। মগধের রাজন্যবর্গ সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গঠনের  এই আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশোকের আমলে এই আদর্শ পূর্ণতা পায়। 


You May Also Like

0 comments